পতিতা । পর্ব- ১৫+১৬


পতিতা 
পর্ব- ১৫+১৬

অয়ন আবার কল দেয় কিন্তু ফোন টা বন্ধ।
.
আবার ফোন দেয় অয়ন। কয়েকবার ফোন দেয়। কিন্তু বার বার একি কথা।
"আপনার ডায়ালকৃত নাম্বারটি এখন বন্ধ আছে।"
.
অয়ন রাগে ফোন টা মাটিতে ছুড়ে মারে। কেনো সময় মতো কিছু মাথায় আসে না। এতোক্ষণ কেনো রেনুকে ফোন দেয় নেই তাই নিজের উপর প্রচন্ড রাগ হতে থাকে অয়নের। অয়নেরই বা কি দোষ। কথায় আছে না চোর গেলে বুদ্ধি বাড়ে। রেনুর জন্য অতিরিক্ত চিন্তায় অয়নের একবারো মনে হয় নি ফোন টা আগেই দেয়া উচিত ছিলো। উল্টো ভাবছিলো বাসায় পৌছেই হয়ত রেনুকে দেখতে পাবে। কিন্তু এখন কোথায় খুজবে রেনুকে। অনেকটা সময় অপেক্ষা করে অয়ন রেনুর বাসার ওখানে চলে যায়। যেখানে রেনু গাড়ি থেকে নামে। বাসা তো চিনে না। নাহলে বাসায় চলে যেতো।
.
.
আমাকে দেয়া ঠিকানা মতো পৌছে গেলাম। লিখা ছিলো লিফটে উঠে ৯। ফ্ল্যাট নাম্বার I 3. লিফট দিয়ে উপরে চলে এলাম। ফ্ল্যাটের সামনে দাড়িয়ে আছি। কেনো যেনো বেল চাপতেও পারছি না। হাত ঠান্ডা হয়ে আসছে। প্রায় ১০ মিনিট দাড়িয়ে রইলাম। একটা নিঃশ্বাস নিয়ে বেল চাপতে যাবো তখনি কেউ দরজা খুলে দিলো।
.
- কাউকে চাই???
.
রেনু- আপনি রায়হানুল আবিদ???
.
- হ্যাঁ বাট আপনি???
.
রেনু- আমার সাথে আপনার ফোনে কথা হয়ে ছিলো। আমি রেনু।
.
আবিদ- আপনি রেনু???
.
তার কথা শুনে আর তাকানো দেখে মনে হয় তার বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে যে আমি রেনু। হয়ত অবাক হয়েছেন আমাকে দেখে বা অন্য কাউকে আশা করছিলেন।
.
আবিদ- Are you sure???
.
রেনু- Yes...
.
আবিদ- ওকে। আপনার ফোন বন্ধ। আমি ফোন দিচ্ছিলাম।
.
রেনু- চার্জ শেষ তাই।
.
আবিদ- ওহহ সরি আপনাকে এভাবে দাড় করিয়ে রেখেছি। ভেতরে আসুন।
.
আমি ভেতরে ডুকতেই আবিদ সাহেবের একটা কল আসে।
.
আবিদ- হ্যালো রাফি। চলে এসেছিস??? না না ওয়েট কর আমি আসছি। বললাম না ওয়েট কর।
.
সে ফোনে কথা বলা শেষ করে আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে।
.
আবিদ- ঐটা আমার বেড রুম। আপনি চাইলে ফ্রেস হতে পারেন। বা রেস্ট নিতে পারেন। আর লেফট সাইডে কিচেন খুদা লাগলে ফ্রিজে খাবার আছে যেটা ইচ্ছা কোনো সংকোচ ছাড়া খেয়ে নিতে পারেন৷ অথবা যদি কিছু তৈরি করে খেতে চান তাও করতে পারেন। আমি একটু বাহিরে যাবো আমার একটু সময় লাগবে চলে আসবো। আর আমি ডোর লক করে যাচ্ছি সো you are safe in here.
.
বলেই বেরিয়ে গেলো। আমি হাসতে লাগলাম। আমি নাকি এখানে সেফ। নিজেকে শেষ করতে এসেছি সেফ থাকলেই কি বা না থাকলেই কি। লোকটা মনে হয় একাই থাকে। দেখে মনে হলো ভদ্র মানুষ। সমাজের প্রতিটা ভদ্র মানুষই কি এমন হয়??? ভদ্রতার মুখোশ পরা?? অয়ন চৌধুরীর গল্পটা না হয় ভিন্ন তাও অনেক কিছু জানার বাকি ছিলো তার কাছে যা হয়ত আর জানা হবে না। কারণ আজ রাতের পর তার সামনে গিয়ে আর দাড়াতে পারবো না। তবে রায়হানুল আবিদ এই মানুষকে দেখলে কেউ হয়ত বলবেই না তার রাত কাটাতে আমার মতো বাজে মেয়ের প্রয়োজন হয়। এটাকেই তো মুখোশ বলে। যারা দিনের আলোয় আমার মতো মেয়েদের নামে থুতু ছিটায় আবার সেই তারাই রাত কাটাতে আমাদের মতো মেয়েদের কাছেই আসে। তবে তার মতো মানুষের তো প্রেমিকার অভাব হওয়ার কথা নয় তাহলে সে কেনো আমার মতো কাউকে ডাকলো। কি জানি হয়ত তারো কোন গল্প আছে।
.
.
আমি ভিতরে চলে এলাম। মানুষের মন ভালো না থাকলে হয়ত নিজেকে বেশি ক্লান্ত লাগে তাই হয়ত আমারো লাগছে। হেলান দিয়ে বসলাম। চোখ বন্ধ করতেই দেখতে পেলাম অয়ন চৌধুরী বলছে " তুমি অন্য কারো কাছে যাবে না" আমি চোখ খুলে ফেললাম। উঠে বসে পরলাম। চোখ টাও বন্ধ করতে পারি না। মানুষটা কেনো বার বার আমাকে এভাবে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে?? কেনো তার কথা গুলো আমাকে তাড়িয়ে বেড়ায়?? এতো গুলো কল দিলাম একটা বার রিসিভ করা প্রয়োজন মনে করলো না। একবারো ভাবলো না হয়ত তাকে আমার খুব প্রয়োজন। টুনি কি বলে নি আমি যাচ্ছি না। টুনির কথা ভাবতেই মনে পরলো। আমি তো টুনি কেও কিছু জানাই নি। সে তো টুনিকে বলে গিয়ে ছিলো আমাকে দেখে রাখতে। আর আমি তো টুনি কেও কিছু জানাই নি। যেখানে মানুষ গুলো আমাকে আপন করে নিচ্ছে আমি কেনো তাদের দূরে সরিয়ে দিচ্ছি। একটা ভয় কাজ করতে লাগলো আমার মাঝে। এ পথে আবার এসে কোন ভুল করলাম না তো আমি। কিন্তু বাবা। বাবাকে কিভাবে বাঁচাবো। নাহ কিছুই মাথায় আসছে না।
.
.
অনেক্ষণ গলির মোড়ে দাড়িয়ে থেকে অপেক্ষা করলো অয়ন রেনুর জন্য কিন্তু নাহ রেনুর আসার কোন খবর নেই৷ অয়ন পারছে না এক জায়গায় দাড়িয়ে থাকতে আবার পারছে না এখান থেকে সরে যেতে। তাও সেই গলিটা এমন কি আশেপাশের গলি গুলোও অয়ন কয়েকবার ঘুড়ে দেখলো। ঘুড়ে ফিরে একি জায়গায় সেই গলির মোড়ে এসে দাড়ায় অয়ন রেনুর জন্য।
.
.
প্রায় ঘন্টা দেড় এক পর আবিদ সাহেব ফিরে এলেন।
.
আবিদ- সরি অনেকটা লেট করে ফেললাম।
.
আমি কিছুই বললাম না। তবে মানুষ টা কিভাবে যেনো দেখছে আমাকে। হয়ত কিছু জানতে বা জিজ্ঞেস করতে চায়।
.
আবিদ- আমি আসছি দু মিনিট।
.
দু মিনিট বলেই ঠিকি দু মিনিট এর মাঝে হাতে দু কাপ কফি নিয়ে চলে এলেন। আমি শুধু অবাক না অনেক বেশি অবাক হচ্ছি। কারণ আমার মতো মেয়েদের প্রতি কারো এতোটা আপ্পায়ন ভাবা যায় না। ব্যাপার গুলো আমার ঠিক মাথায় ধরছে না। আসলেই কি সবার সাথে এমন হয় নাকি শুধু আমার সাথেই। কিন্তু কেনো??
.
আবিদ- কফি ঠান্ডা হচ্ছে।
.
রেনু- হ্যাঁ, জ্বি।
.
আবিদ- একটা প্রশ্ন করি??? যদিও আমার প্রশ্ন করার কথা নয়। তাও আমি প্রশ্ন টা করতে চাই।
.
রেনু- হুম বলুন।
.
আবিদ- আজকে কি আপনার প্রথম??? I mean....
.
আমি বুঝতে পেরেছি সে কি জানতে চায়।
.
রেনু- নাহ প্রথম নয়।
.
আবিদ- Are you sure??? জানি না কেনো আমার মনে হচ্ছে না আপনি এই লাইনের কেউ।
.
আমি তার প্রশ্ন শুনে অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলাম।
.
আবিদ- না মানে আপনাকে দেখে মনে হয় আপনি ভালো ফ্যামিলির মেয়ে। তাহলে আপনি কেনো???
.
আমি একটা হাসি দিয়ে তার দিকে তাকালাম।
.
রেনু- এটাই আমার বাস্তবতা।
.
আবিদ- আপনি কি জানেন আজকে এখানে আরো কিছু মানুষের আসার কথা ছিলো।
.
আমি চোখ বড় বড় করে তার দিকে তাকালাম।
.
আবিদ- জানি না কেনো আপনাকে দেখার পর আর মন সায় দিলো না। তাই পার্টিটা ক্যান্সেল করে দিলাম।
.
আমি আর কিছুই বলতে পারছি না। আমার আশে পাশে ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলো কি শুধু আমার সাথেই ঘটে। কখনো তো শুনি নি আমাদের মতো মেয়েদের সাথে কেউ ভালো আচরণ করে। তাহলে আমার সাথে কি হচ্ছে?? আর কেনোই না হচ্ছে??
.
আবিদ- আপনি কি সিওর আপনি আজ থাকবেন?? না মানে আপনি চলে যেতে চাইলে আমি বাধা দিবো না। যেতে পারেন।
.
রেনু- এটা আমার প্রয়োজন।
.
আবিদ সাহেব একটু একটু করে আমার কাছে আসতে নিলেন। আমার কাছাকাছি এসে আমার একটা হাত ধরে টান দিয়ে আমাকে একদম নিজের সাথে জড়িয়ে নিলেন।
.
.
অয়ন অনেক অপেক্ষা করল অনেক কল দিলো কিন্তু না কোন ভাবেই রেনুকে খুজে পেলো না। এমন কি যে মাধ্যমে রেনুকে পাওয়া বা রেনুর খবর পাওয়া যেতে পারে সে মাধ্যমেও রেনুর কোন খবর পেলো না। বাধ্য হয়েই মাঝ রাতে বাসায় ফিরতে হলো অয়নকে রেনুকে ছাড়াই। অয়নের মনে মনে ভয় হতে লাগলো আর কি কখনোই রেনুকে পাবে না অয়ন?? রেনুকে কি আজীবনের জন্য হারিয়ে ফেলল অয়ন???
.
অয়ন বেল বাজাতেই দরজা খুলার সাথে সাথে অয়ন কিছু বুঝার আগেই কেউ জড়িয়ে ধরলো তাকে।
.
অয়ন- রেনুউউউ
.
রেনু অয়নকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কান্না করে দিলো।
.
অয়নের নিজেরও চোখ গুলো ঝাপসা হয়ে গেলো।
.
.
#পতিতা
পর্ব-১৬
.
.
.
অয়নের নিজেরও চোখ গুলো ঝাপসা হয়ে গেলো।
.
অয়ন পাগলের মতো যাকে খুজে বেড়ালো সে কিনা নিজেই এসে অপেক্ষা করছিলো। ভাবতে থাকে অয়ন।
.
আমার চোখের পানি যেনো থামছেই না। ঐ ঘটনার কথা তো বলতেও পারবো না।
.
আবিদ সাহেব একটু একটু করে আমার কাছে আসতে নিলেন। আমার কাছাকাছি এসে আমার একটা হাত ধরে টান দিয়ে আমাকে একদম নিজের সাথে জড়িয়ে নিলেন। উনি একদম আমার কাছে চলে এলেন। এক হাত দিয়ে আমাকে ধরে রেখে আরেক হাত দিয়ে আমার কাঁধের উপর থেকে ওড়নাটা একটু একটু করে সরাতে লাগলেন। তার আচরণে আমি কোন হিংস্রতা অনুভব করছি না। সে আলতো হাতে আমাকে স্পর্শ করছেন। আমি নিজেকে শক্ত করে রেখেছি। আমার দু হাতই মুষ্টিবদ্ধ হয়ে আছে। ওড়নাটা ফেলে দিয়ে সে আমার ঘাড়ের কাছে মুখ আনতে নিলেই অয়ন চৌধুরীর আমাকে করা প্রথম স্পর্শ যেনো আমি স্পষ্টভাবে অনুভব করতে পারি৷ অয়ন চৌধুরীর মুখ টা যেনো স্পষ্ট দেখতে পাই৷ আবিদ সাহেব যে হাত দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ছিলেন আমি তাকে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে তার থেকে দু কদম পিছিয়ে গেলাম। আমার চোখ বেয়ে পানি পরতে লাগো।
.
আবিদ- Are you okey??
.
রেনু- আমি পারবো না। আমি তার কাছে যাবো প্লিজ।
.
আবিদ সাহেব আমার দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিলেন। আর আমার চোখ বেয়ে নিঃশব্দে পানি পরতে থাকলো।
.
আবিদ- ঠিক আছে।
.
বলেই সে আমার ওড়নাটা উঠিয়ে আমার গায়ে জড়িয়ে দিলেন। আমি বের হতে নিলেই আমাকে ডেকে উঠলেন।
.
আবিদ- রেনু।
.
আমি দাড়িয়ে যাই৷
.
আবিদ- আমি কি আপনাকে ড্রপ করতে পারি প্লিজ। its a request। না করবেন না। আর এমনিতেও অনেকটা রাত হয়ে গেছে প্লিজ আমি পৌঁছে দিয়ে আসি।
.
আমি চোখের পানি মুখে তাকে সম্মতি জানালাম। সে নিজের গাড়িতে আমাকে নিয়ে বেরিয়ে পরলেন আমাকে অয়ন চৌধুরীর কাছে পৌঁছে দিতে৷ মানুষটার মুখটা কেমন যেনো মলিন হয়ে গেছে। কেউই কিছু বলছি না। সে নিজেই মুখ খুললেন।
.
আবিদ- একটা ব্যাক্তিগত প্রশ্ন করতে পারি??? জানি আমার অধিকার নেই তুব যদি অনুমতি দাও তো।
.
রেনু- জ্বি বলেন।
.
আবিদ- যে মানুষটার কাছে ফিরে যাচ্ছো সেই কি তোমার প্রথম।
.
রেনু- হ্যাঁ।
.
আবিদ- খুব ভালোবাসো তাকে তাই না???
.
ভালোবাসি শব্দটা শুনে আমি অবাক দৃষ্টিতে মানুষটার দিকে তাকালাম। সে আমার দিকে তাকালেন না সামনে তাকিয়ে কথা গুলো বললেন। হয়ত আমার চোখে চোখ রাখতে চাইছেন না তাই আমার দিকে তাকাচ্ছেন না। তারপরে আর কোন কথা বললেন না। তার শেষ প্রশ্নটার কোন উত্তরও দিলাম না আমি। আর সে হয়ত উত্তরের অপেক্ষা করছেনও না।
.
বাড়ির সামনে গাড়ি থামাতেই আমি নেমে গেলাম। বাড়ির ভেতরে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই বলে উঠলেন।
.
আবিদ- রেনু
.
আমি আবার ঘুড়ে দাড়ালাম।
.
আবিদ- আমাদের কি আর কখনো দেখা হবে না??
.
আমি হাসি দিয়ে গাড়ির খানিকটা কাছে এসে বললাম।
.
রেনু- নাহ। আমার জীবনের অন্ধকার জগৎ এর অংশ বিশেষ আপনি। এই অন্ধকারটা রাতের আধারের সাথেই মিলিয়ে যাক৷ কোন নতুন ভোরে আর আমাদের দেখা হবে না। কোন পিচ ঢালা পথের চৌ-রাস্তায় আমরা আর কখনোই সম্মুখীন হবো না।
.
আমি কথা শেষ করতেই আবিদ সাহেব গাড়ি থেকে নেমে আমার সামনে এসে দাড়ালেন। আমার চোখে চোখ রেখে বললেন।
.
আবিদ- রেনু তুমি ভালোবাসার জন্য সৃষ্টি হয়েছো। কারো রাত যাপনের জন্য নয়।
.
বলেই সে আমার মাথা আলতো করে হাত দিয়ে ধরে আমার কপালে একটা চুমু দিয়ে আবার বললেন।
.
আবিদ- ভালো থেকো। সুখি হও।
.
বলে আর পিছে তাকালেন না। চলে গেলেন৷ আমি তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম। মানুষটা অদ্ভুত। আমাকে চিনে না, জানে না। অথচ এমন কথা বলে গেলেন। গাড়িটা চোখের আড়াল হতেই আমি পিছনে ঘুড়ে দৌড়ে বাড়ির ভেতরে চলে গেলাম। প্রায় ছুটেই গেলাম। বাড়ির ভেতরে গিয়ে টুনি টুনি বলে চিৎকার করতে লাগলাম। আমার চিৎকারে টুনি দৌড়ে এলো।
.
টুনি- কোথায় ছিলেন আপনি??? একজন আপনাকে পাগল হয়ে খুজে বেড়াচ্ছে। এই কয়দিন কোথায় ছিলেন???
.
আমি টুনিকে জড়িয়ে ধরলাম। টুনি আমাকে এতো অস্থির দেখে আর কোন প্রশ্ন করে নি।
.
টুনি- আচ্ছা এখন শান্ত হোন। পরে সব বলবেন। আগে একটু বসেন শান্ত হোন। আমি স্যারকে ফোন দিয়ে জানাই আপনি এসেছেন। সেই এসেই সাথে সাথে বেরিয়ে গেছে আপনাকে খুজতে। তাকে আগে খবর টা দিয়ে নেই।
.
অনেক বার ফোন দিলো টুনি অয়ন চৌধুরীকে কিন্তু কিছুতেই পেলো না। বার বার ফোন বন্ধ বলছে। ব্যর্থ হয়ে টুনি আমার কাছে ফিরে আসে। অসহায়ের মতে মুখ করে বলে।
.
টুনি- ফোন টা বন্ধ। পেলাম না।
.
আমার চোখ ফেটে কান্না আসছে। টুনি আমার চোখের পানি মুছে দিলো।
.
টুনি- একদম কাঁদবেন না। যলদি চলে আসবে সে।
.
অয়ন অনেক অপেক্ষা করল কিন্তু কোন ভাবেই রেনুকে খুজে পেলো না। এমন কি যে মাধ্যমে রেনুকে পাওয়া বা রেনুর খবর পাওয়া যেতে পারে সে মাধ্যমেও রেনুর কোন খবর পেলো না। বাধ্য হয়েই মাঝ রাতে বাসায় ফিরতে হলো অয়নকে রেনুকে ছাড়াই। অয়নের মনে মনে ভয় হতে লাগলো আর কি কখনোই রেনুকে পাবে না অয়ন?? রেনুকে কি আজীবনের জন্য হারিয়ে ফেলল অয়ন???
.
অনেক্ষণ টুনি আমার হাত ধরে বসে রইলো। আমার চোখ ঘড়ির কাটায়। কখন আসবে মানুষটা সেই অপেক্ষায় আছি। আমি ছটফট করতে লাগলাম। আর তখনি কলিংবেল বেজে উঠলো। টুনি যেতে নিলে আমি হাত ধরলাম।
.
রেনু- আমি যাই??
.
টুনি- যলদি যান।
.
বলতেই আমি দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলতেই দেখি সে। সে কিছু বুঝে উঠার আগেই আমি তাকে ঝাপটে ধরলাম।
.
অয়ন বেল বাজাতেই দরজা খুলার সাথে সাথে অয়ন কিছু বুঝার আগেই কেউ জড়িয়ে ধরলো তাকে।
.
অয়ন- রেনুউউউ
.
রেনু অয়নকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কান্না করে দিলো।
.
অয়নের নিজেরও চোখ গুলো ঝাপসা হয়ে গেলো।
.
টুনি দাড়িয়ে দাড়িয়ে দুজনের কান্ড দেখছে। দুজনকেই শান্ত হওয়ার জন্য কিছুটা সময় দিলো।
.
অয়ন চৌধুরী আমার মাথায় হাত রাখলেন।
.
অয়ন- এবার থামো আর কতো কাঁদবে???
.
আমার কান্না থামার জায়গায় যেনো আরো বেড়ে গেলো।
.
আমার কান্না দেখে অয়ন যেনো ভিতরে ভিতরে অনেক ভয় পাচ্ছিলো। কি এমন হয়েছে মেয়েটা কোনো এভাবে কাঁদছে।
.
অয়ন- কি হয়েছে?? আমােক বলো। প্লিজ...
.
আমার মুখ দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছে না।
.
অয়ন- এই মেয়ে চুপপপ। একদম চুপ।
.
তার ধমক খেয়ে আমি একদম চুপ হয়ে গেলাম। সে আমার হাত ধরে আমাকে নিয়ে সোফায় বসালেন। নিজে আমার সামনে হাটু গেরে বসলেন।
.
অয়ন- তাকাও আমার দিকে। তাকাও বলছি।
.
আমি চোখে তুলে তার দিকে তাকালাম। কি সুন্দর মানুষ। তাকে দেখলে যেনো আমার চোখে নেশা ধরে যায়। আমি হারিয়ে যাই। আমি তাকিয়ে রইলাম তার দিকে।
.
অয়ন- কি হয়েছে বলো আমাকে।
.
হুট করেই যেনো তার গলার স্বর টা পাল্টে গেলো। কত মায়া তার কন্ঠে। আমি আবার কেঁদে দিলাম।
.
অয়ন- প্লিজ এভাবে কেঁদো না। বলো কি হয়েছে।
.
আমি তার দিকে তাকিয়ে রইলাম। কিভাবে বলবো তাকে। আমি তার অবাধ্য হতে গিয়েছিলাম। কিভাবে বলবে তাকে। সে আমাকে ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ঝাকি দেয়।
.
অয়ন- এই মেয়ে প্রশ্ন করছি উত্তর দিচ্ছো না কেনো?? বলো কি হয়েছে??
.
রেনু- বাবা। বাবা...
.
অয়ন- বাবা কি হয়েছে বাবার????
.
রেনু- বাবা হসপিটালে।
.
বলেই আমি আবার কেঁদে দিলাম। সে আমাকে আলতো করে জড়িয়ে ধরলেন। তার কাঁধে মাথা দিয়ে আমি কাঁদতে লাগলাম। সে আমার মাথায় হাত রাখলেন। আমি যেনো মাথার উপর কারো ছায়া অনুভব করছি। আরো অনেক্ষণ কান্নাকাটি করে নিজেকে শান্ত করলাম। এতো কেঁদে আমি যেনো একদম ক্লান্ত হয়ে গিয়েছি। আমার নিজেকে অষাড় লাগছে। মনের সাথে সাথে শরীরটাও দূর্বল হয়ে গেছে। উঠে যে উপরে যাবো সে শক্তি টুকু পাচ্ছি না। তাও অনেক কষ্টে উঠে দাড়াতেই তাল সামলাতে না পেরে টলে উঠলাম। সে আমাকে ধরে ফেললেন। আমি তার দিকে তাকিয়ে রইলাম। সে আমাকে কোলে তুলে নিলেন। আমাদের একসাথে রেখে টুনি অনেক আগেই চলে গেছে। সে আমাকে কোলো নিয়ে উপরে চলে এলেন। সে ভালোভাবেই বুঝতে পারছেন তার পিছনে এই কয়টা দিন আমার উপর দিয়ে অনেক ধকল গেছে। আমি যে অনেক বেশি ক্লান্ত এখন। আমাকে শুইয়ে দিয়ে সে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন।
.
অয়ন- ঘুমাও। সকালে কথা বলবো।
.
আমি চোখ বন্ধ করতেই রাজ্যের ঘুমে হারিয়ে গেলাম। অনেক শান্তি লাগছে আমার। মনে হয় সব চিন্তা দূরে সরে গেছে আমার। আমাকে আমার সব বিপদ থেকে উদ্ধার করার মানুষ চলে এসেছে। যাকে আমি চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করতে পারি। ভরসা করতে পারি। যে আমার মাথার উপরে আরেকটা ছায়া।
.
অয়ন সেই থেকে বসে বসে তাকিয়েই আছে। এতো মায়া কেনো মেয়েটার মুখে। এতো কেনো টানে আমাকে নিজের দিকে। এভাবে কেনো কাঁদে মেয়েটা। ও কি জানে না। ওর চোখে পানি দেখলে আমার সহ্য হয় না। আমার ভেতরে তুফান শুরু হয়ে যায়। মেয়েটা কি বুঝে না। আমি ওর সব কষ্ট মুছে দিতে চাই।
.
.
অনেক দিন পর আমি শান্তিতে ঘুমালাম। অনেক গুলোদিন পর ঘুম ভাংগতেই প্রিয় মানুষের মুখ টা দেখে আমার দিন হলো। মনে মনে নিজেই অবাক হচ্ছি। কি সব আকাশ কুসুম ভাবছি আমি। সে আমার প্রিয় মানুষ। কিন্তু আবার গতকাল আনিদ সাহেবের করা প্রশ্নটা মনে পরে গেলো "আমি তাকে ভালোবাসি"। নিজে নিজে হেসেই উঠে গেলাম। সে পিছন থেকে বলে উঠলেন।
.
অয়ন- Good Morning.....
.
আমি পিছনে তাকিয়ে বললাম।
.
রেনু-Good Morning
.
তার সাথে ব্রেকফাস্ট করেই রেডি হয়ে নিলাম হসপিটালে যাবো।
.
অয়ন- চলো আমি নামিয়ে দিবো তোমাকে।
.
সে আমাকে নিয়ে হসপিটালের জন্য বেরিয়ে গেলেন। হাসপিটালের সামনে আসতেই আমি নামতে যাবো উনি বলে উঠলেন।
.
অয়ন- রেনু
.
রেনু- জ্বি।
.
অয়ন- এখানে ট্রিটম্যান্ট ঠিকমতো হচ্ছে তো??? নাকি হসপিটাল পাল্টানোর ব্যবস্থা করবো??
.
রেনু- না প্রয়োজন নেই এখানকার ডাঃ রহমান আমার বাবার বন্ধু।
.
অয়ন- হুম গুড। শুনো
.
রেনু- জ্বি।
.
অয়ন- একদম চিন্তা করবে না। আমি ফিরে এসেছি। হসপিটাল বিল, ট্রিটম্যান্ট কোন কিছুর কমতি থাকবে না। তুমি শুধু নিজের আর বাকি সবার খেয়াল রেখো।
.
আমি মাথা ঝাকিয়ে সায় দিলাম। সে যেনো আমার এই জবাবে রেগে গেলেন।
.
অয়ন- মাথা ঝাকানি কি জিনিস?? মুখে বলা যায় না???
.
রেনু- জ্বি
.
অয়ন- জ্বি কি???
.
রেনু- খেয়াল রাখবো।
.
অয়ন- গুড এখন যাও। স্বাবধানে যেও।
.
আমি নামতে যাবো সে আবার ডাকলেন।
.
অয়ন- রেনু
.
রেনু- জ্বি।
.
অয়ন- রাতে কি নিতে আসবো? নাকি বাবার কাছেই থাকবে??
.
রেনু- ৯টার দিকে চলে এসেন।
.
বলে আমি আর অপেক্ষা করলাম না। গাড়ি থেকে নেমে হসপিটালে ডুকে গেলাম।
.
অয়ন আমার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল।
.
.
.
চলবে.......

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ