সম্পর্কের টান। পর্ব-৫৫+৫৬


সম্পর্কের টান

পর্ব-৫৫+৫৬

মাহসানের ঠোঁটজোড়া ধীরেধীরে তৃষ্ণার কানের কাছাকাছি আসতেই পুরো শরীর বরফের মত জমে যেতে লাগলো তৃষ্ণার। চোখজোড়া বুঁজে ভারী নিশ্বাস ফেলতে লাগলো সে। অপরদিকে মাহসান খানিকটা সময় নিল পরিস্থিতি নিজের আয়ত্বে আনার। গাঁঢ় কিছু নিশ্বাস ফেলে সে নিজের ঠোঁটজোড়া ঠেকালো তৃষ্ণার কানে। তাতে আলতো করে  ছুঁয়ে দিতেই নড়েচড়ে উঠলো তৃষ্ণা। নিজেকে ছাড়িয়ে নিল মাহসানের বাহুডোর থেকে। পরণের কামিজ ঠিকঠাক করতে করতে বললো,
-"তুমি এখানে কখন এলে?"
-"মাত্র।"
-"অহ.. এসে যেই দেখোছো আমি একা এখানটায় দাঁড়িয়ে আছি, অমনি প্লানিং প্লটিং করে ফেললে? বাহ! মানতেই হবে তোমাকে।"
-"প্লানিং করার কিছু নেই। তুমি আমার ওয়াইফ, তোমার পাশে আসতে প্লানিং প্লটিং করতে হবে কেনো?"
-"আচ্ছা! ওয়াইফ... তো এখন কি এই ওয়াইফ কে দেখে মনে ফিলিংস জাগে? তোমার মতে, সেক্স উঠার মত বডি তো তোমার ওয়াইফের নেই। কিসের সাথে যেনো তুলনা করেছিলে তোমার ওয়াইফের বডির? অহ,, হ্যাঁ। বাঁশ... রাইট?"
তৃষ্ণার কথার প্রতিত্তরে একটি শব্দও মুখ দিয়ে বের করলো না মাহসান। অপরাধী বেশে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো তৃষ্ণার পাশে। তৃষ্ণা কিছু সময় মাহসানের উত্তরের অপেক্ষা করে একপর্যায়ে করিডোর বেয়ে সামনের দিকে এগুতে লাগলো।

কেবিনে ঢুকতেই তৃষ্ণা দেখতে পেল, তৌহিদের বুকের সাথে বিড়ালছানার মত লেপ্টে রয়েছে অর্থি। তৌহিদেরও ঘুম ভেঙে গিয়েছে। সে অস্পষ্ট স্বরে ধীরেধীরে কিছু একটা বলে যাচ্ছে অর্থিকে। খানিকটা সময় ভেবে তৃষ্ণা এগুলো তাদের দিকে। হাসি মুখে বললো,
-"ভাইয়ার ঘুম কখন ভাংলো? এখন কি একটু ভালো লাগছে তোমার, ভাইয়া?"
অপরপাশ থেকে তৌহিদ তৃষ্ণার কথায় হালকা মাথা ঝাকিয়ে হ্যাঁ জবাব দিয়ে অস্পষ্ট স্বরে আবারো কিছু একটা বলতে লাগলো। তৃষ্ণা কিছুসময় নিয়ে বোঝার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে অর্থির উদ্দেশ্যে বললো,
-"অর্থি, এর মাঝে কি ডক্টর এসেছিল?"
তৃষ্ণার কথার কোনো জবাব দিল না অর্থি। আগের মতই চোখজোড়া বুঁজে চুপচাপ পড়ে রইলো তৌহিদের বুকে।
তৃষ্ণা খানিকটা সময় অপেক্ষা করে কেবিন ছেড়ে বেড়িয়ে পড়াটাই উত্তম মনে করলো। যা ঘটে গেছে অর্থির সাথে তাতে সব কিছু বুঝে উঠে নিজেকে সামলানোর জন্য কিছু সময় দেয়া দরকার ওকে। ছোট্ট একটা মেয়ে, অথচ এই কয়দিনের জীবনেই কত কিছুরই না মুখোমুখি হতে হয়েছে তাকে! দীর্ঘশ্বাস ফেলে পিছন ফিরে দরজার দিকে এগুতেই মাহসানকে দেখতে পেল তৃষ্ণা। দরজার পাশে দাঁড়িয়ে মুগ্ধতা নিয়ে একনজরে সে তাকিয়ে রয়েছে অর্থি এবং তৌহিদের দিকে।

মাহসানকে টেনে কেবিনের বাইরে এনে তৃষ্ণা কঠিন গলায় বললো,
-"তুমি ভেতরে গিয়েছো কেনো! ভাইয়া এমনিতেই অসুস্থ। তাকে কি আরো অসুস্থ করতে চাও?"
অবাক হয়ে মাহসান বললো,
-"আমি এমন টা চাইবো কেন?"
-"তাহলে ভেতরে গিয়েছো কেনো? তোমাকে এখানে দেখলে ভাইয়ার কি খুব ভালো লাগবে?"
তৃষ্ণার কথায় ভারী গলায় জবাব দিল মাহসান,
-"না।"
-"আচ্ছা.. যাও তুমি এখন।"
-"আর কিছুক্ষণ থাকি?"
-"দেখো,, তুমি যদি ভেবে থাকো তোমার এমন ভোলাভালা রূপ দেখে আমি গলে যাবো!! তাহলে আমি বলবো, তুমি চিন্তাও করতে পারবে না আমি কি পরিমাণে বদলে গিয়েছি। আগে যখন তোমার কাছ থেকে সামান্য ভালো ব্যবহার পাবার আশায় তোমার পায়ের তলায় পড়ে থেকেছি.. তখন পাত্তা দাও নি। আর আজ যখন সময় বদলে গিয়েছে.. তুমি যেচে পড়ে এসে ভালো ব্যবহার করছো, তখন ভাবছো আমি তোমাকে পাত্তা দেব?"
তৃষ্ণার কথায় খানিকটা সময় নিশ্চুপ থাকার পর মাহসান বললো,
-"তাহলে তো আমার আর তোমার মাঝে কোনো পার্থক্য থাকলো না, তৃষ্ণা।"
মাহসানের এমন কথায় খানিকটা থতমত খেয়ে গেল তৃষ্ণা। আমতাআমতা করে বললো,
-"না থাকলে নেই। তুমি যেতে পারো এখন।"
-"হুম,, যাচ্ছি। ফোন টা অন রেখো। কল দিয়ে তৌহিদের খোঁজখবর নেব।"
-"এক মিনিট! আমার নাম্বার টা কিভাবে পেলে তুমি? আগেও মাথায় কথা টা এলেও জিজ্ঞাসা করা হয়ে উঠে নি।"
তৃষ্ণার কথায় স্মাল হেসে মাহসান বললো,
-"যাচ্ছি আমি.."

ঐতিহ্যকে কোনোমতে বুঝিয়ে শান্ত করে শোবার ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এল নিহাল। এই অবস্থায় ঐতিহ্য কে নারায়ণগঞ্জে নিয়ে যাবার কোনো মানেই হয় না। এমনিতেই ঐতিহ্যর প্রেগন্যান্সিতে নানান কম্পিকেশন রয়েছে। ডক্টরের দেয়া ডেট আসতেও আর বেশি সময় বাকি নেই। এর মাঝে রিস্ক নেয়া কোনোভাবেই সম্ভব না। আর তৌহিদও আপাতত ভালো আছে। বড় ধরনের স্ট্রোক হয় নি। কথায় কিছুটা জড়তা আসার পাশাপাশি বাম পা নড়াচড়ায় খানিকটা সমস্যা দেখা দিয়েছে। একমাসের মত ঠিকঠাক ভাবে ডক্টরের পরামর্শ অনুযায়ী চললে, সাথে থ্যারাপি টা নিয়মিত নিলে তৌহিদের সম্পূর্ন রূপে সুস্থ হতে বেশি সময় লাগার কথা নয়।
-"খালু,, পানি।"
কলির কথায় ঠোঁটে হালকা হাসির রেখা ফুটিয়ে নিহাল বললো,
-"টেবিলে রাখ।"
টেবিলে পানির গ্লাস রেখে কলি এগিয়ে এল নিহালের দিকে। ধীর গলায় বললো,
-"খালু, আপনি শরমি নামের কোনো বেটিরে লাইক করেন?"
কলির কথায় অবাক হয়ে নিহাল বললো,
-"কে বলেছে তোকে এসব?"
-"খালা বলেছে। ওই বেটির থেকে তো খালারেই বেশি সুন্দর লাগে, খালু..."
কলির কথায় হতাশ হয়ে চুপচাপ সোফা ছেড়ে উঠে পড়লো নিহাল। ঐতিহ্যর এই সন্দেহবাতিক নিয়ে ভবিষ্যতে বড় কোনো সমস্যায় না পড়লে হয়.....

সকাল সকাল বাড়ির সব কাজ সেরে হসপিটালে খাবার নিয়ে এল তৃষ্ণা। তৌহিদ জেগেই ছিল। তৃষ্ণাকে কেবিনে ঢুকতে দেখেই কিছু একটা বললো সে। তৃষ্ণা এগিয়ে গিয়ে টুলে বসে হালকা হেসে বললো,
-"হুম,, বাবা, মা, তনয় সবাই ভালো আছে। বিকেলে মা আর তনয়কে নিয়ে আসবো। তোমার এখন কি একটু ভালো লাগছে?"
-"হু।"
-"অর্থি কোথায়?"
তৌহিদের উত্তর দেবার আগেই ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে অর্থি বললো,
-"ওয়াশরুমে ছিলাম।"
-"অহ... তুমি এসে খেয়ে নাও। আমি ভাইয়া কে খাইয়ে দিচ্ছি।"
-"আমি ওকে খাওয়ানোর পর খেয়ে নেব। সমস্যা নেই।"
অর্থির কথায় কোথাও একটা অভিমান খুঁজে পেল তৃষ্ণা। তবে সেটা কে তেমন একটা পাত্তা না দিয়ে বললো,
-"আচ্ছা। তুমি এক কাজ করো। খেয়ে দেয়ে বাসায় চলে যাও। শাওয়ার নিয়ে একটু রেস্ট নিয়ে বিকেলে না হয় মার সাথে একবারে এসো। সেই যে কাল এসেছো, কান্নাকাটি করেছো, রাতও জেগেছো বোধহয়। বাসায় গিয়ে নিরবে কিছু সময় ঘুম দিলে ভালো লাগবে। ততোক্ষণ না হয় আমিই থাকি।"
-"না.. আমি কোথাও যাবো না। আমি এখানেই ঠিকঠাক আছি।"
আর কথা বাড়ালো না তৃষ্ণা। কোথাও একটা সমস্যা হয়েছে সেটা মোটামুটি নিশ্চিত তৃষ্ণা। অর্থি যে তার উপর প্রচন্ড আপসেট সেটাও মোটামুটি ভাবে আন্দাজ করতে পারছে। কিন্তু কি কারণে? আপসেট হবার মত কোনো কাজ কি করেছে সে?

          (চলবে)

সম্পর্কের_টান

 #পর্ব-৫৬

হাসপাতালে বেশি একটা সময় না থেকে দুপুরের আগেই বাসায় ফিরে এল তৃষ্ণা। সবকিছু স্বাভাবিক থাকলেও তৃষ্ণার মনের ভেতরে চলছে প্রশ্নত্তরের নানান খেলা। পালাক্রমে একএকটা প্রশ্নে বিদ্ধ হচ্ছে তার ভেতরটা। অর্থি হঠাৎ আজ তার সাথে এমন অদ্ভুত ব্যবহার করলো কেনো? আগে তো এমন ব্যবহার কখনোই করে নি... নাকি এর আগেও অর্থি এমন অদ্ভুত ব্যবহার করেছিল! না... করে নি,, কখনোই করে নি। যদি আগে এমন ব্যবহার করেও থাকতো তাহলে অবশ্যই তা তৃষ্ণার চোখে পড়তো... যেমন টা আজ পড়ছে। হঠাৎ ফোনের রিংটোনে ভাবনায় ছেদ পড়লো তৃষ্ণার। মুহিব কল করেছে... আর একদম সঠিক সময়ে। কল রিসিভ করেই নিজের মনে চলা প্রশ্ন গুলো একেএকে খুলে বলতে লাগলো তৃষ্ণা মুহিবকে। সব শুনে মুহিব চিন্তিত গলায় বললো,
-"ব্যাপারটা তাহলে এতটা গভীরে চলে গেছে!"
-"কোন ব্যাপারটা?"
-"আমি যতটুকু তোমাদের জানি বুঝি... তাতে আমার মনে হচ্ছে খালাম্মার বলা কথাগুলো নিয়ে অর্থি তোমার উপর আপসেট। সঞ্চিতার বিয়ের পর দিন সকালের কথা মনে আছে তোমার?"
-"হ্যাঁ,, আছে।"
-"আসলে অর্থি যেভাবে তোমাকে সাপোর্ট করেছিল ভাইয়ের বিপক্ষে গিয়ে,, তাতে তোমারও উচিৎ ছিল খালাম্মার কথা গুলো নিয়ে অর্থিকে সাপোর্ট দেয়া। আর অর্থি নিজেও হয়তো সেটাই এক্সপেক্ট করেছিল।"
তৃষ্ণা ধীর গলায় বললো,
-"হয়তো।"
-"হয়তো না... একদম সিউর। আসলে আমি তোমাদের বাড়ির গেস্ট বলে তখন কিছু কথা মুখে আসলেও বলি নি। খালাম্মার ব্যাপারে আমি যতটুকু জানি,, তাতে উনি ভালোর ভালো আবার...। প্লাস আমি নিজেও দেখেছি, খালাম্মা ছোটখাটো বিষয় নিয়ে অর্থিকে বকাবকি করে। খালাম্মার দিক দিয়ে  এই কাজ গুলো উনার কাছে ঠিক থাকতে পারে। উনার মেয়ের জীবন আজ যে পর্যায়েই থাকুক, তার একমাত্র কারণ অর্থির ভাই। সেই হিসেবেই উনি হয়তো অর্থির সাথে এতটা রুড।"
মুহিবের কথা শুনে তৃষ্ণা ব্যাকুল স্বরে বললো,
-"কিন্তু এখানে আমার কি দোষ?"
-"দোষ তোমার একটা জায়গায়। তোমার উচিৎ ছিল তোমার মা কে বোঝানো। তোমার লাইফের ট্রাজেডিতে অর্থির কোনো হাত নেই। যা করেছে ওর ভাই করেছে। অর্থি তো আর করে নি। অর্থির মত লক্ষি মেয়ে আমি খুব কমই দেখেছি। ও যেমন ফ্যামিলির মেয়ে, তাতে তোমাদের ফ্যামিলির সাথে মানিয়ে গুছিয়ে অর্থি যেভাবে চলে তাতে হ্যাটস অফ।"
-"আমি কিভাবে বুঝাবো? আমি তো এসবের কিছুই জানতাম না। মা যে আমার জন্য অর্থিকে কথা শোনায় সেটাও আমি জানতাম না।"
গলা ঝেড়ে মুহিব বললো,
-"না জানারই কথা। সারাদিন অফিস করে রাতে বাসায় ফিরে তনয়কে নিয়ে পড়ে থাকো। বাসায় কি হয় না হয় এসবের খোঁজ খবর রাখো বলে তো আমার মনে হয় না।"
মুহিবের কথায় প্রতিত্তোরে জবাব দিল না তৃষ্ণা। মুহিবের কথাটা ঠিক। সে নিজের অতীত কে ভুলতে এতোটাই মরিয়া হয়ে উঠেছে যে, আশেপাশের জগতের দিকে একবার তাকিয়েও দেখছে না সে। এতোটা স্বার্থপর সে কিভাবে হয়ে গেল? নিজেকে পরিবর্তন করতে চায় সে.. তাই বলে এতটা স্বার্থপর হয়ে নয়।
-"তৃষ্ণা?"
মুহিবের ডাকে আবারো চিন্তার জগৎ ছেড়ে বেড়িয়ে এল তৃষ্ণা। ছোট্ট একটা নিশ্বাস ছেড়ে বললো,
-"হু...।"
-"তুমি জব টা ছেড়ে দাও।"
মুহিবের কথায় চোখমুখ কুঁচকে ফেললো তৃষ্ণা। মুহিবের মুখ থেকে এমন কথা কখনোই আশা করেনি তৃষ্ণা। কিন্তু আজ মুহিব নিজেই এমন কথা বলছে। মুহিব কে নিয়ে সে কি একটু বেশিই ভেবে ফেলেছে?
-"আমাকে জব ছেড়ে দিতে বলার আপনি কে?"
তৃষ্ণার ঝাঁঝালো গলায় কথাটি শুনে ম্লান হেসে মুহিব জবাব দিল,
-"তোমার শুভাকাঙ্ক্ষী।"

তৌহিদকে রাতের ঔষধ দিয়ে নার্স কেবিন ছেড়ে বেরুতেই দরজা বন্ধ করে দিল অর্থি। আলো নিভিয়ে এগিয়ে এল তৌহিদের দিকে। অর্থিকে চুপচাপ এসে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তৌহিদ অস্পষ্ট ভাবে বললো,
-"শুয়ে পড়ো তুমি। আজ জাগতে হবে না।"
-"তোমার বুকে ঘুমোবো।"
অর্থির কথায় ঠোঁটে হাসি ফুটলো তৌহিদের। ছোট্ট বেডটার একপাশে হালকা চেপে তৌহিদ বললো,
-"এসো।"
তৌহিদের বুকে মাথা রেখে তাকে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে চুপচাপ খানিকক্ষণ শুয়ে থাকার পর অর্থি বললো,
-"ঘুমিয়েছো?"
-"উহু।"
-"আমি তোমার সাথে খুব রাগারাগি, চেঁচামেচি করি... না?"
-"উহু।"
-"উহু না... হু। আমি জানি। তবে আমি আর কখনোই তোমার সাথে রাগারাগি করবো না। গড প্রমিজ।"
এক হাতে অর্থির চুলে বিলি কাটতে কাটতে আবারো অস্পষ্ট গলায় বললো,
-"তোমার রাগারাগিতেও ভালোবাসা খুঁজে পাই আমি।"
তৌহিদের বলা কথাটি শুনে ঠোঁটের কোনায় মিষ্টি হাসি ফুটলো অর্থির। আরো নিবিড়ভাবে সে জড়িয়ে ধরলো তৌহিদকে।

মাহসানের রুমে ঢুকে শান্ত গলায় অতৈন্দ্রিলা বললো,
-"আমার রুমে কে বসেছে?"
মাহসান সে কথার জবাব না দিয়ে ল্যাপটপের স্ক্রিনের দিকে নজর দিয়ে বললো,
-"আরে! তুমি! আজ এত সকাল সকাল অফিসে আসার সময় হলো যে!"
-"আমার রুমে বসা ছেলেটা কে, মাহসান?"
-"বসো। বসে কথা বলি।"
মাহসানের মুখ থেকে এমন তাচ্ছিল্যের কথাবার্তা শুনে রাগে পুরো শরীর জ্বলে যাচ্ছে অতৈন্দ্রিলার। তবুও নিজের রাগকে নিয়ন্ত্রন করে মাহসানের মুখোমুখি বসলো সে। দাঁতে দাঁত চেপে আবারো একই কথা জিজ্ঞেস করলো সে মাহসানকে। উত্তরে মাহসান ল্যাপটপের দিক থেকে নজর সরিয়ে অতৈন্দ্রিলার দিকে দিয়ে বললো,
-"নতুন এপয়েন্ট করলাম। একদম পারফেক্ট পোস্টটার জন্য। ছেলেটাও অসম্ভব মেধাবী। আচার ব্যবহারও মাশাল্লাহ, সাথে ভদ্র এবং বিনয়ী। কথা হয়েছে ওর সাথে?"
-"আচ্ছা? জেন্ডার চেঞ্জ হলো নাকি! মেয়ে ছেড়ে আবার ছেলেদের ধরলে কবে থেকে? এখন কি আর মেয়েদের দিয়ে জ্বালা মিটাতে পারছো না? না মানে.. ছেলে এপয়েন্ট দিলে যে?"
চেঁচিয়ে উঠলো মাহসান,
-"জাস্ট শ্যাট আপ। ভদ্রভাবে কথা বলো।"
-"তোমার সাথে?"
চোখজোড়া বুঁজে কয়েকটি শ্বাস ছেড়ে নিজেকে শান্ত করতে লাগলো মাহসান। অপরদিকে অতৈন্দ্রিলা বলেই যাচ্ছে,
-"নিজেকে ফেরেশতা বানাচ্ছো? শুদ্ধিকরণ করেছো তো? যে সব কাজ গুলো তুমি করেছো, সেগুলো কি দিয়ে ধুয়ে নিজেকে শুদ্ধ করেছো?"
চোখজোড়া খুলে আবারো আগের মত ঠান্ডা গলায় মাহসান বললো,
-"গেট লস্ট।"
চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো অতৈন্দ্রিলা। ক্রোধিত কন্ঠে বললো,
-"আমাকে জব থেকে বের করে দিয়ে খুব ফেরেশতা সাজার শখ? আমিও দেখবো, তুই কি করে ফেরেশতা সেজে থাকিস! তৃষ্ণাকে নিয়ে আবারো সংসার সাজাবি... না? খুব শখ? আমি কি জিনিস তা হাড়েহাড়ে টের পাবি এখন। জাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ... বেবি।"

       (চলবে)

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ