সম্পর্কের টান
পর্ব-৪৩+৪৪
-"পাগলের মতো চিন্তাভাবনা করলে তো হবে না... বুঝে শুঝে এগুতে হবে। কি রে? শুনছিস আমার কথা? হ্যালো? অতৈন্দ্রিলা? শুনতে পাচ্ছিস?"
-"পাচ্ছি।"
-"যা করবি বুঝেশুঝে করবি। আর আমার কথাগুলো মাথায় রেখে করবি। মনে রাখবি, মাহসান এখন একা। এমন সুযোগ কিন্তু বারবার আসে না। এর আগেও তো অনেকের সাথে রিলেশনশিপে ছিলি। কখনো এমন সুযোগ পেয়েছিস? কেউ কখনো তোর জন্য ঘরবাড়ি, বাবামা, বউ ছেড়ে দিয়েছে? দেয় নি তো। না?"
-"হু... আপু সবই বুঝলাম। কিন্তু তুমি যেসব বলছো সেগুলো আমার কাছে প্যাড়া মনে হয়। পারি না আমি এসব নিতে।"
-"পারতে হবে। ওর টাকাকড়ি বিষয়আশয়ের দিকে তাকিয়েই তোকে পারতে হবে। বাবা মা, ভাই বোন, বউ কেউ নেই। বুঝতে পারছিস আমি তোকে কি বোঝাতে চাচ্ছি? সারাজীবন ছুটকাছাটকা পোলাপানের পিছনে ঘুরে কি এমন উদ্ধার করতে পেরেছিস?
-"আমি বুঝতে পারছি আপু। কিন্তু কিভাবে কি করবো? মাহসানের সাথে রিলেশন টা কনটিনিউ করতে আমার বাকি সবাইকে ছাড়তে হবে।"
-"তো ছাড়বি।"
-"ছেড়েও তো নিস্তার নেই... বলবে চলো বিয়ে করে ফেলি।"
-"তো করবি। এত এত ছেলের সাথে বিছানায় যেতে তোর সমস্যা হয় নি,, অথচ একজন কে বিয়ে করতে তোর আবার কিসের সমস্যা?"
-"তুমি বুঝতে পারছো না, আপু। তখন আমি একটা বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে যাবো। আমি নিজেকে কোনো বন্ধনে আবদ্ধ করতে চাই না।"
-"তুই বুঝতে চেষ্টা করছিস না কেন, অতৈ? তোর ভালো তুই না বুঝলে আর কে বুঝবে.. বল? একবার বিয়েটা করে নে। তারপর না হয় এখনকার মতো তখনো লাইফ লিড করবি। আজ মাহসান তোকে জব থেকে বের করে দিলে তুই কিভাবে চলবি... বল?"
-"আজিজ আছে তো।"
-"কয়দিন থাকবে ওই বুড়ো? ছেলেমেয়ের মায়ায় পড়ে কালই তোকে ছেড়ে দিতে কিন্তু ও দুইবার ভাব্বে না।"
-"গেলে যাক। অন্যজন আসবে।"
-"দিস ইস টু মাচ, অতৈ। মাহসানকে নিয়ে তোর এত কিসের সমস্যা? তোর তো দেখছি সুখে থাকতে ভূতে কিলায় টাইপ অবস্থা। আর কিছু বলবো না আমি। তোর যা ইচ্ছা কর... রাখছি।"
ওপাশ থেকে আফসানা ফোন রাখতেই ছোট্ট একটি নিশ্বাস ফেললো অতৈন্দ্রিলা। তার বোন আফসানার কথাগুলো ফেলনা নয়। ভুল কিছু বলে নি সে। কিন্তু তার নিজেরই তো ইদানীং মাহসান কে সহ্য হয় না। সেখানে কিভাবে এসব সম্ভব? মাহসান কে বিয়ে করাটা কি তার পক্ষে আদৌ সম্ভব? একজন কে নিয়ে সারাজীবন চলার মত মনমানুষিকতার মেয়ে সে নয়। এসব সংসার সংসার খেলা, স্বামীর মন জুগিয়ে চলা এসব তার ধাচে নেই। সে এমন একটা লাইফ লিডও করতে পারবে না। সম্ভব না এসব তার পক্ষে। কোনোভাবেই না...
সেই সকাল থেকে তৃষ্ণা চুপচাপ বসে রয়েছে শরীফ আহমেদের মুখোমুখি। না তাকে কোনো কাজ দেয়া হচ্ছে, না তাকে চেয়ার ছেড়ে উঠার অনুমতি দিচ্ছে। সমস্যা কি এই লোকটার? আর কতোক্ষণই বা এভাবে বসে থাকবে সে? এভাবে চলতে থাকলে আজই তার এই অফিসে প্রথম এবং শেষ দিন হবে। জবের অভাব হবে না তার। নেহায়েত মাহসান তাকে এই জবটার জন্য নিষেধ করেছে। নাহলে এমন চরিত্রের বসের আন্ডারে কোনো দিনও কাজ করতো না সে!!
-"চলুন,, দুপুর তো হয়ে এল। লাঞ্চ টা সেরে আসি।"
শরীফ আহমেদের কথায় হালকা মাথা ঝাকালো তৃষ্ণা। তারপর নরম গলায় বললো,
-"আপনি তো বলেছিলেন, অনেক পোস্টই ফাঁকা আছে আপনার এখানে।"
-"হু,, আছে তো।"
-"তাহলে আমাকে প্লিজ অন্য কোনো পোস্টে ঢুকিয়ে দিন।"
তৃষ্ণার কথা কপাল কুঁচকে শরীফ আহমেদ বললেন,
-"এই পোস্টে কি সমস্যা?"
এ পর্যায়ে তৃষ্ণা তীক্ষ্ণ গলায় জবাব দিল,
-"সমস্যা হচ্ছে বলেই তো আপনাকে বলছি। সকাল থেকে চুপচাপ এখানে বসিয়ে রেখেছেন। আমার কাজ কি এখানে? চুপচাপ শোপিচ হয়ে আপনার সামনে বসে থাকা? এর জন্যই কি মাসে মাসে আমাকে স্যালারি দেয়া হবে?"
-"ঠিকাছে.. ঠিকাছে। শান্ত হন। চলুন লাঞ্চ টা সেরে আসি। তারপর এ নিয়ে কথা বলবো।"
-"লাঞ্চ সারতে আমি নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকায় আসি নি!"
-"তা তো বটেই। আচ্ছা আপনার কথাই রাখলাম। অন্য একটা পোস্টে আপনাকে ঢুকিয়ে দেব। চলুন এবার লাঞ্চ টা করে আসি।"
-"আপনি যান। আমি নিজের টা নিজে করে নেব।"
বলে চেয়ার ছেড়ে উঠে রুম থেকে বেড়িয়ে আসছিল তৃষ্ণা। ঠিক সেই মুহূর্তেই পেছন থেকে শরীফ আহমেদ বললেন,
-"আপনার সাথে আপনার এক্স হাজবেন্ড কে নিয়ে কিছু কথা ছিল। আর এর কারণেই আপনাকে একসাথে লাঞ্চ করার কথা টা বলছিলাম।"
শরীফ আহমেদের দিকে ফিরে ভ্রু কুঁচকে তৃষ্ণা বললো,
-"কি কথা?"
-"উনি আমাকে তিন বা চারদিন আগে রাতে কল করেছিল।"
-"অহ।"
-"আপনি কবে থেকে জয়েন করবেন সেটা শোনবার জন্য।"
-"আপনি বলেছেন?"
-"জ্বি, বলেছিলাম। তবে যেটার জন্য আপনাকে কথাগুলো জানানো.... উনি আমাকে কল করে যা নয় তাই বলে অপমান করেছেন। আপনি প্লিজ উনার সাথে কথা বলে ম্যাটার টা হ্যান্ডেল করবেন।"
শরীফ আহমেদের কথা শুনে নিজের অজান্তেই হেসে ফেললো তৃষ্ণা। শান্তির কিছু নিশ্বাস বেড়িয়ে এল তার বুকচিরে।
-"সরি,, স্যার। উনার সাথে আমার আর কোনো কানেকশন নেই। ব্যাপারটা আপনি নিজেই হ্যান্ডেল করুন। তবে বেস্ট সলিউশান, ওর নাম্বার থেকে কল এলে রিসিভ না করা।"
কথাটি বলেই তৃষ্ণা দ্রুত পায়ে বেরিয়ে এল শরীফ আহমেদের রুম ছেড়ে। হয়তো এখানে জব করবার সিদ্ধান্ত নিয়ে সে ভুল কিছু করে নি।
ল্যাপটপের স্ক্রিন থেকে চোখ সরিয়ে অতৈন্দ্রিলার দিকে দিল মাহসান। মুখে ফুটিয়ে তুললো সামান্য হাসির রেখা। তার মনে চলা ঝরের সামান্য আভাসও আজ সে প্রকাশ করবে না অতৈন্দ্রিলার সামনে। নিজের অসহায়ত্বর সুযোগ আর নিতে দেবে না সে অতৈন্দ্রিলাকে। তাই খুব স্বাভাবিক ভাবেই বললো,
-"তোমার অপেক্ষাতেই ছিলাম। তা বাইরে কোথাও বসে কথা বলবে নাকি এখানেই থাকবে?"
-"এখানেই থাকি।"
-"ওকে! আমার আগে আরো কতগুলো রিলেশনশিপে ছিলে তুমি?"
তোর কাছে কৈফিয়ত দেব কেন? কথাটি মনে মনে বললেও মুখে প্রকাশ করলো না অতৈন্দ্রিলা। নরম গলায় বললো,
-"বেশি না।"
-"অহ... বেশি না!! তো কমই কয়টা?"
অপরপাশ থেকে অতৈন্দ্রিলার কোনো জবাব না পেয়ে আবারো মাহসান বললো,
-"এগুলো করে কি মজা পাও তুমি? কয়জন লাগে তোমার? একজনকে দিয়ে মন ভরে না তোমার? একসাথে কয়জনের ****** তোমার ভালো লাগে?"
মাহসানের কথাগুলো দাঁতেদাঁত চেপে সহ্য করলো অতৈন্দ্রিলা। তারপর চেহারায় সামান্য অসহায় ভাব ফুটিয়ে তুলে বললো,
-"আমার ভুল ছিল সেগুলো। এন্ড আই এক্সেপ্ট ইট। বাট ইউ নো, এভরিবডি ডিজার্ভস এ সেকেন্ড চান্স। দেন হোয়াই নট... হোয়াই নট আই অ্যাম?"
অতৈন্দ্রিলার কথায় অবাক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে রইলো মাহসান। অতৈন্দ্রিলা এমন কোনো কথা মাহসানকে আজ বলবে, সেটা মোটেও ভেবেছিল না সে। কিছুদিন যাবৎ অতৈন্দ্রিলার ব্যবহার গুলো তাকে বারবার স্মরণ করিয়ে দিচ্ছিল আজই তার এবং অতৈন্দ্রিলার নামমাত্র একটি সম্পর্কের শেষ দিন। কিন্তু তার সমস্ত ধারণায় জল ঢেলে দিল অতৈন্দ্রিলার একটি কথা। 'তাহলে আমি কেন নয়?' সত্যিই কি এই কথাগুলো বলেছে অতৈন্দ্রিলা? সত্যিই কি তার কাছ থেকে দ্বিতীয় একটি সুযোগ চাইছে অতৈন্দ্রিলা?
-"আমি জানি আমার জন্য তুমি তোমার ওয়াইফকে ছেড়ে দিয়েছো। বাবামা, বোন এখন কেউই পাশে নেই তোমার। সেখানে এই অবস্থায় আমার উচিৎ ছিল তোমার পাশে থাকা, তোমাকে সাপোর্ট দেয়া। সেখানে আমি এই কাজ গুলো না করে বিশ্রী কিছু কাজ করে ফেলেছি। আই অ্যাম সরি, মাহসান। রিয়েলি সরি। আমি একদম বুঝতে পারি নি। বাট আই প্রমিজ, আমি আর কক্ষনো তোমাকে ফেলে রেখে কোথাও যাবো না। আমি বুঝেছি তোমার মত ভালো আর আমাকে কেউ বাসবে না।"
কথাগুলো বলেই চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়লো অতৈন্দ্রিলা। মাহসানের দিকে এগিয়ে গিয়ে তাকে দাঁড় করিয়ে জড়িয়ে ধরলো। গালে, কপালে কিছু চুমু দিয়ে কান্নামাখা গলায় বলতে লাগলো,
-"আর কক্ষনো করবো না এমন। কক্ষনো না। বিয়ে করতে চেয়েছিলে না তুমি? বিয়েই করে ফেলবো আমরা। তুমি যখন বলবে তখনি করবো। আজ বললে আজই করবো। বলো, কবে করবে?"
তৌহিদ কে এই ভর দুপুরে বাসায় ফিরতে দেখে ভ্রু কুঁচকে অর্থি বললো,
-"আজ এত তাড়াতাড়ি চলে এলে যে!"
জুতো জোড়া খুলতে খুলতে তৌহিদ বললো,
-"এমনি চলে এলাম।"
বলেই চুপচাপ নিজের ঘরের দিকে এগুলো তৌহিদ। কোর্টে প্রেশার বেড়ে শরীর খারাপ হয়ে গিয়েছিল সেটা চেপে গেল। ঘরে এসে পরণের শার্ট খুলে ফ্যানের নিচে চুপচাপ কিছুক্ষণ বসে উঠে পড়লো সে গোছলের উদ্দেশ্যে।
অর্থি তৌহিদের সাথে রায়ানের ব্যাপার নিয়ে কথা বলতে চেয়েছিল মুহিবরা রাজশাহী চলে যাবার পর। যেহেতু আজ ভোরেই মুহিবরা চলে গিয়েছে, সেহেতু আজ কালের ভেতরই অর্থি তৌহিদ কে রায়ানের ব্যাপারে সব বলবে বলে ঠিক করে রেখেছিল। এখন বললে কেমন হয়? আজ যেহেতু তাড়াতাড়িই বাড়ি ফিরেছে তৌহিদ... তনয়কে শ্বশুরের কোলে দিয়ে অর্থি ঘরে ঢুকে তৌহিদকে এপাশওপাশে খুঁজে কপাল কুঁচকে বললো,
-"একটু ওয়েট করতে পারলে না?"
ভেতর থেকে তৌহিদ বললো,
-"কেনো? কি হয়েছে?"
-"কিছুই হয় নি। কি আর হবে? তাড়াতাড়ি বের হও। আমি নিজেও শাওয়ার নেই নি। দেরি করলে আবার তোমার মা বাড়িঘর মাথায় তুলে ফেলবে।"
অর্থির কথা শুনে বাথরুমের দরজা খুলে দিল তৌহিদ। বললো,
-"চলে আসুন।"
-"বয়েই গেছে আমার! আপনি তাড়াতাড়ি শাওয়ার নিয়ে বের হন।"
তৌহিদ নিজেই বেড়িয়ে এসে অর্থিকে টেনে বাথরুমে ঢুকিয়ে বললো,
-"অবশ্যই বয়ে গেছে। বয়ে তো যাবেই। বয়ে যেতে বাধ্য।"
-"অযথা কথা বলো না তো। তোমাকে সব বলে বলে করাতে হয় কেনো?"
-"আরে বাবা আমি কিভাবে জানবো তুমি গোছল করেছো নাকি করোনি!!"
-"তো তুমি জানবে না?"
অর্থির কথায় উত্তর না তার দিয়ে কোমর চেপে ধরলো তৌহিদ। তার ভেজা শরীরের সাথে অর্থির শরীর চেপে, ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে খানিকটা সময় নিয়ে অর্থির ঠোঁটের স্বাদ নিল তৌহিদ... একসময় অর্থির ঠোঁট ছেড়ে নিচে নামতে শুরু করলো তৌহিদের ঠোঁটজোড়া। হাত জোড়াও পায়চারী শুরু করতে লাগলো অর্থির শরীরজুড়ে।
-"তৃষ্ণাকে দেখছি না যে! কোথাও গেছে?"
তৌহিদের প্রশ্ন শুনে তৌহিদা বেগম এবং অর্থি একে অপরের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে বললো,
-"তৃষ্ণা তো আজ ওই ইন্সুরেন্স কোম্পানিতে জয়েন করলো।"
-"কোথাকার? ঢাকার ওইটা?"
-"হ্যাঁ,, কেন তুই জানিস না?"
-"না। আমাকে তো ও এব্যাপারে কিছু বলে নি।"
-"কিন্তু তৃষ্ণা তো বললো, তুই ওকে মত দিয়েছিস।"
-"না.. আমার সাথে ওর এ ব্যাপারে কোনো কথা হয় নি। আমি ওর সমস্যাটাই বুঝতে পারছি না। নারায়ণগঞ্জে ওর জবের অভাব হবে? আমি নিজেও কথা বলে রেখেছি ওর জন্য। আজ নয় কাল পেয়েই যাবে। অযথা ওর এত দূরে গিয়ে জব করতে হবে কেন? কি আছে ওই জবের মধ্যে? আর আমরা কি ওর চাহিদা গুলো ঠিকঠাক ভাবে পুরণ করতে পারছি না? ওর এখনি ছোট্ট এই বাচ্চাকে রেখে জব করতে যেতে হবে কেন?"
তৌহিদ রেগে গেছে বুঝতে পেরে তার কাঁধে হাত রেখে অর্থি বললো,
-"শান্ত হও। এখানে চাহিদার কথা আসছে কেন? ভাবি শুধু নিজে স্বাধীন ভাবে চলতে চাচ্ছে, তার অতীত টা ভুলতে চাচ্ছে। তো চলতে দাও না তাকে তার মত করে। এভাবেই সে যদি তার অতীতটা ভুলে চলতে পারে,, তাহলে চলুক। সারাদিন বাড়িতে বসে থেকে কান্নাকাটি করার চেয়ে বাইরে সময় কাটিয়ে, ঘুরেফিরে তাকে তার মত করে শোকটা কাটাতে দাও। তুমি আমি কিন্তু কেউ ভাবির মনের ভেতরের কষ্ট টা দেখতে পারি না, বুঝতে পারি না, উপলব্ধিও করতে পারি না। তার মনের ভেতর কি চলে সেটা সে ছাড়া আর কেউ উপলব্ধি করতে পারবেও না। আমরা শুধু তার পাশে থেকে তাকে শান্তনা দিতে পারবো, সাপোর্ট করতে পারবো। কিন্তু তার মনের ভেতর যে আগুন টা জ্বলছে সেটা কি আমরা নেভাতে পারবো? না.. পারবো না। তার নিজের চেষ্টায়ই নেভাতে হবে সে আগুন.... ভাবি যেভাবে চলতে চাচ্ছে চলতে দাও। সে যেভাবে যে কাজটা করে শান্তি পাচ্ছে করতে দাও। এখনো তো আর ভাবি ছোট নেই। নিজের ভালো মন্দ এখন বুঝতে শিখেছে সে। তাই আমার মনে হয়, তোমার এই জবের ব্যাপার টা ভাবির হাতেই ছেড়ে দেয়া উচিৎ। তুমি শুধু ভাই হিসেবে পাশে থেকে তাকে সাপোর্ট দিয়ে যাও।"
অর্থির কথার সাথে তাল মিলিয়ে তৌহিদা বেগম বললেন,
-"হ্যাঁ, বাবা। ও তো খারাপ কিছু করছে না। স্বাবলম্বী হতে চাচ্ছে। নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাচ্ছে। ওর অনেকদিনের ইচ্ছে,, কিন্তু মাঝখানে বিয়েটা হয়ে তো সব শেষ হয়ে গেল। এখন যখন আবারো চাচ্ছে, তখন ওকে ওর মত চলতে দে। হ্যাঁ,, তোর ভাবনাও ঠিক আছে। ডেইলি এত দূরে যাওয়াআসা মেয়ে হয়ে... আমি ব্যাপার টা নিয়ে ওকে বুঝিয়ে বলবো। তুই নারায়ণগঞ্জ কিছু একটা ব্যবস্থা কর তারপর না হয় ওখানে যেতে নিষেধ করবো। এখন আপাতত ও আসলে রাগারাগি করিস না। ও কষ্ট পাবে।"
মায়ের এবং অর্থির যুক্তি শোনার পর ছোট্ট একটা নিশ্বাস ফেলে তৌহিদ বললো,
-"আচ্ছা।"
ভুল কিছু বলে নি তো এরা। তার বোন তৃষ্ণা এখন যে কষ্টের মাঝ দিয়ে যাচ্ছে তা সত্যিই অসহনীয়। তার এই কষ্টের কাছে হয়তো সদ্য স্বামি হারানো একজন স্ত্রীর কষ্টও ফিকে পড়ে যাবে। তবুও সব কষ্ট নিজের মাঝেই রেখে, বুকে চেপে সবার সামনে কি সহজভাবেই না চলাফেরা করছে তৃষ্ণা।
(চলবে)
সম্পর্কের_টান
পর্ব-৪৪
অতৈন্দ্রিলা... তার নিঃসঙ্গ জীবনের প্রথম এবং প্রধান কারণ। যার কারণে সে নিজের জীবনের এক অধ্যায় থেকে বাদ দিয়ে দিয়েছে তৃষ্ণাকে, তার ছেলে তনয়কে, হারিয়েছে বোনদের শ্রদ্ধা ভালোবাসা, হারিয়েছে জন্মদাত্রী মা কে। হারানোর খাতায় তার আর কিছু আছে কি? কথাগুলো ভাবতেই বুকচিরে একটি গভীর নিশ্বাস বেড়িয়ে এল মাহসানের। অসহায় তার এই জীবনে সে আজ এমন এক জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে যেখানে দাঁড়িয়ে জীবনের কিছু হিসেব মিলাতে গিয়ে বারবার ব্যর্থ হচ্ছে সে। এতোটাই কি জটিল ছিল তার এই জীবনটা? নাকি সে নিজেই তার সহজ জীবনকে জটিলে রূপান্তরিত করেছে? তৃষ্ণা নাকি অতৈন্দ্রিলা... তার এই জীবনে কার প্রয়োজনীয়তা এখন উপলব্ধি করছে সে? তৃষ্ণা? হয়তোবা... কিন্তু তার প্রয়োজন হলেই তৃষ্ণা আসবে কেনো? সে একবার ডাকলেই তৃষ্ণা আসবে কেনো? আসবে না তৃষ্ণা... সে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছে, গুছিয়ে নিয়েছে নিজের জীবনকে বর্তমান পরিস্থিতির সাথে। অপরদিকে অতৈন্দ্রিলা সে আর দশটা স্বাভাবিক মেয়ের মত নয়। তার চালচলন, চিন্তাভাবনা সব আকাশচুম্বী। আজ তার অমূল পরিবর্তন সেটাও হয়তো কিছু একটার ঝোঁকেই। অবশ্য আজ ৩ টা মাস হলো যার ব্যবহারে এতটা উগ্রভাব ছিল তার হঠাৎ এক দিনের মাঝে নিজেকে পরিবর্তন করাটা চোখে লাগবার মতই! হয়তো সত্যিই অতৈন্দ্রিলা পরিবর্তন হয়েছে, হয়তো সত্যি করেই মাহসানের সংগ কামনা করছে সে। কিন্তু সবকিছুর পরও একটি কিন্তু থেকেই যাই এর মাঝে। আদৌ কি অতৈন্দ্রিলা পরিবর্তন হয়েছে? তবে পরিবর্তন হোক বা নাই হোক,, একবার বাজিয়ে দেখতে তো সমস্যা নেই অতৈন্দ্রিলাকে। যেহেতু আপাতত তার কাছে অতৈন্দ্রিলা বিহীন কোন অপশন নেই..... বিছানা ছেড়ে উঠে সোফায় গিয়ে বসলো মাহসান। টেবিলে থাকা সিগারেটের প্যাকেট থেকে একটি সিগারেট বের করে অনবরত টানতে লাগলো। অতৈন্দ্রিলা তার জন্য বেটার অপশন। তবে অতৈন্দ্রিলা মেয়েটা বেশি সুবিধার না। অপরদিকে তৃষ্ণা... যাকে নিয়ে সারাটা সময় তার অপরাধবোধ কাজ করে। আবারো নিজের জীবনে ফিরিয়ে আনতে ইচ্ছে করে,, আগের মত জীবনটা বানিয়ে ফেলতে ইচ্ছে করে। তবে সেগুলো এখন আর কোনোভাবেই সম্ভব না। নিজের সেল্ফ রেসপেক্ট থেকেই সে তৃষ্ণার সামনে গিয়ে মাথা নত করতে পারবে না। তবে তনয়ের জন্য, তার নিজের রক্তের জন্য তার কি একবার উচিৎ নয় নিজের ইগোকে একপাশে রাখা? হাতে থাকা সিগারেট শেষ হতেই উঠে পড়লো মাহসান সোফা ছেড়ে। দু টুকরো কাগজ সাথে একটি কলম নিয়ে সে চলে এল বিছানায়। এক টুকরোতে তৃষ্ণা এবং অপর টুকরো তে অতৈ নাম লিখে চারভাজ করলো মাহসান। খানিকটা সময় চোখ বন্ধ রেখে সে ছোট্ট তনয়ের চেহারা মনে করতে লাগলো। পিচ্চি পিচ্চি দুটো হাত পা,, যা অনবরত নাড়িয়ে যাচ্ছে.. ছোট্ট ঠোঁটজোড়া গোল করে চুষে যাচ্ছে..... ছেলের স্মৃতিচারণ করতে করতেই মুখে আনন্দমাখা হাসি নিয়ে একটি কাগজের টুকরো উঠালো মাহসান।
ভালোই যাচ্ছে তৃষ্ণার দিন গুলো। অফিস থেকে বাসা, বাসা থেকে অফিস... খারাপ না। অন্ততপক্ষে এতে অতীতের স্মৃতিচারণ কিছু টা হলেও কমে গিয়েছে। সত্যি বলতে এখন তেমন একটা মনে পড়ে না মাহসান কে, মনে পড়ে না মাহসানের সেই স্পর্শকে, মনে পড়ে না মাহসানের সেই আদর ভালোবাসা। শুধু রাতে বিছানায় ঘুমুতে যাবার পর মনে পড়ে মাহসানের দেয়া কষ্টের কথা, মনে পড়ে মাহসানের অবহেলার কথা, মনে পড়ে মাহসানের দেয়া ধোঁকার কথা, মনে পড়ে মাহসানের বলা সেদিনের রাতের কথা গুলো... বেড পারফরমেন্স, সেক্স, শরীর নিয়ে নানান বাজে মন্তব্য। যা মনে পড়তেই চোখ দিয়ে নিজের অজান্তেই বেড়িয়ে আসে কয়েক ফোটা জল, রাগ হয়, জিদ হয়। নিজের শরীরের চামড়া নিজের টেনে ছিঁড়ে ফেলতে ইচ্ছে করে। কিন্তু তারপরেই সে যখন আবার পাশে থাকা ঘুমন্ত তনয়ের দিকে তাকায়, নিজের জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তির কথা মনে পড়ে... তখনি নিজের সব কষ্ট ভুলে যায় সে, নতুন করে বাঁচার জন্য নিজের চোখের কোণায় লেগে থাকা জল মুছে ফেলে, জোরে নিজের বুকে আঁকড়ে নেয় তৃষ্ণা তার বড় প্রাপ্তিটাকে। আর সেসময় টায় তার মাথায় শুধু এটুকুই ঘুরতে থাকে,, সে ভালো আছে, সুখে আছে, শান্তিতে আছে। এর চেয়ে ভালো বা সুখে শান্তিতে থাকা আর কোনোভাবেই তার পক্ষে সম্ভব নয়।
-"ভাবি? তনয় ঘুমিয়ে পড়েছে। শুইয়ে দিয়ে গেলাম।"
-"আচ্ছা।"
ওয়াশরুম থেকে বেরিয়েই বিছানা ঠিকঠাক করে নিল তৃষ্ণা। দরজা চাপিয়ে, ঘরের আলো নিভিয়ে সারাদিনের পরিশ্রমের পর ক্লান্তিমাখা শরীর বিছানায় মেলে দিল সে। তনয়কে কাছে এনে নিজের বুকের সাথে মিশে ফেলে চোখ বুজলো তৃষ্ণা। ঘুমে চোখ বন্ধ হয়ে আসছে তার, শরীর টাও ম্যাজম্যাজ করছে। এদিকে কাল আবার সকাল সকাল ঢাকার উদ্দেশ্যে বেরুতে হবে তার সঞ্চিকে নিয়ে। সঞ্চির বিয়ের কিছু কেনাকাটা এখনো বাকিই আছে। সেখানে কিছুক্ষণ সময় দেবার পর আবার তৃষ্ণাকে অফিসের উদ্দেশ্যে ছুটতে হবে। সঞ্চির বিয়ের জন্য ছুটি নিয়ে শরীফ আহমেদ কে আগেভাগেই বলে রাখতে হবে। যাতে পরে ছুটি নিয়ে কোনো ধানাইপানাই না দেখাতে পারে। দিনদিন তৃষ্ণা লোকটাকে যত পর্যবেক্ষণ করছে, ততোটাই নির্বাক হয়ে যাচ্ছে। সুন্দর একটি সাজানো গোছানো সংসার, ছোট পুতুলের মত একটি মেয়ে, অসম্ভব রূপবতী বউ। তবুও তার নজর সারাক্ষণ বাইরের মেয়েদের দিকে। এরা কি নিজের ঘরের খাটি সোনা টুকরো দেখতে পায় না? বাইরের প্যাকেটে মোড়ানো সোনার টুকরোর দিকে হাত বাড়ানোর আগে এদের দশবার ভাবা উচিৎ, চকচক করলেই সোনা হয় না। হয়তো এসব চরিত্রহীন লোকদের কথা ভেবেই কবি প্রবাদবাক্য টি বানিয়েছিলেন। এসব লোকরা বাংলাদেশের মত একটি দেশে না জন্মালেও পারতো। ভাবতেই ভাবতেই তন্দ্রা তন্দ্রা ভাব চলে এসেছিল তৃষ্ণার। হঠাৎ ফোনের রিংটোন বেজে উঠায় চমকে গিয়ে আশেপাশে তাকিয়ে বুকে ফুঁ দিল তৃষ্ণা।
-"কল করার সময় পাশ না? কাল সকালেই তো দেখা হতো। তাহলে এত রাতে আবার কল করেছিস কেনো?"
অপরপাশ থেকে সঞ্চিতা ধীরগলায় বললো,
-"মুহিব ভাই ফোন রিসিভ করছে না কেন রে, তৃষ্ণা?"
কড়া গলায় জবাব দিল তৃষ্ণা,
-"সেটা আমি কি করে জানবো? আমি তার বিয়ে করা বউ? এত রাতে আমি তার পাশে আছি? ধুর.... আর এত রাতে তোর মুহিব ভাইকে দিয়ে দরকার টা কি?"
-"রাগছিস কেন বান্ধুবি বলতো? এত রাতে তোকে কল দিয়ে বিরক্ত করায়, নাকি এত রাতে মুহিব ভাইকে কল দেয়ায়?"
-"অবশ্যই প্রথম কারণ টা। দ্বিতীয় কারণ টা সম্পূর্ণ তোর আর মুহিব ভাইয়ের ব্যাপার। তাতে আমার রাগের প্রশ্নই আসে না। এখন রাখছি।"
-"এই না.. না। আসল কথা টা তো বললামই না।"
-"আসল কথা টা আবার কি?"
-"থাক... আজ না। কাল দেখা হলেই না হয় বলবো।"
-"আচ্ছা। এখন তাহলে রাখ। এই কয়দিন যাবৎ প্রচণ্ড জ্বালিয়েছিস আমায়। এখন অন্তত শান্তিমত ঘুমুতে দে।"
-"ইশ! এতো ঘুমিয়ে করবি টা কি? দিনে দিনে মোটা হয়ে যাচ্ছিস সে খেয়াল আছে?"
-"মোটা হলে আমি হচ্ছি। তুই তো আর হচ্ছিস না। তাই আপাতত তোর ভাবতে হবে না। নিজে বিয়ে করো, বাচ্চাকাচ্চার মা হও তারপর আমারো বলার সুযোগ আসবে।"
-"ভয় দেখাচ্ছিস কেন?"
সঞ্চিতার অসহায় মাখা গলার আওয়াজ শুনে কিছুসময় ধীরেধীরে হাসলো তৃষ্ণা। তারপর বললো,
-"রাখ.. প্লিজ। ভোরে উঠতে হবে।"
-"আচ্ছা যা রাখবো। তার আগে একটা কথার জবাব দে তো।"
ভ্রু কুঁচকে তৃষ্ণা বললো,
-"কি কথার?"
-"তুই মুহিব ভাইয়ের বলা কথাগুলো নিয়ে কি কিছু ভেবেছিস?"
-"কি ভাববো?"
-"গর্দভের মতো প্রশ্ন করিস না তো!"
সঞ্চিতার কথা খুব ভালো করেই বুঝতে পেরেছে তৃষ্ণা। তবে এখন এসব নিয়ে আলোচনা করার সামান্য ইচ্ছাও তার নেই। কিন্তু সঞ্চি যেমন মেয়ে, তাতে তার মুখ থেকে কিছু না শুনে ছাড়বেও না। তাই ছোট্ট একটা নিশ্বাস তৃষ্ণা বললো,
-"দেখ,, আমি এখন এসব নিয়ে কিছু ভাবছি না। আর কখনো ভাববো কিনা জানিও না। তনয়কে আঁকড়ে ধরে পুরো জীবন কাটিয়ে দিতে পারবো আমি। দ্বিতীয় কাওকে আমার জীবনে আমি আপাতত চাই না।"
-"বললেই হলো! নিজের বয়স দেখেছিস?"
-"আমি এভাবে ভালো আছি, সঞ্চি। আর কাওকে বিশ্বাস করে তার হাত ধরে নিজের জীবনের সাথে যুক্ত করে আরেকটা তনয় জন্ম দিতে আমি চাই না।"
-"একজন পুরুষ দিয়ে বাকি সব পুরুষ কে বিচার করবি?"
-"করতে হলে করবো। তুই যে এত মুহিব ভাইয়ের হলে সাফাই গাচ্ছিস,, হ্যাঁ, ধরলাম মুহিব ভাই ভালো একজন মানুষ। তবে কাল যে সে আরেকটি মাহসানে রূপ নেবে না... তার গ্যারান্টি কি? সেও যে কাল অতৈন্দ্রিলার মত কোনো মেয়ের খপ্পরে পড়ে আমায় ছাড়বে না... তার গ্যারান্টি কি?"
-"তোর জীবনের কি কোনো গ্যারান্টি আছে, তৃষ্ণা? নেই.. তাই না? আমরা আজ আছি কাল নাও থাকতে পারি। কিন্তু তাই বলে এসব ভেবেই কি আমরা হাত গুটে বসে আছি? জীবনে চলার জন্য লেখাপড়া, খাওয়াদাওয়া, চাকরিবাকরি করছি না? কেন করছি আমরা এসব? এই জীবনের জন্যই তো... না? গ্যারান্টি নেই ঠিক আছে, তারপরও তো দিব্যি আমরা আশা রেখে জীবনযাপন করছি।"
সঞ্চিতার কথাগুলো খুব ভালোভাবে মন দিয়ে শুনলো তৃষ্ণা। তারপর ভারী গলায় বললো,
-"আমি পারবো না, সঞ্চি। এবার সব ঝড়ঝাপটা পাড় করে তনয়ের দিকে তাকিয়ে হলেও আমি উঠে দাঁড়িয়েছি। আরেকবার এসব ঝড় পাড়ি দেয়ার মত সামান্য শক্তিও আমার মাঝে অবশিষ্ট নেই।"
-"একটাবার মুহিব ভাইকে সুযোগ দিয়েই দেখ। মুহিব ভাই সম্পূর্ণ অন্যরকম একজন মানুষ।"
-"পারবো না আমি। কখনো ভাইয়ের ফ্রেন্ড ছাড়া অন্য চোখে দেখি নি তাকে... জাস্ট হবে না আমাকে দিয়ে। আমি খুব নরম মনের মানুষ আর সেটা তুইও খুব ভালো করেই জানিস। আমি সত্যিই পারবো না। ভয় হয় আমার এসব ভাবতে... মোটকথা নিজের বিশ্বাস নিয়ে আর কাওকেই খেলতে দেব না আমি।"
রাত বারোটার উপরে বেজে গেছে। অথচ এখনো ঘরে আসার নাম গন্ধ নেই অর্থির। করছে টাকি মেয়েটা? এখনো কাজ শেষ হয় নি? এত কাজ রাতের জন্য কেন ফেলে রাখে কে জানে!! বিছানায় নিজের শরীর মেলে দিতে দিতে কথাগুলো ভাবছিল তৌহিদ। ঠিক তখনি ঘরে আগমন ঘটলো অর্থির। সে ওয়াশরুমের দিকে এগুতে এগুতে বললো,
-"শুয়ে পড়বে নাকি? দাঁড়াও একটু। ওয়াশরুম থেকে ঘুরে এসে বিছানা করে দিচ্ছি।"
তৌহিদ সে কথার জবাব না দিয়ে সেভাবেই চুপচাপ পড়ে রইলো বিছানায়। অর্থি ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে টাউয়েল দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে এগিয়ে গেল তৌহিদের দিকে। ভ্রু কুঁচকে বললো,
-"ঘুমুলে নাকি?"
-"না।"
-"তাহলে উঠো। বিছানা টা ঠিক করে দেই।"
-"কোথায় ছিলে এতক্ষণ?"
-"কোথায় আবার থাকবো? বাসাতেই ছিলাম।"
তৌহিদ আর কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। অভিমানী সুরে বললো,
-"আমি অপেক্ষা করছিলাম।"
-"ঘুমিয়ে গেলেই পারতে। এই, আমরা কি সবাই যাচ্ছি সঞ্চিতা আপুর বিয়েতে?"
-"বলতে পারছি না।"
অর্থি বিছানা ছেড়ে নেমে তৌহিদের পেটে হালকা ঘাঁ দিয়ে বললো,
-"কি জানো তুমি?"
-"আপাতত কিছু জানতে চাই না। মাথাটা পুরো ফাঁকাফাঁকা লাগছে। আজ এত দেরি করলে কেন?"
বলেই অর্থিকে নিজের বাহুডোরে চেঁপে ধরলো তৌহিদ। অর্থি নিজের দু হাত দিয়ে তৌহিদের কাঁধে রেখে বললো,
-"দেখো,, শীত এসে গেছে। এর মাঝে কি ডেইলি ভালোবাসাবাসি না করলে চলে না? প্রতিদিন এভাবে শাওয়ার..."
অর্থির কথা শেষ করবার আগেই তৌহিদ বললো,
-"অহ!! তার মানে তুমি ইচ্ছে করেই দেরিতে এসেছো রুমে। যাতে আমিও ঘুমিয়ে পড়ি তোমার শাওয়ারও না নিতে হয়... না?"
বলতে বলতেই অর্থিকে পাজকোলে উঠিয়ে বিছানার মাঝবরাবর রাখলো তৌহিদ। ঘরের আলো নিভিয়ে এসেই শুরু করে দিল ভালোবাসাবাসির প্রথম পর্ব। অর্থির মুখ, ঠোঁট, গলায় অসংখ্য চুমুতে ভরিয়ে দিতে লাগলো তৌহিদ। অপরদিকে তৌহিদের এলোপাথাড়ি চুমুর প্রভাব ধীরেধীরে ছড়িয়ে যেতে লাগলো অর্থির পুরো শরীর জুড়ে। হারিয়ে যেতে লাগলো সে তৌহিদের দুনিয়ায়। ঠিক তখনি বালিশের পাশে থাকা ফোনটি বেজে উঠলো। তবে ভালোবাসাবাসির কাছে পাত্তা পেল না সেটি। একবার দুইবার করে রিংটোন বেজে বেজে বন্ধ হয়ে যাবার পর নতুন করে আবার শুরু হতেই এপর্যায়ে অর্থি কাঁপাকাঁপা গলায় তৌহিদ কে বললো,
-"তোমার ফোন।"
তৌহিদ একবার ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে বললো,
-"থাক।"
-"জরুরী না?"
-"উহু,, ঐতিহ্য।"
বলেই আবারো তৌহিদ নেমে পড়লো তার কাজে। ঠোঁটজোড়া অর্থির গলায় নিয়ে আবারো চুমু দিতে শুরু করলো সে। অপরদিকে এতবার বোনের ফোন, কিছু হয় নি তো? তৌহিদের মুখে হাত রেখে অর্থি বললো,
-"একটু কথা বলে নেই।"
-"ইশ! অর্থি। সময় অসময় বলে একটা কথা আছে।"
পঞ্চমবারের ফোনের রিংটোন শুনে আর মন মানলো না অর্থির। ফোন উঠিয়ে কানে নিতেই ওপাশ থেকে ঐতিহ্য বলে উঠলো,
-"এতবার কল দিচ্ছি! অথচ ধরছিস না কেনো? নে তোর দুলাভাইয়ের সাথে কথা বল। ব্যাটা লুচ্চা আমাকে রাজশাহী পাঠিয়ে শরমির সাথে আরামে প্রেম করার রাস্তা খুঁজছে। ওরে বলে দে, আমি কোথাও যাবো না।"
ঐতিহ্যর কথা শুনে অবাক হয়ে গেল অর্থি। কি বলছে এগুলো ঐতিহ্য? আর শরমি টাই বা কে? এদিকে তৌহিদের হুশজ্ঞান একাবারে হারিয়েছে। একটু সময় কথা বললে কি এমন হবে? হাত দিয়ে তৌহিদের মাথাটা ধরে তাকে থামতে বললো অর্থি। তারপর ফোনে থাকা ঐতিহ্যর উদ্দেশ্যে বললো,
-"কি হয়েছে? খুলে বলো? শরমি টা কে?"
এ পর্যায়ে ফোনের ওপাশ থেকে নিহাল বলে উঠলো,
-"আরে শরমি ঐতিহ্যদের সাথেই আমাদের ভার্সিটিতে পড়ে। তোমার বোন দিনদিন পাগল হয়ে যাচ্ছে। ওর দেখাশোনার জন্যই আম্মা বললো, ওকে রাজশাহী তে দিয়ে আসতে। এখানে থাকলে সব কাজ ওরই করতে হয়, প্লাস আমি ঠিকঠাক ভাবে ওর সেবা যত্ন টা নিতে পারি না। তাই ওকে বলেছি, তোমাকে রাজশাহী তে আব্বা আম্মার কাছে রেখে আসি। এর পর থেকেই তোমার বোনের পাগলামি বেড়েছে। আমি নাকি শরমির জন্য তোমার বোনকে রাজশাহী পাঠাচ্ছি। এসব অহেতুক কথার কোনো মানে হয়? যাই হোক,, এত ছোট একটা বিষয় নিয়ে রাতে কল করে ডিস্টার্ব করবার জন্য সরি ডেয়ার। রাখছি কেমন?"
-"আচ্ছা... আমি কাল আপুকে বুঝিয়ে বলবো।"
ফোন ডিসকানেক্ট করেই অর্থি তৌহিদের দিকে তাকিয়ে রাগত্ব সরে বললো,
-"একটু সময়ই সহ্য হয় না আপনার?"
উত্তরে তৌহিদ একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললো,
-"উহু। হয় না।"
বলেই আগে নিজের ফোনটি বন্ধ করে দিল তৌহিদ। তারপর আবারো গাঢ় ভাবে ঠোঁট ডোবালো অর্থির ঠোঁটের মাঝে।"
(চলবে)
0 মন্তব্যসমূহ
গল্প গুলো কেমন লাগলো, আপনার মতামত জানাতে কমেন্ট করুন।