নষ্টা মেয়ে
পর্ব ৭+৮
একটুর জন্য মুখে লাগেনি মুখটা ঘুরাতেই ঘাড়ে আর বুকে পড়েছে।
আব্বু আম্মু উপরে উঠেই মিথিলার পুড়ে যাওয়া দেখেই রিমন বলে চিৎকার দিয়ে উঠলো।
আব্বু আম্মুর এমন রেগে গিয়ে চিৎকার করতে দেখে তাড়াতাড়ি বলে দিলো আব্বু রিমনের কোনো দোষ নেই।
চায়ের কাপটা টেবিলে রেখে নিচু হয়ে পায়ের নুপুর ঠিক করতে গিয়ে বে খেয়ালে গায়ে ডেলে পড়েছে।
আব্বু আম্মুও বিষয়টা মেনে নিলো।আর যেতে যেতে মলম টা বের করে মিথিলাকে লাগিয়ে দিতে বললো।
রিমন বেশ অবাকি হলো মেয়েটা কেমন মিথ্যা বলে বাচিয়ে দিলো।বাঙালি নারী চেনার সাধ্য কারো নেই।
তবে মিথিলার জ্বলে জাওয়া দেখে বেশ অট্ট হাসি হেসে বলে দিলো দেখলি তো স্ত্রী সাজার কেমন মজা।সব সময় পাশে থাকবি তবে স্পর্শ করবি না। স্পর্শ করলে তার ফল এমনি পাবি।
নে ধর তাড়াতাড়ি মরমটা লাগিয়ে বিদেয় হ।
মলমটা হাতে নিয়ে আয়নার সামনে দাড়িয়ে আছি।বুকের কাপড় টা আলগা করে মলমটা লাগাতে হবে।
তবে আয়নাতে স্পস্ট দেখা যাচ্ছে পুড়ে যাওয়ার চাইতে নখের দাগ টাই বেশি।কাল রাতের আচড় এখনোও মনে হচ্ছে রক্ত ফেটে বের হবে।
মলম লাগিয়ে কাপড়টা বেশ করে মুড়িয়ে দিলাম কেউ দেখলে কেলেংকারি বেধে যাবে।
রিমনও ফ্রেস হয়ে বেরিয়ে এলো।ততখনে রুমটাও পরিষ্কার করে নিয়েছি।এখন যানতেই হবে রিমন কেন এমন করছে।আজ যে করেই হোক সত্যটা বের করতেই হবে।
রিমন তোমার কাছে একটা দাবি ছিলো।না করবে না প্লিজ।
আমার কাছে তোর আবার কিসের দাবি।কোনো দাবি করতে পারবি না।
তুমি মানো আর না মানো আমি তো তোমার স্ত্রী।আর কখনো কিছুই চাইবো না তোমার কাছে।প্লিজ না করো না।
মিথিলার এমন মিনতি করতে দেখে রিমনের মন কিছুটা শান্ত হলো।ওকে বল কি চাস তবে হ্যা স্বামির দাবি করবি না।
আচ্ছা স্বামির দাবি করবো না শুধু এটুকু বলো আমি কি এমন করেছি যার জন্য তুমি এমন বদলে গেলে।আমিতো কোনো দোষ করিনি তাইলে আমাকে কেন এতো শাস্তি দিচ্ছো।আর অজানাতে কোনো দোষ করলে আমাকে মাফ করে দাও প্লিজ।
তোমার কাছ থেকে এমন নোংরা কথা আর নোংরা আচারন আমাকে অনেক কষ্ট দিচ্ছে।
রিমন এবার অনেক রেগে গেলো।বেশ ধমকের সাথে তুই কোনো দোষ করিসনি? কাউকে মানসিকভাবে আঘাত করিসনি? কাউকে বেচে থেকেও মেরে ফেলিসনি।এগুলো অপরাধ না?
কি বলছো? আমিতো কিছুই বুঝতে পারছি না। আমি কাকে অমানষিক আঘাত করলাম।কাকে না মেরে বাচিয়ে রেখেছি।কি বলছো এসব?
তাই কিছুই বুঝতে পারছিস না? একে চিনতে পারিস মোবাইলে একটা ছবি দেখিয়ে।
মিথিলা ছবিটা দেখেই বললো সজিব।সজিবের ছবি তুমার কাছে কেমন করে।
হ্যা সজিব।চিনতে পেরেছিস তাহলে।সজিব আমার ছোটো খালা মনির ছেলে।আমার খালামনির এই একটাই ছেলে।
পৃথিবীতে এই ছেলে ছাড়া আর কেউ নেই।সেই ছেলের নিথর দেহ নিয়ে নিরবে কেদে চলেছে।শুধু তোর জন্য।
মিথিলা:আমার জন্য? আমি তো কিছুই করিনি সজিবের সাথে।সজিবতো আমার খুব ভালো বন্ধু ছিলো।
খুব ভালো বন্ধু ছিলো আর কিছু না? সজিবের সাথে মিথ্যে প্রমের নাটক করলি কেন? তোর মিথ্যা ভালোবাসার আঘাত সইতে না পেরে নেশা করে ড্রাইভ করার সময় সামনাসামনি আসা ট্রাকে ধাক্কা মারে।
আজও কোমায় রয়েছে।জীবনটা তো টিকটিক করছে কিন্তু শরীরটা অনেক আগেই মারা গেছে।
আর ওই জীবন্ত লাশ বুকে নিয়ে আমার খালামনি তোকে কষ্ট পাওয়ার অভিশাপ দিচ্ছে।আর তুই আমার কাছে সুখ ভিক্কা চাইছিস?
এটাতো সবে শুরু তুই সুখ ভিক্কা চাইতে চাইতে ক্লান্ত হয়ে যাবি তবুও সুখের নাগাল পাবি না।
মিথিলা:রিমন এসব তুমি কি বলছো? সজিব তো কখনো আমাকে বলেই নি ও আমাকে ভালো বাসে।আমিও কখনো ওর সাথে মিথ্যা প্রেমের নাটক করিনি।তোমার কোথাও ভুল হচ্ছে।
যতই সত্যকে মিথ্যা বলার চেষ্টা করিস না কেন তোর কথাই মন গলবে না।আমি সব জেনেই বলছি।তোরি সব চাইতে কাছের বান্ধবি অরনির কাছ থেকে জেনেছি ভুল হওয়ার কোনো চান্স নাই।
আর অরনি এও বলেছে তুই সজিবের মতো অনেক ছেলের জীবন নষ্ট করেছিস।
তোর কোনো ক্ষমা নেই।
সজিবের কথা মনে পড়তেই রিমনের চোখে জল চলে আসলো।চোখের জল মুছতে মুছতে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
মিথিলাও অরনির কথা শুনে থমকে গেল।অরনি মিথিলার বেস্ট ফ্রেন্ড এমন কিছু নেই যা অরনি জানে না।
সেই অরনিই কিনা তার সংসার ভাংতে এমন মিথ্যা অপবাদ দিলো।
কিন্তু অরনি কেন করবে এমন আমি তো অরনির কোনো ক্ষতি করিনি।নিজের বোনের মতো ছিলাম আমরা।
পুরো পৃথিবীটা আজ বেইমানের রাজ্য মনে হচ্ছে।কাকে বিস্বাস করবো।
এক দিকে ভালো বাসার মানুষের পশুর মতো আচারন অন্য দিকে অরনির মিথ্যাচার।
তা হলে কি এই পৃথিবীতে আমার কোনো সুখের অস্তিত্ব নেই।কারো ভালোবাসার যোগ্য না।
রিমন না হয় মিথ্যাকে সত্য ভেবে কষ্ট দিচ্ছে কিন্তু অরনি? অরনি কেন এমন মিথ্যা অপবাদ দেবে? আমাকে কষ্ট দেওয়াতে অরনির কি লাভ।
এখনি জানতে হবে এখনি অরনি কে ফোন করবো তাহলে সত্যটা বুজতে পারবো।
,,,,,,
এদিকে রিমন সকালের নাস্তা না করেই হন্ত দন্ত হয়ে বাইরে চলে গেল।
ছেলের এমন ভাবে চলে যেতে দেখে নাসির সাহেব আর রাহেলা বেগম উপরে উঠে এলেন।এসেই দেখে মিথিলা এখনো দেওয়াল ঘেশে বসে কান্না করছে।
জিজ্ঞাস করাতে কোনো কাজ হলো না।রাহেলা বেগম রিতি মতো ভয় পেয়ে যাচ্ছেন।ছেলে রেগে চলে গেল এদিকে মিথালাও পড়ে পড়ে কান্না করছে।
অনেক জিজ্ঞাসা বাদের পরে আম্মু আপনার ছেলে আমাকে ভুল বুঝছে।আমাকে না জেনেই দুরে ঠেলে দিচ্ছে।
রাহেলা বেগমও মিথিলার এমন কান্না দেখে কেদে দিলো মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে দিলে রিমন আসলে ওকে বুঝিয়ে বলবে।
কিন্তু আজ শান্তনাতেও মন গলছে না।সব কিছুই ঠুংকো মনে হচ্ছে।আব্বু আম্মু বেশ কিছুক্ষন বুঝিয়ে নিচে চলে গেলো।
সাথে সাথেই অরনির কথা মনে পড়ে গেল।অরনির সাথে কথা বলতে পারলেই সব কিছুর সমাধান পাওয়া যাবে।
ফোনটা নিয়েই অরনিকে কল করলো।দুইবার বেজে গেলো কিন্তু রিসিভ করলো না।হয়তো কোনো কাজে ব্যাস্ত আছে।একবার আন্টিকে ফোন করলে অরনিকে পাওয়া যাবে।
আসসালামু আলাইকুম আন্টি।আন্টি আমি মিথিলা বলছি,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
(বেশ কিছু সময় কথা হলো)
কোনো কাজই হলো না অরনি বাসাই নেই নানু বাড়িতে গেছে আসবে দুই সপ্তাহ পরে।
তার মানে আমাকে আরো দুই সপ্তাহ এই দ্বিধাদ্বন্দের মধ্যেই কাটাতে হবে।
এক মাত্র অরনিই পারে আমার সংস্বার ফিরিয়ে দিতে।
অরনির কথা উঠতেই মনে পড়ে গেল বেশ কয়েক বছর আগেকার কথা।সবে মাত্র মাধ্যমিকে পা দিয়েছি।বাবার ট্রান্সফার হওয়াতে নতুন জায়গা নতুন পরিবেশ।কিছুই জানি না চিনি না রিতিমতো ভয় পাচ্ছি।ছোটো থেকেই একটু ভিতু ধরনের।তার উপর সবই অজানা অচেনা।
হেটে চলেছি হঠাৎই,,,,,,,,,
.
.
চলবে,,,,
নষ্টা মেয়ে
পর্ব ৮
.
.
ছোটো থেকেই মিথিলা কিছুটা ভিতু টাইপের তার উপর নতুন পরিবেশ।সবই অজানা অচেনা।মিথিলা সামনে হেটে চলেছে হঠাতি পেছন থেকে এক দল মেয়ে অনেক হাসি ঠাট্টা করতে করতে এগিয়ে আসছে।সব গুলাই উড়নচন্ডী টাইপের।
বেশ কয়েক জনের কাছে জিজ্ঞাস করে ষষ্ঠ শ্রেনীর ক্লাসটা খুজে পেলো।ক্লাসে ডুকেই দেখে সব বেঞ্চগুলি ভরাট শুধু ওই মেয়েগুলার পাশের সিটটা বাদে।
মেয়েগুরোর পাশে বসতেও ভয় করছে।তারা সবাই সবার চেনা তার মধ্যে আমি কাউকেই চিনি না।ক্লাস শেষে বাসাই ফিরছি তখনি পেছন থেকে একটা মোটকা টাইপের ছেলে ইসারা করছে সাথে তার অনেক সাঙ্গপাঙ্গ।রিতি মতো ভয় পেলেও তাদের কাছে যেতেই মোটকা বললো সবাইকে আইসক্রিম খাওয়াতে হবে।কিন্তু আমার কাছেতো ওতো টাকা নেই।
ছেলেটা বলে দিলো আইসক্রিম না খাওয়ালে দশবার কান উটবস করতে হবে।
কান উটবসের কথা শুনে কেদেই দিয়েছি তখনি দেখি সবাই উদাও হয়ে গেছে।পাশে সেই গুন্ডা টাইপের মেয়েটা।
কিন্তু মেয়েটার দেখতে যেমনি হোক মনটা অনেক ভালো হাত বাড়িয়ে আমি অরনি।আমিও হাত বাড়িয়ে বললাম আমি মিথিলা।আমাদের বেশ বন্ধুত্ব হয়ে গেলো।অরনি আর আমাদের বাসাটা একই রাস্তায় তাই দুইজন একসাথেই যাওয়া আসা করতাম।
এভাবেই অরনির সাথে প্রথম পরিচয় তার পর এক সাথে মাধ্যমিক উচ্চ মাধ্যমিক দিয়েছি।অরনির বাসাতেও যাতায়াত করতাম আন্টি বেশ মিশুক আর সাদাসিদা মানুষ।প্রথম আলাপেই আপন করে নেওয়ার মতো।
ভাগ্যক্রমে আমাদের দুজনরই একি ভার্সিটিতে এডমিশন হলো।
এতো দিন শুধু পড়াতেই ব্যস্ত থাকায় ঘুরাঘুরি হই হুল্ল করা হয়নি তবে এবার ইচ্ছে মতো ঘুরা যাবে।তবে কখনো আমি বা অরনি কেউই কোনো প্রকার রিলেশন করিনি।আমরা সিঙ্গেল লাইফ অনেক এনজয় করি।
কলেজে ভর্তি হওয়ার দিন সেকি কান্ড।ভিড়ে উপচে পড়ছে।ব্যাংক ড্রাফ্ট করতে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি।কিন্তু একটি ছেলে এসেই কোনো লাইনে না দাঁড়েই টাকাটা জমা দিয়ে দিলো।
অরনি এমনিতে অনেক রাগি তার উপর অনিয়ম দেখেই ছেলেটির সাথে ঝগড়া বাদিয়ে দিলো।ছেলেটিও প্রান বাচাতে বললো আপনাদের কাগজ পত্রগুলি দিন।বাহ দুমিনিটেই কাজ শেষ আর এতো সময় লাইনে দাড়িয়ে ছিলাম।ছেলেটি হয়তো কোনো নেতা টাইপের কিছু হবে তাইতো এতো খাতির।যাক ভালোয় ভালোয় কাজটা মিটলো।হাফ ছেড়ে বাচলাম।
আগামি কাল প্রথম ক্লাস শুরু হবে টাই খুব সেজেগুজে রিকসা নিয়ে কলেজে পৌছে গেলাম।কিন্তু এসেও কোনো লাভ হলো না প্রথম ক্লাসটা হবে না স্যার আজ অনুপস্হিত।সবাই ক্যাম্পাসে বসে আছি।কিন্তু কিছুদুরের বকুল গাছটার দিকে চোখ যেতেই চোখ আটকে গেলো।গত দিনের সেই ছেলেটি একা একা দাড়িয়ে আছে।কাল আমাদের কতো বড় একটা উপকার করলো একটা ধন্যবাদ পর্যন্ত দেওয়া হয়নি।তবে আজ যখন সুযোগ এসেছে হাত ছাড়া করা ঠিক হবে না।
হাই ছেলেটির উদ্দেশ্যে।
ছেলেটি একটু ইতস্ত হয়ে জি আমাকে বলছেন?
মিথিলা:এখানে যেহেতু আর কেউ নেই তো আপনাকেই বলছি।আর হ্যা আমাদের দুইজনের পক্ষ থেকেই ম্যেনি মেনি থ্যাংকস।
ছেলেটি:কেন?
কাল যে আপনি অনেক উপকার করলেন।তা এখানে দাড়িয়ে কেন কোনো কাজে এসছেন বুঝি।
কাজে কেন হবে আমিতো ক্লাস করতে এসেছি কিন্তু স্যার আসেননি তাই দাঁড়িয়ে আছি।
তা একা কেন আপনার বন্ধুরা কোথায় ?
আসলে আমার কোনো বন্ধুই এখানে ভর্তি হয়নি বলতে পারেন একা।
অরনি:ওহ তাই বুঝি,,, আমি অরনি হাত বাড়িয়ে।
আমি সজিব।আর আপনি?
আমি মিথিলা।
অরনি:আজ থেকে তাইলে আমরা ফ্রেন্ডস।
ভালোয় হলো আমাদের ও কেউ পরিচিতো নেই একজনতো বন্ধু হলো।তিনজনই আরো বেশ খানিকটা পরিচিতো হয়ে গেলাম।বাসা কোথায় ফ্যামেলিতে কে আছে।
এক সাথে ক্লাস করে বের হতেই দেখি সজিবের পার্সনাল প্রাইভেট কার আছে কিন্তু দেখলে বোঝায় যায় না।কথাতে কোনো অহংকারের ছাপ নেই।
সজিব:অরনি মিথিলা উঠে এসো তোমাদের ড্রপ করে দিবো।
শত মানা করাতে ও শুনলো না উঠতেই হলো।খানিকটা আসতেই অরনি সজিবের বাসার এডড্রেস জিজ্ঞাস করলো।
কিন্তু একি সজিবের বাসাতো আমাদের বাসার উল্টা দিকে।
সজিব:তাতে কি তোমাদের নামিয়ে উল্টো রাস্তা হয়ে বাসাই যাবো।আমার তো রিক্সার চিন্তা নেই।আমাদের নামিয়ে উল্টা রাস্তা ধরে ফিরে গেলো।আমরা কৃতজ্ঞতার সরুপ এক কাপ কফি খাওয়ার অফারো করেছি আজ না বলে চলে গেল।
মিথিলা:সজিব ছেলেটা অনেক ভালো তাই নারে অরনি? একদিনেই কেমন বন্ধুত্ব করে নিলো।
আচ্ছা চল দ্রুত ফ্রেস হয়ে নে বিকালে ফুসকা খেতে চৌরাস্তা যাব।বেশি সন্ধ্যা হলে ভাগে মিলবে না।
এখন সজিবের সাথে বেশ বন্ধুত্ব হয়েগেছে বলতে গেলে বেস্ট ফ্রেন্ড।দুই মাসেই মনে হচ্ছে কতো আগের চেনা।এখন আর আপনি আর তুমিতে কথা হয় না সেটা তুই তে নেমে এসেছে।
এ ভাবে কলেজ আর বাসা করতে করতে আবারো ক্লান্তি চলে এসেছে।কোথাও লংড্রাইভে গেলে ভালো হতো।
পেছন থেকে,,,ভালো হতো বলছিস কেন যেতে কেউ নিষেধ করেছে নাকি? কালই চল দূরে কোথাও ঘুরে আসি।
অরনি:হ্যা মিথিলা চল কালই ঘুরে আসি এভাবে থাকতে থাকতে এক ঘেয়ে ধরে গেছে।ঘুরে আসলে মন অনেক হালকা থাকে।
দুজনের আবদারে মিথিলাও রাজি হয়ে গেল।সারাদিন ঘুরে সন্ধ্যায় ব্রিজে দাড়িয়ে আধো আলো সূর্য দেখতে বেশ চমৎকার লাগছে।সজিব গাড়ির পেছনে রাখা গিটার টা নিয়ে গলা ছেড়ে গাইতে লাগলো,,,,,(দুঃখিত কোনো গান জানি না আপনাদের ইচ্ছা মতো একটা গান গেয়ে নিয়েন),,,,,
মিথিলা আর অরনি মুগ্ধ হয়ে শুনছে।বিকালের পরিবেসের সাথে গানটি বেশ মানিয়েছে।
অরনি:বাহ সজিব তুই এতো সুন্দর গান করিস আগে বলিসনি তো।
সজিব:আরে আমার ডান পাশে রক্ত জবা আর বাম পাশে গোলাপের মতো সুন্দরী দাড়িয়ে আছে গান না এসে যাবে কই?
অরনি:কিহ মিথিলা রক্ত জবা আর আমি গোলাপ? তোর রক্ত জবা অনেক পছন্দের জানি তাই বলে মিথিলাই।আর আমি কি রক্ত জবার মতো না।মুখ ভেংচি দিয়ে।
সজিব:ওই চল চল একটু পরে রাত হয়ে যাবে তখন তোদের আবার পৌছাতে আমাকেই বডিগার্ড হতে হবে।
অরনি:হ্যা চল।এমনিতে সন্ধ্যা হয়ে গেছে।
বাসাই পৌছে ফ্রেস হয়ে নিতেই দেখি অরনির মুখটা কেমন পেচার মতো করে রেখেছে।অনেক জিজ্ঞাস করেও কিছু বললো না।হয়তো টায়ার্ড লাগছে।কাল সকালে দেখা যাবে।
অরনি আর আমি ক্যামপাসেই বসে আছি সজিব গাড়ি পার্ক করে আসতেই দেখি অরনি উঠে সজিবের হাত ধরে বলছে চল আমরা বকুল গাছটার কাছে বসি।
সজিব:না ওখানে বসবি কেন মিথিলা একা বসে আছে।চল এক সাথে বসি।
অরনি:আচ্ছা চল,,অনিচ্ছা সত্বেও বসলো।তবে অন্য দিন সজিব মাঝে বসে আর মিথিলা অরনি দুপাশে।কিন্তু আজ অরনি মাঝে বসেছে সজিব আর মিথিলা দুধারে।
অনেক ক্ষন আড্ডা দিয়ে বাসাই চলে আসলাম।আজ দেখি অরনি এসেই ফেসবুকে নতুন আইডি খুলেছে তবে আমাকে এড দিবে না।মাঝ রাতে ফোনে কথা বলে কিন্তু প্রতিবারই ফোন কেটে দেওয়ার পরে কান্না করে।
যতখন ফেসবুকে চ্যাটিং করে ততখন দারুন খুশি থাকে কিন্তু ফোনে কথা বললেই কান্না করে।জিজ্ঞাস করলে বলে কিছুই হয়নি। বেশি জোরাজুরি করলে রেগে যায়।তাই না জানাই ভালো।
সামনে আমাদের প্রথম বর্ষ ফাইনাল পরিক্ষা তাই কলেজে যাওয়া বন্ধ শুধু বাসাই পড়ি।
রাত করে পড়াতে বেশ সকালে ঘুম ভাঙে কিন্তু আজ সকালে ঘুম ভাঙে অরনির ফোনের আওয়াজে।
হ্যালো অরনি বল এতো সকালে ফোন করেছিস কেন?
অরনি:কান্না করতে করতে মিথিলা কাল রাতে সজিব একসিডেন্ট করেছে।অনেক চোট পেয়েছে মনে হয় বাচবে না।
মিথিলা:কি বলছিস এসব সজিব কোথায় এখন।
অরনি:সিটি হসপিটাল থেকে ব্যাক দিয়েছে কাল রাতের ফ্লাইটেই বিদেশ নিয়ে গেছে।বাকি কথা আমি আসলে শুনিস আমি এখনি আসছি।
সজিবের কথা শুনে অনেক কান্না পাচ্ছে অরনিকে সাথে নিয়ে বেশ কয়েকবার ওদের বাসায়ও গিয়েছি লাভ হয়নি।সজিবকে নিয়ে কবে দেশে ফিরবে তার ঠিক নেই।ওর অবস্থাটাও জানি না।চোখটা ঝাপসা হয়ে আসছে।তবে কি আর সজিব,,,,
ঠক ঠক ঠক,,,,,,, মিথিলার ভাবনার জগতের ছেদ পড়লো।দরজায় কেউ কড়া নাড়ছে।নতুন বউ সবে মাত্র বিয়ে হয়েছে।ঘটা করে না হলেও আত্মীয় সজনরা জেনে গেছে।সবাই রিমনের বউ দেখতে বাড়িতে ভিড় করছে।শাশুড়ি মা একবার ডেকে গেছেন তবে বাইরে যেতে একদমই ইচ্ছা করছে না।শরীরটা একেবারেই চলছে না।
তবে সকলের মন জয় করে চলতে হবে আর যাই করি না কেন শ্বশুর শাশড়ির সম্মান হানি হয় এমন কিছুই করা যাবে না।
রাহেলা বেগমের ডাকে মিথিলা বাস্তবে ফিরলো।কি হলো রে মা আবার কি ভাবছিস তোর শ্বশুর আব্বু খাবার নিয়ে বসে আছে।চল আয় খেয়ে নে।
মিথিলা:না বললে বিষয়টা আরো পেচালো হবে তাই বলে দিলো মা আপনি যান আমি আসছি।
রাহেলা বেগমও চলে গেলো।সেখান থেকে উঠে হাতে মুখে পানি দিয়ে নিচে চলে গেলো।বেশ বেলা হয়েছে,,,,,,,
.
.
চলবে,,,,,

0 মন্তব্যসমূহ
গল্প গুলো কেমন লাগলো, আপনার মতামত জানাতে কমেন্ট করুন।