নষ্টা মেয়ে
পর্ব ১৩+১৪
মিথিলা এতোদিন ভাবতো রিমন প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য তার ভালোবাসাকে বলি দিচ্ছে।কিন্তু আজ কি শুনলো ?রিমন কখনো ভালোই বাসেনি প্রতিশোধের নেশায় অভিনয় করে গেছে।
এতোদিন এই ভালোবাসার জোরটা নিয়েই লড়ার স্বপ্ন দেখেছি কিন্তু সেই ভালোবাসাটাই ছিলো না?
সজিব আর অরনির কাছে হয়তো আমি অপরাধী না তার প্রমান আছে কিন্তু ভালোবাসা কোথায় পাবো।এতো কিছু করে কি হবে রিমনতো শুধু অভিনয়ে প্রেমিক বাস্তবে না।
রিমনের যত কাছে আসছে ততই নিত্য নতুন কষ্টের সম্মুক্ষিন হচ্ছে।সকল কষ্টের ভেতরেও এটুকু আশা ছিলো রিমনের হৃদয়ে কোথাও না কোথাও এক ফালি ভালোবাসা আছে।কিন্তু আজ মনে হচ্ছে কোথাও ভালোবাসা নেই শুধু প্রতিশধের আগুন।
মিথিলা এই রকম একটা কথা শুনবে স্বপ্নেও ভাবেনি।গাল বেয়ে নোনা পানি টপ টপ করে পড়ছে।আজ চোখের জলে বুক ভিজালেও মনটা শীতল হবে না।আগ্নেগিরির সকল লাভা আজ হৃদপিন্ডটাকে পুড়িয়ে দিচ্ছে।
মিথিলা রিমনের মুখের দিকে তাকিয়ে হৃদয় টাকে পাথর করে বলে দিলো,,আজ থেকে আমি জানলাম আমার পবিত্র ভালোবাসাটা মরে গেছে।একটা পাথরের কফিনে দাফন করে দিয়েছি।
আর হ্যা যেদিন নিজেকে অপরাধীর মিথ্যা বেড়াজাল থেকে মুক্ত করতে পারবো সেদিনই হবে আমার সংস্বার জীবনের শেষ দিন।সেদিন আমার মতো তুমিও অনেক কাঁদবে অনুশোচনায়।কিন্তু আমাকে সে দিন পাবে না।ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ টাও দিবো না।সারা জীবন কাঁদবে।
এই বলে মিথিলা দৌড়ে বাইরে যেতেই দেখলো মালিহা দাঁড়িয়ে কাঁদছে।গোপনে বোনের রোমান্স দেখবে বলে এসে সংস্বার ভাঙার কাহিনি শুনে নিয়েছে।
মিথিলা মালিহাকে দেখেই বুঝতে পারলো সবই জেনে গেছে।কিন্তু এই কথা আব্বু আম্মু জানলে সইতে পারবে না।তাই মালিহার হাত চেপে ধরেই ছাদে নিয়ে গেলো।হয়তো বোনের জীবনের করুন কাহিনি কাউকে না জানানোর মিনতি করবে।
রিমন মিথিলার কথাই যেন উদাসিন হয়ে গেছে।মিথিলা কখনো এমন ভাবে প্রতিবাদ করেনি।প্রতিবার নিজেকে অপরাধী না বলে জানিয়েছে তবে রিমনকে ছেড়ে যাওয়ার কথা কখনোই বলেনি।
তবে কি আমার কোথাও ভুল হচ্ছে।মিথিলা কি নির্দোষ?অরনি আমার সাথে কি মিথ্যা বলেছে?
অরনি যদি মিথ্যা বলে তো মিথিলার সাথে যে অন্যায় করেছি তা ক্ষমার অযোগ্য। কিন্তু অরনি কেন মিথ্যা বলবে? একমাত্র সজিবের সাথে কথা হলেই সত্যটা জানা যাবে।এখনি একবার ছোটো খালা মনিকে ফোন করে জানতে হবে কবে দেশে ফিরবে।
রিমন ভাবতে ভাবতেই ছোটো খালামনির কাছে কল দিলো।পাঁচবার কলকরেও ধরলো না হয়তো ফোন সাইলেন্ট হয়ে আছে।পরবর্তীতে দেখলে খালামনি নিজেই কল করবে।তাই আর কল দিলো না।
নয়টা বেজে গেছে,, এসেছি শ্বশুরের অসুম্ততার কারনে কিন্তু শ্বশুরের সাথে ভালো করে কথাও বলা হলো না।তাই নিচে চলে গেলো।
সিড়ি ধরে নিচে নামতেই শ্বশুর আব্বুর সাথে দেখা।মিথালা আর মালিহা বাবার পাশেই দাঁড়িয়ে আছ।কারো মুখে কথা নেই।
শ্বশুর আব্বু:রাতে কেমন ঘুম হয়েছে বাবা? কোনো অসুবিধা হয়নি তো?
না আব্বু কোনো অসুবিধা হয়নি।অনেক ভালো ঘুম হয়েছে।আপনার শরীরের অবস্হা কেমন আব্বু?
মোটা মুটি ভালো আছি কিন্তু ব্যাথা টা একটু বেড়েছে।
সে কি ব্যাথা বেড়েছে ডক্টরকে জানান নি?
জানিয়েছি বললেন প্রথমে একটু বাড়বে পরে ঠিক হয়ে যাবে।
কই ডক্টরের নামবারটা দিনতো।আমি কথা বলে দেখছি।
মিথিলা:মুখ অন্য পাস করে না থাক তার আর দরকার হবে না।আমি নিজেই কথা বলেছি।
মালিহাও কোনো কথা বলছে না।কাল রাতে কতো মজা করছিলো কিছু সময়ের ব্যবধানে শত্রু ভাবতে শুরু করেছে।
তার চাইতে মিথিলাই ভালো এতো কিছু করেও হাসি মুখে কথা বলে।
শ্বাশুড়ি আম্মু সবাইকে খাবার টেবিলে বসতে বললো।
আম্মু খাবার সার্ব করছে।আমি আর মিথিলা মুখোমুখি মালিহাএকটা চেয়ার ফাঁকে রেখে পাশে বসেছে।
আব্বু হুইল চেয়ারেই বসে আছে।আব্বু আম্মু কতো আদর যত্ন করছে।কিন্তু যদি জানে তাদের মেয়ের গায়ে হাত তুলি,,বাজে কথা বলি তাইলে হয়তো বিষ খাইয়ে দিতো।
রিমনের ভেতরে অনুশোচনা বোধ কাজ করছে।তবে সজিবের কাছে না জেনে মিথিলার সাথে খারাপ ব্যবহার করাটা ঠিক হয়নি।যত দিন সজিবের মুখ থেকে না শুনছি ততোদিন আর কিছুই বলবো না।
সব কিছু সত্য হলে মিথিলাকে ডিভোর্স দিয়ে দিবে।কিন্তু মিথ্যা হলে? তখন? মিথিলার পায়ে ধরে ক্ষমা চাইলেও কম হবে হয়তো,,,,,,
আব্বু:আরে খাওয়ার সময় এতো কি ভাবছো।স্বাস নালিতে চলে যাবে তো।
না আব্বু তেমন কিছু না।আমরা কিন্তু বিকালেই রওনা করবো।
ওইটা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলো এসেছো তোমাদের মর্জিতে যাবে আমাদের মর্জিতে।যাওযার কথা মুখেও এনো না।
না আব্বু অনেক কাজ আছে।না গেলে ক্ষতি হয়ে যাবে।
সে পরে দেখা যাবে।তার চাইতে বরং তোমরা তিনজন বাইরে থেকে ঘুরে এসো।তখন দেখবা আর যেতে মন চাইছে না।
হ্যা আব্বু এটা ঠিক বলেছেন।ভালোই হবে আমরা না হয় দুপুরে বাইরে খেয়ে নিবো।কি বলো মিথিলা?
মিথিলা:হ্যা!!তোমার যেইটা ভালো মনে হয়।
রিমন:ওকে তাইলে খেয়ে উঠেই তৈরী হয়ে নাও।মালিহা বেসি সময় নিবা না কিন্তু।
মালিহা হয়তো না করতে চাইছিলো কিন্তু মিথিলার চোখের ইসারাতে আর কিছু বললো না।
আব্বু আম্মু দুজনই খুব খুশি হয়েছে।ভাবছে রিমন মিথিলাকে কতো ভালো বাসে।
খাওয়া শেষ করে সেজেগুজে বেরিয়ে পড়লো।তিনজন তাই বাইক না নিয়ে সিনজি ডেকে নিলো।পার্কের সামনে নেমে ভাড়াটা মিটিয়ে দিলো।তখনি রিমনের ফোন বেজে উঠলো।স্ক্রিনে ছোটো খালামনির নাম।
খালামনি জানিয়ে দিলো তিন দিন পরেই দেশে ফিরছে।সজিবও একটু আকটু কথা বলতে পারছে।
রিমন অনেক খুশি হলেও মিথিলা একটুও খুসি হয়নি।কিন্তু সজিব আসলেই তো মিথিলার অপবাদ ঘুচবে।সাথে সাথে রিমনকেও হারাতে হবে।
সত্য জানার পরে মিথিলা রিমনকে ছেড়ে অজানার পথে পাড়ি জমাবে তাই হয়তো খুশি হতে পারে নি।
সকলে ভেতরে ডুকে নিরিবিলি সময় কাটাচ্ছে তবে মিথিলা বা মালিহা কেউ রিমনের সাথে কথা বলছে না।
দুই বোন ঠিকই গল্পে মেতেছে।
প্রথমে পার্ক তার পরে চিড়িয়াখানা, নদীর ধার, অভার ব্রিজ সব খানেই ঘোরা শেষ।আর কোথাও যেতে ইচ্ছা করছে না।বিকাল হয়েগেছে।সন্ধ্যা নামতে বেশি দেরি নেই।
অনেক ঘুরে বাসাই ফিরে এলো।এখন রুমে মিথিলা আর রিমন ছাড়া কেউ নেই।
রিমন:তুমি কি আর দু এক দিন থাকবা? থাকলে বলো আমার সমস্যা নাই।
মিথিলা:না আর থাকবো না কাল সকালে চলে যাবে।
রিমন:ওকে!!চাইলে থাকতে পারো।কিছু বলবো না।
মিথিলা:না!!
রিমনও আর কথা বাড়ালো না।ইচ্ছা না থাকলে জোর করে কি লাভ।
গত রাতের মতো আজ খাওয়ার পরে গল্পের আসর বসেনি।মালিহাই কোনো আগ্রহ দেখায়নি।তাই রিমন রুমে এসেই শুয়ে পড়লো।মিথিলাকে বলে দিলো কাল সকাল সকাল বাড়ি ফিরে যাবে তাই তাড়াতাড়ি ডেকে দিতে।
কাল রাতের মতো আজ তারা কোনো কামনা বাসনায় মেতে উঠেনি।কাল পর্যন্ত ও স্বামির সুখ পাওয়া আখাঙ্খা থাকলেও সকাল থেকে হারিয়ে গেছে।আর তো মাত্র কয়টা দিন।
পেছন ফিরে থাকতে থাকতে কখন চোখটা লেগে গেছে বুঝতেই পারেনি।
মিথিলা ভোর বেলা উঠেই আম্মুর সাথে রান্না করে রিমনকে ডেকে দিলো।আজ ভয় নেই ডাকার পারমিশন আছে।ফ্রেস হয়ে নাস্তা করে বেরবে বলে দিয়েছে।রিমন আব্বু আম্মুকে সালাম করলো।মিথিলা আজ অনেক কান্না করছে।বিয়ের দিন সামান্য কান্নাও পায়নি,, তবে কেন জানি না আজ কেঁদেই চলেছে।
রিমনকে সাইডে পেয়ে মালিহা তিন হাজার টাকা ধরিয়ে দিলো।আর বলে দিলো দোলাভাই টাকা টা রাখেন বাজার থেকে কোনো নৈতিক শিক্ষার বই কিনে নিয়েন।আর হ্যা কাউকে সাজা দেওয়ার আগে জেনে নিবেই সে আসলে সাজা পাওয়ার যোগ্য কি না।ভালো থাকবেন কষ্ট পেলে মাফ করে দিয়েন।
রিমন মালিহার টাকা ফেরত দেওয়ার কারনটা বুঝতে পেরেছে।তাই আর কথা বাড়াতে পারলো না।
মিথিলাকে বাইকে বসিয়েই রওনা করলো।তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে হবে,,,,,
.
.
চলবে,,,,,,,,,
নষ্টা মেয়ে
লেখক:মানিক মাহবুব
পর্ব ১৪
.
.
রিমন মালিহার টাকা ফেরত দেওয়ার কারন টা বু্ঝতে পেরেছে তাই জিজ্ঞাস করে সময় নষ্ট করলো না।মিথিলাকে বাইকে বসিয়েই রওনা করলো।তাড়াতাড়ি বাসাই ফিরতে হবে।
মিথিলা বাসাই ফিরেই শ্বশুড় শ্বাশুড়িকে সালাম করে হাসি মুখে উপর তলায় চলে গেলো।তবে রিমনের ভেতর অনুশোচনা বোধ কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে যতখন না সত্যটা সামনে আসছে শান্তিতে থাকতে পারছে না।সজিবের ফিরতে এখনো তিনদিন বাকি।অপেক্ষার প্রহর যেন কাটতেই চাই না।
এক একটা দিন এক এক বছর সমান।
এই তিন দিনে মিথিলা রিমনের সাথে দরকার ছাড়া কোনো কথা বলেনি।নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে।গত কাল রাতেই সজিব দেশে ফিরেছে।রিমনের সাথে কথাও হয়েছে।তবে রিমন মিথিলার সম্পর্কে কিছুই জিজ্ঞাস করেনি।সরাসরি কথা বলতে চায়।ফোনে সব কিছু বলে বোঝানো যায় না।
সকাল হতেই রিমন ফিটফাট হয়ে নিলো।যাওয়ার সময় মিথিলাকেও সাথে যেতে বলছিলো।কিন্তু মিথিলা নানান অজুহাতে না করে দিলো।
রিমন যেতেই মিথিলা ফেছন থেকে ডেকে সালাম করে জড়িয়ে ধরলো।কিছুক্ষন বাদেই ছেড়ে দিলো।রিমনও আজ কিছু বললো না।
যতদ্রুত সম্ভব সজিবের কাছে যেতে হবে।তাই খুব স্পিডেই বাইক চালাচ্ছে।বাইকে যেতে এক ঘন্টার মতো সময় লাগে।
কলিংবেল বাজাতেই রিমনের খালামনি দরজা খুলে দিলো।অনেক দিন পরে খালামনিকে দেখেই জড়িয়ে ধরলো।সামনের সোফাটাতে সজিব বসে আছে।
এখন অনেকটাই সুস্থ্য।নিজেই চলাফেরা করতে পারছে।
রিমন সজিব দুজন দজনকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো।কতো দিন পরে দেখা।কতো দোয়া করেছে,, আল্লাহ যেন দ্রুত সজিবকে ভালো করে দেয়।আল্লাহর কাছে লাক্ষ লাক্ষ শুক্রিয়া।
খালামনিও ছেলেদের আনন্দ অশ্রুতে সামিল হয়েছে।দুই ছেলেকেই বুকে জড়িয়ে নিলো।
ছেলেদের কে থামিয়ে তাদের জন্য চা আনতে চলে গেলেন।তবে রিমন যে কাজের জন্য এতো উতলা হয়ে আছে তা এখনো জানা হয়নি।কোথা থেকে কিভাবে জিজ্ঞাস করবে ভেবে পাচ্ছে না।
অনেকটা আমতা আমতা করে বলেই ফেললো,,, সজিব তুই কি মিথিলাকে চিনিস?
সজিব:কোন মিথিলার কথা বলছিস? (যদিও সজিব রিমনের অনেক ছোটো তবুও বন্ধুর মতো)
আরে তোর সাথে পড়তো মিথিলা অরনি।
হ্যা চিনবো না মানে ওরা তো আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।আমার ভার্সিটির সব চাইতে কাছের বন্ধু।
ওহ!! আচ্ছা একটা কথা বলবি?
সজিব:আরে এতো অনুমতির কি আছে ঝটপট বলে ফেলতো।
কথাটা অনেক ইমপটেন্ট।একটু মিথ্যা বলবি না কিন্তু।
ওকে ওকে মিথ্যা বলবো না।আমি কখনো তোর কাছে মিথ্যা বলছি?
হুম জানি। আচ্চা তুই কি মিথিলাকে ভালো বাসিস?
হোয়াট? কি বলছিস এসব? আমি মিথিলাকে ভালো বাসবো কেন ওতো আমার বন্ধু।সব চাইতে ভালো বন্ধু।
তাহলে মিথিলা তোর সাথে কোনো প্রমের অভিনয়ও করেনি?
আরে না কি যা তা বকছিস।কে বলেছে এসব কথা।আর তুই মিথিলাকে কিভাবে চিনিস?
কি বলছিস সজিব? তাহলে অরনি যে বললো মিথিলা তোকে প্রেমের ফাদে ফেলে ধোকা দিয়েছে।আর তোর এই এক্সিডেন্টের কারনও মিথিলা।
আরে কি বলিস মিথিলা আমার এক্সিডেন্টের কারন হবে কেন ? আমার তো গাড়ির ব্রেকফেল হয়েছিলো।সামলাতে না পেরে দূর্ঘটনা হয়েছে।
সজিবের আম্মুও চা নিয়ে ছেলের এক্সিডেন্টের কারন যান্ত্রিক সমস্যা শুনে হতভম্ভ হয়ে গেলো।এতোদিন যে অকারনে একটা মেয়েকে অভিশাপ দিয়ে এসেছে।
রিমনও নিজেকে আর সামলে রাখতে পারলো না।চিৎকার করে কান্না করছে কতো না অন্যায় করেছে মিথিলার সাথে।কতো না অপমান করেছে বিনা অন্যায়ে।
রিমন সব কিছু সজিব আর খালামনিকে খুলে বললো।সব কিছু শুনে সজিবও পাথর হয়ে গেছে।কোনো কিছু না জেনেই মিথিলার সাথে কতো অন্যায় করেছে।
খালামনি চোখ মুছতে মুছতে,,, রিমন বাবা এখনো কিছুই শেষ হয়ে যায়নি এখনি যা আর মিথিলার কাছে মাফ চেয়ে নে।ও নিশ্চয় তোকে মাফ করে দিবে।
সজিব:হ্যা এখনি চল আমিও যাব তোর সাথে।আম্মু তুমিও চলো সকলে বললে মিথিলা না করতে পারবে না।প্রয়োজন হয়তো আমরাও ক্ষমা চাইবো।
হ্যা বাবা তাই চল আমি এখনি ড্রাইভারকে গাড়ি বের করতে বলছি।দেরি করা ঠিক হবে না।
গাড়ি চলছে তার আপন গতিতে।তবে রিমন তার জিবনের গতিকে মিলাতে পারছে না।বাসাই পৌছে কোন মুখে ক্ষমা চাইবো?মিথিলা হাজার বার বলেছে ও অপরাধ করেনি এক বারও তো ওর কথা শুনেনি।
আরো বেশি করে অপমান করেছে গায়ে হাত তুলেছে।কোন মুখ নিয়ে মিথিলার সামনে দাঁড়াবো? আজ কি মিথিলা তার আর্জি শুনবে।তাকে কি মাফ করবে?
ভাবতে ভাবতেই বাসাই পৌছে গেছে।কার থেকে নেমেই ভেতরে দৌড়ে রুমে চলে গেল।বেডরুম ফাকা কেউ নেই।বেড রুমে না পেয়ে বাথ রুমে চলে গেল সেখানেও ফাকা।
উপর নিচে সব খানেই খুঁজে দেখলো কোথাও নেই।রিমনের সাথে সাথে সবাই খুজতে লাগলো।কিন্তু কোথাও খুজে পাওয়া যাচ্ছে না।
রিমন এবার বেশ উতলা হয়ে উঠেছে।জোরো জোরে ডাকতে শুরু করেছে কিন্তু কোনো রেসপন্স নেই।
রিমনের মনে পড়ে গেল সেদিনের কথা।যেদিন সত্যটা সামনে আসবে সেদিন মিথিলা অনেক দূরে হারিয়ে যাবে।তাহলে কি মিথিলা সত্যি সত্যি আমাকে ছেড়ে চলে গেছে? আমাকে ভুল বুঝলো?
মিথিলা ঠিকই বলেছিলো আমাকে অনেক কাঁদতে হবে!!সত্যি তো আমি কাঁদছি।বুকের বা পাশটা যে ছিড়ে যাচ্ছে।নিশ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে।
নিজেকে আর সামরে রাখতে না পেরে চিৎকার করে যাচ্ছে।মিথিলা একবার হলেও ফিরে আসো।আমি আর তোমাকে আঘাত করবো না।অনেক ভালোবাস বো মিথিলা ফিরে আসো।
আমাকে ছেড়ে যেওয়ো না।আমি কেমন কষ্ট পাচ্ছি সেটা দেখার জন্য হলেও ফিরে আসো।তোমার নিজ হাতে শাস্তি দাও তবুও চলে যেওয়ো না,,,,প্লিজ ফিরে আসো।
রিমনকে এমন পাগলামি করতে দেখে শান্ত করার চেষ্টা করছে।কিন্তু কিছুতেই কাজ হচ্ছে না।নিজের গায়ের পোষাক টাও টেনে ছিড়ে ফলছে।
সজিব:আরে তুই এমন পাগলামি করলে মিথিলাকে খুজে পাবি কি করে? শান্ত হ কি করা যায় ভেবে দেখ।এখনো হয়তো বেশি দুরে যেতে পারেনি।
রিমনের রুম থেকে একটা চিরকুট পাওয়া গেছে ছোটো খালামনি এনে দিয়েছে।
চিরকুট পড়ে রিমন আরো পাগল হয়ে যাচ্ছে।চিরকুটে রিমনের দেওয়া কষ্টের প্রতিটা মূহূর্ত লেখা আছে।
সকলের সামনে পড়তেও কষ্ট হচ্ছে আর মিথিলা তো সব মুখ বুজে সহ্য করে গেছে।
চিরকুটের শেষ অংশে লেখা আছে তাকে যেন খোজার বিথা চেষ্টা না করে।কারন সে কোথায় গেছে কেউ জানে না।
নিজেকে আর সংস্বার জিবনে আটকে রাখতে চাই না।সংস্বার করতে ভলোবাসা চায় যে আমি পাওয়ার যোগ্য না তাই অনেক দুরে চলে গেলাম চাই না করো ভালো বাসা।
রিমন পারলে এই নষ্টা মেয়েকে ক্ষমা করে দিয়ো।আর কখনো এই নষ্টার মুখ দেখতে হবে না।
ইতি
নষ্টা মেয়ে
মিথিলার চিঠি পড়ে মাথার ভেতর চক্কর দিচ্ছে।কি করবো কি করা উচিত কিছুই বুঝতে পারছি না।এখনি মিথিলার বাসাই কল করে দেখতে হবে হয়তো বাবার বাসায় আছে।
কল দিতেই মালিহা রিসিভ করেছে।
হ্যালো মালিহা!!
হুম বলেন?
মিথিলা কি তোমাদের বাসাই গেছে?
কই না তো আপু তো সেদিন আপনার সাথেই চলে গেলো।
দেখো মালিহা সত্য করে বলো।মিথিলা আমার সাথে রাগ করে চলে গেছে।থাকলে বলো?
না দোলাভাই আমি সত্যই বলছি আপু এখানে আসেনি।
তাহলে কোথায় যেতে পারে? তোমাদের আর কোনো আত্মীয় আছে?
না তো দোলাভাই তেমন কেউ নেই।
আচ্ছা ঠিক আছে।আব্বু আম্মুকে কিছু বলতে হবে না।আমি খুজে বের করবোই।
রিমন আর সজিব বসে না থেকে গাড়ি নিয়ে খুজতে বেরিয়ে পড়লো।শহরের প্রতিটা ওলি গলি খুজেও পেলো না।
কোথাও না পেয়ে শেষে থানায় মিচিং কমপ্লেন করে দিলো।
সজিব:আরে এভাবে ভেঙে পড়িস না।দেখবি মিথিলা ঠিকই ফিরে আসবে।
কি ভাবে শান্ত থাকবো? আমিও যে মিথিলাকে অনেক ভালোবেসে ফেলেছি।আমাকে যে ঘৃণা করে চলে গেলো।
একটা মিথ্যা অপবাদ কে যাচাই না করে কেমন করে অমানষিক আচারন করলাম।
অরনিকে আমি ছাড়বো না।ওর জন্য আজ আমি মিথিলাকে হারালাম। ওকে এর মাশুল দিতেই হবে।
সজিব:দেখতো ওই বেয়াদপ মেয়েটা কোথায়?জানতেই হবে কেন এমন করে মিথিলার সংস্বার টা ভেঙে দিলো।
অরনিকে কল করে জানলো কোথায় আছে।সজিব আর রিমন গাড়িটা নিয়ে অরনির উদ্দেশ্যে বের হলো।প্রথমে অরনির কাছে সত্যটা জানতে হবে পরে মিথিলাকে খুজবো।
লোখ মুখে জানতে জানতে অরনির নানু বাড়িতে পৌছে গেলাম তবে পৌছাতেই দশটা বেজে গেছে।গ্রামে দশটা মানেই অনেক রাত।কেউ জেগে নেই।
দরজায় কড়া নাড়তেই একজন বয়স্ক মহিলা দরজা খুলে দিলো।ইনি অরনির নানু।আমাদের বসতে বলে অরনিকে ডাকতে চলে গেলেন।কিছুক্ষন বাদেই অরনি এসেছে।মনে হলো আমার সাথে সজিবকে দেখে আকাশ থেকে পড়েছে।ভাবতেই পারেনি সজিবকে এভাবে দেখতে পাবে,,,,,,
.
.
চলবে,,,,,,

0 মন্তব্যসমূহ
গল্প গুলো কেমন লাগলো, আপনার মতামত জানাতে কমেন্ট করুন।