গল্পঃ সম্পর্কের টান ।


গল্পঃ সম্পর্কের টান

পার্ট-১+২
লেখকঃ গল্প পড়ি

ভেতর থেকে দরজা লক করে ধীরেধীরে মাহসান এগুলো বিছানার ঘুপটি মেরে বসে থাকা তৃষ্ণার দিকে। বিছানার এক কোণায় বসে নিজের উপস্থিতি জানানোর জন্য হালকা কেশে উঠলো সে।
-"এহেম্মম্ম,,"
মাহসানের উপস্থিতি বুঝতে পেরে সচকিত হয়ে গেল তৃষ্ণা। মুখ তুলে মাহসানের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিতেই মাহসান বলে উঠলো,
-"কবে বাচ্চা নেব আমরা?"
মাহসানের প্রশ্নে নিমিষেই ঠোঁটের হাসি মিলিয়ে গেল তৃষ্ণার। সেখানে এসে ভর করলো একগাদা অস্বস্তি। এটা কি ধরণের প্রশ্ন! বাসর রাতে স্বামী কখনো তার স্ত্রীকে প্রথমেই এমন অদ্ভুত কথা বলে নাকি! লোকটার মাথায় বুদ্ধিশুদ্ধি বলতে কিছু আছে নাকি! বেআক্কেল লোক একটা।।
ওপাশে মাহসানকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে নিজেকে কিছুটা সামলে নিল তৃষ্ণা। মাহসানের দিক থেকে নজর সরিয়ে বিছানার চাঁদরের দিকে দিল সে। হালকা গোলাপি রঙের পুরো চাঁদরের মাঝে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে লাল, কালো রঙের লাভ। খারাপ না নকশা টা। বরং দারুণ!
-"কিছু বলেছিলাম!"
মাহসানের ডাকে এ পর্যায়ে মুখ খুললো তৃষ্ণা। পুরো ব্যাপারটা ভাবতেই লাজুকলতায় ছেয়ে গেলো তার মন। আচ্ছা!! গালটা কি লাল হয়ে গেছে আমার! হয়েছে হয়তো। লজ্জা পেলে নাকি মেয়েদের গাল লাল হয়ে যায়? হায়! হায়! গালটা লাল হয়ে গেলে তো দেখে ফেলবে মাহসান! ভাবতেই নিজের মুখ আরো নিচু করে ফেললো তৃষ্ণা। ধীরগলায় বললো,
-"আপনার ইচ্ছা।"

পারিবারিক ভাবে আজই বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে মাহসান এবং তৃষ্ণার। মহসিন চৌধুরী এবং শান্তি বেগমের তিন সন্তানের মাঝে একমাত্র পুত্র মাহসান চৌধুরী অর্ক। দুই কন্যা ঐতিহ্য এবং অর্থি। ছোট দুই বোনের চোখের মণি যেমন তাদের একমাত্র ভাই, মাহসান,, ঠিক তেমনি ভাইয়েরও দুটি চোখ তার আদরের দুটি বোন ঐতিহ্য এবং অর্থি।
শক্ত সামর্থ্যের গড়নের একটি ছেলে মাহসান। মাথা ভর্তি হালকা কোঁকড়ানো হালকা সোজার মিশ্রণের চুল। জোড়া ভ্রুর সাথে বেশ ছোট ছোট দুটি চোখ, পুরু ঠোঁট, চওড়া কাধ, নিয়মিত ব্যায়ামের ফলে সিক্স প্যাক বডি, ফর্সা গাল ভর্তি খোঁচাখোঁচা দাড়ি। সব মিলিয়ে পাঁচ ফিট নয় ইঞ্চির ছেলে মাহসানের মাঝে রয়েছে চোখ ধাঁধা লাগানোর মতো রূপ। যা একজন মেয়েকে নিজের দিকে আকর্ষিত করার মতো যথেষ্ট। এমবিএ শেষ করে আপাতত বাবার প্রাইভেট একটি ফার্মের দেখাশোনার কাজে রয়েছে সে। অপরদিকে মধ্যবিত্ত একটি পরিবারের মেয়ে তৃষ্ণা। লিয়াকত সরকার এবং তৌহিদা বেগমেত দুই ছেলেমেয়ের মাঝে ছোট তৃষ্ণা। হলুদ ফর্শা গায়ের রঙের মাঝে চিকন স্বাস্থ্যের লম্বা চওড়া গড়নের মেয়ে তৃষ্ণা। বড় বড় দুটি চোখ, তড়তড়া নাক, চিকন ঠোঁট, পিঠ সমান চুল, সাথে নরম স্বভাব। নারায়ণগঞ্জ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এ বছর অনার্স শেষ করেছে সে। হয়তো চোখ ধাঁধা লাগানোর মতো রূপওয়ালি তৃষ্ণা নয়, তবে মানুষকে মুগ্ধ করার মতো আলাদা কিছু রয়েছে তার মাঝে আছে।

বিছানা ছেড়ে উঠে ফ্রেশ হয়ে পায়জামা পাঞ্জাবী খুলে টাউজার এবং একটি টি শার্ট পড়ে ওয়াশরুম ছেড়ে বেরিয়ে এল মাহসান। টাওয়েল দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে এগিয়ে এল তৃষ্ণার দিকে। ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে বললো,
-"হঠাৎ ওমন প্রশ্নে ঘাবড়ে গিয়েছিলে,, না?"
উত্তরে হালকা মুখ নড়িয়ে সম্মতি দিল তৃষ্ণা।
-"আসলে ব্যাপার টা আগে থেকেই ক্লিয়ার করে নিলাম।"
বলতে বলতে বিছানায় বসলো সে। হাতের টাওয়েল এক পাশে নামিয়ে রেখে আবার বললো,
-"ধরো, তুমি যদি এখন আমার প্রশ্নের উত্তর দিতে, দেরি আছে,, এখন না। তাহলে কিন্তু একটা প্রোটেকশনের ব্যাপার আসতো। কিন্তু তুমি উত্তরে বলেছো আমার ইচ্ছে। সেহেতু এখন আর প্রোটেকশন এর ব্যাপার টা আসছে না। এখন তুমি বলো কেনো।"
তৃষ্ণা ধীরে বললো,
-"কেনো?"
-"কারণ আমার ইচ্ছে, আমাদের ফার্স্ট ম্যারিড এনিভারসেরিতে আমাদের পুঁচকে অথবা পুঁচকু আমাদের সাথে থাকুক....।"
মাহসানের বলা কথা গুলো মন্ত্রমুগ্ধর মতো শুনতে লাগলো তৃষ্ণা। ধীরেধীরে মাহসানকে খুব বেশি ভালো লেগে যাচ্ছে তৃষ্ণার। প্রথমে বিয়েতে অমত থাকলেও এখন মনে হচ্ছে বাবা খারাপ কিছু করেনি। মাস্টার্স শেষ করার আগে বিয়ের কথা মাথায় আনতে চায় নি তৃষ্ণা। কিন্তু লিয়াকত সাহেবও কম না। তার যুক্তির কাছে হার মেনে আজ বিয়ের পিরীতে বসতে হয়েছে তৃষ্ণাকে। কি হবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করে! বাবার এই কথা টি কি আসলেই যুক্তিযুক্ত?

-"হাত ধরতে পারি?"
কিছুসময় ভাবার পর মাহসানের দিকে নিজের হাত বাড়িয়ে দিল তৃষ্ণা। মাহসান হাত জোরে চেপে ধরতেই শরীরের লোমগুলো দাঁড়িয়ে গেল তৃষ্ণার। এ এক অদ্ভুত অনুভূতি। দু চোখ চেপে বড় একটা শ্বাস নিয়ে সময়টাকে উপভোগ করতে লাগলো তৃষ্ণা। পড়াশোনার খাতিরে দু একটা ছেলে বন্ধু ছিল তৃষ্ণার। আর তাদের সাথেই চলতে ফিরতে হটাৎ একদুই সময় হাতে স্পর্শ লেগে যেত। কিন্তু তখন তো এমন অদ্ভুত অনুভূতি হয় নি। তাহলে এখন কেন হচ্ছে!
কিছু সময় জোরে হাত চেপে ধরে থাকার পর হালকা করলো মাহসান তার হাতের বাঁধন। তার খসখসে দুটি হাত দিয়ে টেনে টেনে তৃষ্ণার হাতের আঙুল ফুটাতে লাগলো সে।
-"আহ! লাগছে তো!"
তৃষ্ণার এ কথা শুনে দুষ্টু একটা হাসি দিল মাহসান। হঠাৎ মাহসানের এমন হাসি দেখে বোকাবনে গেল তৃষ্ণা। সে কি ভুল কিছু বলে ফেলেছে? এভাবে হাসছে কেন তার কথায় মাহসান?
এর চেয়ে বেশি কিছু ভাবার আগেই এক ঝটকায় মাহসান তৃষ্ণাকে টেনে নিল নিজের বাহুডোরে। গালে ঠোট লাগিয়ে চুমু দিতেই মুখ টা সরিয়ে নিল তৃষ্ণা।
তৃষ্ণার মাথা একদম কাজ করছেনা এখন। কি করতে কি করে ফেলছে সে! এভাবে মাহসানের আদর উপেক্ষা করে মুখ ঘুড়িয়ে নেয়াটা কি ঠিক হলো! মাহসান কিভাবে দেখছে বিষয় টা? আবার এটা ভাবছে না তো তৃষ্ণার অন্য কোথাও, অন্য কারো সাথে সম্পর্ক আছে! এখন তো এমনটাই প্রায় হয়। হয়তো এটাই ভেবে বসবে মাহসান। কিন্তু এটা তো সত্যি নয়। আবার মাহসান এসব উলটা পালটা ভেবে রেগে গিয়ে তাকে এই ঘরে একা ফেলে চলে যাবে না তো! ভাবতেই বুকটা কেপে উঠলো তৃষ্ণার। নতুন একটা বাসায় একা একটা ঘরে থাকা কোনোভাবেই সম্ভব না। তাই আর দেরি না করে ফিরে তাকিয়েই মাহসানের গালে আলতো করে ঠোঁট ছুয়িয়ে দিল তৃষ্ণা। মাহসানও সেই সুযোগে তৃষ্ণার কোমর চেপে নিজের আরো কাছে নিয়ে এল। ঠোঁটে হাসি এনে বললো,
-"লিপ কিস?"
ঠিক সেসময় দরজার ওপাশ থেকে ভেসে এল একটি ডাক,
-"ভাইয়া, ভাইয়া??"
ঐতিহ্যের ডাকে কিছুটা বিরক্তের স্বরে উত্তর নিল মাহসান,
-"হু,, বল। কি চাই?"
-"ভাবি আসতে বলেছিল,, চুলটা খুলে দেবার জন্য। আসবো?"
-"না,, তুই যা। আমি দিচ্ছি।"
ভাইয়ের কথা শুনে মুচকি হেসে নিজের ঘরের দিকে এগুলো ঐতিহ্য।

বিরক্ত গলায় মাহসান বললো,
-"ওকে বলতে হবে কেন চুল খোলবার কথা?"
কাঁপা কাঁপা স্বরে তৃষ্ণা বললো,
-"না.. মানে মাথার উপর এভাবে একটা টুপড়ি নিয়ে আর থাকতে পারছিলাম না। আর পার্লার থেকে যেভাবে চুল বেঁধে দিয়েছে তাতে আমার একার পক্ষে খোলা সম্ভবও না। তাই আর কি.."
-"এতো স্বাস্থ্যবান একজন হাজবেন্ড পেয়েছো তুমি। অথচ তাকেই চোখে পড়ছিল না তোমার!"
-"পড়েছে। কিন্তু আমার মনে হচ্ছিল আপনি আমার চুল খুলতে না পেরে টেনেটেনে ছিঁড়ে ফেলবেন।"
-"সেটা না হয় দেখাই যাবে। যান এখন উঠেন। আর ফ্রেশ হয়ে আসেন। আম্মা দুজনকে একসাথে নফল নামাজ পড়তে বলেছে।"
অবাক হয়ে তৃষ্ণা বললো,
-"হঠাৎ আপনি আপনি করে বলছেন কেন?"
-"আপনিও আপনি করে বলছেন তো তাই ভাবলাম আমিও না হয় বলি।"
-"তাহলে বলেন। ভালোই লাগছে শুনতে।"
বলেই তৃষ্ণা বিছানা ছেড়ে উঠে ব্যাগ থেকে একটা কামিজ বের করে ওয়াশরুমে ঢুকলো।
মাহসান ঘরের মাঝে কিছুক্ষণ পায়চারী করার পর আলমারি খুলে একটি শপিং ব্যাগ বের করে বিছানায় রেখে অপেক্ষা করতে লাগলো তৃষ্ণার জন্য।

ভাইয়ের বিয়ের সারাদিনের ধকল শেষে বিছানায় গা মেলে দিল অর্থি। চোখ বন্ধ করে  বড় করে একটি নিশ্বাস ফেলতেই ফেসবুকে একটু টু মারার কথা মনে পড়লো তার। আইডিতে লগ ইন করে নিউজফিড দিয়ে কিছুক্ষণ ঘোড়াঘুড়ি করার পর ফোনটা বিছানার মাঝে ফেলে চোখ বুজলো অর্থি। নোটিফিকেশন টোনে আবারো চোখ খুলে ফোন হাতে নিতেই একটি ম্যাসেজ পেল সে।

Riyad Ahmed Rayan - Rajshahi kothay apnader gramer basa eta to bollen na..
রিপ্লাই দেবে কি দেবে না সেটা নিয়েই কিছুক্ষণ ভাবলো অর্থি। একসময় টাইপিং শুরু করে দিল সে।
Orthi Chowdhury- সমস্যা কোথায় আপনার! বলুন তো?😕 আপনি রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে ছিলেন আমি এক্সেপ্ট করেছি। তারপর শুধু জিগাইছিলাম আমি আপনাকে চিনি কিনা! আমার গ্রামের বাড়ি ও তো রাজশাহী। ব্যাস!🙄 এরপর থেকেই আপনার লুচুগীরি শুরু হয়ে গেছে। এখনো সময় আছে ভালো হয়ে যান। ভালো হইতে পয়সাকড়ি লাগে না।🤧

 (চলবে)

সম্পর্কের_টান

 পর্ব-২

একসাথে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করার পর তৃষ্ণা এগুলো ড্রেসিং টেবিলের দিকে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে একবার দেখে নিল সে। মাহসানদের বাড়ি থেকে দেওয়া স্টোনের বড় নাকফুলটা তার সৌন্দর্য যেন বাড়িয়ে দিয়েছে শতগুণ। নিজেই নিজেকে আয়নায় দেখে মুচকি হাসলো তৃষ্ণা। তারপর বিছানায় বসা মাহসানের দিকে তাকিয়ে বললো,
-"আপনার ড্রেসিং টেবিলে তো তেল চোখে পড়ছে না। তেল মানে মাথায় দেবার তেল। কোথায় রেখেছেন?"
-"আমার ড্রেসিং টেবিলে তুমি কোন আশায় তেল খুঁজছো? আমি মাথায় তেল দেবো বলে তোমার মনে হয়?"
মাহসানের উত্তরে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল তৃষ্ণা। আসলেই তো! ছেলেরা মাথায় কখনো তেল দেয় নাকি! তার নিজের ভাইই তো জীবনে তেলের ত মাথায় দিয়েছে কিনা সন্দেহ! নিজের এমন অদ্ভুত প্রশ্নে নিজেই কিছুটা অবাক হলো তৃষ্ণা। আমতাআমতা করে জবাব দিল,
-"না,, মানে আমি ভেবেছি হয়তো আমার জিনিশ গুলো এই ঘরেই পাবো।"
-"সেটা তো পাবেই। তবে নিজে সেগুলো ঠিকঠাক ভাবে গুছিয়ে নেবার পর। তুমি দেখছি অনেক চুপচাপ, আনাড়ি। জড়তাও আছে অনেক। মনে হচ্ছে আমারই সব কিছু শিখিয়ে পড়িয়ে নিতে হবে।"
-"হু।"
-"বিয়ের ডালার ভেতরে তেলও দেয়া আছে। আমি নিজেই অবশ্য সাথে থেকে নিজের বিয়ের শপিং করেছিলাম। যাই হোক এখন কি মাথায় তেল দেবে?"
-"হু। জট গুলো ছাড়াতে তেল লাগবে।"
আর কথা না বাড়িয়ে নিজেই বিছানা ছেড়ে উঠে তেল বের করে এনে তৃষ্ণার পাশে দাঁড়িয়ে বললো,
-"বসে পড়ো টুলটায়।"
চুপচাপ বসে পড়লো তৃষ্ণা। অপরদিকে মাহসান লেগে পড়লো জট ছাড়ানোর মিশনে। দীর্ঘ এক ঘন্টা চুল আর জটের সাথে লড়ে অবশেষে সফল হলো সে। বিশ্বজয়ের হাসি ঠোঁটে ফুটিয়ে সে বললো,
-"কি!! পাড়লাম তো?"
আয়নায় দেখা মাহসানের ওই হাসি তৃষ্ণার বুকে গিয়ে ফুটলো তীরের মতো। তার সামনে দাঁড়ানো এই সুপুরুষই কি আজ থেকে সারাটা জীবনের জন্য তার? হুম, তার। শুধুই তার। যার হাসির দিকে তাকিয়েই তৃষ্ণা কাটিয়ে দিতে পারবে বছরের পর বছর অনায়াসে।

সারাদিনের ঝইঝামেলা শেষে ক্লান্তিমাখা শরীরটা তৃষ্ণা মেলে দিল বিছানায়। একপাশে জড়সড় হয়ে শুয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো মাহসানের জন্য।
-"শুয়ে পড়েছো?"
মাহসানের গলার আওয়াজ পেয়ে হুড়মুড়িয়ে শোয়া থেকে উঠে বসলো তৃষ্ণা। আতংকিত গলায় বললো,
-"হু।"
-"উঠলে কেন? শুয়ে থাকো।"
-"হু,, আপনার হাত থেকে তেলের স্মেল গিয়েছে?"
নাক শিটকে মাহসান বললো,
-"উহু!! কেমন যেন মনে হচ্ছে আছেই।"
-"এটা আপনার মনের ভুল। মন থেকে তেল শব্দটা সরিয়ে ফেলুন। তখন দেখবেন আর স্মেলও পাবেন না।"
-"হতে পারে। শুয়ে পড়ো তুমি।"
বলতে বলতেই ঘরের আলো নিভিয়ে বিছানার বাম পাশে এসে শুয়ে পড়লো মাহসান।
কিছু সময় সেভাবেই চুপচাপ বসে থাকার পর তৃষ্ণা বললো,
-"কিছুক্ষণ আগেই তো আমাকে আপনি বলে সম্বোধন করছিলেন। আবার দেখছি এখন তুমি করে বলছেন।"
একপাশ হয়ে তৃষ্ণার দিকে ফিরে মাহসান বললো,
-"আবার আপনি বলে সম্বোধন করলে একটা চুমু খেতে দেবে আমায়?"
ঢোক গিলে তৃষ্ণা বললো,
-"সেটা বলি নি।"
-"তাহলে কি বলেছো?"
-"কিছু ন.."
কথা শেষ করার আগেই তৃষ্ণার হাত টেনে বিছানায় শুয়িয়ে দিল মাহসান। তারপর নিজের ভর টাও ছেড়ে দিল তৃষ্ণার শরীরের উপর।
পুরো শরীরজুড়ে একটি ঘোড় কাজ করতে লাগলো তৃষ্ণার। পরম আবেশে চোখ দুটো বন্ধ করে মাহসানের নিশ্বাসের মাঝে ডুবে গেলো সে।
মাহসান তার ঠোঁটজোড়া ডুবিয়ে দিল তৃষ্ণার গলায়। শতশত চুমোয় ভরিয়ে দিতে লাগলো তৃষ্ণার গলা, কাঁধজুড়ে। ধীরেধীরে উপরে উঠে আসতে লাগলো মাহসানের ঠোঁট। অপরদিকে তৃষ্ণার নিশ্বাস ধীরেধীরে ভারী হতে শুরু করেছে বুঝতে পেরে তৃষ্ণার নাকের সাথে নাক ঘষতে ঘষতে মাহসান ডাকলো তৃষ্ণাকে।
তখনো চোখ টা বন্ধ করে মাহসানের আদর উপভোগ করছিল তৃষ্ণা। মাহসানের এক একটা স্পর্শে এক অদ্ভুত অনুভূতির জন্ম দিতে শুরু করেছে তার শরীরজুড়ে। হার্টবিট যে কতোতে উঠে এসেছে সেটা অজানা। বুকের ভেতর থেকে শুধু ধরাম ধরাম হাতুড়ি পেটানোর আওয়াজ ভেসে আসছে তার কানে। মাহসানের ঠোঁটের একেকটা চুমোয় এক অজানা ভালোলাগা কাজ করছে তার মাঝে, শিহরিত করে তুলছে তাকে। মাহসানের কাছে আসায় এতোটা ভালোলাগা কাজ করবে জানলে কখনওই এতোটা সময় এভাবে খেজুরে আলাপ জুড়ে নষ্ট করতো না সে। ভেবেই মাহসানের গলা দুহাতে জড়িয়ে ধরলো তৃষ্ণা। কাঁপাকাঁপা গলায় বললো,
-"হু।"
-"শুধু নিলেই হবে? দিতে হবে না?"
মাহসানের কথায় ধীরেধীরে চোখ খুললো তৃষ্ণা। মাহসানের চোখের দিকে তাকিয়ে কপালে গভীরভাবে একটি চুমু বসিয়ে দিল সে।
তৃষ্ণার দিক থেকে পজিটিভ সিগনাল পেয়ে আর দেরি করলো না মাহসান। নিমেষের মাঝেই শুষে নিতে শুরু করলো তৃষ্ণার ঠোঁট।
খানিকটা সময় নিয়ে গাঢ়ভাবে চুমু খাবার পর উঠে বসলো মাহসান। নিজের গায়ের টিশার্ট টেনে খুলে হাত বাড়ালো তৃষ্ণার কামিজের দিকে।

ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করতেই ফোন বেজে উঠলো ঐতিহ্যর। বিছানায় গা মেলে দিয়ে ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে তনির গলার আওয়াজ ভেসে এলো।
-"কখন থেকে কল করেই যাচ্ছি। রিসিভ করছিলি না কেনো?"
-"চার্জে রেখে একটু বাইরে গিয়েছিলাম। তো এতো বার কল কেন? কিছু হয়েছে?"
-"কি হয় নি সেটা বল!"
-"প্যাচাচ্ছিস কেন, দোস্ত! বল না কি হয়েছে?"
-"নিহাল স্যার!!"
বলেই থামলো তনি। অপেক্ষা করতে লাগলো ঐতিহ্যর প্রতিক্রিয়ার জন্য।
-"স্যারের কিছু হয়েছে!"
-"হ্যাঁ,, অনেক কিছু হয়েছে।"
অসহায় গলায় ঢোক গিলতে গিলতে ঐতিহ্য বললো,
-"কি হয়েছে?"
-"জ্বর, গলা ব্যথা, ঠান্ডা, জন্ডিস, ডাইরিয়া।"
বলেই হেসে গড়িয়ে পড়লো তনি।
কাঁদোকাঁদো গলায় ঐতিহ্য বললো,
-"মজা করিস কেন আমার সাথে তোরা! আমি নরম বলে সব সময় বলির পাঠা আমাকে বানিয়ে মজা নিস তোরা। এটা কিন্তু মোটেও ঠিক না।"
-"আচ্ছা!! যা সরি। সরিইইইইইই। এখন আসল খবর শোন।"
-"ইটস নট ওকে। সবসময় ভালোলাগে না এসব, তনি।"
-"বাল! ইমোশনাল কথা রেখে আমার কথা শোন।"
-"বল।"
-"এই তিন দিন ক্লাসে এসেই স্যার আগে তোর কথা জিজ্ঞেস করেছে। আহ!! তার কথায় কি বিরহ!! ব্যাচারা তিন দিন হলো তোকে না দেখতে পুরো দেবদাস হয়ে গেছে।"
-"আবারো মজা করছিস!"
-"গড প্রমিজ! এটা ফান না।"
তনির কথা শুনে মনটা আনন্দে ভরে গেল ঐতিহ্যর। তবে সেটা বাইরে প্রকাশ না করে কিছুটা ধমকের সুরে ঐতিহ্য বললো,
-"তো কি হইছে! এস আ স্যার ছাত্রীর খোঁজ নিয়েছে সে। এতে এতো লাফানোর কি আছে! রাতবিরেতে কল দিয়ে কি না কি বলিস! রাখলাম এখন। বাই।"
বলেই কল কেটে দিয়ে চোখ বুজলো ঐতিহ্য। তার সামনে ভেসে উঠলো নিহাল স্যারের ক্লাসে দেয়া লেকচারের চিত্র।

আড়মোড়া ভেঙে হাই তুলতে তুলতে বিছানা ছেড়ে উঠলো অর্থি। বালিশের পাশে থাকা ফোন হাতে নিতেই রায়ান নামের ছেলেটির ম্যাসেজ দেখে মেজাজটা চরতম খারাপ হয়ে গেল তার।
Riyad Ahmed Rayan - আমিও শুধু জানতে চেয়েছিলাম রাজশাহীর কোন এলাকায় আপনাদের গ্রামের বাড়ি। আর এই প্রশ্নের কারণেই লুচু হয়ে গেলাম!🙄 আজব এক জাতী আপনারা। সোজা কথা কখনো সোজা ভাবে নেন না। সবসময় ঘুড়িয়ে পেঁচিয়ে উলটে পালটে সেটা মাথায় ঢুকান। বত্ব ভালো থাকবেন। শুভ রাত্রি।😣

ছেলেটা কি একটু বেশিই ভাব নিচ্ছে না? আমারই উচিৎ হয় নি রিকোয়েস্ট এক্সেপ্ট করার। কি দরকার ছিল এমন ক্লাসলেস একটা ছেলের রিকোয়েস্ট এক্সেপ্ট করার! অবশ্য এক্সেপ্ট না করলে তো জানতেও পারতাম না এর চরিত্রের খবর। তাই আর দেরি না করে অর্থি ছেলেটির প্রোফাইলে ঢুকলো আনফ্রেন্ড করার উদ্দেশ্যে। কিন্তু সেটি আর হয়ে উঠলো না। ১ ঘন্টা আগের দেয়া একটি স্ট্যাটাসে চোখ আটকে গেল অর্থির।
      'সম্পর্ক অনেক থাকে। তবে সব সম্পর্কের টান থাকে না। হয়তো আমার বাবার সাথেও আমার সম্পর্কের টান তেমন একটা ছিল না। তাই তো আজ আমায় এতিম করে দুনিয়া ছেড়ে বিদায় নিল সে।'

  (চলবে)

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ