সম্পর্কের টান । পর্ব-৩+৪ । গল্প পড়ি


সম্পর্কের টান
 পর্ব-৩+৪
গল্প পড়ি

ঐতিহ্য, অর্থি নাম দুটো যেমন আলাদা ঠিক তেমন আলাদা তাদের চালচলন, কথাবার্তা, চেহারা, স্বভাব চরিত্র। ঐতিহ্য চৌধুরী,, মোহসিন চৌধুরী এবং শান্তি বেগমের বড় মেয়ে। শ্যামলা গায়ের রঙের সাথে আবেগময় একটি মন। হাটু সমান কোঁকড়ানো লম্বা চুল, ছোট ছোট দুটি চোখ। এতোটাই হ্যাংলা পাতলা যে, জোর বাতাস এসে তাকে উড়িয়ে নিয়ে গেলেও অবাক হবার মত কিছু ঘটবে না। তবে সব কিছু মিলিয়ে শান্তশিষ্ট, চুপচাপ স্বভাবের মেয়ে ঐতিহ্য। প্রাইভেট ভার্সিটি থেকে বাংলায় অনার্স করছে সে। আসছে ফাইনাল এক্সামের পর অনার্স ৩য় বর্ষর গণ্ডি পেরিয়ে ৪র্থ বর্ষে পা দেবে ঐতিহ্য।
অপরদিকে অর্থি চৌধুরী। সৌন্দর্যের সঙ্গা দিতে গেলে উদাহরণ হিসেবে সকলেই তাকেই টেনে আনবে সেখানে। দুধেআলতা গায়ের রঙের সাথে টানাটানা দুটি চোখ, টসটসে গাল, গোলাপি ঠোঁট, কোমর সমান স্টেইট চুল। আর সবচেয়ে আকর্ষণীয় তার গলার নিচের ছোট্ট কালো তিলটি। এসবের সাথে চাঞ্চল্য স্বভাব টা যেন কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয় তার সৌন্দর্য কে। বাড়ির সবচেয়ে ছোট মেয়ে হিসেবে বায়নার যেন তার শেষ নেই। সাথে সবার কাছ থেকে পাওয়া অফুরন্ত ভালোবাসা। তাই ক্রমান্বয়ে তার খারাপ রেজাল্ট করা নিয়ে তেমন মাথা ব্যথা নেই বাড়ির কারো। এই তো কদিন আগেই এসএসসিতে জিপিএ ৩.৪৫ পেয়ে পাশ করে কলেজে ভর্তি হলো অর্থি। অথচ তার এই রেজাল্টের জন্যই তার বাবা মোহসিন চৌধুরী একটি ফোন উপহার দিল তাকে।
বাবা মোহসিন চৌধুরীর রূপ, গুণের পথে মাহসান এবং অর্থি হাটলেও, বড় মেয়ে ঐতিহ্য পেয়েছে তার মা শান্তি বেগমের স্বভাব গুণ,, সাথে রূপটিও। অত্যান্ত ধীরস্বভাবের একজন শান্তি বেগম। অষ্টম শ্রেণিতে পড়াকালীন সময়ে তার বিয়ে হয়ে যায় মহসিন চৌধুরীর সাথে। তারপর থেকেই নিজের পুরো জগত বলতে শুধু সে মেনেছে তার স্বামীকে। স্বামী উঠতে বললে উঠেছে, বসতে বললে বসেছে। অবশ্য কাজগুলো সে ভয় পেয়ে বা নিজের মনের বিপরীতে গিয়ে করেনি। যা করেছে স্বামীর প্রতি ভক্তি, শ্রদ্ধা, ভালোবাসা থেকেই করেছে। মানুষটি তো আর মিথ্যে প্রশংসা পাবার নয়! মানুষ সুন্দরের দাশ। সুন্দরী একজন রমণী সারাজীবন পাশে থাকুক এটাই তো সব ছেলের চাওয়া। অথচ শান্তি বেগমের গায়ের কালো রঙের জন্য কখনওই মুখ ফুটে উচ্চারণ করেনি কিছু মহসিন চৌধুরী। বরং সবসময় এটাই বোঝানোর চেষ্টা করেছে, সে তার পাশে পেয়েছে অসম্ভব সুন্দর মনের অধিকারী একজনকে। অপরদিকে মহসিন চৌধুরীর বয়স ষাটের উর্ধ্বে পৌঁছালেও যৌবনের থাকা রূপের রেশ রয়েই গেছে তার চেহারায়। স্ত্রী শান্তি বেগম ছিলেন গ্রামের একটি মেয়ে, শান্তশিষ্ট, ভদ্র স্বভাবের। কখনো জোরগলায় কথা বলে নি শান্তি বেগম তার সাথে। না কখনো তাদের তেত্রিশ বছরের বিবাহিত জীবনে দ্বন্দ্ব বেধেছে। হু, কিছু সময় দুজনের মাঝে মন কষাকষি হয়েছে। তবে সেটায় তেমন একটা পাত্তা দেয় নি মোহসিন চৌধুরী। সব মিলিয়ে তিন ছেলে মেয়েকে নিয়ে সুখেই দিন কাটাচ্ছে মোহসিন চৌধুরী শান্তি বেগমের সাথে।

খাবার টেবিলে মোহসিন চৌধুরী বাড়িতে আসা নতুন সদস্যের দিকে তাকিয়ে বললো,
-"কোনো সমস্যা হচ্ছে না তো, মা?"
তৃষ্ণা ঠোঁটে হাসির রেখা এনে বললো,
-"না, বাবা।"
-"কোনো কিছু দরকার হলে তোমার দুই ননদকে ডেকে বলবে।"
-"জ্বি, বলবো।"
খাবার মুখে তুলে মহসিন চৌধুরী তাকালেন তার দুই মেয়ের দিকে। তাদের উদ্দেশ্য করে বললেন,
-"বৌমার কখন কি লাগবে না লাগবে সব কিছুতে খেয়াল রাখবি। ও কিন্তু নিজের পরিবার বাবামা, ভাই সবাইকে ফেলে চলে এসেছে আমাদের মাঝে। তেমনটা কিন্তু তোদের সাথেও একদিন ঘটবে। আজ ভাবিকে হেল্প করলে কাল তোরাও হেল্প পাবি। তাই এখনি যদি তোরা তোদের ভাবিকে এসব ব্যাপারে সাহায্য করিস, তাহলে পরবর্তীতে তোরাও সেইম ফ্যাসিলিটিস পাবি।"
-"কিন্তু বাবা!! আমার যদি দেবর বা ননদ কেউ না থাকে,, তাহলে শুধুশুধু আমি ভাবিকে হেল্প করতে যাবো কেন? তখন তো পুরো ফাক্কা!"
কথাটি বলেই চোখ মারলো অর্থি। মহসিন চৌধুরী মেয়ের এমন কথায় মোটেও অবাক হলেন না। হেসে জবাব দিলেন,
-"তখন আমার জামাই বাবাজীই ডাবল হেল্প করবে। তোর কলেজ নেই আজ?"
-"আছে। কিন্তু কালই কেবল ভাইয়ার বিয়ে হল। আজই কি কলেজ যাবো নাকি!"
অর্থির কথা শুনে একটি কথা মনে পড়ে গেল মহসিন চৌধিরীর। ছেলে এবং ছেলের বৌয়ের দিকে ফিরে বললেন,
-"আসলে বৌভাত নিয়ে ছোটখাটো অনুষ্ঠান করার ইচ্ছে আমার ছিলো। কিন্তু ইদানীং হাতের অবস্থা তেমন একটা ভালো নয়। তাই ইচ্ছা থাকা সত্বেও কিছু করতে পারলাম না।"
মাহসান বললো,
-"কালই বিশাল একটা ফাংশনের এরেঞ্জ করেছিলে তো। সেখানে তো মোটামুটি আমাদের, তৃষ্ণাদের দুই ফ্যামিলির মানুষই এটেন্ড করেছিল। তাহলে নতুন করে আবার রিসিপশন টন করার কি দরকার!"
-"তারপরও! একমাত্র ছেলের বিয়ে! অথচ এই সময়ই হাত টা খালি। আসলে ময়মনসিংহের প্রজেক্টটা নিয়ে খুব আশায় আছি। টাকার উপর টাকা ঢালছি, লাভের মুখ দেখতে পারবো কি না আল্লাহ জানে!"
-"এতো টেনশন করো না। ইনশাআল্লাহ ভালো কিছুই হবে।"
-"হুম,,, যাকগে। বিয়াই কল করেছিল একটু আগে। দুপুরে তৌহিদ আসবে তোকে আর বৌমা কে নিতে। ব্যাগ প্যাক করে রাখিস।"
বলেই টেবিল ছেড়ে উঠে পড়লো মহসিন চৌধুরী। সিংকের দিকে এগুতে এগুতে বললো,
-"বিয়ে কিন্তু শেষ অর্থি। ঐতিহ্য, তোকেও বলছি। আজ থেকে ক্লাস এটেন্ড করো দুজনেই।"

তৃষ্ণা খাবার খেয়ে ঘরে ঢুকতেই পেছন থেকে চেপে ধরলো মাহসান। তৃষ্ণার কাঁধে থুতনি ঠেকিয়ে শাড়ির আঁচলের নিচ দিয়ে ধীরেধীরে এক হাত প্রবেশ করালো তৃষ্ণার পেটে। নাভির কাছে হাত নিয়ে পায়চারী করাতে লাগলো এদিকওদিক।
মাহসানের একএকটা গরম নিশ্বাস পড়তে লাগলো তৃষ্ণার কাঁধ বেয়ে বুকে। সাথে নাভিতে দেয়া সুড়সুড়ি যেনো তৃষ্ণাকে ভাসিয়ে নিয়ে যেতে লাগলো ভালোবাসার এক অথৈসাগরে। চোখ দুটি বন্ধ করে সে নিজের ভর ছেড়ে দিল মাহসানের উপর।
-"তৃষ্ণা?"
-"হু।"
-"তোমাকে একটা জিনিশ দেবার ছিল। কাল রাতেই দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু কাল জিনিশটা দিলে তুমি হয়তো অস্বস্তিতে পড়তে। তবে আজ দিতেই পারি।"
এ পর্যায়ে চোখ খুললো তৃষ্ণা। চোখ মেলতেই এক হাতে থাকা শপিং ব্যাগ মাহসান মেলে ধরলো তৃষ্ণার সামনে। তৃষ্ণার কানের সাথে ঠোঁট ঠেকিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো,
-"ব্যাগে উঠিয়ে ফেলো। তবে খবরদার! রাত হবার আগে খুলেও দেখবে না এতে কি আছে। রাতে জিনিশটা কী সেটা নিয়ে না হয় কথা হবে।"

গাড়ি থেকে নেমে ধীরপায়ে ঐতিহ্য এগুতে লাগলো ভার্সিটির দিকে। গেট দিয়ে ঢুকে সামান্য এগুলেই বাঁ পাশের বিল্ডিং এ ক্লাস হয় বাংলা ডিপার্টমেন্টের স্টুডেন্টদের। ঐতিহ্য গেট দিয়ে ঢুকতে যাবে ঠিক তখনি তার কানে এল একটি ডাক। পিছন ফিরে তাকাতেই মন টা আনন্দে নেচে উঠলো তার। অতি খুশিতে দিশেহারা হয়ে সে দৌড়ে গেল বেশ খানিকটা দূরে দাঁড়িয়ে থাকা নিহালের দিকে।
-"আরে!! ধীরেসুস্থে আসো। এভাবে দৌড়িও না।"
এতোক্ষণে হুশ ফিরলো ঐতিহ্যর। সে নিহাল স্যারের একটা ডাকে এভাবে পিচ্চি বাচ্চার মতো ছুটে আসছিল ভাবতেই লজ্জায় মাথা নিচু করে নিহালের সামনে দাঁড়ালো সে।
-"কি ব্যাপার! মন খারাপ করে দিলাম মনে হচ্ছে?"
মাথা নেড়ে না উত্তর দিল ঐতিহ্য।
-"ভাইয়ের বিয়ে খাওয়া শেষ?"
এবারো মাথা নেড়ে হ্যাঁ জবাব দিল ঐতিহ্য।
-"ক্লাসে তুমি না থাকলে যে ক্লাস টা ফাঁকাফাঁকা লাগে এটা জানো?"
নিহালের এ কথায় ঠোঁটে হাসি ফুটলো ঐতিহ্যর। মুখ তুলে তাকিয়ে সে বললো,
-"চলুন স্যার। এগোই।"
-"হুম। চলো।"
পাশাপাশি হাটতে হাটতে দুজন এগুতে লাগলো ভার্সিটির দিকে। ভেতরে ঢুকে নিহাল ঐতিহ্যকে বললো,
-"তুমি যাও। আমি একটু পর আসছি। একসাথে আসতে দেখলে আবার কে কি বানিয়ে ফেলবে!"
নিহালের কথায় সম্মতি দিয়ে ঐতিহ্য পা বাড়ালো বাঁ দিকে। কিন্তু মাঝপথে আবারো নিহালের ডাকে পিছন ফিরে তাকাতে হলো তাকে।
-"চুল টা খুলে দাও। অসম্ভব মায়াবী লাগে তোমায়, খোলা ওই কোঁকড়া চুলে।"

নিহাল আহমেদ। বয়স ত্রিশ। প্রাইভেট একটি ভার্সিটিতে এ বছরই বাংলায় অধ্যাপনার কাজে নিযুক্ত হয়েছে সে। উচালম্বা, স্বাস্থ্যবান, গোলগাল ধরনের ছেলে নিহাল। বয়স কম হবার কারণে ছাত্রছাত্রীদের সবার কাছেই একনামে পরিচিত সে। ইদানীং আবার কয়েকজন ছাত্রছাত্রী দল ধরে দুলাভাই বলে ডাকতে শুরু করেছে। সবার সামনে না শোনার ভান করে এড়িয়ে গেলেও দুলাভাই কথাটির অর্থ জানতে আর বাকি নেই তার। কিন্তু সব শুনেও চুপচাপ থেকে সে কি এটাই প্রমাণ করছে না, যে এ কথার মাঝে সত্যতা কিছু হলেও আছে!!

ভার্সিটি শেষে বাসায় ফিরতেই ঐতিহ্য মুখোমুখি হলো তৌহিদের। ড্রইংরুমে বসে টিভি দেখছিলো তৌহিদ। ঐতিহ্য কে দেখার সাথে সাথেই হালকা হেসে বললো,
-"কেমন আছো?"
-"জ্বি, ভালো। আপনি?"
-"এই তো আছি। তোমার পড়াশোনার কি অবস্থা?"
-"চলছে মোটামুটি। ভাইয়া ভাবির সাথে দেখা হয়েছে আপনার?"
-"হুম হয়েছে।"
-"অহ! আচ্ছা বসুন তাহলে।"
বলেই ঐতিহ্য ড্রইংরুম ছেড়ে এগুলো নিজের রুমের দিকে।
 
    (চলবে)

সম্পর্কের_টান

 পর্ব-৪

সন্ধ্যা ৭ টার মাঝেই নারায়ণগঞ্জ এসে পৌঁছালো তৃষ্ণারা। শীতলক্ষ্যা নদী তীরবর্তী এলাকা সোনাকান্দা বন্দরে, দোতালা একটি বাসার নিচতলার একপাশের ফ্লাটের ভাড়াটে হিসেবে আজ কয়েকবছর হলো বাস করে আসছে তৃষ্ণারা। ফ্লাটটিতে ছোট ছোট তিনটি রুম সহ দুটি বাথরুম, একটি কিচেন, একটি ড্রইং রুম রয়েছে। তৃষ্ণার বাবা লিয়াকত সাহেব ড্রইং রুমের মাঝখান দিয়ে ভাগ করে একপাশে খাবারের জন্য ছোট্টখাট্টো একটি ডাইনিং টেবিল পেতেছে। ড্রইং রুম সাজিয়েছে পুড়ানো একটি সোফাসেট এবং আগের আমলের একটি টিভি দিয়ে।

বোন এবং বোনের বর কে নিয়ে তৌহিদ বাসায় প্রবেশ করতেই এগিয়ে এল তার মা তৌহিদা বেগম। মেয়ের দিকে ছলছলে নয়নে তাকিয়ে জানতে চাইলো,
-"কেমন আছিস রে?"
মার পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে হেসে জবাব দিল তৃষ্ণা,
-"খুব খুব ভালো, মা। নারায়ণগঞ্জে পা দেবার পর থেকে আমার এতোটা ভালো লাগছে যে, আমি তা বলে বোঝাতে পারবো না।"
মেয়ের মুখের হাসি দেখে মন ভরে গেল তৌহিদা বেগমের। মেয়ের দিক থেকে নজর সরিয়ে মেয়ে জামাইয়ের দিকে দিতেই মাহসান এসে পা ছুঁয়ে সালাম করলো তাকে।
তৌহিদ সেখানে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে এসব কার্যকলাপ লক্ষ করলো। তারপর ধীরপায়ে এগুলো নিজের ঘরের দিকে।

লিয়াকত সরকার এবং তৌহিদা বেগমের বড় এবং একমাত্র ছেলে তৌহিদ। পেশায় একজন উকিল। তেমন নামীদামী উকিলের খাতায় নাম না উঠালেও, খুব অল্প দিনেই সে কামিয়েছে দারুণ প্রশংসা, নাম। ১ বছর আগে ল-পাশ করে কিছুদিন প্রাক্টিস করার পর চারমাস হলো সে খুলেছে নিজের চেম্বার। খুব লম্বা না হলেও পাঁচ ফিট ছয় ইঞ্চি হাইটের শ্যাম বর্ণের ছেলে তৌহিদ। সব দিক দিয়ে ঠিকঠাক থাকলেও শারীরিক ভাবে একটি দিকে দুর্বল সে। জন্মগত ভাবেই ডান পায়ের তুলনায় বাম পা ছোট তার। তৌহিদের জন্মের সময় বাবা লিয়াকত সরকারের অবস্থা অনুযায়ী যথাসাধ্য চিকিৎসা করার পরও প্রতিবন্ধীদের খাতায়ই নাম উঠেছে তার। তাই বাবামা, বোন নিয়ে ছোট্ট সুন্দর একটি পরিবার পেয়েও, স্বাভাবিক একটি জীবন পায় নি সে। তবুও সে থেমে থাকেনি তার এই প্রতিবন্ধকতায়। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটার মাঝেই সে খুঁজে নিয়েছে নিজের দুপায়ে ভর দিয়ে হেঁটে চলার সুখ। পা ছাড়া, হুইলচেয়ারে বসে সারাজীবন কাটানো লোকের অভাব নেই এই দুনিয়ায়।  আল্লাহ তো তবুও তাকে দুটি পা দান করেছেন!!

রাতের খাবার শেষে ঘরে এসে বিছানায় শরীর মেলে দিল ঐতিহ্য। উপর হয়ে শুয়ে একটি উপন্যাসের বই খুলে পাতা উলটাতে লাগলো একেরপর এক। কিছুসময় এভাবে যাবার পর বই বন্ধ করে ফোন হাতে নিল সে। কিছু না ভেবেই ডায়েল করলো নিহালের নাম্বারে।
-"হ্যালো?"
ওপরপাশ থেকে নিহালের গলার আওয়াজ পেতেই বুক ধড়ফড় করতে শুরু করলো ঐতিহ্যর। কাঁপা গলায় বললো,
-"আসসালামু আলাইকুম,,, স্যার!"
-"ওয়ালাইকুম সালাম,, কে বলছো?"
ঢোক গিলে জবাব দিল ঐতিহ্য,
-"ঐতিহ্য বলছিলাম।"
-"অহ আচ্ছা! কি খবর? কেমন আছো?"
-"জ্বি ভালো।"
-"কোনো দরকারে কল করেছো?"
-"হুম,, মানে না। কি করছিলেন আপনি?"
-"তেমন কিছু না। এই একটু ফেসবুকে ছিলাম।"
-"অহ!"
বলেই চুপ হয়ে গেল ঐতিহ্য। ঝোঁকের মাথায় নিহালকে কল করলেও এখন বলার কিছু খুঁজে পাচ্ছে না সে। অবশ্য একজন স্যারের সাথে একজন ছাত্রীর আর কিইবা কথা থাকতে পারে! খেজুরে আলাপ তো আর শুরু করা যায় না স্যারের সাথে।
ঐতিহ্য কে চুপচাপ থাকতে দেখে ওপাশ থেকে নিহাল বললো,
-"হুম!! তুমি কি করছিলে?"
নিহালের প্রশ্নে মুখে হাসি ফুটলো ঐতিহ্যর। উত্তরে বললো,
-"আমি মাত্র ডিনার সেরে আসলাম। আপনি খেয়েছেন?"
-"না!! রান্না হয় নি এখনো।"
-"বলেন কি! এখনো রান্নাই হয় নি!"
-"হুম! কিছুক্ষণ হলো খালা এসেছে বাসায়। এসে রান্না বসিয়েছে।"
-"অহ, আচ্ছা।"
-"জ্বি,, আগে থেকেই সব কিছু রেঁধে বেড়ে গুছিয়ে আমার জন্য অপেক্ষা করবে কেউ, এমন রাজকপাল এখনো হয়ে উঠেনি আমার। বাই দা ওয়ে তুমি রাঁধতে পারো?"

  (চলবে)

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ