সম্পর্কের টান
পর্ব-১১+১২
সারাটা রাত নির্ঘুমে কাটালো ঐতিহ্য। নিহালের সাথে ফোনে কথা বলার পর থেকে, এই প্রথম কোনো রাতে নিহালের স্বর না শুনে কাটাতে হলো তাকে। কতোটা যন্ত্রণাদায়ক একটি রাত কাটলো তার, সেটি আর বলার অপেক্ষা রাখে না। পুরো রাতভর নিহালকে নিয়ে ভেবেও কোনো কুল কিনারা খুঁজে পেল না সে। তবে এটা খুব ভালো করেই বুঝতে পারলো, নিহাল ছাড়া সে অচল। কিন্তু নিহাল তো ওকে ভালোইবাসে না। ওর দুর্বলতার সুযোগ নিয়েছে নিহাল! তাহলে কেন সে নিহালকে নিয়ে ভাবছে! মনকে অন্যদিকে নেবার জন্য একটি উপন্যাস নিয়ে বসলো ঐতিহ্য। অনেক কষ্টে কয়েক পাতা পড়েই বন্ধ করে রাখলো বইটি। শুধু লাইনের পর লাইন পড়ে কি লাভ, যদি মনটাই উপন্যাসে না থাকে! মন তো নিহাল বলতে পাগল.. মাথা থেকে নিহাল নাম টা সরিয়ে ফেলতে চাইলেও মন তো সেটা হতে দিচ্ছে না। বড্ড বেহায়া এই মন টা! কিন্তু মন টা তো অহেতুক কিছু চাইছে না। তার ভালোবাসা, তার ভালোথাকা কেই খুঁজে বেড়াচ্ছে সে। বারবার শুধু নিহালকে নিজের মনের কথা একটিবার বলে দেবার জন্য জোরাজুরি শুরু করেছে। বারবার শুধু এটি আশ্বস্ত করছে, নিহালও তাকে ভালোবাসে। নিহাল কোনো দুর্বলতার সুযোগ নেয় নি। দুর্বলতার সুযোগ নিলে শুধু ফোনে কথা বলা বা দেখা করাতেই সীমাবদ্ধ থাকতো না সে। হ্যাঁ, এটা তো সত্যি। নিহাল কখনওই তার হাতটিও স্পর্শ করে দেখে নি। সেখানে সুযোগের কথা আসছে কিভাবে! নিহাল সম্পর্কে এমন আজেবাজে মনোভাব পোষণ করায় নিজের মনকেই ধিক্কার দিল ঐতিহ্য। না!! এভাবে আর থাকা যায় না। মনকে কোনোভাবেই শান্ত করতে পারছে না সে। অস্থিরতা কাটছে না কোনোভাবেই। নিশ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে। ধীরেধীরে দম টাও বন্ধ হয়ে আসছে। এভাবে আর কিছুক্ষণ চলতে থাকলে সে নিজেকেই হয়তো হারিয়ে ফেলবে। ক্রমেই নিজের উপর থেকে নিজের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছে সে! দীর্ঘ একটি নিশ্বাস ফেলে বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়াল ঐতিহ্য। ওয়াশরুমে ঢুকে জামা পালটে অন্য একটা জামা পড়ে নিল। চুলগুলোতে হালকা চিরুনি লাগিয়ে হাত খোঁপা করে, পার্স আর ফোন নিয়ে বেড়িয়ে পড়লো সে।
নিহালের ফ্লাটের সামনে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর চোখ বুজে, হাত মুঠ পাকিয়ে নিজের মনে সাহস জোগালো ঐতিহ্য। হঠাৎ এমন একটি পদক্ষেপ নেয়ার মত মেয়ে সে নয়। স্বাভাবিক অবস্থায় থাকলে এই কাজটি করার কথা তার মাথাতেও আসতো কিনা সন্দেহ!
সেই কখন থেকে কলিংবেল বেজেই যাচ্ছে একনাগাড়ে। এতো ভোরে কে এল! বিছানা ছেড়ে উঠে আড়মোড়া ভাঙতে ভাঙতে নিহাল এগুলো দরজার দিকে। হাই উঠিয়ে দরজা খুলেই ভুত দেখার মত চমকে গেল সে। ঘুমে আচ্ছন্ন মুখটি ক্রমেই আতংকে রূপ নিল। কিছুসময় সেভাবেই কাটানোর পর ঢোক গিলে নিহাল বললো,
-"তুমি এখন! এখানে! কিভাবে!"
-"হুম.. আসলাম।"
-"কিছু হয়েছে?"
-"হ্যাঁ.."
-"কী হয়েছে?"
-"এই তিনমাস আমরা রাত জেগে ফোনে কথা কেন বলেছি?"
কিছু বুঝে ওঠার আগেই নিহালের মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেল,
-"কেন!"
কঠিন স্বরে ঐতিহ্য বললো,
-"কেন মানে! জানো না তুমি!"
-"জা.. জানবো না কেন! জানি। তুমি ভেতরে আসো। বাইরে দাঁড়িয়ে এত জোরে কথা বললে সমস্যা হবে।"
-"আগে আমার কথার উত্তর দাও। কেন বলেছি আমরা কথা?"
আর দেরি করলো না নিহাল। ঐতিহ্য যে স্বাভাবিক অবস্থায় নেই সেটা মাত্র বুঝে উঠলো সে। বলেই ফেললো,
-"ভালোবাসি তোমাকে,, তাই।"
ঐতিহ্য এ পর্যায়ে কাঁদোকাঁদো গলায় বললো,
-"তাহলে আমার বিয়ের কথায় কনগ্রেটস করলে কেন আমায়? বললে কেন ভালো খবর এটা! ভালোবাসার মানুষকে অন্যের বুকে দেখার এত্ত শখ তোমার!"
-"আমি আসলে তখন বুঝে উঠতে পারি নি। কিন্তু তুমি টেনশন করো না। আমি বাবামা কে জানিয়েছি। তারা সকাল ৯ টার বাসেই ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হবে। তোমার বাবামার সাথে কথা বলবে।"
-"কোনো কথা বলতে হবে না। তুমি ওনাদের আসতে নিষেধ করো।"
অবাক হয়ে নিহাল বললো,
-"কেনো!"
-"কারণ আমরা যাচ্ছি তাদের কাছে, তাই।"
-"আমরা কেনো যাবো!"
-"চুপ,, আর একটা কথাও না। যাও রেডি হয়ে নাও।"
নিহাল ঐতিহ্যকে বুঝ দেবার জন্য বললো,
-"আচ্ছা,, যাবো। তবে এখন নয়। একটু বেলা হোক। তারপর। এখন কোনো বাস পাবো না।"
-"এখন যেখানে যাবো সেখানে যেতে বাস লাগবে না। আমরা এখন কাজী অফিসে যাব।"
প্রথমে অবাক হলেও পরে নিজেকে সামলে নিল নিহাল। ঐতিহ্যর হাত টেনে ফ্লাটে ঢুকিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল। তারপর সোফায় ঐতিহ্য কে বসিয়ে নিহাল গেল প্যারাসিটামল খুঁজতে। জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে মেয়েটার শরীর। নিহাল যখন ম্যাসে থাকতো তখন ওর রুমে একটি ছেলে ছিল। যার কিনা জ্বর এলেই প্রলাম বকতে শুরু করতো। এরকম অনেকেই আছে, যাদের জ্বর হলেই আজেবাজে কথাবার্তা কাজ করতে শুরু করে। হয়তো ঐতিহ্যর ও তাদের মাঝে একজন।
ঔষধ আর এক গ্লাস পানি এনে ঐতিহ্যর সামনে ধরতেই মুখ বাঁকিয়ে ঘুরিয়ে নিল ঐতিহ্য। নিহাল তার পাশে বসে আদুরে গলায় বললো,
-"কাল যখন বিকেলে তুমি ধানমণ্ডি লেক থেকে বেরিয়ে এলে তখনই বৃষ্টি শুরু হয়েছিল। আর সেই বৃষ্টিতে ভিজিয়েই জ্বর বাধিয়েছো। না?"
মাথা নেড়ে ঐতিহ্য বললো,
-"শুধু জ্বর না। গলা ব্যথা, ঠান্ডা সব!"
-"তাহলে তো ঔষধ টা খেতেই হবে। না হলে এগুলো ভালো হবে কি করে!"
-"খাবো নাআআআআ।"
-"না খেলে.."
নিহালকে থামিয়ে ঐতিহ্য বললো,
-"তাহলে চলো,, আগে বিয়ে তারপর ঔষধ!"
-"করবো তো। আগে ঔষধ টা খেয়ে জ্বর টা কমিয়ে নাও। তারপর যাবো।"
-"তোমাকে আমি একদম বিশ্বাস করি না।"
-"প্রমিজ..."
-"উহু,,,"
-"প্লিজ, ঐতিহ্য।"
-"না।"
এ পর্যায়ে ঐতিহ্যর আরো কাছে এগিয়ে এল নিহাল। গাঁ ঘেঁষে বসে এক হাতে জড়িয়ে নিল ঐতিহ্য কে নিজের বাহুডোরে। বললো,
-"গড প্রমিজ,, খেয়ে নাও। তারপর যাবো।"
ঐতিহ্য নিজের দু হাত দিয়ে শক্ত করে জাপটে ধরলো নিহালকে। নিহালের লোমশ বুকে নাক ঢুবিয়ে বললো,
-"খাবো না আমি কোনো ঔষধ ফৌষধ!"
সকালে ঘুম থেকে উঠেই ফোন হাতে নিল অর্থি। ম্যাসেঞ্জারে ঢুকতেই বহু প্রতিক্ষিত ম্যাসেজ টি পেল সে।
Riyad Ahmed Rayan - শুভ সকাল💜। একটি খুশির খবর আছে তোমার জন্য। আমি এই শুক্রবার ঢাকায় আসছি। আমার বড় ভাইয়ার ফ্রেন্ডের বিয়েতে। তাহলে আমাদের সেদিনই দেখা হচ্ছে।💏
ম্যাসেজটি পেয়ে মনটা আনন্দে ভরে উঠলো অর্থির। হ্যাঁ,, অবশেষে তার সাথে দেখা হচ্ছে রায়ানের। ছবিতে দেখেছে সে রায়ানকে, ভিডিও কলেও দু একদিন কথা হয়েছে। তবুও মুখোমুখি দাঁড়িয়ে কথা বলার মতো আনন্দের মুহূর্ত আর কটি থাকতে পারে!
কাল রাত থেকে ঐতিহ্য এবং তৃষ্ণার বিয়ের ব্যাপার নিয়ে কথা হচ্ছে না মাহসানের সাথে তৃষ্ণার। প্রথমে মাহসান চেষ্টা করলেও এখন একদম চেষ্টা করছে না তৃষ্ণার সাথে কথা বলবার জন্য, রাগ ভাঙাবার জন্য। তৃষ্ণাও এগিয়ে গিয়ে কিছু বলছে না। থাক! কি হবে এই বাঁদরের সাথে কথা না বললে! মন কে এ কথা বলে বুঝ দিলেও ভেতরে চলছে অন্য এক তুফান। আর একটিবার চেষ্টা করেই দেখো! এতো অল্প চেষ্টাতেই হার মেনে নিলে!!
ঘুম ভাঙতেই তৃষ্ণা দেখলো সে শুয়ে আছে মাহসানের বুকে। মাহসানও গভীর ঘুমের মাঝে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে রেখেছে তাকে। তৃষ্ণাও সেই সুযোগে মাহসানের ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো,
-"এত ঘুম আসে কি করে আপনার! রাতে এসেই ঘুমিয়ে পড়লেন! আবার এখনো ঘুমে! বউও যে আপনার পাশে থাকে সেটা ভুলে গেলে চলবে!"
বলে খুব ধীরে মাহসানের ঠোঁট ছুলো তৃষ্ণা। তারপর মাহসানের হাত সরিয়ে বিছানা ছেড়ে নামতে যেতেই পেছন থেকে কোমর জড়িয়ে ধরলো মাহসান। নিজের দিকে টেনে এনে আবারো শুয়িয়ে দিল তৃষ্ণা কে। জোরে চেপে ধরে ঠোঁটে আলতো করে একটি চুমু দিয়ে দুষ্টু হাসি ঠোঁটে ফুটিয়ে বললো,
-"কি হবে রাগ করে থেকে,, যদি আমার সুন্দরী বউই পাশে না থাকে!"
(চলবে)
সম্পর্কের_টান
পর্ব-১২
অর্থিদের বাড়িতে বিরাজ করছে সুনসান নিরবতা। ঐতিহ্য নিঁখোজ! সকাল থেকে খোঁজ নেই তার। কোথায় কখন গেছে সেটাও কাওকে বলে যায় নি। বেলা বাড়ার পরেও যখন ঐতিহ্যর ঘুম থেকে উঠবার কোনো নাম গন্ধ পাচ্ছিল না শান্তি বেগম, তখনি ঐতিহ্য কে ডাকতে গিয়ে সে দেখলো ফাঁকা ঘর। ঐতিহ্যর কোনো অংশই এ ঘরে নেই। এদিক ওদিক খুঁজেও যখন কোথাও দেখা মিললো না ঐতিহ্যর তখন শান্তি বেগম বাড়িতে থাকা তৃষ্ণা এবং অর্থি কে ডেকে সব জানালো। বাসায় মহসিন চৌধুরী বা মাহসান কেউই নেই। কিছুক্ষণ হলোই বেরিয়েছে তারা অফিসের উদ্দেশ্যে। বাড়িতে শুধু রয়েছে চারজন মেয়েমানুষ। কিভাবে কি করবে কিছুই মাথায় আসছে না তার। চোখের সামনে অন্ধকার ঘনিয়ে আসতে শুরু করেছে। মেয়েটা কই গেলো তার! ঠিক আছে তো ও? তৃষ্ণা কয়েকবার ঐতিহ্যর ফোনে ট্রায় করার পর শান্তি বেগমের পাশে বসে বললো,
-"ওর ফোন তো অফ,, বাবা কে জানানো দরকার, আম্মা।"
শান্তি বেগম মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানিয়ে তৃষ্ণাকে খুবই ধীর স্বরে বললো,
-"বৌমা, আমাকে একটু ধরে বিছানায় দিয়ে আসো।"
ঘাবড়ে গিয়ে তৃষ্ণা বললো,
-"আম্মা, আপনি ঠিক আছেন তো? এই অর্থি.. অর্থি? এই, এদিক আসো। আম্মা যেন কেমন করছে!"
প্রায় অনেক্ষণ হলো অর্থির ফোন বারবার বেজেই যাচ্ছে। এদিকে শান্তি বেগম দাঁত লেগে কিছুক্ষণ পরপর অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছে। কোনদিক রেখে কোনদিক অর্থি যাবে একদম মাথায় আসছে না তার। সত্যি বলতে মায়ের উপর প্রচণ্ড রকমের বিরক্ত সে। এই সামান্য ব্যাপারে জ্ঞান হারাবার কি আছে এটাই বুঝে আসছে না তার। কি এমন হয়েছে! ঐতিহ্য আপু সকাল থেকে মিসিং! তো? সে তো প্রাপ্তবয়স্ক একজন মেয়ে। যেতেই পারে এখানেওখানে। সব জায়গায় বাড়িতে ইনফর্ম করে যেতে হবে নাকি! গেছে কোথাও,, সময় হলে ফিরেও আসবে। এতে এত হায়হুতাশ হবার মতো কি আছে!
মায়ের ঘর থেকে বেড়িয়ে নিজের ঘরে এসে বিছানায় বসলো অর্থি। ছোট্ট একটা নিশ্বাস ফেলে ফোন হাতে নিতেই আবারো অপরিচিত নাম্বারটি থেকে কল এল তার ফোনে। কল রিসিভ করেই চড়া গলায় বলে উঠলো অর্থি,
-"সামান্য কমনসেন্স টুকু নেই আপনার! দেখছেনই এপাশে কল টা রিসিভ করছিনা আমি। তাহলে আমি যে ব্যস্ত আছি এটা বুঝে আসে না আপনার!"
ওপাশ থেকে অসহায় গলায় একটি মেয়েলি স্বর ভেসে এল অর্থির কানে।
-"রেগে যাচ্ছিস কেন! আমি আসলে বুঝি নি..."
গলা শুনে হতভম্ব হয়ে অর্থি বললো,
-"আপু!!"
-"হু।"
-"কোথায় তুমি? সকাল সকাল কোথায় বেরিয়েছো? ফোনটাও অফ! আর এটা কার নাম্বার?"
-"সব বলবো.."
ছটফটিয়ে অর্থি জানতে চাইলো,
-"তো বলো! কোথায় এখন তুমি?"
-"বাসে.."
-"বাসে করে কোথায় যাচ্ছো?"
-"রাজশাহী.."
-"রাজশাহী কেন? আর এই নাম্বার কার? তোমার ফোন কোথায়?"
-"এটা নিহাল স্যারের নাম্বার। স্যারদের বাসায়ই যাচ্ছি।"
-"মানে! তুমি তার সাথে কেন যাচ্ছো? কি হয়েছে সব খুলে বল তো।"
একেএকে সব খুলে বলতে লাগলো ঐতিহ্য অর্থিকে। আজ সকালে বাসা থেকে বেরিয়ে আসা পর্যন্ত সব ঘটনাই খুলে বললো ঐতিহ্য অর্থিকে।
এটুকু শুনেই স্তব্ধ হয়ে গেল অর্থি। এটাই কি তার বোন ঐতিহ্য? বাসা থেকে বেরিয়ে যাবার সাহস টুকু পেল সে কিভাবে! স্তব্ধতা না কাটিয়েই অর্থি বললো,
-"তারপর?"
-"তারপর পরে একসময় বলবো। তুই এখন বল বাসার পরিস্থিতি কেমন?"
অস্থিরতা নিয়ে অর্থি বললো,
-"তুমি এতোটুকু তো বল, বিয়ে করেছো কি তোমরা?"
খানিকক্ষণ নিরব থাকার পর ঐতিহ্য বললো,
-"হু।"
বোনের এ কথা শুনে নিমেষেই স্তব্ধতা কেটে গেল অর্থির। মুখে ফুটলো আনন্দের হাসি। বললো,
-"মাই গড! কনগ্রেটস! খুব ভালো করেছো আপু পালিয়ে গিয়ে। ওই ল্যাংড়া রে কখনওই আমি দুলাভাই হিসেবে মানতে পারতাম না।"
-"এভাবে বলিস না! আমার ওগুলো নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু আমি তো ভালোবাসি স্যার কে.."
-"হেল!! স্যার স্যার করছো কেন! নামটা যেনো কি বললা? উম্ম নিহাল! নিহাল বলে ডাকো। তা নিহাল ভাই দেখতে কেমন? আমার স্ট্যান্ডার্ডের হবে তো?"
-"হু!! সে কোনো অংশ থেকে তোর ফেভারিট হিরো জন আব্রাহামের চেয়ে কম না।"
-"ও আল্লাহ! আই লাভ জন আব্রাহাম! আই লাভ নিহাল জিজু! আপু, তোদের দুইজনের একটা পিক আমাকে সেন্ড কর তো।"
ঐতিহ্য বোনের কথায় খিলখিলিয়ে হেসে উঠে বললো,
-"পরে।"
-"না, এখনি। প্লিজ প্লিজ প্লিজ।"
-"আচ্ছা বাবা! এখন উঠে তারপর দিতে হবে। তুই আগে বল, বাসার কি অবস্থা? খোঁজ করছে আমার? বাবা, আম্মা কি করছে?"
অর্থি সব চেপে গেল। কি হবে বাসার অবস্থা জানিয়ে নতুন বিবাহিত দম্পতির প্রথম দিনটা নষ্ট করে!
-"বাসার অবস্থা ভালো। এখনো কেউ কিছু বুঝতেই পারে নি।"
স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে ঐতিহ্য বললো,
-"বাঁচলাম! কিন্তু যখন বুঝতে পারবে তখন কি হবে সেটা ভেবে ঘাম ছুটে যাচ্ছে আমার। বিশ্বাস কর আমি এভাবে চলে আসতে চাইনি। কিভাবে কি করে ফেললাম আমি..."
ঐতিহ্য কে থামিয়ে অর্থি বললো,
-"যা করেছ ঠিক করেছ। এখন এসব চিন্তা বাদ দিয়ে ওদিকে মন দাও।"
-"না, অর্থি,, এভাবে আসা টা ঠিক হয় নি আমার। স্যারও তার বাবামা কে বাবার কাছে পাঠাতো। কিন্তু তুই বল, বাবা কি রাজি হতো তখন? বাবা তৌহিদ ভাইকে অনেক বেশিই পছন্দ করে। হয়তো তার ভেতর পছন্দ করার মতো কিছু আছে। আর এখন এই অবস্থায়, বিয়ের যখন সব ঠিকঠাক তখন কি বাবা তৌহিদ ভাইকে ফেলে নিহালের সাথে বিয়েতে রাজি হয়ে যেতো?"
-"উহু, কখনওই না। বাবা দেখা যেত জোর করেই তোমাকে ওই ল্যাংড়ার গলায় ঝুলিয়ে দিত। যাকগে, যা করেছো একদম ঠিক করেছো। শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছো এখন ওদিকটায় মন দাও। এঞ্জয় করো সময়টাকে। এদিকটায় আমি সামলে নেব। সব শোনার পর একটু রাগারাগি বাবা করলেও কিছুদিন পর ঠিকই ঠান্ডা হবে। তখনই সময় বুঝে খবর দেব তোমায়। আপাতত আমার জন রে নিয়ে ব্যস্ত থাকো। আর শুনো, নতুন বিয়ে হয়েছে তোমার, সবসময় সেজেগুজে থাকবা। আর হ্যাঁ শাড়ি পড়বা কিন্তু। কসমেটিক্স, কাপড়চোপড় এগুলো নিয়েছো কিছু?"
বোনের কথায় আশ্বাস পেল ঐতিহ্য। চোখের পানি মুছে ঠোঁটে হালকা হাসি ফুটিয়ে জবাব দিল,
-"না,, তবে সমস্যা নেই। রাজশাহী নেমেই আগে তোর কথা মত এসব কিনে নেব। খুশি তো এবার!"
-"হু,, আচ্ছা এখন রাখছি। রাতে কল দেব আবার।"
-"আচ্ছা, বাই। আম্মা আর বাবার দিকে খেয়াল রাখিস।"
ফোন কেটে দিয়েই কন্ট্রাক্টস এ গিয়ে কিছুক্ষণের আগের অপিরিচিত এই নাম্বারটি জন আব্রাহাম💜 দিয়ে সেভ করে রাখলো অর্থি।
মহসিন চৌধুরী এবং মাহসান বাসায় ফিরলো দুপুর দুটোর দিকে। বাসায় ঢুকেই ড্রইংরুমে সোফায় বসে পড়লেন মহসিন চৌধুরী। তৃষ্ণা এক গ্লাস পানি তার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,
-"বাবা, আপনি টেনশন করবেন না। আমি এ বিষয়ে কথা বলবো বাবা আর ভাইয়ার সাথে।"
সে কথায় তাল না দিয়ে মহসিন চৌধুরী বললেন,
-"কার কাছে কল দিয়েছিল ঐতিহ্য?"
-"অর্থি।"
-"ডাকো ওকে।"
অর্থি এসে মহসিন চৌধুরীর মুখোমুখি বসতেই মহসিন চৌধুরী স্বাভাবিক ভঙ্গিতে জানতে চাইলেন,
-"কোথায় আছে এখন ও?"
মহসিন চৌধুরীকে এত সহজ স্বাভাবিক ভঙ্গিতে কথা বলতে দেখে কিছুটা অবাক হলো অর্থি। তুফান আসার আগাম পূর্বাভাস নয় তো এটি?"
-"রাজশাহী।"
-"ছেলের নাম কি?"
-"নিহাল।"
-"কি করে?"
-"ওদের ভার্সিটির প্রফেসর।"
-"রাজশাহীতে ছেলের কে থাকে?"
-"তাদের বাসা রাজশাহী।"
-"তুই জানতি আজ ও বাসা ছেড়ে চলে যাবে?"
বাবার এ প্রশ্নে বুকটা কেঁপে উঠলো অর্থির। ঢোক গিলে বললো,
-"না, আমি কি করে জানবো!"
-"সত্যি করে বল।"
-"সত্যি বাবা। জানতাম না আমি।"
-"ও যেহেতু তৌহিদকে বিয়েটা করবেই না, তাহলে কাল রাতে রাজি হবার নাটক টা কেন করলো ও?"
মহসিন চৌধুরীর গলার স্বরের সাথে ধীরেধীরে বাড়তে লাগলো অর্থির আতংক। সে এতো ভয় পাচ্ছে কেন! সে তো ভয় পাবার মত মেয়ে নয়! তাহলে? আজ কি দুনিয়ায় সব কিছু উলটপালট ঘটছে? হ্যাঁ, না হলে ঐতিহ্যর মত মেয়ে বাসা ছেড়ে পালাবে আর অর্থির মত মেয়ে বাবার সামনে আতংক নিয়ে বসে থাকবে কিভাবে!!
বারবার ঢোক গেলার ফলে গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল অর্থির। মাথার উপরে হনহনিয়ে ফ্যান ঘোরার পরও ঘাম চুয়ে পড়তে লাগলো তার শরীর দিয়ে। নিজেকে সে একজন সন্ত্রাসী এবং মহসিন চৌধুরী কে পুলিশের জায়গায় কল্পনা করতেই মাথা টা ঘুরে উঠলো অর্থির। সামনে বসা মহসিন চৌধুরী কি রিমান্ডে নিয়েছে তাকে!
-"অর্থি, জবাব দে।"
বাবার কথায় ভয়াবহ এক প্লটের চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেললো অর্থি। আবারো ঢোক গিলে বললো,
-"আমি জানি না, বাবা। আমাকে তো আপু এতো সব বলে নি। শুধু ফোনে বললো বিয়ে করে ফেলেছে ও।"
খানিকটা সময় চুপচাপ বসে কিছু একটা ভাবলো মহসিন চৌধুরী। তারপর পাশে দাঁড়িয়ে থাকা তৃষ্ণার দিকে তাকিয়ে বললো,
-"তোমার বাবা আর ভাইকে এখনি কল দাও। ওনাদের সন্ধার আগেই আসতে বলো এখানে।"
তৃষ্ণা অবাক হয়ে বললো,
-"কেনো, বাবা? আমি ফোনেই কথা বলে নেব। এখানে আসতে হবে না।"
-"যেটা বলছি সেটা করো। আর মাহসান, তুই কাজি নিয়ে আয় বাসায়।"
এতোক্ষণ যাবৎ চুপচাপ বসে বাবার আর বোনের কথোপকথন শুনে যাচ্ছিল মাহসান। কিন্তু বাবার এ কথায় হতভম্ব হয়ে মাহসান বললো,
-"কাজি দিয়ে কি হবে! তুমি কি আবার ঐতিহ্য কে ধরে এনে বিয়েটা দিতে চাচ্ছো!"
-"ঐতিহ্যর কথা এখানে আসছে কেনো! যে গেছে গেছেই। আর ঐতিহ্য নামে আমার কোনো মেয়ে নেই।"
-"বাবা, প্লিজ। আবেগে ভেসে যাবার মত কিছু হয় নি। সো প্লিজ, বি নরমাল।"
এতক্ষণ যাবৎ খুব স্বাভাবিক ভাবেই কথা বলছিলেন মহসিন চৌধুরী। ছেলে এ কথার প্রতিউত্তরে কিছুটা চেঁচিয়ে উঠে জবাব দিলেন তিনি,
-"আমি কি স্বাভাবিক নেই? অস্বাভাবিকের মতো আচারণ করছি!"
-"তাহলে কাজি ডাকতে বলছো কেন!"
-"বিয়েতে কাজি লাগে, তাই।"
-"কার বিয়ে?"
-"অর্থির সাথে তৌহিদের।"
মহসিন চৌধুরীর এ কথায় পুরো ঘর জুড়ে নেমে এল বিস্ময়ের ছায়া। মাহসান প্রথমে অবাক হলেও পরে নিজেকে সামলে নিল। সোফা ছেড়ে দাঁড়িয়ে কঠিন গলায় বললো,
-"পাগল হয়েছো! অর্থির বিয়ের বয়স হয়েছে নাকি! মাত্র কলেজে ভর্তি হলো! আর তৌহিদ! বয়স কতো ওর জানা আছে তোমার! এইজ ডিফারেন্স কতো ওদের মাঝে দেখেছো!"
-"তোর মা আর আমার চেয়ে তো বেশি নয়!"
-"তোমাদের যুগ আর এই যুগ আলাদা।"
-"তোর এসব জ্ঞান তো আমি শুনতে চাই নি। যে কাজ দিয়েছি করলে কর। না করলে আমার সামনে থেকে বিদায় হ।"
-"জ্ঞান তোমার দরকার, বাবা। দিনেদিনে বয়সের সাথেসাথে তোমার বুদ্ধি লোপ পাচ্ছে। ঐতিহ্যর সময় চুপ ছিলাম বলে অর্থির সময় চুপ থাকবো এটা ভেবে ভুল করো না।"
-"হুম,, চুপ করে থাকবি কেন! চেঁচামেচি কর। আমাকে ধরে মার। এসবই তো শিক্ষা দিয়েছি তোদের। ছেলে মারতে আসছে, বড় মেয়ে বাবার মানসম্মানের কথা একবারো না ভেবে স্যারের হাত ধরে ভেগেছে, কাল ছোট মেয়েও রাস্তার কোনো ছেলের হাত ধরে পালাবে। এত টাকা খরচ করে পড়িয়ে, উচ্চশিক্ষিত করে তোদের কি লাভ! যদি বাবামার সম্মানের কথাই তারা না ভাবে! বল, কি লাভ! কখনো খাওয়াদাওয়া, পোষাকআষাক, চালচলনে কষ্ট দিয়েছি তোদের? বল, কখনো দিয়েছি কষ্ট? তাহলে আজ কেন আমাকে সবার সামনে অপদস্থ করতে তোদের বাধছে না? মনে লাগে না তোদের? তোরা কি ধরনের ছেলেমেয়ে রে? বাবামাকে এভাবে নীচু করার আগে একটাবার মন কাঁদে না তোদের?"
বলেই দম ফেললো মহসিন চৌধুরী। মাহসান কে মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আবারো বলতে শুরু করলেন সে,
-"কি দরকার ছিল ঐতিহ্যর কাল রাতে রাজি হবার? ও যদি রাজি না হতো আমি কি জোর করতাম ওকে? আজ পর্যন্ত কোনো কাজে জোর করেছি আমি তোদের? তাহলে কেন আমাকে দিয়ে বেয়াই সাহেবকে ওয়াদা দেয়ালো ও? আমার কি কোনো মুখের কথা নেই? আমাকে কি মানুষ বলে মনে হয় না তোদের! কিছুদিন পর তো আমাদের দুই বুড়ো বুড়িকে ধাক্কা দিয়ে বাড়ি ছেড়ে বের করে দেবার আগেও দুবার ভাব্বি না তোরা। সন্তান জন্ম দিয়ে লালন পালন করে মানুষ বড় করে কি এই দিনের মুখোমুখি হতে!"
কথা গুলো বলে সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়াল মহসিন চৌধুরী। ধীরেধীরে এগুলো তার ঘরের দিকে। কিছু পথ গিয়ে আবারো ফিরে আসলো সে। মেয়ের দিকে তাকিয়ে কড়া গলায় আদেশ দিলেন,
-"নিজের ঘরে যা। একজন কে পড়াশোনা করিয়ে, স্বাধীন ভাবে চলতে দিয়ে তো দেখলাম কী প্রতিদান দিল সে! তোকে আর সে প্রতিদান দেবার সুযোগ দিচ্ছি না। আজ রাতেই বিয়েটা হবে তোর তৌহিদের সাথে। তৌহিদকে বিয়ে করার জন্য নিজের মন কে তৈরি কর। বোনের মত বাবামার মন কে কাঁদিয়ে পালিয়ে যাবার ধান্ধা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেল।"
কিছুই মাথায় আসছে না অর্থির। তবে যাই হোক না কেনো ওই লোকটাকে বিয়ে করা তার পক্ষে কোনোভাবেই সম্ভব নয়। বোনকে বাঁচাতে গিয়ে নিজেই যে সেই ফাঁদে পড়ে যাবে এটা কল্পনাতেও ভাবে নি সে। কিন্তু এখন কিভাবেই বা কি করবে সে! বাবার কথাগুলো তো ফেলনা নয়। কম কষ্টেও বাবা বলেনি কথা গুলো। কিন্তু তাই বলে ওই প্রতিবন্ধীর সাথে বিয়ে! অসম্ভব! বাবার কথাগুলোর সামনে তখন কোনো কথা মুখ দিয়ে না বেরুলোও বাবার এই সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই মেনে নেবার মত নয়। তাহলে এখন কি করবে সে! কি করলে বিয়ে নামক এই কুরবানির হাত থেকে রক্ষা পাবে সে! হঠাৎ অর্থির মনে পড়লো রায়ানের কথা। চোখেমুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো তার। হ্যাঁ, সেও এই বিয়ের হাত থেকে বাঁচার জন্য পালাবে। কিন্তু রায়ান কি রাজি হবে? ওর তো এখনো অনার্সই শেষ হয় নি। পড়া অবস্থায় অর্থিকে নিয়ে পালাতে রাজি হবে কি রায়ান? আর বেশি চিন্তা ভাবনা করলো না অর্থি। রায়ানের নাম্বারে ডায়েল করতে লাগলো সে।
এতবার কল দেবার পরও কল রিসিভ করছে না কেন রায়ান? ফোনের আশেপাশে কি নেই ও! আল্লাহকে ডাকতে ডাকতে ব্যাগ গোছাতে লাগলো অর্থি। রায়ান তার পাশে থাকুক আর না থাকুক, সে আজ এ বাড়ি ছেড়ে পালাবেই। ওই লোককে বিয়ে করার কোনো প্রশ্নই আসে না! দরকার পরলে রাস্তায় রাত কাটাবে সে। তবুও আজ এ বাড়ি ছেড়ে পালাবেই।
হঠাৎ চিৎকার চেঁচামেচি কানে আসায় হাতে থেকে ব্যাগ বিছানার পাশে নামিয়ে রাখলো অর্থি। ভ্রু কুঁচকে এগুলো ঘরের বাইরে।
অর্থি মাবাবার ঘরে যেতেই জানতে পারল, ওয়াশরুমে গিয়ে মাথা ঘুরে উঠায় পা পিছলে যায় মহসিন চৌধুরীর। নিজের তাল সামলাতে না পেরে সেখানেই পড়ে গিয়েছিল সে। মাহসান, তৃষ্ণা এবং অর্থি মিলে ধীরেসুস্থে ধরে ঘরে নিয়ে এসে বিছানায় শুয়িয়ে দিল মহসিন চৌধুরী কে। তার পা টা ফুলে ফেঁপে উঠেছে। ভেঙে যায় নি তো! মাহসান আর দেরি না করে এগুলো ডাক্তারকে কল করার জন্য।
অর্থি কিছুসময় চুপচাপ বাবার পাশে দাঁড়িয়ে রইলো। বাবাকে এই অবস্থায় ফেলে এখন যাওয়া টা কি ঠিক হবে! এমন থেকে তেমন যদি হয়ে যায়! হাজার ভেবেও এই সমস্যার কোনো কুলকিনারা খুঁজে পেল না সে। হঠাৎ সে লক্ষ করলো তার বাবার ছোটছোট দুটি চোখের কোণা ঘেঁষে ধীরেধীরে গড়িয়ে পড়ছে জল। পুরো শরীরটা কেপে উঠলো অর্থির। হাত পা ঠাণ্ডা বরফ হয়ে গেল। এই প্রথম সে তার বাবার চোখে জল দেখছে। ছেলেদের চোখ থেকে জল ঝরা খুব একটা সহজ না। কম কষ্টে তাদের চোখ দিয়ে পানি বেড়োই না। মহসিন চৌধুরীর চোখের কয়েক ফোটা জল নিমেষেই পালটিয়ে ফেললো অর্থির সিদ্ধান্ত। সে এ বাড়ি ছেড়ে চলে গেলে মারা যাবে বিছানায় শুয়ে থাকা এই লোকটি। আর এই লোকটিই তার পৃথিবী। আর এই পৃথিবী না থাকলে সে বাস করবে কোথায়? যা হবে দেখা যাবে। তবে এই লোকটিকে আর কষ্ট দেবে না সে। ভাজ্ঞে তৌহিদ লিখা থাকলে না হয় তৌহিদই হবে তার পথ চলার সঙ্গি।
বাবার মাথার পাশে মেঝেতে বসে পড়লো অর্থি। ছলছলে চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়তে লাগলো তার গাল বেয়ে। বাবার মাথায় হাত রেখে সে বললো,
-"আমি যাবো না, বাবা। আমি যাবো না। তুমি যা বলবে সেটাই করবো। তবুও কেঁদো না তুমি। তোমার চোখের পানি আমার সহ্য হয় না, বাবা।"
রাত ৮ টার দিকে মহসিন সাহেবের কথামত তৌহিদের সাথে একসুতোই বাঁধা পড়লো অর্থি।।
(চলবে)
0 মন্তব্যসমূহ
গল্প গুলো কেমন লাগলো, আপনার মতামত জানাতে কমেন্ট করুন।