সম্পর্কের টান
পর্ব-৩৭+৩৮
কালো রঙের শার্টে ফর্শা ছিমছাম হালকা পাতলা গড়নের মুহিবকে দেখতে বেশ লাগছে। চুলগুলো এলোমেলো ভাবে মাথায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। মুখভর্তি সেই একরাশ হাসি, যা সারাটা সময় লেগে থাকে তার মুখে। আচ্ছা,, একটা মানুষ রাত দিন সর্বসময় কিভাবে এতোটা হাসিখুশি থাকতে পারে? তার মনে কি কোনো দুঃখ নেই, ক্ষোভ নেই, কারো প্রতি জমানো অভিমান নেই?
-"কি ব্যাপার? তুমি দেখছি এখনো রেডিই হও নি! আমার সাথে ঘুরবার প্লান ক্যানসেল করলে নাকি!"
মুহিবের কথায় হালকা হাসলো তৃষ্ণা। বললো,
-"উহু.. এই যে দেখুন তনয় যাবার জন্য রেডি।"
তৃষ্ণার কোল থেকে তনয়কে নিল মুহিব। গালে একটি চুমু দিয়ে তৃষ্ণা উদ্দেশ্যে বললো,
-"৫ টার বেশি বাজে কিন্তু।"
-"বাজুক... ভাইয়া অর্থিকে নিয়ে ডক্টরের কাছে গেছে। ভাইয়া ফিরলে তারপর আমরা বের হবো।"
-"অহ.. হ্যাঁ। আচ্ছা ওরা আসুক।"
অর্থিকে বিছানায় বসিয়ে দিয়েই পরণের শার্ট খুলতে লাগলো তৌহিদ। অর্থি কিছুক্ষণ সেদিকে তাকিয়ে থাকার পর বললো,
-"সরি... আমার জন্য তোমার অনেক কষ্ট করতে হচ্ছে... না?"
-"তোমার জন্য কষ্ট করার মাঝেও একটা ভালো লাগা কাজ করে আমার।"
-"তবুও.. কষ্ট তো কষ্টই।"
-"এভাবে বলছো কেনো!"
অর্থি বিছানা ছেড়ে উঠে ধীরেধীরে এগিয়ে এল তৌহিদের দিকে। পাশে দাঁড়িয়ে বললো,
-"তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।"
-"গোছল টা সেরে আসি.. তারপর শুনবো। তুমি ও চলো। হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে এসে কিছুক্ষণ রেস্ট নাও।"
-"আচ্ছা।"
অর্থি ওয়াশরুমে ঢুকতেই তৃষ্ণা তৌহিদদের ঘরের কড়া নেড়ে বললো,
-"ভাইয়া, আসবো?"
-"আয়।"
ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে তৃষ্ণা বললো,
-"অর্থি কোথায়?"
-"ফ্রেশ হচ্ছে।"
-"ওহ... তা ডক্টর কি বললো? হঠাৎ ওভাবে জ্ঞান হারিয়েছিল কেন অর্থি?"
-"উইকনেস, স্ট্রেস..."
কিছু বলতে গিয়েও বললো না তৃষ্ণা। তৌহিদের উপর দিয়ে যে দারুণ একটা ঝড় বয়ে গিয়েছে তা তার চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে। তৃষ্ণা যখন প্রেগন্যান্ট ছিল তখন প্রায়ই এমন অসুস্থ হয়ে পড়তো সে। আচ্ছা... তখন কি মাহসান তৌহিদের মত অস্থির হয়ে পড়তো? না.. অস্থির তো দুরের কথা কখনো তার অসুস্থতার কারণও জানতে চায় নি মাহসান। এতোটা পাষাণ কেন ছিল মাহসান? একটু আদর যত্ন, একটু ভালোবাসা দিলে কি এমন ক্ষতি হতো তার? তৃষ্ণা কি এতোটাই অযোগ্য ছিল? এসব পাবার যোগ্যতা কি তার ছিল না?? তৌহিদদের ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে নিজের ঘরে ঢুকলো তৃষ্ণা। প্রচণ্ড কান্না পাচ্ছে তার। মাহসানের দেয়া কষ্টগুলো বুক চিড়ে বেড়িয়ে আসতে চাচ্ছে। কিন্তু না.. সে কাঁদবে না। কেন কাঁদবে সে? মাহসানের জন্য? না.. প্রশ্নই উঠে না... ঠোঁট চেপে কান্না আটকানোর চেষ্টা করলো তৃষ্ণা। বুকের ভেতরে চলা উথালপাতাল ঢেউ কমাতে তনয়ের সাথে কাটানো সুখের স্মৃতিগুলো স্মরণ করতে লাগলো একেএকে।
মুহিব তৃষ্ণা এবং তনয়কে নিয়ে প্রথমেই ঢুকলো একটি রেস্টুরেন্টে। খাবার অর্ডার করে মুহিব হাসি মুখে বললো,
-"তোমার কি কমলারং খুব বেশিই পছন্দ?"
-"না.. তো। কেনো বলুন তো?"
-"আসার পর থেকেই লক্ষ করছি তুমি যে ড্রেস টাই পড়ছো সেটাই কমলা রঙের। তাই ভাবলাম.. হয়তো তোমার পছন্দের রঙ কমলা।"
-"উহু... তেমন কিছু নয়। আসলে ড্রেসগুলো কেনা হয়েছিল তনয় হবার পর যখন ঢাকায় আমার ননদ ঐতিহ্যর বাসায় ছিলাম। আর জামাগুলো আসলে ওরই কেনা। যেহেতু ওর পছন্দের রঙ কমলা। তাই আমার জন্যও এক ঝাক কমলা রঙের ড্রেস নিয়ে এসেছিল। সেই থেকেই আমি হয়ে গেলাম কমলাসুন্দরী।"
বলেই খিলখিল করে হেসে উঠলো তৃষ্ণা। মুহিব মুগ্ধ চোখে কিছুক্ষণ সেদিকে তাকিয়ে থাকবার পর চোখ সরিয়ে নিয়ে বললো,
-"যাই হোক,, তোমাকে কমলা রঙে কিন্তু দারুণ মানায়।"
-"ধন্যবাদ... তনয়কে এখন আমার কাছে দিন। অনেকক্ষণ হলোই তো নিয়ে আছেন।"
-"না থাক। ও আমার কাছেই ভালো আছে। এই দেখো কিভাবে হাসছে। ইশ! ব্যাটার যা হাসি! মানুষ এতো সুন্দর করে যে হাসতে পারে এটা ওকে না দেখলে জানতামই না।"
-"আপনার হাসিই বা কম কি!"
বলেই লজ্জা পেয়ে গেল তৃষ্ণা। কি বলে ফেললো এটা সে! ছি ছি! কি অস্বস্তিকর একটা পরিস্থিতি! না জানি কি ভাবছে মুহিব ভাই!! অপরদিকে তৃষ্ণার মুখ থেকে এ কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে মুহিব বললো,
-"কিছু বললে?"
-"না.. তো। এখনো খাবার আসছে না কেন? এতোটা দেরি তো হবার কথা নয়। এই যে ভাইয়া,, এক্সকিউজ মি?"
তৃষ্ণা কথা ঘোরাতে ওয়েটার কে ডেকে খাবার নিয়ে নানান কথা বলতে লাগলো।
তৃষ্ণা হাসি মুখে চুপচাপ তাকিয়ে দেখে যাচ্ছে মুহিব এবং তনয়ের মাঝের খুনসুটি। দুই দিনের মাঝেই তনয়কে কতোটা আপন করে নিয়েছে মুহিব। অপরদিকে তনয়ও কম নয়! কোনোরকম জ্বালাতন না করেই সে একসাথে অনেকটা সময় কাটাচ্ছে মুহিবের সাথে। হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে খেলছে, ছোট্ট পিচ্চি হাত দুটো দিয়ে নাক মুহিবের নাক চেপে ধরছে, চুল চেপে ধরছে। অসাধারণ এক দৃশ্য! আজ যদি মাহসান তাদের সঙ্গে থাকতো তাহলে কি তনয় ঠিক এভাবেই খেলতো তার বাবার সাথে? মুহিবের মতোই কি বুকে আঁকড়ে ধরে রাখতো মাহসান তনয়কে? আদর ভালোবাসায় ভরিয়ে দিত??
-"তৃষ্ণা না??"
মেয়েলী এক কন্ঠে পাশ ফিরে তাকালো তৃষ্ণা। পাশে ছোট কালের বান্ধবী সঞ্চিতা কে দেখে অবাক হয়ে উঠে দাঁড়ালো তৃষ্ণা। বললো,
-"সঞ্চি?"
সঞ্চিতা এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরলো তৃষ্ণাকে। হাসি মুখে বললো,
-"হ্যাঁ,, তোর সঞ্চি। তা কেমন আছিস? অনেক দিন পর দেখা তোর সাথে। তাও প্রায় ২/৩ বছর পর।"
-"হ্যাঁ,, ভালো... তুই কেমন আছিস রে?"
-"আমি খুব খুব খুব বেশিই ভালো আছি।"
বলেই পেছনে তাকালো সঞ্চিতা। হাতের ইশারায় একটি লোককে এগিয়ে আসতে বললো তার দিকে। লোকটি এগিয়ে আসতেই সঞ্চিতা তৃষ্ণার উদ্দেশ্যে বললো,
-"ও জয়... আমার ফিয়ান্সে। আর জয়,, ও তৃষ্ণা। আমরা ক্লাস টেন পর্যন্ত একইসাথে একই স্কুলে ছিলাম। তারপর তো আমি বাবার সাথে সিলেট চলে গেলাম। ইশ কি কষ্টের ছিল সেই দিন গুলি!"
জয়ের দিকে তাকিয়ে হালকা হাসলো তৃষ্ণা। তারপর দুজনের উদ্দেশ্যে বললো,
-"কংগ্রাচুলেশনস।"
-"থ্যাংকইউ। আগামি মাসের ১০ তারিখে বিয়ে, সন্ধ্যা ৭ টায় লগ্ন। তোকে যে কতোই খুঁজছিলাম! তোদের পুরোনো বাড়িতেও গিয়েছিলাম। উনারা বললো দুমাস আগে নাকি তোরা বাড়ি ছেড়ে দিয়েছিস। কোথায় আছিস ঠিকানা বলতে পারলো না। এদিকে তোর নাম্বারও অফ। যাক! শেষমেশ তো তোর দেখা পেলাম। এবার বাড়ির ঠিকানা টা দে। কালই গিয়ে দাওয়াত করে আসবো। খালাম্মা খালুর কি অবস্থা? আর তুই কিন্তু আসবি.. আসবি বলতে মাস্ট আসবি। প্রমিস কর আসবি?"
-"ওরে বাবা! দম আগে ফেল তো! এত কথা তুই বলিস! যাবো... যা। এখানেই বিয়ে হচ্ছে নাকি?"
-"হ্যাঁ,, জ্যাঠার এখান থেকেই বিয়ে হবে। আর তাছাড়া..."
কথা শেষ না হতেই সঞ্চিতার নজর পরলো তৃষ্ণার বিপরীতে বসে থাকা মুহিবের উপর। পিচ্চি একটা বাচ্চা কোলে নিয়ে সে চুপচাপ বসে তাদের কথোপকথন শুনছে। আগের কথা শেষ না করেই সঞ্চিতা অবাক হয়ে তৃষ্ণাকে বললো,
-"ওমা! এটা কি তোর বাচ্চা?"
-"তো কি তোর?"
-"আমার হবে কোন দুক্ষে! বিয়েরই ধার ঘেঁষলাম না আর তো বাচ্চা!"
বলেই তনয়ের দিকে এগিয়ে গেল সঞ্চিতা। হাত বাড়িয়ে তনয়কে কোলে নিতে নিতে বললো,
-"দেখতে কিন্তু মোটেই জামাইবাবুর মতো হয় নি। তা জামাইবাবু কি অবস্থা আপনার? কেমন আছেন? বউ বাচ্চা নিয়ে কেমন দিন কাটছে আপনার?"
-"খারাপ না... বেশ ভালো যাচ্ছে দিন গুলো।"
বলেই গা দুলিয়ে হাসতে লাগলো মুহিব। অপরদিকে মুহিবের উত্তরে বিস্ময় নিয়ে তৃষ্ণা তাকিয়ে রইলো মুহিবের দিকে।
তৌহিদ ড্রইংরুমে বসে রাত আটটার খবর দেখছিল। ঠিক তখনি তৌহিদা বেগম তাকে ডেকে বললেন,
-"খবর দেখছিস?"
-"হ্যাঁ,, বসো মা। কিছু বলবা?"
তৌহিদা বেগম ছেলের পাশে বসতে বসতে বললেন,
-"তৃষ্ণারা তো এখনো আসছে না। তনয়কে সাথে নিয়ে গিয়েও এতো রাত করছে কেনো ওরা!"
-"মুহিব আছে তো। তৃষ্ণা তো আর একা যায় নি। এসে পড়বে। টেনশন করো না।"
কিছুটা ইতস্তত করে তৌহিদা বেগম বললেন,
-"মুহিবকে তো আমরা অনেক বছর হলোই দেখে আসছি, ফ্যামিলি ও ভালো। তৃষ্ণার জন্য ওকে..."
মায়ের কথা শেষ করবার আগেই তৌহিদ বললো,
-"কি বলছো এসব মা? তৃষ্ণা মাত্র তিনমাস হলো মাহসানকে ছেড়ে এসেছে। এখনো ডিভোর্সও হয় নি। আর এর মাঝেই তুমি এসব চিন্তা শুরু করে দিয়েছো! ও এখানে যেভাবে আছে থাকুক। এক দুই বছর যাক। তারপর না হয় ভাবা যাবে।"
-"আমিতো এখনি বলছি না বিয়ের কথা। তবে মুহিবকে তুই হালকা পাতলা ভাবে তৃষ্ণার কথা জিজ্ঞেস করলেও তো পারিস!"
মায়ের কথায় কোনো উত্তর দিল না তৌহিদ। আবারো মন দিল টিভির দিকে। তৌহিদা বেগম কিছুক্ষণ ছেলের উত্তরের জন্য অপেক্ষা করে উঠে পড়লো সোফা ছেড়ে।
মাহসান মাত্রই বাসায় ফিরেছে। আজ সারাদিন ঢাকার বাইরে ছিল সে। ময়মনসিংহের প্রজেক্ট নিয়ে সেখানে শ্রমিক দের সাথে সমস্যা হচ্ছিল। সেটাই মিটমাট করবার জন্য আজ সারাটাদিন ময়মনসিংহ কাটাতে হয়েছে তাকে। ঢাকায় ফিরতে ফিরতেই রাত হয়ে যাবার কারণে আজ আর অফিসেও যাওয়া হয়ে উঠে নি। তবে একটাবার যাওয়া খুব দরকার ছিল। একা হাতে আর কত সামলাবে সে এসব! একাকসময় মন চায় সব বেঁচে দিয়ে দেশ ছেড়ে দূরে কোথাও চলে যেতে। তবে পরবর্তীতে বাবা মহসিন চৌধুরীর কথা মনে হতেই সিদ্ধান্ত পালটে ফেলতে হয় তাকে। এই নিঃসঙ্গ জীবনই কি সে চেয়ে এসেছিল! দীর্ঘশ্বাস ফেলে মাহসান খাবারের প্যাকেট খুলতে লাগলো। বাসায় ফেরার পথেই বাইরে থেকে খাবার নিয়ে এসেছিল রাতের জন্য। বাড়ির খাবার একদম কপাল থেকে উঠেই গেছে তার। কে রান্না করে খাওয়াবে তাকে? কেউ কি আছে তার দুনিয়ায়??
ফোনের রিংটোনের আউয়াজে খাবার মাঝপথে ফেলেই উঠতে হলো মাহসানকে। ঘরে এসে চার্জারের পিন থেকে ফোন খুলে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে নাম্বারটায় চোখ বুলালো সে। অপরিচিত নাম্বার....
-"হ্যালো?"
-"জ্বি, আসসালামু আলাইকুম... আপনি কি মাহসান চৌধুরী বলছেন?"
-"জ্বি।"
-"আমি অণিতা। আপনি আমাকে চিনবেন না। কিছু কথা ছিল আপনার সাথে। আজ আপনার অফিসেও গিয়েছিলাম। তবে আপনাকে পেলাম না।"
-"অহ.. হ্যাঁ। আজ অফিসের কাজেই একটু ঢাকার বাইরে যেতে হয়েছিল।"
-"অহ.. তবে ভালোই হয়েছে আপনার অফিসে গিয়ে। কিছু অজানা তথ্য পেয়েছি। যেগুলো মোটেও জানা ছিল না আমার।"
মাহসান কথা বলতে বলতে আবারো ডাইনিং এ ফিরে এসে চেয়ারে বসতে বসতে বললো,
-"অজানা তথ্য তো জানবার কথা ও নয়। তো আসল কথায় আসুন।"
-"অবশ্যই... আমার বাবার নাম আজিজ সরকার। আমি তার বড় মেয়ে। আমরা তিন বোন এক ভাই। ভাইটা সবার ছোট। মাত্র ২ বছর বয়স। অহ.. হ্যাঁ, আমি কিন্তু ম্যারিড। আমার নিজেরও একটি ছেলে আছে। দশমাস চলছে ওর।"
ভ্রু কুঁচকে মাহসান বললো,
-"তো এগুলো আমাকে বলছেন কেনো আপনি? এর সাথে আমার কি কোনোভাবে কানেকশন আছে?"
-"ঠিক আপনার না,, আপনার গার্লফ্রেন্ড যাকে আপনার অফিস স্টাফ নামেও অনেকে চেনে জানে, তার সাথে এগুলোর কানেকশন আছে।"
-"ঠিক বুঝলাম না!!"
-"কাল সকালে ফ্রি আছেন আপনি?"
-"কেনো?"
-"আপনার সাথে আমার দেখা করাটা খুব জরুরী। সামনাসামনি কথাগুলো না বললে আপনি বুঝবেন না। প্লিজ, না করবেন না।"
চিন্তিত ভঙ্গিতে মাহসান বললো,
-"ঠিক আছে। কাল সকাল ১০ টার মাঝে আমার অফিসে চলে আসুন। তবে অতৈ কে নিয়ে কি বললেন? ব্যাপার টা এখন একটু ভেঙে বলবেন?"
-"কালই না হয় শুনবেন। রাখছি কেমন? খোদা হাফেজ।"
""সম্পর্কের_টান""
পর্ব-৩৮
অর্থি গভীর ঘুমে তলিয়ে আছে। ঘনঘন নিশ্বাস উঠানামা করছ.... তৌহিদ কিছুক্ষণ চুপচাপ ঘুমন্ত অর্থির পাশে বসে ভারী নিশ্বাস গুলো গুনতে চেষ্টা করলো। উহু.. হচ্ছে না। ডাকবে কি একবার সে অর্থিকে? কি যেন বলতে চেয়েছিল অর্থি তাকে? শোনার সময়ই হয়ে উঠে নি। ডাকতে গিয়েও আর ডাকলো না তৌহিদ অর্থিকে। এমনিতেই শরীরের অবস্থা তেমন একটা ভালো না অর্থির। তারউপর ঘুমের মেডিসিন খাওয়ানো হয়েছে। ঘুমটা ঠিকঠাক ভাবে কভার না হলে আরো অসুস্থ হয়ে যেতে পারে... ছোট্ট একটা নিশ্বাস ফেলে বিছানা ছেড়ে উঠে পড়লো তৌহিদ।
-"কিরে? এখনো ঘুমোস নি?"
তৌহিদের কথায় সামান্য হাসলো মুহিব। হাতের সিগারেট এশট্রে তে রেখে বললো,
-"ঘুম আসছিল না। আয় বয়।"
-"বসবো না... চল একটু হেটে আসি।"
তৌহিদের কথায় উঠে পড়লো মুহিব। হালকা জ্যোৎস্নার এই রাতে দুই বন্ধু মিলে বেড়িয়ে পড়লো রাস্তায়... চায়ের দোকান সহ আশেপাশের দু এক টা দোকান এখনো খোলা রয়েছে। দোকান গুলোর কিছু আলো রাস্তায় এসে পড়ছে। সাথে দু একটা রিকশার টুংটাং শব্দ। সব মিলিয়ে দারুণ লাগছে এই সময়টায় রাস্তায় হাটতে মুহিবের। সাথে একটা সিগারেট ধরালে কিন্তু মন্দ হয় না! টাউজারের পকেটে থেকে সিগারেটের প্যাকেট বের করলো মুহিব। একটা সিগারেট নিজে ধরিয়ে আরেকটি এগিয়ে ধরলো তৌহিদের দিকে।
-"আমি যে সিগারেট খাই না... ভুলে গেলি?"
তৌহিদের দিকে তাকিয়ে হালকা হাসলো মুহিব।
-"হাসছিস যে! হাসার মত কি কিছু বলেছি?"
-"তোকে যে ভার্সিটি তে থাকতে জোর করে সিগারেট খাইয়েছিলাম... হঠাৎ সে কথা মনে পরে গেল। তোর লাইফের প্রথম সিগারেট খাওয়া। কি একটা অবস্থা হয়ে গিয়েছিল তোর। কাঁশতে কাঁশতে সেই যে জ্ঞান হারালি! হা হা।"
বলেই শরীর কাঁপিয়ে হাসতে শুরু করলো মুহিব। তৌহিদ সেদিকে নজর না দিয়ে বললো,
-"সেটাই প্রথম আর সেটাই শেষ।.... আচ্ছা মুহিব? একটা কথা বলবি? তুই কি এখানে সত্যিই কোনো কেস নিয়ে এসেছিস?"
তৌহিদের কথায় হাসি থেমে গেল মুহিবের। সেখানে এসে ভর করলো একরাশ অস্বস্তি।
-"তো কি নিয়ে আসবো! কেস নিয়েই এসেছি।"
-"না মানে তুই নিজেই হ্যান্ডেল করতে এলি। ব্যাপারটা একটু সন্দেহজনক না?"
ভ্রু কুঁচকে মুহিব বললো,
-"তোকে তো বলেছিই... উপর থেকে চাপ দেয়ায় আমার নিজেরই আসতে হয়েছে।"
-"অহ.. হ্যাঁ। তো কেসের কি অবস্থা? কতোদুর এগুলো?"
-"তেমন একটা এগোই নি। ভাবছি পড়সু চলে যাবো রাজশাহী।"
-"আর কেস?"
-"এখানকার থানার দায়িত্বে থাকবে।"
-"তো আগেও তো তাদেরই দায়িত্বেই থাকার কথা... না?"
-"হুম... থাকার কথা। বললাম না মেয়ের বাবার পাওয়ারের জোরেই আসা।"
-"আচ্ছা.... চা খাবি?"
-"না.. ঘুমঘুম লাগছে। চল এবার বাড়ি ফেরা যাক।"
বাড়ি ফেরার পথে আর কোনো কথা হলো না দুই বন্ধুর মাঝে। মুহিব ফ্লাটে এসেই সরাসরি নিজের ঘরে ঢুকে গেল। তৌহিদ কিছুক্ষণ ড্রইংরুমে পায়চারী করার পর নিজের ঘরে ঢুকলো। অর্থি ঠিক আগের মতই ঘুমিয়ে রয়েছে। অর্থির পাশে এসে চুপচাপ শুয়ে পড়লো তৌহিদ। ঘুম আসছে না। মায়ের বলা কথা গুলো তাকে বারবার ভাবাচ্ছে মুহিবকে নিয়ে। আচ্ছা.. তার ধারণা টা কি ঠিক? সে যা ভাবছে মুহিবকে নিয়ে সেটা কি সত্যি হবার কোনোভাবে সম্ভাবনা রয়েছে? কিন্তু যদি তেমন কিছু হয় তাহলে সেটাই বা কবে থেকে? কিন্তু মুহিব তো কখনওই বিয়ে না করার পণ করেছিল। তাহলে? না কি সে যা ভাবছে তার তেমন কিছুই না! সে নিজেই বেশি ভাবছে না তো? কোনোভাবেই হিসেব মিলছে না। বড্ড বিরক্তিকর এক সমীকরণ!! দীর্ঘ একটা নিশ্বাস ছেড়ে অপরপাশ ফিরলো তৌহিদ। চোখ বুজে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিল।
রাতে একদম ঘুমাতে পারে নি মাহসান। রাতে অপরিচিত নাম্বার থেকে কল আসার পরপরই সে কল করেছিল অতৈন্দ্রিলাকে। কিন্তু ওপাশ থেকে কল রিসিভ করে নি অতৈন্দ্রিলা। কেন কল করলো না অতৈন্দ্রিলা? আর এই মেয়েটাই বা কি বলবে? কি সম্পর্ক আছে এই মেয়ের সাথে অতৈন্দ্রিলার? পুরোরাত ভর নানান প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খেয়েছে মাহসানের। কখন সকাল হবে সে চিন্তায় চিন্তায় একরকম নির্ঘুম ভাবেই রাত পার হয়েছে তার।
-"স্যার,, দুইডা মাইয়া আইছে। পাঠাই দিমু?"
সলিলের কথায় ঘোর ভাঙলো মাহসানের। ইশারায় তাদের ভেতরে পাঠিয়ে দিতে বললো মাহসান।
অল্পবয়সী দুটো মেয়ে। আনুমানিক একটার বয়স ১৬/১৭, আরেকটার ১২/১৩ হবে। সতের বয়সী মেয়েটির কোলে পিচ্চি একটা বাচ্চা। তাহলে কি এই মেয়েটিই তাকে কল করেছিল? সৌজন্যমূলক হালকা হেসে মাহসান বসতে বললো তাদের। তারপর আড়চোখে তাকালো সতের বয়সী মেয়েটির দিকে। অসম্ভব রূপবতী মেয়েটি। দুধে আলতা গায়ের রঙ, পুরু ঠোঁট, টানা টানা দুটি চোখ। কিন্তু এত সুন্দর চেহারার মাঝেও কেমন যেনো একটা অসহায় অসহায় ভাব। যেন এই বুঝি কেঁদে দেবে মেয়েটি! ছোট্ট একটা নিশ্বাস ফেলে মেয়েটির থেকে নজর সরিয়ে বাচ্চাটির দিকে দিল মাহসান। বাচ্চাটি মোটেও মায়ের মত রুপবান নয়। শরীরের রঙ ও কালচে। সত্যিই কি বাচ্চাটি এই মেয়েটির? কি যেনো নাম মেয়েটির? আনিকা? না.. অণিতা? হুম.. এটাই হবে হয়তো। হালকা কেশে নিজেই কথা শুরু করলো মাহসান,
-"অণিতা... না?"
-"জ্বি,, আমি অণিতা। আর এটা আমার ছোট বোন অথৈ।"
-"আচ্ছা... তো এবার বলো। কি জন্য দেখা করতে চাইলে?"
-"আপনার অফিসেরই একজন, নাম অতৈন্দ্রিলা আহমেদ।"
বলেই থামলো অণিতা। অণিতার এ কথায় মাহসান ভ্রু কুঁচকে বললো,
-"হ্যাঁ,, তো?"
-"উনি এখন আমার বাবার সাথে কক্সবাজারে আনন্দের কিছু সময় কাটাচ্ছে। বাজেভাষায় বললে, তারা কক্সবাজারে গিয়ে নষ্টামি করছে... কাল আপনাকে বলেছিলাম, আমার বাবার নাম। আজ আবারো বলছি। আমার বাবার নাম আজিজ সরকার। উনি একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির ম্যানেজার।"
কিছু বুঝে উঠতে না পেরে মাহসান কপাল কুঁচকে বললো,
-"মানে?"
-"আপনাকে আরো খোলাখুলি ভাবে বলতে হবে? আচ্ছা,, সমস্যা নেই। আপনার খোলাখুলি ভাবে শুনতে যেহেতু সমস্যা নেই তাহলে আমার বলতেও সমস্যা হবে না। আমার বাবা আমাদের সবার অগোচরে আমার মা কে ঠকিয়ে আপনাদের অফিসেরই একজন স্টাফ অতৈন্দ্রিলা আহমেদের সাথে প্রায় কিছুদিন হলো অবৈধ ভাবে মেলামেশা করছে। যা আমরা প্রথমে ঘুণাক্ষরেও টের পাই নি। তবে পরবর্তিতে......"
অণিতা নামের মেয়েটির কথা আর মাথায় ঢুকলো না মাহসানের। কি বলছে এই মেয়ে? এই মেয়ের বাবার সাথে অতৈ অবৈধ ভাবে মেলামেশা করেছে? তাদের মাঝে এক ধরনের সম্পর্ক আছে? পুরো মাথা ফাঁকা হয়ে ঝিনঝিন করতে লাগলো মাহসানের। অতৈন্দ্রিলার হঠাৎ পরিবর্তন হবার লক্ষণ গুলো বারবার মনে হতে লাগলো মাহসানের।
-"এই যে ভাইয়া? মাহসান চৌধুরী? শুনছেন আমার কথা?"
মাহসান নিজেকে সামলে হালকা মাথা ঝাকিয়ে বললো,
-"হু.."
-"এই মেয়ে সম্পর্কে সব খোঁজখবর আমি নিয়েই আমি জানতে পারলাম উনি আপনাদের অফিসে জব করে এবং আপনি উনার সাথে একটা রিলেশনশিপে আছেন। তারপর এলাম আপনার সাথে দেখা করবার জন্য। তবে আপনি ছিলেন না। যাই হোক এখানে আসার পর আরো কিছু জানতে পারলাম আপনার এবং আপনার ওয়াইফ সম্পর্কে। তবে আপনি যে ম্যারিড এ সম্পর্ক আমার সামান্য আইডিয়াও ছিল না। আমি এখানে আসার পর সব শুনে নিজেই শকড!"
-"আপনি যে এসব বলছেন.. এর কোনো প্রমাণ আছে?"
কথা বাড়ালো না অণিতা। ছোট বোন অথৈকে ইশারা করে ছবিগুলো দেখাতে বললো সে।
ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকাতেই বুকের বাম পাশটায় চিনচিনে ব্যথা অনুভব করলো মাহসান। চোখ দুটি বন্ধ করে ফোন ফিরিয়ে দিল সে। চেয়ারে নিজের মাথা এলিয়ে দিয়ে লম্বা কিছুক্ষণ শ্বাস নিল। প্রচণ্ড কষ্ট হচ্ছে তার নিশ্বাস ফেলতে। জীবনের প্রথম তার অনুভব হচ্ছে নিশ্বাস ফেলায় এতোটা কষ্ট!!
অণিতাও আর ঘাটলো না মাহসানকে। কিছুক্ষণ সময় দিল সে মাহসানকে স্বাভাবিক হবার জন্য। ছবিটা দেখে সে নিজেই তার বাবার উপর থেকে ভক্তি শ্রদ্ধা হারিয়ে ফেলেছে। বাবা বলে ডাকতেও এখন ঘৃণা লাগে তার। ছিঃ! মানুষ কতোটা নিচে নামলে এসব কাজ করে আবার তা ছবি উঠিয়ে নিজের ফোনেও রাখে!!
-"তা আমি আপনাদের এই ব্যাপারে কি সাহায্য করতে পারি?"
-"এখানে আপনি একটা কাজই করতে পারেন। তবে সেটা সত্যিই আমাদের সাহায্য হবে কি না জানি না।"
-"কি কাজ?"
-"আপনি আপনার গার্লফ্রেন্ড কে শাষনে রাখুন, তাকে একটা গন্ডির মাঝে রাখুন। সে কেনো একটা রিলেশনশিপে থাকা সত্বেও অন্যের স্বামী, অন্যের বাবার সাথে এগুলো করে বেড়াবে! আপনি কি তার চাওয়াপাওয়া গুলো পুরণ করতে পারেন না? আর যদি নাই পারেন তাহলে নামমাত্র বয়ফ্রেন্ড হবার দরকার টা কি!"
-"তুমি আমাকে বলছো আমি এসব দেখা শুনার পরও ওর সাথে রিলেশন টা কান্টিনিউ করি?"
অবাক হয়ে অণিতা বললো,
-"তো করবেন না কেন? যার জন্য বৌ বাচ্চাকে ছেড়ে দিয়েছেন তাকে এত সহজেই মুক্তি দেবেন? আপনি এখনি কক্সবাজার যান। আমি আপনাকে ফুল ডিটেইলস দিচ্ছি। গিয়ে হাতেনাতে ধরুন। কথা বলুন। তাকে নিজের করে রাখুন। এতো সহজেই ছেড়ে দেবেন কেন তাকে? কম ঢেলেছেন তার পেছনে? বলুন তো সপ্তাহে কত টাকা ওই মেয়ের পেছনে ফুরিয়েছেন?"
জবাব দিল না মাহসান। অণিতা কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর বললো,
-"আমরা সবাই স্বার্থপর। নিজের উপকার ছাড়া আমরা একজন অন্যের কাছে আসি না। আপনার কাছে আমি উপকার টা চাচ্ছি। দেখুন, আমি আপনার বোনের বয়সী। আমার ছোট আরো তিনজন ভাই বোন রয়েছে। বাবা যদি অই মেয়ের জন্য আমার মা কে ছেড়ে দেয় আমার মায়ের যাবার জন্য কোনো জায়গা থাকবে না। আমার মা গরীব ঘরের মেয়ে, লেখাপড়াও তেমন একটা জানে না, তার বাবামাও বেচে নেই। তিনটা ছেলেমেয়ে নিয়ে আমার মার পথে বসতে হবে। আজ আমার হাজবেন্ড যদি বড় কোনো চাকরিবাকরি করতো আমি কখনওই আসতাম না আপনার কাছে। ভাইবোনসহ মাকে নিজের কাছে নিয়েই রাখতাম। প্রেম করে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেছিলাম, বছর না পেরুতেই আবার বাচ্চা। শ্বশুরশাশুড়ির সাথেই ছোট্ট একটা ভাড়া বাসায় থাকি। ওখানে তো আর মা ভাইবোন কে নিয়ে উঠাতে পারবো না। এমনিতেই ছেড়ে কথা বলে না আমার শাশুড়ি। এসব শুনলে তো...."
অণিতা কে থামালো মাহসান। এসব দুঃখের কথা শুনবার কোনো মানে হয় না। সে স্বাভাবিক ভাবে বললো,
-"আচ্ছা... বুঝলাম সব। তবে তোমার বাবা যে অন্তৈন্দ্রিলা ছাড়াও অন্য কোনো মেয়ের কাছে আবারো যাবে না.. এর গ্যারান্টি কি?"
-"গ্যারান্টি নেই। এদের স্বভাব কখনো পরিবর্তন হবার নয়। আমার মার কিছু করবার নেই বলেই বাবার মত একজন মানুষকে খাঁমচে পড়ে থাকতে হবে। যেমন ধরুন আপনার ওয়াইফের মতই যদি আমার মাকে সাপোর্ট দেবার মত কেউ থাকতো তাহলে কখনওই আমার মা বাবার সংসার করতো না। ছেড়ে আসতো তাকে ফেলে। আপনার মত স্বাধীন করে দিত বাবাকেও।"
বলেই ফ্যাকাসে একটি হাসি দিয়ে আবারো বললো,
-"আবারো এমনটা করলে না হয় আপনার কাছে যেভাবে এসেছি এভাবেই অন্যকারো কাছে যাবো।"
দীর্ঘশ্বাস ফেলে মাহসান বললো,
-"আচ্ছা.. তোমরা এখন যাও। আমি সলিল কে বলে দিচ্ছি। ও ড্রাইভার কে বলে দেবে তোমাদের নামিয়ে দেবার জন্য।"
-"ধন্যবাদ। আপনি কিন্তু এটা বললেন না,, আপনি আমাদের উপকার টা করবেন কিনা?"
সময় নিল না মাহসান। সাথেসাথেই বললো,
-"করবো... আর কারো সংসার ভাঙতে দেব না।"
বেলা ১২ টার বেশি বাজে। অথচ এখনো একবারো রায়ানের সাথে দেখা হয় নি মুহিবের। ছেলেটা গেল কই? আজ সকালের নাস্তা করবার সময়ও টেবিলে ছিল না, ফোনটাও অফ। চিন্তিত মুখে মুহিব ঘর ছেড়ে বের হলো। ড্রইংরুমে বসে থাকা লিয়াকত সাহেবের কাছে যেতে নিয়েও আর গেল না। এখন খেজুরে আলাপ করবার মত মন মানুষিকতা নেই। তবে যাবার আগে একটা কাজ করা খুব বেশি দরকার তার। আর যেটা অর্থি ছাড়া হবারই নয়। অর্থি তৃষ্ণার সাথে অনেকটা ক্লোজ। একটা বার কি সে অর্থির সাথে কথা বলে দেখবে?? বেশি কিছু না ভেবে তৌহিদদের ঘরের দিকে এগুলো মুহিব। দরজার কাছে এসে হঠাৎ থমকে দাঁড়ালো সে।
-"তোমাকে আগেও বলেছি। তুমি যাকে ইচ্ছে তাকে দেখাও। শুধু তৌহিদ কেন পুরো দুনিয়াকেই দেখাও। এই মিথ্যে ছবি নিয়ে আমাকে ব্লাকমেইল করে কোনো লাভ হবে না।"
-"এর পরিণাম সম্পর্কে তুমি সামান্য ধারণাও করতে পারবে না, অর্থি।"
-"না পারলে নাই। বের হও এখনি আমার রুম ছেড়ে। তোমার সাহস হয় কি করে আমার রুমে ঢোকার?"
-"খুব দেমাগ তোর,, না? তোর এই ছবি নেটে ছাড়লে তোর অবস্থা কি হবে,, জানিস? তোর এই চেহারা মানুষ দেখে থুতু দেবে, কিছু পোলাপান তোর রেট জানতে চাইবে। তখন এ কুলও হারাবি ও কুলও হারাবি। না তোর এই অটিস্টিক তৌহিদ তোরে এই বাড়িতে রাখবে, না তুই লোকজনদের সামনে মুখ দেখাতে পারবি। এই একটা ফটোশপ তোর লাইফ কই থেকে কই নিয়ে যায় সেদিন বুঝবি। সেদিন তোর এই দেমাগ দেখার মত কেউ থাকবে না, সবাই তোরে একটাবার বিছানাতে নিতে চাইবে। আজ একজনের পরিবর্তে সেদিন হাজার হাজার...."
হতভম্ব হয়ে গেল মুহিব ভেতরে থাকা রায়ান এবং অর্থির কথা শুনে। পরবর্তীতেই ভায়ের মুখে এমন বিশ্রী কিছু কথা শুনে নিজেকে আর আটকাতে পারলো না সে। দরজা ঠেলে ঘরের ভেতরে ঢুকে রায়ানের গালে কষিয়ে থাপ্পড় মেরে দিল।
(চলবে)
0 মন্তব্যসমূহ
গল্প গুলো কেমন লাগলো, আপনার মতামত জানাতে কমেন্ট করুন।