গল্প পতিতা। পর্ব-১+২


পতিতা 
পর্ব-১+২
লেখকঃ সাজু

অনেক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছি লোকটার। জানি না সে কে??? শুধু জানি আজ সারারাত আমি তার চাহিদা মেটাবো বিনিময়ে সে আমার প্রয়োজন মেটাবে।
.
জ্বি যা ভাবছেন তাই। আমি খারাপ মেয়ে। সমাজ আমার মতো মেেয়দের একটা অন্য নামে ডাকে। ব্যাইশা অথবা পতিতা। নিজেকে নিয়ে ব্যবসা করা মেয়েদের এই নামেই ডাকে সবাই৷ এতো দিন আমিও ভাবতাম এই মেয়ে গুলো হয়ত এতোটাই খারাপ বা জঘন্য তাই নিজেকে অন্য বেগাণা পুরুষের সামনে খুলে ধরতেও এদের লজ্জা করে না। তবে আমিও ভুল ছিলাম বাকি সবার মতোই। একটা মেয়ে কতটা অসহায় হলে এই পথ বেঁছে নেয় আজ তা উপলব্ধি করতে পারছি হারে হারে। নিজেকে নর্দমার কিট মনে হচ্ছে তবু আমার কিছু করার নেই। আমাকে এটা করতেই হবে না হলে যে সব শেষ হয়ে যাবে।
.
ঘৃণায় আমার পা গুলো ঠান্ডা হয়ে আসছে। সেই কখন থেকে এই এক জায়গায় দাড়িয়ে আছি। জায়গাটাও কিছুটা অন্ধকার। গাঁ ঝমঝম করছে আমার। ধীরে ধীরে রাত বাড়ছে সময় ঘনাচ্ছে আমার কেমন যেনো লাগছে চারিদিক যেনো ঝাপসা হয়ে আসছে আমার ।হুট করে একটা গাড়ি এসে আমার কিছুটা সামনে থামলো একটা কালো গাড়ি ভেতরে কে আছে বুঝতে পারছি না তবে এই গাড়িটা যে আমার জন্য এসেছে সেটা বেশ বুঝতে পারছি এমনটাই নির্দেশনা পেয়েছিলাম ফোনে।
.
গাড়িটা দুমিনিট আমার সামনে দাঁড়িয়ে রইলো। আমিও সেখানেই ঠায় দাঁড়িয়ে রইলাম। আমার পাগুলো আগাচ্ছে না। তাই নরতে পারছিনা। ঝিম ধরে রয়েছি।
.
গাড়ির সামনের গ্লাস টা একটু খোলা হল ভেতর থেকে কেউ জোরে জোরে ২/৩ বার হর্ন দিলো। আমার পাগুলো তো আগেই ঠান্ডায় বরফ হয়ে গেছে তারপরেও মনকে বুঝ দিয়ে সামনে পা বাড়ালাম। কিছুটা কাছে যেতেই ভেতর থেকে কেউ একজন বলে উঠল গাড়িতে উঠে বসো। আমি আর অপেক্ষা না করে পেছনের দরজায় হাত দিতেই আবার বলে উঠলো সামনে এসে বসো। তাই অপর পাশে ঘুরে গাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই ভেতর থেকে কেউ দরজাটা খুলে দিলো। আমি কাউকে দেখলাম। না কিছুই দেখলাম না। চুপচাপ বসে রইলাম। আমার পাশে কেউ একজন গাড়ি চালাচ্ছে সে কি বা কেমন দেখতে আমার তা দেখতে ইচ্ছে করছে না। আমি ঠায় ঝিম ধরে বসে রইলাম। গাড়ি চলছে গাড়ির মতো। পাশের মানুষটাও আমার সাথে কোন কথা বলল না। না জিজ্ঞেস করল আমার নাম। তার কাছে হয়তো আমার নামটা মুখ্য নয় সে যে কাজে এসেছে হয়তো সেটাই মুখ্য। তাই নাম দিয়ে তার কি আসে যায়। বেশকিছুক্ষণ গাড়ি চলার পর একটা বাড়ির সামনে গিয়ে থামলো। হর্ন দিতেই ভিতর থেকে কেউ মস্ত বড় দরজা খুলে দিলো। গাড়িটা হন হন করে ভিতরে ঢুকে গেলো। পাশের মানুষটা গাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো। আমি সামনে দেখছি লোকটা আমাকে এভাবেই গাড়ীতে রেখে বাড়ির ভেতরে চলে গেলো। অথচ আমি বসে আছি আমি কি করব কিছুই বলল না। নামবো না বসে থাকব। তার পেছনে যাবো না তার সাথে যাবো। হয়তো বলাটা প্রয়োজন মনে করল না। আমি তো আর তার কাছে আর দশটা মানুষের মতো নই। একটা বাজে মেয়ে। লোকটা ভিতরে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই কেউ একজন এসে গাড়ির দরজাটা খুলে আমাকে বলল আপনি ভিতরে যান। আমিও তার পথ অনুসরণ করে ভেতরে চলে গেলাম।
.
মস্ত বড় একটা বাড়ি। খুব সুন্দর করে সাজানো। এমন জায়গায় থাকলে যে কারো মন ভালো হয়ে যাবে। তাহলে এই মানুষটা এমন কেনো?? সে কেনো আমাকে আনতে গেলো?? সে কেনো আমার মত একটা মানুষের কাছে গেলো?? হুট করেই প্রশ্নগুলো মনে আসলো। কিন্তু এসব প্রশ্ন করে কোন লাভ নেই। আমার প্রয়োজন টা অন্য জায়গায়। আর প্রয়োজন কারো মায়া বোঝেনা। আমি চারিদিকে দেখতে লাগলাম। কি সুন্দর করে সাজানো। কি সুন্দর করে গোছানো দেখতে দেখতেই কারো একজনের সাথে ধাক্কা খেলাম। ধাক্কা খেয়ে তার শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। সে আমার হাত ধরে হনহন করে আমাকে বাড়ীর ভেতরে নিয়ে গেলো। তার বেডরুমে নিয়ে গেলো। দেখাই বোঝা যাচ্ছে এটা কারো বেডরুম সে থেকেই বুঝলাম এটা তার বেডরুম। আমি চুপ করে দাড়িয়ে রইলাম সে বলল-
.
-তুমি ফ্রেশ হয়ে নিতে পারো। আমার কিছু কাজ আছে আমি কাজ শেষ করে আসছি।
.
কথাটা বলে সে আমার জবাবের অপেক্ষা না করে চলে গেলো। আমি তাকে দেখতেও পারলাম না৷ কেনো যেনো খুব ঘৃণা লাগছে চোখ তুলে ঐ মানুষটার দিকে তাকাতে। না তাকে নয় ঘৃণা লাগছে নিজেকে। তাই চোখ তুলে তাকাতে পারি নি। দেখতে পারি নি কোন মানুষটার হাতে নিজের সর্বনাশ করতে আসলাম।
.
আমি সেখানেই ঠায় দাড়িয়ে রইলাম। ভাবতে লাগলাম কি করছি আমি। মনে মনে নিজেকে ধিক্কার দিচ্ছি। একজনের ডাকে আমার হুসফিরল।
.
-ম্যাম শুনছেন??
.
-জি বলেন।
.
-স্যার এটা আপনার জন্য পাঠিয়েছে। আপনি ফ্রেস হয়ে পরে নিন। আর ডিনারে কি খাবেন??
.
-পানি।
.
-মানে???
.
-গলাটা শুকিয়ে গেছে একটু পানি হবে প্লিজ।
.
-সিওর ম্যাম।
.
মেয়েটা আমাকে পানির গ্লাস এগিয়ে দিতে দিতে আবার বলল।
.
-ম্যাম বললেন না ডিনারে কি খাবেন???
.
আমি আবার ভাবনায় পরে গেলাম। মনে মনে ভাবতে লাগলাম আমি আর কি খাবো। খাবে তো আজ রাতে ঐ লোকটা আমায়। মেয়েটার ডাকে আবার ফিরে এলাম।
.
-ম্যাম আবার কি ভাবছেন??
.
-না কিছু না।
.
-কি বানাবো আপনার জন্য।
.
-আমি কিছুই খাবো না।
.
-সে কি কথা।
.
-সত্যি খিদে নেই আমার।
.
-বুঝতে পেরেছি লজ্জা পাচ্ছেন সমস্যা নেই আমি নিজেই আপনার জন্য স্পেশিয়াল কিছু তৈরি করছি। আপনি ফ্রেস হয়ে নিন।
.
বলেই মেয়েটা চলে গেলো। মেয়েটা দেখতে অনেক মায়াবি৷ খুব লক্ষি বুঝা যাচ্ছে।
.
মেয়েটা চলে যেতেই আমি শাওয়ার নিয়ে নিলাম। মেয়েটা আমাকে একটা কালো সিল্কের শাড়ি দিয়ে গেছে। মেয়েটা নয় ঐ লোকটা পাঠিয়েছে। শাওয়ার নিয়ে শাড়িটা পরে নিলাম। আমার মুখে কোন সাজ নেই। ভেজা চুল গুলো ছেড়ে দিলাম। ছোট বেলা থেকেই আমার চুলের অনেক শখ৷ তাই খুব যত্ন করতাম নিজের চুলের। ভেজা চুল গুলো ছাড়তেই কোমড়ের নিচে গিয়ে পরল। আমার সব চাইতে পছন্দের জিনিস আমার চুল। সবাই বলে আমার বর নাকি আমার চুলের পাগল হবে। সে নাকি সর্বক্ষণ আমার চুল হাতড়াবে। আমার পোড়া কপালে আর তা ঝুটল না।
.
-বাহ বেশ লাগছে তো দেখতে।
.
পিছনে ঘুড়েই দেখলাম ঐ মেয়েটা। আমি বললাম।
.
-না দেখে কিভাবে বুঝলেন??
.
-যার চুল এতো সন্দুর সে যে কতটা সুন্দর হতে পারে তা বোঝাই যায়।
.
-আমি সুন্দর???
.
-এক মিনিট প্লিজ।
.
মেয়েটা আমাকে এক মিনিট বলে খাবারের ট্রলিটা রেখে কোথায় যেনে চলে গেলো। এক মিনিট পরেই আবার ফিরে এলো। মনে হয় দৌড়ে এসেছে।
.
-দেখি তো।
.
আমি মেয়েটার দিকে তাকাতেই ও আমার কপালে কিছু একটা দিয়ে আমাকে পিছনে ঘুড়িয়ে দাড় করলো। আয়নদয় তাকাতেই দেখলাম মেয়েটা আমাকে ছোট্র একটা টিপ পরিয়ে দিয়েছে। একটা ছোট্ট কালো টিপ। আমি মেয়েটার কান্ডে অবাক হয়ে গেলাম। কালো টিপ আমার খুব পছন্দ।
.
-এখন আপনাকে পূর্ণাঙ্গ লাগছে। যেনো সৌন্দর্য্যের প্রতিমা।
.
-নাম কি তোমার???
.
-টুনি..
.
- বাহ খুব সন্দর নাম।
.
মেয়েটা ওর নামের মতোই মিষ্টি। একদম টুনটুনি পাখির মতো। মেয়েটা আমার কাছে কিছুই জানতে চাইল না। আমি কেনো এসেছি বা আমার নাম কি কিছুই জানতে চাইলো না। টুনি আমার হাত ধরে আমাকে বসালো। আমাকে খাবার দিয়ে বলল।
.
টুনি- খান।
.
-তোমার স্যার খাবেন না???
.
প্রশ্নটা করে নিজেই অবাক হয়ে গেলাম। কেনো করলাম আমি এই প্রশ্নটা?? হয়ত বেশকিছুক্ষণ ধরে ঐ লোকটার কথা ভাবছি তাই নিজের অজান্তেই প্রশ্নটা করে ফেলেছি।
.
টুনি- স্যারকে খাবার দিয়েই এসেছি। স্যারই বললেন আপনাকে যেনো খুব যত্ন করে খাওয়াই।
.
কথাটা শুনে মনে মনে তাচ্ছিল্যের হাসি দিলাম৷ ভাবলাম পশু হালাল করার আগে যেমন তাকে খাওয়ানো হয়। সেভাবে আমাকে হালাল করার আগে যত্ন করছেন লোকটা৷ মুখে আর কিছুই বললাম না৷
.
টুনি- খান না। মাটন কারি স্যারের খুব পছন্দ। ভাবলাম আপনার ও হয়ত ভালো লাগবে।
.
টুনি আমাকে খুব যন্ত করে খাওয়ালো। অনেক কথা বললো। আমি কত সুন্দর সেটা বলল। নিজের কথা এসবই বলল। আমার কাছে তেমন কিছুই জানতে চায় নি। খাওয়া শেষ হতেই টুনি বলল।
.
টুনি- চা খাবেন??
.
আমি টুনির দিকে তাকিয়ে রইলাম।
.
টুনি- বুঝতে পেরেছি। স্যারেরও রাতে ডিনারের পর চা ছাড়া চলে না। আমি পাঠিয়ে দিচ্ছি। আপনি রেস্ট করেন। স্যার অল্প সময়ের মাঝেই চলে আসবেন।
.
ঐ লোকটার আসার কথা শুনেই বুকের ভিতর যেনো কেউ চেপে ধরল। টুনি চলে যাচ্ছে। আমি পিছন থেকে ডাকলাম।
.
-টুনি
.
টুনি- জ্বি বলেন।
.
-তোমার মনে হয় না আমি বাজে মেেয়।
.
টুনি- না আমার তা মনে হয় না।
.
কথাটা বলেই টুনি আর কোন প্রশ্ন বা কথার অপেক্ষা বা সুযোগ না দিয়ে চলে গেলো। আমি কিছুক্ষণ বসে রইলাম। একজন এসে চা দিয়ে গেলো। টুনি এলো না। আমি চা হাতে ভাবতে লাগলাম। টুনি কেনো এলো না। তাহলে কি ঐ প্রশ্নটা করায় টুনি কিছু মনে করেছে। টুনি কি জানে আমি কে বা কেনো এসেছি?? টুনি কি জানে ঐ লোকটা আমায় কেনো এনেছে?? বার বার প্রশ্নগুলো আমায় তাড়া করছে। জানি আজকের রাতটা চলে গেলে কাল চলে যাওয়ার পর আর কখনো টুনি নামের এই মেয়েটার সাথে আমার দেখা হবে না। কখনো না। তাও মেয়েটার কথা আমাকে তাড়া করছে। আমাকে ভাবাচ্ছে। ভাববেই তো আমিও তো মানুষ। আমারও তো মনুষ্যত্ব আছে। আমি তো আর কোন বিবেকহীন পশু নই। শুধু আমার বাস্তবতাটা কেবল আমি জানি অন্য কেউ নয়।
.
চায়ের কাপে চুমুক দিতেই দক্ষিণা বাতাস এসে লাগলো। আমি চা হাতে বারান্দায় চলে এলাম।
.
আমি মনে মনে গুণ গুণ করে গাইতে লাগলাম-
.
তোমার খোলা হাওয়া.....
.
কারো উপস্থিতি বুঝতে পেরেই আমি থেমে গেলাম। পিছনে ঘুড়তেই দেখি সেই লোকটা।
.
আমি কখনো প্রেম করিনি। ভালোবাসা নামের অনুভূতিটার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। নেই কোন পরিচিতি। তবে আজ আমার খুব প্রেমে পরতে মন চাইছে। আমি কখনো ছেলেদের সাথে তেমন একটা মিশি নি। শুনতাম ছেলেদের নাকি পাঞ্জাবিতে খুব সুন্দর লাগে দেখতে। আর এমন সুদর্শন একজন পুরুষ যখন ধবধবে সাদা একটা পাঞ্জাবি পরে সামনে দাড়ায় কার না মন চাইবে প্রেমে পরতে। আমি আর ১০ টা সাধারণ মেয়ের মতো হলে হয়ত তাকে প্রেম নিবেদন করতাম। কিন্তু কি কপাল আমার এই লোকার সাথেই আমার অন্ধকার জীবনের পথ চলার শুরু হবে। এই লোকটাকে দিয়েই শুরু হবে জানি না কার সাথে বা কোথায় গিয়ে এই অন্ধকার জীবনের শেষ হবে। আমি জানি না।
.
লোকটা কিছুক্ষণ তব্দা খাওয়ার মতো দাড়িয়ে থেকে আমাকে দেখলো। তার এই দৃষ্টিতে কি যেনো আছে। কি না অনেক কিছু আছে। রাগ, জেদ, অভিমান,কষ্ট,দুঃখ,ভালোবাসা সব দেখতে পারছি আমি সব।
.
লোকটা আমার হাত ধরে আমাকে একটা হ্যচকা টান দিয়েই কোলে তুলে নিলেন। আমার হাত থেকে চায়ের কাপটা পরে ভেংগে টুকরো টুকরো হয়ে গেলো ঠিক যেভাবে এখন আমি টুকরো টুকরো হবো।
.
সে আমাকে বিছানায় নিয়ে গিয়ে পাগল হয়ে গেলেন। পাগলের মতো আমার শাড়ির আচলটা সরিয়ে দিয়ে যেনো এক নেশায় মেতে উঠলেন সে। এক পাগল করা নেশায় মেতেছে সে। আমি পারছি না তাকে বাধা দিতে। কারণ আমাকে যে পারতেই হবে তাহলেই না বিনিময়ে আমার প্রয়োজন টা মিটবে। প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে আমার প্রচন্ড। মনে হচ্ছে শরীরের প্রতিটা হাড় মট মট করে কেউ ভেংগে দিচ্ছে। আমি পারছি না সহ্য করতে। তর তর করে চোখ বেয়ে পানি পরে দু পাশে বালিশ ভিজছে। এই মানুষটার এটা দেখারও সময় নেই। দেখবেই বা কেনো। আমি তার প্রয়োজন মিটাচ্ছি বিনিময়ে সে আমার প্রয়োজন মেটাবে। এমনটাই তো কথা হয়েছে তার সাথে। তার প্রতিটা স্পর্শে আমি স্পষ্টভাবে বুঝতে পারছি। কারো প্রতি তার খুব রাগ। খুব অভিমান। কোন অজানা কষ্টের আগুণে পুড়ছে সে। আর আজ সেই আগুণের জ্বালাই মেটাচ্ছেন আমাকে দিয়ে। আমি কিছুতেই সহ্য করতে পারছি না। তবু হাত মুখ খামছে পরে রইলাম। প্রচন্ড ব্যথা, অসহ্য কষ্ট সহ্য করতে না পেরে কখন যেনো জ্ঞান হারিয়ে ফেললাম নিজেও জানি না।

#পতিতা
পর্ব-২

.
.
.
প্রচন্ড ব্যথা, অসহ্য কষ্ট সহ্য করতে না পেরে কখন যেনো জ্ঞান হারিয়ে ফেললাম নিজেও জানি না।
.
.
যখন চোখ খুললাম লোকটা, না লোক নয় একজন সুদর্শন পুরুষ। হ্যাঁ, সে আসলেই খুব সুন্দর দেখতে। প্রতিটা মেয়ের স্বপ্নের পুরুষগুলো যেমন তার চাইতেও বেশি সুন্দর সে। প্রথম কাল রাতে তাকে দেখে যেনো আমি থমকে গিয়েছিলাম। এই মূহুর্তে সে আমার পাশেই শুয়ে আছে। আমি তাকে দেখছি। কিছুতেই চোখ ফেরাতে পারছি না। একটা সময় এমন একটা মানুষের স্বপ্ন আমিও দেখতাম। তবে আজ সেই স্বপ্নটা কেবল স্বপ্নই। কারণ আমার জীবনের বাস্তবতাটা যে পাল্টে গেছে। আমি আজ থেকে আর ১০ টা সাধারণ মেয়ের মতো নই। নষ্ট গলির নষ্ট মেয়েদের খাতায় নাম লিখেছি আমি।
.
সবে মাত্র সকাল হয়েছে এখনি চলে যাওয়াই ভালো হবে। আমার তো অনেক কাজ বাকি। আবার নতুন কোন ব্যবস্থাও করা লাগবে। এটাই এখন আমার বাস্তবতা। লোকটাকে ডাকার আর কোন প্রয়োজন নেই। উঠে বসতেই বিছানার পাশের বেডসাইড টেবিলের উপর একটা খাম রাখা উপরে লেখা Payment। আমার বুঝতে বাকি রইল না৷ এটা আমার পেমেন্ট। কাল রাতের জন্য আমার দাম এটা। আমি তার প্রয়োজন মিটিয়ে দিয়েছি আর সে আমার প্রয়োজন।
.
আমি রুম থেকে বেরতে নিলেই থমকে গেলাম।
.
-রেনু
.
আমার নাম ধরে কেউ ডাকল। এখানে আমার নাম ধরে কে ডাকবে। পিছনে ঘুড়তেই দেখলাম লোকটা দাড়িয়ে আছে।
.
রেনু- আপনি আমার নাম জানেন???
.
সে আমার প্রশ্নের কোন জবাব না দিয়ে উঠে আমার কাছাকাছি চলে এলেন। উনি যা বলল তার কথায় আমি আরো অবাক হলাম।
.
- তুমি অন্য কারো কাছে যাবে না। ড্রাইভার তোমাকে নামিয়ে দিয়ে আসবে। আবার রাতে নিয়ে আসবে। কখন আনতে যাবে সময় টা বলে দিও।
.
রেনু- আমি একাই যেতে পারবো। গাড়ি লাগবে না।
.
- যা বলছি তাই করো। অন্য কারো কাছে যাবে না তুমি।
.
আমি আর তার কথার কোন জবাব দিতে পারলাম না৷ বেরিয়ে এলাম। সারারাস্তা এক অজানা ভাবনায় বিভর ছিলাম। এই লোকটাই কি কাল রাতের সেই পাষাণ লোকটা??? কিছুতেই হিসেব মিলাতে পারছি না। কিছুমূহুর্তের মাঝে মানুষ এভাবে কিভাবে পাল্টে যায়??? আমি যে চিনতেই পারছি না।
.
রেনু- ভাইয়া এখানেই থামান।
.
ড্রাইভার- এখানে???
.
রেনু- জ্বি৷
.
ড্রাইভার- ম্যাম স্যার জেনে নিতে বলেছে আপনাকে কখন নিতে আসবো আর এখান থেকেই কি নিয়ে যাবো আবার।
.
রেনু- আপনার স্যারকে বলবেন আমি নিজেই চলে যেতে পারবো। আমার জন্য শুধু শুধু কষ্ট করে গাড়ি পাঠানো লাগবে না৷
.
বলেই আমি গাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলাম। আর অপেক্ষা করলাম না। ইচ্ছা করেই গলির মাথায় নেমে গেছি। বাড়ি চিনাই নি। কারণ আমি চাই না আমার বাস্তব জীবনে আমার অন্ধকার কালো জীবনের কোন ছায়া নামুক।
.
গলির মোড় থেকে নাস্তা কিনে বাসায় ডুকলাম।
.
মা- কিরে মা এতো দেরি করলি যে??
.
রেনু- প্রথম দিন তো মা তাই সময় এডজাস্ট হতে একটু সময় লেগে গেলো। ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে যাবে।
.
মা- চাকরিটা ভালো তো মা??? মানুষ গুলো ভালো তো??
.
রেনু- সবাই ভালো মা। চাকরিটাও ভালো। বাবা কই ঘুম থেকে উঠেছে???
.
মা- না উঠে নি। কাল রাতে তো ঘুমাচ্ছিলোই না।
.
রেনু- সেকি কেনো??? আমাকে কল দাও নি কেনো???
.
মা- কল দিতে চেয়ে ছিলাম পরে ভাবলাম নতুন চাকরি যদি তোর সমস্যা হয় এটা ভেবেই দেই নি৷ তোর জন্য তার মন টা কেমন যেনো করছিলো। বার বার বলছিলো আমার রেনুটা ঠিক আছে তো ওর কোন বিপদ হয় নি তো। আমি অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে তাকে ঘুম পারিয়েছি। এখন তোর এই চাকরীটাই তো আমাদের শেষ সম্বলরে মা।
.
রেনু- জানি মা তুমি দেখো সব ঠিক হয়ে যাবে। এই নাও ধরো।
.
মা- এসব কি???
.
রেনু- গলির মোড় থেকে রুটি ভাজি নিয়ে এলাম। অনু আর তনু কে নাস্তা করিয়ে দিও সাথে তুমিও খেয়ে নিয়ো। ঠিক মতো তো খাও না। আর কয়টা দিন মা তারপর দেখো আর কোন কষ্ট থাকবে না।
.
মা- আল্লাহ যেনো তাই করে রে মা।
.
রেনু- তাই হবে দেখে নিও। আমি যাই একটু ঘুমাবো অনেক ক্লান্ত লাগছে মা।
.
মা- সে কি তুই খাবি না মা??
.
রেনু- আমি খেয়েছি মা খুদা নেই। তোমরা খেয়ে নাও। আমি একটু ঘুমাই।
.
মাকে কোনরকম বুঝ দিয়ে আমি গোসলে ডুকলাম। বাথরুমে ডুকেই ঝর্ণাটা ছেড়ে দিয়ে বুক দাপড়ে চিৎকার করতে লাগলাম। ঝর্ণার পানির শব্দের জন্য আমার চিৎকারের শব্দগুলো এই চার দেয়ালেই সীমাবদ্ধ রয়ে গেলো। আর শব্দ বাইরে গেলেও কেউ তেমন একটা শুনতে পাবে না। রুম থেকে বাথরুমটার দূরত্ব আছে। বাথরুমটা ছাদের অন্য পাশে হওয়ায় এতো দিন খুব কষ্ট হতো নিজের কাছে খারাপ লাগতো কিন্তু আজ মনে হচ্ছে দূরত্বটা থাকায় ভালোই হয়েছে। কেউ আমার অসহায়ত্বের চিৎকার গুলো শুনতে পারবে না।
.
অনেক্ষণ সময় নিয়ে গায়ে পানি ঢালছি। কিন্তু কি হবে এতো পানি ঢেলে। কলঙ্গ যে আমার আত্মায় লেগেছে। শরীরে পানি ঢাললে কি আর সে কলঙ্গ মুছবে। মুছবে না। ইহকাল পরকাল সর্বকালের জন্য আমি পাপি হয়ে গেলাম। কারণ আমি যা করেছি তা পাপ, মহাপাপ। আর আমি সে পাপের পাপিষ্ঠ।
.
অনেক্ষণ বসে বসে মন ভরে কান্না করলাম। তখনি অনু দরজায় কড়া নাড়লো।
.
অনু- এই আপু তোমার হয় নি?? আমার কলেজের তো দেরি হয়ে যাবে।
.
রেনু- এই তো বাবু হয়ে গেছে আসছি।
.
আর দেরি না করে গা মুছে নিলাম। তাও মনে হচ্ছে শরীরে ময়লা লেগেই আছে। আমি বেরিয়ে এলাম।
.
অনু- সেকিরে আপু তোর চোখ গুলো এতো ফুলে গেছে কেনো??? কেমন লাল হয়ে আছে।
.
রেনু- সে কিছু না রে। সারারাত কাজ করেছি তো ঘুমাই নি তাই। এখন ঘুমালেই ঠিক হয়ে যাবে।
.
অনু- আপু...
.
রেনু- বল...
.
অনু- তোর অনেক কষ্ট হয় তাই না রে??? দেখিস কলেজ টা শেষ করেই আমি কোন একটা চাকরী যোগাড় করে নিবো। তখন তোর আর কষ্ট থাকবে না।
.
আমি অনুকে জড়িয়ে ধরলাম। আমার এতো টুকু ছোট বোনটা আমার কষ্ট গুলোকে বুঝে। আমি আর চোখের পানি ধরে রাখতে পারলাম না।
.
তনু- হ্যাঁ ঐ তোমার বোন। বাবা মা তো আমাকে কুড়িয়ে এনেছিলো তাই তো আমাকে দেখতে পারো না। একটু ভালোও বাসো না।
.
রেনু- আয় আমার বাচ্চাটা তুইও আমার সব। আয় আমার কাছে।
.
তনু আমার বুকে ঝাপিয়ে পরল। আমার কলিজা দুইটা আমার দুচোখের পানি মুছে দিলো।
.
রেনু- যা তুই ফ্রেস হয়ে নে। তনু তুই আমার সাথে আয় আমি তোকে তৈরি করে দেই না হলে দেরি হয়ে যাবে।
.
আমি তনুকে নিয়ে চলে আসতে নিলেই অনুটা আবার পিছন থেকে ডাকলো।
.
অনু- আপু শুন।
.
রেনু- বল..
.
অনু আমাকে ইশারায় বলে তনু কে পাঠিয়ে দিতে মন হয় তনুর সামনে বলতে চায় না।
.
রেনু- বাচ্চা তুই যা আমি আসছি।
.
তনু- না কেনো??? আমিও শুনবো।
.
রেনু- যা বলছি।
.
আমার ধমক শুনেই তনু এক দৌড়ে ঘরে চলে গেলো।
.
রেনু- কি রে বাবু কি হয়েছে?? কিছু বলবি???
.
অনু- বলছিলাম কি সালমা আন্টির সাথে গতকাল কলেজ থেকে আসার সময় দেখা হয়ে ছিলো। উনি একটা কথা বলল।
.
অনুর কথাটা শুনেই বুকের ভিতর কেমন যেনো একটা ভয় করে উঠলো। কি এমন বলেছে।
.
অনু- সালমা আন্টি বলছে সামিরাকে পড়ানোর জন্য। সপ্তাহে চার দিন পড়ালেই হবে। তিনহাজার করে দিবে বলেছে। আপু আমি পড়াই??? এতে তোকেও একটু হেল্প করতে পারবো। আমার কলেজের খরচ কিছুটা হয়ে যাবে। আপু প্লিজ না করিস না। আমি আম্মুকেও বলি নি। তুই অনুমতি দিলেই বলবো ভেবেছি।
.
আমি অনুর দিকে তাকিয়ে রইলাম আমার ছোট বোনটা আমাকে হেল্প করার জন্য কত চেষ্টা করছে। কিভাবে ওকে না করি। অনু আমাকে ঝাকি দিয়ে বলল।
.
অনু- এই আপু বলনা।
.
আমি অনুর কপালে একটা চুমু দিয়ে বললা।
.
রেনু- পড়া আমি মাকে বলে দিবো। মা যেনো আপত্তি না করে।
.
অনু খুশিতে আমাকে জড়িয়ে ধরল।
.
অনু- Thank you Thank you Thank you so much আপু।
.
আমার বুক ফেটে আবার চিৎকার আসছে। এখনো মনে আছে আমার। আমি যখন কলেজে ভর্তি হলাম পাশের ফ্লেটের সানোয়ারা আন্টি আমাকে বলেছিলো উনার ছেলে তামিমকে পড়ানোর জন্য। তামিম আমার ফ্যান ছিলো রিতি মতো। বেশি সময় আমাদের বাসায় থাকতো। আর রেনু আপু রেনু আপু বলতে বলতে অস্থির ছিলো ছেলেটা। আমিও অনেক খুশি হয়েছিলাম আমি কাউকে পড়াবো। ছোটবেলা থেকেই পড়ালেখায় ভালোছিলাম। আমার যোগ্যতার জন্যই আন্টি আমাকে বলেছিলো পড়াতে। আর তামিম আমার কথাও শুনতো। যখন বাবাকে বললাম। বাবা যেনো আকাশ থেকে পড়ল। বলল কোন দরকার নেই। পড়ার ক্ষতি হবে। বাবা না করায় আমার অনেক মন খারাপ হয়ে যায় দুদিন বাবার সাথে কথা বলি নি। তারপর যখন মাকে ডাকতে মা বাবার রুমে গেলাম তখন দরজার এপাশে দাড়িয়ে বাবার কথা গুলো শুনেই নিজের মাঝে অপরাধবোধ কাজ করছিলো। বাবার কথা গুলো ছিলো।
.
বাবা- রেনুর মা রেনু খেয়েছে???
.
মা- না এখনো খায় নি। আপনি কেনো ওকে অনুমতি দিচ্ছেন না?? মেয়েটা পড়াতে চায় পড়াক না। সমস্যা কোথায়??
.
বাবা- না রেনুর মা তুমি এই কথা বলো না। আমি চাই না আমার মেয়ের কাধে এতো অল্প বয়সেই কোন দায়িত্ব আসুক। আজ পর্যন্ত কখনো আমি আমার মেয়েকে বলি নি রেনু পড়তে বস। ও নিজ দায়িত্বেই নিজের পড়ালেখা করে। ভালো রেজাল্টও করে। পড়ালে ওর মাথায় দায়িত্বের চিন্তা থাকবে। নিজের পড়ার কথা বাদ দিয়ে তামিমের রেজাল্টের চিন্তা করবে। আমি চাই না আমার রেনু এমন কষ্ট কাঁধে নিক। ওদের জন্য যা করা লাগে আমি করব। রেনুর মা আল্লাহ তো আমাকে রহমত স্বরূপ তিন কন্যা দিয়েছেই। জানো তো রেনুর মা আমি আমার মেয়েদের নিজের পায়ে দাড় করাতে পড়াচ্ছি। ওদের দিয়ে চাকরী করাতে নয়। আমার মেয়ে গুলো মানুষের মতো মানুষ হবে। ভালো পাত্র দেখে ওদের পাত্রহস্ত করবো তারপর আল্লাহর কাছে চলে যাবো। আর কি চাই বলো। কি দেখছো এভাবে???
.
মা- কত মানুষ আছে একটা মেয়েকেই বোঝা মনে করে সেখানে আপনি তিনটা মেয়েকে এতো ভালোবাসেন। আপনাকে যতো দেখি অবাক লাগে।
.
বাবা- সে কি বলছো ওরা তো আল্লাহর রহমত। আর আমার রেনু তো আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ রহমত। আমার রেনুর মতো মেয়ে হয় নাকি। ও তো আমার আদর্শ সন্তান।
.
বাবার কথা গুলো শুনে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারি নি। ভিতরে গিয়েই বাবাকে ধরে হাউমাউ করে কান্না করে দেই৷ না খেয়ে ছিলাম বলে বাবা নিজের হাতে আমাকে ভাত খাইয়ে দিয়ে ছিলো।
.
কাঁধে মা হাত রাখতেই বাস্তবতায় ফিরে এলাম।
.
মা- কিরে রেনু???
.
আমি মাকে জড়িয়ে ধরলাম।
.
মা- কি হয়েছে মা??
.
রেনু- মা গো আমার অনুটা যে বড় হয়ে গেছে। অনেক বড় হয়ে গেছে।
.
মা- কি হয়েছে। কাঁদছিস কেনো??? আমাকে বল কি হয়েছে???
.
আমি মাকে অনুর টিউশনির কথা বললাম। মা নিজেও আপত্তি করল না। বরং খুশিই হলো। অনুটার কলেজের অনেকের খরচ। ও নিজেও নিজের টা কিছুটা দেখে নিতে পারবে।
.
বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই ঘুমে চোখ বুঝে এলো। অনেক ক্লান্ত লাগছে। ক্লান্তিতে যেনো শরীর ভেংগে আসছে। আর কিছু ভাবতে পারছি না। চোখ বোজার সাথে সাথে গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলাম।
.
.
সন্ধ্যার সময়।
.
তড়িগড়ি করে উঠে বসলাম। মাগরিবের আযান শুনতে পারছি।
.
রেনু- মা এই মা....
.
উঠে গিয়ে দেখি মা কি যেনো বানাচ্ছে। কাছে যেতেই বলল।
.
মা- কি রে ঘুম হলো??
.
রেনু- তুমি আমাকে ডাকো নি কেনো??? আমি সারাদিন ঘুমিয়ে ছিলাম। এটা কি ঠিক হলো।
.
মার সাথে কথা বলতে বলতেই মুখ-হাত ধুয়ে নিলাম।
.
মা- তুই অনেক ক্লান্ত ছিলি যে মা তাই ডাকি নি। তুই আরাম করে ঘুমাচ্ছিলি যে। তা দেখে আর ডাকতে মন চায় নি।
.
রেনু- বাবা উঠেছে মা??
.
বাবা- হ্যাঁ, উঠেছে। তোর জন্য অপেক্ষা করছে। তুই যা আমি তোর জন্য খাবার নিয়ে আসছি।
.
আমাকে দেখেই বাবার মুখে হাসি ফুটে উঠল। বাবা হাত দিয়ে ইশারা করে আমাকে কাছে বসতে বলল।
.
আমি বাবার বুকে মাথাটা রাখলাম। আমি ছোট বেলা থেকেই বাবা অফিস থেকে এলেই বাবার বুকে মাথা রাখতাম। আমি জানি বাবা অনেক ভালোবাসে আমি এভাবে তার বুকে মাথা রাখলে।
.
রেনু- কেমন আছো বাবা??
.
বাবা- ভালোরে মা। তুই কেমন আছিস??
.
রেনু- ভালো আছি বাবা।
.
বাবা- রেনু।
.
রেনু- হ্যাঁ, বাবা বলো।
.
বাবা- তোর খুব কষ্ট হয় না রে মা???
.
রেনু- না বাবা কি বলছো এসব। আমার কোন কষ্ট হচ্ছে না। সত্যি বলছি বাবা।
.
বাবা- তুই না বললেও আমি বুঝি রে মা।
.
রেনু- না বাবা সত্যি বলছি আমার কোন কষ্ট হয় না। আমার তো ভাগ্য যে আমি আমার বাবা মা বোনদের দায়িত্ব নিতে পেরেছি।
.
বাবার চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পরল।
.
মা- ওগো তুমি কেঁদো না। তুমি কাঁদে যে মেয়েটার কষ্ট হবে। ও আমাদের ভালো রাখার জন্য কত চেষ্টা করে যাচ্ছে। নে মা তুই খেয়ে নে।
.
বাবা- না কাঁদছি না রেনুর মা। নে মা তুই খা।
.
বাবার চোখ মুছে দিয়ে বললাম।
.
রেনু- হা করো বাবা।
.
বাবা- আমি খেয়েছি তুই খা মা।
.
রেনু- হা করো বলছি।
.
বাবাকে খাইয়ে দিয়ে সাথে আমিও খেয়ে নিলাম। বাবার সাথে অনেক্ষণ গল্প করলাম। বাবার সাথে কথা বললে আমার মন হালকা হয়ে যায়। আমি আমার সব দুঃখ, কষ্ট ভুলে যাই। যেমন এখন ভুলে যাচ্ছি। বাবার সাথে কথা বলতে বলতে কখন যে ৮ টা বেজে গেলো খেয়ালই করতে পারি নি। বাবাকে ঔষধ খাইয়ে আমি রুমে এসে বসলাম।
.
আমার ফোনটা বেজে উঠল। কানে ধরতেই ঐ পাশ থেকে কিছু কথা বলল। আমি চুপচাপ শুনে গেলাম। হু হা কিছুই বললাম না। কথা শুনে ফোনটা রেখে দিলাম।
.
মা এসে আমাকে কিছু ভাবতে দেখে কিছু না বলেই চলে গেলো। আবার কিছুক্ষণ পর এলো আবার কিছু না বলেই চলে যেতে নিলেই আমি মাকে ডাকলাম।
.
রেনু- মা
.
মা- হ্যাঁ
.
রেনু- এদিকে আসো।
.
মা কাছে আসতেই মার হাত ধরে মাকে পাশে বসালাম।
.
রেনু- কিছু বলবা মা???
.
মা- না মানে....
.
রেনু- মা আমার কাছে সংকোচ করছো??? বলো না কি বলবে।
.
মা- নারে মা আসলে ঘরে কিছু নেই যে কাল রান্না করব। আর কোন টাকা পয়সাও নেই। তাই তোর কাছে কি কোন....
.
রেনু- তুমি বসো।
.
আমি উঠে গিয়ে ব্যাগ থেকে কিছু টাকা বের করে মার সামনে ধরলাম। মাকে টাকা গুলো দিতে গিয়ে আমার ভেতর থেকে কাঁপছিলো। তবু হাতটা কাঁপে নি আমি কাঁপতে দেই নি। না হলে যে আমার মা আন্দাজ করে ফেলবে তার মেয়ের কষ্ট গুলো। আমাকে যে এখন শক্ত থাকতে হবে। টাকা গুলো দেখে মা অবাক হয়ে আমার দিকে তাকায়। আমি মার হাতে টাকা গুলো গুজে দিলাম। মা গুণে দেখলো ৫ হাজার টাকা।
.
মা- এতো টাকা কোথায় পেলি তুই??
.
রেনু- ধার করেছি মা। বেতন পেলে দিয়ে দিবো বলেছি। তুমি চিন্তা করো না আমি সব সামলে নিবো।
.
মা আমার কপালে একটা চুমু একে দিলো।
.
মা- আমি তোর জন্য খাবার রেডি করে রেখেছি নিয়ে যাবি।
.
রেনু- না মা লাগবে না। অফিস থেকে খাওয়ায়।
.
মা চলে যেতেই আমি আবার ভাবনায় ডুবে গেলাম। আমার অন্ধকার জীবন আমার জন্য অপেক্ষা করছে। আমাকে যেতে হবে আবার সেই অন্ধকার গলির অন্ধকার জগৎ এ। আবার নিজেকে অন্ধকারের সাথে মিলিয়ে দিতে।
.
.
.
চলবে.....

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ