![]() |
| গল্প পতিতা ৩+৪ |
পতিতা
পর্ব-৩+৪
লেখকঃ সাজু
আমার অন্ধকার জীবন আমার জন্য অপেক্ষা করছে। আমাকে যেতে হবে আবার সেই অন্ধকার গলির অন্ধকার জগৎ এ। আবার নিজেকে অন্ধকারের সাথে মিলিয়ে দিতে।
.
সময় ঘনিয়ে আসছে। আমি রেডি হয়ে বেরিয়ে গেলাম। আমার মুখে তেমন কোন সাজই নেই। নেই কোন বেশভুসা। আমি বেরিয়ে পরলাম আবার সেই অন্ধকার জীবনের অন্ধকার গলিতে।
.
আবার অপেক্ষা করছি। বার বার কানে সেই কথাটাই বাজতে লাগল। লোকটা বলেছিলো।
.
"তুমি অন্য কারো কাছে যাবে না।"
.
এই কথাটা কেনো বলল??? কেনো বলল এমন কথা??? দাড়িয়ে দাড়িয়ে এটাই ভাবছি৷ সেই ৮টা থেকে দাড়িয়ে এখন ঘড়ির কাটা ৯.৩০ মিনিট৷ গতকাল এক অজানা সর্বনাশের ভয় কাজ করছিলো। তবে আজ জানি না কেনো ঐ কথাটাই মনে পরছে। অন্য কেউ আসবে ভাবতেই নিজেকে আরো বেশি ঘৃণা লাগছে। কিন্তু আমার তো কিছুই করার নেই। কেউ লুটে খাওয়ার চাইতে আমি না হয় নিজেই বিলিয়ে দেই এতে অন্তত নিজেকে শেষ করে নিজের পরিবারটাকে বাঁচাতে পারবো। আমার কষ্ট গুলো না হয় আমাকে মাঝেই সীমাবদ্ধ থাক। কাউকে না হয় নিজের কষ্টের ভাগটা নাই দিলাম।
.
এক অজানা মানুষের ডাকে হুশফিরলো আমার।
.
-আপনি কি রেনু???
.
রেনু- হ্যা,
.
-আমার কথাই বলেছে আপনাকে চলুন।
.
রেনু- আমি কিছুক্ষণ লোকটার দিকে তাকিয়ে রইলাম।
.
লোকটা আমার হাত ধরে আমাকে টেনে সামনের দিকে নিয়ে যেতে থাকল।
.
এমন সময় হুট করেই আমার সামনে একটা গাড়ি এসে ব্রেক করল। আমি চমকে উঠলাম। লোকটা আমার হাত ছেড়ে দিলো।
.
পাশে তাকাতেই যেনো আমি বিষম খেলাম। ঐ লোকটা এসেছে। তাকে দেখে মনে হচ্ছে সে অনেক রেগে আছে। রাগে তার চোখ মুখ লাল হয়ে আছে। সে হন্তদন্ত হয়ে আমার সামনে এসে দাড়াল। লোকটা আমার হাত শক্ত করে চেপে ধরল।
.
-এই মেয়ে এই তোমাকে না বলেছি তুমি অন্য কারো কাছে যাবে না।
.
লোকটা রিতিমতো আমাকে ধমকাতে শুরু করল।
.
-কথা কানে যায় নি। বলছি না অন্য কারো কাছে যাবে না। ড্রাইভারকে ঠিকানা দাও নি কেনো?? বলো কেনো দাও নি??? খুব ইচ্ছে করে অন্য কারো কাছে যেতে??? খুব???
.
তারা কথা গুলো খারাপ শুনালেও জানি না কোনো আমার ভালো লাগছিলো শুনতে। লোকটা চায় না আমি অন্য কারো কাছে যাই।
.
- বলো। জবাব দাও। তোমাকে না নিষেধ করেছি। কেনো শুনো নি??
.
আমি প্রথম তার কথার জবাব দিলাম।
.
রেনু- আমি তো কারো একার নই।
.
-চুপপপ.....
.
আমার জবাবে মনে হয় উনি আরো ক্ষেপে গেলেন।
.
উনি আমাকে টেনে নিয়ে যেতে লাগলেন। তখনি বাদ সাধলো আজকের আসা লোকটা।
.
- আপনি ওকে কথায় নিয়ে যাচ্ছেন৷ ও আজকে আমার সাথে যাবে। আমি টাকা দিয়েছি ওর জন্য।
.
টাকার কথা শুনে লোকটার রাগ যেনো কয়েক হাজার গুণ বেড়ে গেলো। সে আমার যে হাতটা ধরে ছিলেন আরো জোরে ধরলেন। আমার হাতে খুব বেশি লাগছে তাও আমি কিছু বললাম না।
.
- ও তাই??? টাকা দিয়েছিস??? কত টাকা??? কত??? ওয়েট....
.
উনি আমাকে টেনে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে পিছনে রাখা ব্যাগ থেকে অনেক গুলো টাকা বের করে নিয়ে গিয়ে ঐ লোকটার মুখে ছুড়ে মারলেন আর বললেন।
.
- নে যা তোর টাকা তোকে দিয়ে দিলাম। এর যদি ওর নাম মুখেও আনিস তাহলে এখানেই শেষ করে দিবো।
.
বলেই উনি ড্রাইভ করতে লাগলো। রাগে ফুসছেন তাকে দেখলেই বুঝা যায়। রাগের জন্য উনি অনেক বেশি গতিতে গাড়ি চালাচ্ছেন।
.
বাড়ির সামনে এসেই অনেক জোরে জোরে হর্ণ দিতে লাগলো। হর্ণ দিয়েই যাচ্ছেন। থামছেন না।
.
বাড়ির ভেতরে ডুকতেই লোকটা গাড়ি থেকে নেমে দরজাটা অনেক জোরে লাগিয়ে ভেতরে চলে গেলেন।
.
উনি ভেতরে যাওয়ার প্রায় সাথে সাথেই টুনি দৌড়ে এলো।
.
টুনি- আপনি ঠিক আছেন তো??
.
টুনির প্রশ্নে আমি অনেক অবাক হলাম। তবে কিছু বললাম না। টুনি আমাকে নিয়ে ভিতরে যেতে নিলেই বাড়িতে ডুকতেই লোকটা দাড়িয়ে আছে। আমাকে দেখেই আমার হাতটা শক্ত করে ধরে আমাকে প্রায় টানতে টানতে উপরে নিয়ে এলেন তার বেড রুমে।
.
আমার বিস্ময় যেনো কাটছেই না।
.
- না করার পরেও কেনো কথা শুনলে না???। কেনো শুনো নি??? What do you think of me??? Do you think i am just a breast??? If you think so then yes thats whats am i.
.
উনি এক নিঃশ্বাসে কথা গুলো বলে গেলেন। গতকাল যে মানুষটা আমার সাথে এক অক্ষরও কথা বলে নি আজ সেই মানুষটাই এতো কথা বলছে। কিন্তু কেনো??? জানার কৌতুহল থাকা সত্বেও আমি কোন প্রশ্ন করতে পারছি না। কারণ তাকে এসব প্রশ্ন করা যে আমার সাজে না। তাকে প্রশ্ন করার মতো কোন সম্পর্ক তার সাথে আমার নেই আর কখনো হবেও না। তবু মুখ খুলে শুধু বললাম।
.
রেনু- রাত বাড়ছে আমি শাওয়ার নিয়ে আসি।
.
আমার জীবনের বাস্তনতাগুলোই হয়ত আমার মুখের কথাগুলোকে এতোটা পাথরের মতো কঠিন করে দিয়েছে ঠিক যতোটা আমাকে শক্ত করে দিয়েছে।
.
আমার কথা শুনে তার রাগ যেনো পঞ্চম আকাশে উঠে গেলো। সে আমাকে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ছুড়ে মারলেন।
.
- খুব শখ তাই না আজ তোমার সব শখ মিটাবো সব....
.
বলতে বলতেই উনি তার পুরুষত্বের নেশায় মাতলেন। পাগল হয়ে গেলেন। মূহুর্তের মাঝেই মানুষটা যেনো আমার মাঝে হারিয়ে গেলেন।
.
তার আমার কাছে আসার মাঝে স্পষ্ট ফুটে উঠে কিছু যন্ত্রণা। কিছু আছে যা তাকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে। কারো প্রতি অনেক রাগ, ক্ষোভ প্রকাশ পায়। কাউকে এভাবে নিজের করে না পাওয়ার যন্ত্রণা গুলোই মেটাচ্ছেন আমাকে শাস্তি দিয়ে। হয়ত আমার কাছে এসে ঐ মানুষটাকে অনুভব করে যন্ত্রণা দিতে চায়। প্রতিটা মূহুর্তের সাথে তার দেয়া যন্ত্রণা গুলো যেনো বাড়তেই থাকলো৷ একটা সময় আমি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না।
.
সকাল হতেই আমি উঠে যাই দেরি করে বাসায় ফেরা ঠিক হবে না। এমনি তেই ৮টা বাজে প্রায়। আমি উঠতেই। পাশের মানুষটা বলে উঠলো।
.
- গুড মর্নিং
.
তার এভাবে গুড মর্নিং বলায় অবাক হলাম আমি। তবে মনে মনে হাসলাম আমার জন্য আবার গুড মর্নিং।
.
আমি তার সাথে তেমন একটা কথা বলি না। জানি না কেনো বলার প্রয়োজন মনে হচ্ছে না। তার সাথে তো আমার কথার সম্পর্ক নয় হয়ত তাই একটা জড়তা কাজ করছে। কারণ এই মানুষটাই পৃথিবীতে একজন যে আমার জীবনের কালো অধ্যায়ের সাথে সংয়ুক্ত। তাই পারি না তার সাথে কথা বলতে। তবে একটা সময় আমি অনেক কথা বলতাম তাই তো বাবা শখ করে আমার দিয়ে ছিলো শখের তোতাপাখি। আমি আমার বাবার শখের তোতাপাখি। কারণ আমি কথা বলতে অনেক ভালোবাসি৷ অনেক কথা বলি আমি৷ না ভুল বললাম অনেক কথা বলতাম। এখন আর আগের মতো কথা বলা হয় না। কারণ আমার কথা শুনবে এমন কেউ নেই। সবাই চায় দেহ টাকে কথা শুনতে কেউ চায় না এটাই বাস্তবতা।
.
-চলো আমি তোমাকে নামিয়ে দিয়ে আসবো।
.
রেনু- প্রয়োজন নেই। আমি একাই চলে যেতে পারবো।
.
উনি আমার খানিকটা কাছাকাছি এসে বললেন।
.
-একদম রাগাবা না বলে দিচ্ছি।
.
বলেই সে বেরিয়ে গেলো।
.
খানিক্ষণ পর আমিও নেমে এলাম। আমাকে নামতে দেখেই টুনি আমার কাছে ছুটে এলো।
.
টুনি- স্যার গাড়িতে আপনার জন্য অপেক্ষা করছেন।
.
টুনি আমাকে গাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দিলো। গাড়িতে উঠে বসতেই। সে ড্রাইভি শুরু করল।
.
আজকেও গলির মোড়ে আসতেই আমি থামাতে বললাম।
.
-এখানে???
.
রেনু- হ্যাঁ, বাকিটা আমি নিজেই যেতে পারবো।
.
-আমি এগিয়ে দেই???
.
রেনু- নাহ। আমার অন্ধকার জীবনের সীমানা এ পর্যন্তই। এর পর যাওয়ার অনুমতি নেই।
.
সে আমার কথা শুনে আর কিছুই বললেন না। আমি বেরিয়ে সামনে হাটা শুরু করলাম। বার বার মনে হচ্ছিলো একবার পিছনে ফিরে তাকাই। কিন্তু না ঐ জীবনের কোন মায়া থাকতে নেই। হুট করেই পেছন থেকে সে ডাকলো।
.
-রেনু....
.
আমি তার এক ডাকেই পিছনে ফিরে তাকালাম।
.
-আমি অয়ন। অয়ন চৌধুরী।
.
প্রথম আমি তার নাম শুনলাম। তবে আমি কিছুই বললাম না। আবার ঘুড়ে বাসায় চলে এলাম।
.
এতো ক্লাত লাগছে প্রতিটা সিড়ি উপরে উঠতে অনেক বেশি কষ্টে হচ্ছিলো। মনে হচ্ছিলো যেনো এখানেই থেমে যাই। শরীরটা আর সঙ্গ দিতে পারছিলো না।
.
আমাকে দেখেই তনু চিৎকার করে উঠল।
.
তনু- মা আপু এসেছে।
.
তনু এসে আমাকে জড়িয়ে ধরল।
.
তনু- তুমি কি অনেক ক্লান্ত আপু???
.
রেনু- না রে বাচ্চা।
.
তনু- না বললেই হলো৷ তোমাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে তুমি অনেক ক্লান্ত।
.
মা- কিরে মা অফিসে কি অনেক বেশি কাজ করায় তোকে দিয়ে???
.
রেনু- না মা। আসলে নাইট ডিউটি তো তাই একটু বেশি ক্লান্তি ধরে ফেলে আর কিছু না।
.
মা- আচ্ছা গোসল দিয়ে আয় আমি খাবার দিচ্ছি।
.
রেনু- না মা আমি খাবো না একটু ঘুমাবো।
.
বলেই গোসল করে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম। বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই নিজেকে হালকা লাগছে। চোখ বন্ধ করতেই কানে শুনতে পেলাম "রেনু, আমি অয়ন। অয়ন চৌধুরী"। কখন যেনো ঘুমিয়ে পরলাম।
.
.
.
চলবে.........
#পতিতা
পর্ব-৪
.
.
.
চোখ বন্ধ করতেই কানে শুনতে পেলাম "রেনু, আমি অয়ন। অয়ন চৌধুরী"। কখন যেনো ঘুমিয়ে পরলাম।
.
আজ বিকেল বিকেলেই ঘুম ভেংগে গেলো আমার। নিজেকে খুব ফুরফুরে লাগছে৷ জানি না কেনো তবু ভালো লাগছে নিজের কাছে। উঠে মুখ-হাত ধুয়ে ছাদে চলে গেলাম। আজ রোদ নেই। হালকা মেঘলা আকাশ সাথে মৃদু বাতাসও বইছে। আমি চুল গুলো ছেড়ে ছাদের রেলিংটা ঘেষে দাড়ালাম। মৃদু বাতাসে আমার চুলগুলো দোল খেতে লাগলো। আমি বুক ভরে নিঃশ্বাস নিতে লাগলাম। যেনো প্রতিটা নিঃশ্বাসের সাথে আমার ভেতরটাকে ঠান্ডা করে দিয়ে যাচ্ছে।
.
আজ অনেক অনেকদিন পর আমি এভাবে উপভোগ করছি৷
.
যখন আমার মন ভালো থাকে তখন আন মনেই আমার মুখ দিয়ে গান বেরিয়ে আসে। যেমন এখন আমি গাইছি।
.
আমারো পরাণোও যাহা চায়....
তুমি তাই তুমি তাই গো.. আমারো পরানো যাহা চায়য়য়....
.
মা- বাহ কত দিন পর আমার মেয়ে গান গাইছে।
.
মার ডাকে আমি ফিরে এলাম আমার ভাবনার যগৎ থেকে। মাকে দেখে হেসে দিলাম।
.
মা- থামলি কেনো গা
.
রেনু- আবার অন্য একদিন গাইবো।
.
মা আমার দিকে চায়ের কাপটা এগিয়ে দিলো।
.
মা- এই নে চা।
.
রেনু- তুমি কিভাবে বুঝলে???
.
মা- আমার মেয়েটা আমাদের সব প্রয়োজন দেখছে আর আমি তার এতোটুকু প্রয়োজন বুঝবো না??? তা না হলে কিসের মা হলাম।
.
কথাটা বলেই মা পাশে রাখা চৌকিটাতে বসলেন। মাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে তার হয়ত মন খারাপ। আমিও গিয়ে মার পাশে বসলাম।
.
রেনু- কি গো মা কি হয়েছে???? কি ভাবছো???
.
মা- জানিস তো মা খুব খারাপ লাগে তোদের জন্য কিছুই করতে পারছি না। তুই একাই কত কষ্ট করছিস।
.
আমি মাকে আলতো করে জড়িয়ে ধরলাম।
.
রেনু- দেখো মা একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে। আমরা অনেক ভালো থাকবো।
.
বিকেলটা আমি ছাদের এই কোণাটায় বসেই কাটিয়ে দিলাম। ছাদের সাথে আমার সম্পর্ক টা অনেক নিবিড়। বিকেলের এই সময়টা আমি এখানেই কাটাতে ভালোবাসতাম। আজ অনেক দিনপর আবার এভাবে সময় কাটাচ্ছি। আবার এভাবে কখনো নিজেকে সময় দিতে পারবো ভাবি নি।
.
বিকেল ঘনিয়ে কখন যেনো সন্ধ্যা হয়ে চারিদিক কিছুটা অন্ধকারাচ্ছন হয়ে এসেছে খেয়ালই করিনি। মায়ের ডাকেই আমার খেয়াল হলো।
.
রেনু- আসছি মাআআআ...
.
রেনু- ডেকে ছিলে মা???
.
মা- সন্ধ্যা হয়ে গেছে খাওয়া লাগবে না তোর??
.
রেনু- খাবো তো।
.
মা- কখন খাবি শুনি???
.
রেনু- তুমি যখন দিবে তখনি।
.
বলেই হেসে দিলাম।
.
মা- যা তোর বাবার কাছে গিয়ে বস। আমি খাবার নিয়ে আসছি।
.
আমি বাবার কাছে গিয়ে বসলাম। আমাকে দেখলেই বাবার মুখে সুখের হাসি ফুটে উঠে। এই হাসিটা দেখলেই আমি আমার সব কষ্ট ভুলে যাই৷
.
রেনু- বাবা তোমার মাথায় তেল দিয়ে দেই???
.
বাবা- নারে মা লাগবে না।
.
রেনু- বললেই হলো লাগবে না। কতদিন তোমার মাথায় তেল দিয়ে দেই না।
.
বলতে বলতেই বাবার মাথাটা নিজের কোলে নিয়ে খুব যত্ন করে তেল দিয়ে দিতে লাগলাম।
.
তখনি মা আসে ভাত নিয়ে।
.
মা- সেকি মেয়েটা সারাদিন কিছু খায় নি এখন একটু খাবে। আর তুমি ওকে দিয়ে মাথায় তেল দেয়াচ্ছো???
.
রেনু- মা তুমি বাবাকে এভাবে বলবে না৷ আমি বলেছি দিয়ে দিবো।
.
মা- ভাতগুলো ঠান্ডা হয়ে যাবে যে মা।
.
রেনু- তাহলে তুমি খাইয়ে দাও। কতদিন তোমার হাতে ভাত খাই না।
.
মা আজ অনেকদিন পর আমাকে ভাত খাইয়ে দিলো। আজ পেটের চাইতে মনটা ভরলো বেশি৷ মায়ের হাতে ভাত খাওয়া সুখটাই অন্যরকম।
.
রেনু- মা আমি যাই আমাকে আবার বের হতে হবে।
.
বাবা- রেনু মা
.
রেনু- কিছু বলবে বাবা???
.
বাবা- একটা কথা বলতাম।
.
রেনু- বলো না বাবা কি বলবে।
.
বাবা- বলছিলাম কি তুই অফিসে বলে দেখতি যদি তোকে সকালের সিফটে দেয়া যায়। এভাবে রাত জেগে কাজ করলে তো তুই অসুস্থ হয়ে পরবি মা।
.
আমার জন্য বাবা কত চিন্তা করে৷ ভেতরে ভেতরে অনেক অপরাধবোধ কাজ করে আমার। পারছি না তাও সহ্য করা লাগছে। কারণ সত্যি টা জানলে যে আমার বাবা মা মরে যাবে।
.
বাবা- কিরে মা কি ভাবছিস?
.
রেনু- মাত্রইতো জয়েন করলাম কিছুদিন যাক তারপর না হয় বলে দেখবো।
.
বাবা- আচ্ছা যা মা তৈরি হয়ে নে।
.
৮টার মাঝেই আমি বেরিয়ে পরলাম। রাস্তায় জ্যামও থাকে এতোটা পথ যেতেও তো সময় লাগবে৷ ভাবছি আর হাটছি। হাটতে হাটতেই গলির মড়ো এসে থমকে গেলাম। আমি ঠিক দেখছি তো। চোখ বন্ধ করে আবার তাকালাম। নাহ ঠিকি দেখছি। মানুষটা গাড়ি নিয়ে আমার জন্য অপেক্ষা করছে। আমাকে কাছাকাছি আসতে দেখেই সে গাড়ি থেকে নামলেন। আমি তার সামনে গিয়ে নিশ্চুপ হয়ে দাড়িয়ে রইলাম। তাকে কি বলবো। আমাকে অবাক করে দিয়ে সে নিজেই বললেন।
.
অয়ন- তুমি তো সকালে এখানেই নামলে বাসা তো চিনি না তাই ভাবলাম হয়ত এখান দিয়েই আসবে তাই এখানেই অপেক্ষা করলাম।
.
আমি কিছু বললাম না। সে আমাকে আবার অবাক করে দিয়ে গিয়ে গাড়ির দরজা খুলে দাড়ালেন।
.
অয়ন- বসো।
.
আমি তার বাধ্যগত ভাবে বসে পরলাম।
.
সে আমাকে নিয়ে বাসায় চলে এলেন।
.
টুনি আমাকে দেখেই হেসে দিলো।
.
আমি তার রুমে গিয়ে তার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। অপেক্ষা তো বাহানা আমি তো তার চিন্তায় মগ্ন ছিলাম। তার আচরণ গুলো কিছুতেই মিলাতে পারছি না৷ সে কখন পাথরের মতো শক্ত কখন পানির মতো সচ্ছ কিছুতেই বুঝতে পারি না। তার হিসেবটা যে কিছুতেই মিলাতে পারি না৷ সে কেনো আমার বোঝার বাইরে। কেনো পারাছি না আমি তাকে বুঝতে। তখনি সে আসল। তার সাথে আরো দুজন। দেখেই বোঝা যাচ্ছে তারা সার্ভেন্ট।
.
অয়ন- এই ব্যাগটা আর বাকি জিনিস গুলো নিয়ে গাড়িতে রেখে দাও।
.
তারা ব্যাগ আর বাকি জিনিস নিয়ে চলে গেলো। মানুষটা আমার সামনে এসে দাড়ালো। আমি চোখ তুলে তার দিকে তাকালাম। তার চাহনিতে কি যেনো আছে৷ আমি হারিয়ে যাচ্ছিলাম।
.
অয়ন- আমি বিজনেসের কাজে দেশের বাহিরে যাচ্ছি ফিরতে বেশ কিছুদিন সময় লাগবে। আর আমি না ফেরা পর্যন্ত তুমি এখানেই থাকবে। অন্য কারো কাছে যাবে না বলে দিলাম। ড্রাইভার তোমাকে নিয়ে আসবে আবার সকালে দিয়ে আসবে। কথার যদি এদিক সেদিক হয় তাহলে সেখানেই শেষ করে দিবো। কথাটা মনে থাকবে তো???
.
আমি মুখে কিছু বললাম না শুধু মাথা ঝাকিয়ে সায় দিলাম মনে থাকবে।
.
অয়ন- এটা রাখো এখানে যা আছে তা দিয়ে আমি আসা পর্যন্ত তোমার চলতে কোন সমস্যা হবে না। আর যতদিন আমি না আসবো প্রয়োজনে প্রতিদিন তুমি রাতে এখানেই থাকবে৷ আমি ফোন দিয়ে খবর নিবো কথার যেনো নড়চর না হয়। আমি আসি। সাবধানে থেকো।
.
আমি দাড়ানো থেকে বিছানায় বসে পরলাম। সে আমাকে কথা গুলো বলেই বেরিয়ে যেতে নিয়ে আবার ফিরে এলেন। হুট করেই সে আমার একদম কাছাকাছি চলে এলেন। মাথা নিচু করে আমার কপালে আলতো করে একটা চুমু একে দিলেন। আর বললেন।
.
অয়ন- নিজের খেয়াল রেখো।
.
বলেই একট হাসি দিয়ে সে বেরিয়ে গেলেন৷ আমি তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম।
.
কি হলো আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না। নিজের অজান্তেই আমার হাতটা কপালে চলে গেলো। সে আমার কপালে ভালোবাসার পরশ এঁকে দিলেন।
.
হ্যাঁ, এটা ভালোবাসার পরশ। কারণ এই মানুষটার প্রতিটা স্পর্শের সাথে আমি পরিচিত। তার এই স্পর্শে কোন রাগ ছিলো না, কোন ক্ষোভ ছিলো না, শুধু ছিলো শুধু ভালোবাসা তাই এটাকে ভালোবাসার পরশ বলে। আমি ভূত দেখার মতো বসে রইলাম।
.
বেশ কিছুক্ষণ পর এক কাপ চা হাতে টুনি এলো।
.
টুনি- আপনার চা।
.
রেনু- এতোক্ষণ কোথায় ছিলে??
.
টুনি- স্যারের স্টাডি রুম গোছাচ্ছিলাম। সারাদিন কাজ করেছেন তো তাই এলো মেলো হয়ে ছিলো। স্যার প্রতিবারই কোন বিজনেস টুরে যাওয়ার আগে এমনটা হয়।
.
রেনু- টুনি একটা কথা জিজ্ঞেস করি???
.
টুনি- জ্বি বলেন।
.
রেনু- তোমার স্যার অনেক বড়লোক তাই না।
.
টুনি- কি হবে এতো টাকা দিয়ে বলেন মানুষটাকে ভালোবাসারই তো কেউ নেই। ভালোবাসার বিনিময়ে শুধু পেয়েছে বিশ্বাসঘাতকতা। এতো টাকার কি মূল্য।
.
আমি স্পষ্ট দেখলাম কথা গুলো বলতেই টুনির চোখ ছলছল করছিলো। তাই প্রসঙ্গ পালটে দিলাম। আর কিছু জানতে চাইলাম না।
.
রেনু- তোমার সাথে গল্প করতে আমার খুব ভালো লাগে।
.
টুনি- আমারও আপনাকে খুব আপন মনে হয়।
.
রেনু- তাহলে আজ সারারাত তুমি আর আমি গল্প করব।
.
টুনি- এই তো গল্প করছি।
.
রেনু- করছি আরো করব সারারাত।
.
কথা বলতে বলতেই আমার চায়ের কাপটা খালি হয়ে গেলো। টুনি আমার হাত থেকে কাপটা নিয়ে নিলো।
.
টুনি- এবার লক্ষি মেয়ের মতো ঘুমিয়ে পরুন।
.
রেনু- সেকি কথা আমরা তো গল্প করব।
.
টুনি- করব তবে আজ নয়। স্যার বলে গেছেন আজ যেনো আপনি ঠিক মতো ঘুমান। আপনার বিশ্রাম দরকার। তাই আজ আর রাত জাগা যাবে না।
.
বলেই টুনি আমাকে শুইয়ে দিয়ে আমার গায়ের উপর চাদর টা টেনে দিয়ে লাইট অফ করে দিয়ে চলে গেলো।
.
আমি চোখ বন্ধ করতেই মনে হলো কেউ আলতো করে আমার কপালে চুমু এঁকে দিলো। আমি চোখ খুলে ফেললাম। নাহ এটা শুধু আমার ভাবনা ছিলো। যখন মানুষের সাথে তার চিন্তা-ভাবনার বাহিরে কিছু ঘটে তখন ঐ ঘটনাটাই বার বার মাথায় ঘুড়ে আমার সাথেও তাই ঘটেছে। সেজন্যই আমার মস্তিষ্কে সেই ঘটনাটার পূণরাবৃত্তি ঘটছে। কারণ ঐ মানুষটার থেকে এমন কিছু আমি আশা করা তো দূরের কথা কল্পনায়েও ভাবি নি অথচ সেটাই হয়েছে আমার সাথে।
.
আজ অনেক গুলো দিন পর আমার ভিতরটা শান্ত তাই হয়ত সারাদিন ঘুমানোর পরেও এখনো আমার চোখে রাজ্যের ঘুম। মনে হচ্ছে কেউ আমার হাত ধরে আমাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে ঘুমের দেশে রাজ্যত্ব করতে। হয়ত সেটা অয়ন চৌধুরী ব্যতীত অন্য কেউ নয়।
.
.
.
.
চলবে.........

0 মন্তব্যসমূহ
গল্প গুলো কেমন লাগলো, আপনার মতামত জানাতে কমেন্ট করুন।