পতিতা । পর্ব-১৩+১৪


পতিতা
পর্ব-১৩+১৪


কিভাবে যে সময় টা কাটাবে অয়ন নিজেই বুঝতে পারছে না। তবে এর আগে কখনো অয়নের এমন মনে হয় নি।
.
মেয়েটার জন্য এতো টান কেনো অনুভব করে অয়ন৷ এসব প্রশ্নের কোন উত্তর অয়নের কাছে নেই। সব কিছুই কি মায়া আর দয়ার বসে করছে অয়ন নাকি রেনুর প্রতি কোন লোভ বা আকর্ষণ থেকে করছে??? এতো কিছু ভাবতে চায় না অয়ন৷ অনেক গুলো দিন পর অয়ন নিজের মনের মতো দিন যাপন করছে। যেটা ভালো লাগছে সেটাই করছে। হ্যাঁ অয়নের মনটাই বার বার রেনুকে চাইছে। সেটা রেনুর প্রতি মায়া বা আকর্ষণের বসেই হোক না কেনো তবে অয়নের মন চাইছে৷ আর এবার মনটাকেই প্রাধান্য দিচ্ছে অয়ন। তা না হলে তো অন্য একজনের বেঈমানী বার বার অয়নকে আঘাত দিয়ে ভেতরে ক্ষত-বিক্ষত করে দিয়েছে। যে মানুষটা কখনো কাউকে মন প্রাণ দিয়ে ভালোবাসতে জানতো আজ সে মানুষটার কাছেই ভালোবাসা মানে যাযাবর।
.
এ নিয়ে দ্বিতীয় বার স্ট্রোক করে বাবা আর এবার অবস্থা একটু বেশি খারাপ। কথাও বলতে পারছে না। চিকিৎসায় অনেক খরচ হয়ে গেছে। ভাগ্যি হাতে টাকা গুলো ছিলো তাই সমস্যা হয় নি। তবে টাকাও ফুরিয়ে গেছে। বাকি দিন গুলো কিভাবে যাবে। প্রাইভেট হাসপাতালের কেবিন ভাড়া। মেডিসিন খরচ। আই সি ইউর খরচ তার উপর আমরা ৪ জন মানুষ দিন রাত এখানে থাকছি এতে করে বাহিরেই খাওয়া দাওয়া করা লাগছে। সব দিক সামলে হিম-সিম খেয়ে যাচ্ছি।
.
মা- রেনু
.
রেনু- হ্যাঁ মা বলো।
.
মা- একটু বাহিরে আয় আমার সাথে।
.
রেনু- বলো মা।
.
মা- এতো খরচ কিভাবে করছিস তুই??? এতো টাকা কোথায় পেলি???
.
মনে মনে এই ভয়টাই পাচ্ছিলাম কখন না জানি মায়ের এই প্রশ্নটার সম্মুখিন হতে হয়। আর সেটাই হলো।
.
মা- কিরে তাকিয়ে আছিস কেন বল। জবাব দে৷ এতো টাকা কোথায় পেলি??? প্রায় হাজার পঞ্চাশের উপরে খরচ করেছিস কিন্তু কিভাবে???
.
রেনু- অফিস থেকে লোন নিয়েছি মা।
.
মা- সেদিন জয়েন করলি এর মাঝেই এতো বড় লোন তাও দিয়ে দিলো।
.
রেনু- দিয়েছে সেটাই তো ভাগ্য মা। না দিলে কি হতো ভেবে দেখেছো?? কিভাবে বাঁচাতাম বাবাকে ভেবেছো একবার???
.
অনু- আপু তো ঠিকি বলছে মা। যদি অফিস থেকে লোনটা না দিতো তাহলে কি করতাম আমরা??? কোথায় গিয়ে দাড়াতাম?? কে আসতো আমাদের পাশে??
.
অনুকে পাশে পেয়ে হালকা লাগছে মাকে বুঝাতে সুবিধা হবে। তবু মনের মধ্যে অনেক অপরাধ বোধ কাজ করছে। বার বার একটার পর একটা মিথ্যা বলেই যাচ্ছি মাকে। এ ছাড়া তো আমার কাছে কোন উপায়ও নেই৷ সত্যিটা যে আমি মরে গেলেও বলতে পারবো না। আল্লাহর কাছে মনে মনে বলতে লাগলাম আমার এতো মিথ্যার শাস্তি যেনো আমার বাবা মা বা বোনদের না দেয়৷ আমার মিথ্যাগুলোর সব শাস্তি আমি মাথা পেতে নিবো তাও এই মানুষ গুলোর যেনো কখনো কিছু না হয়।
.
মাকে কোন মতে বুঝ দিয়ে এ যাত্রায় বেঁচে গেলাম। তবু বিপদ গুলো যেনো আমার পিছু ছাড়ছে না।
.
অনু- আপু আজকে খাওয়ার জন্য কি করবো???
.
রেনু- আমি টাকা দিচ্ছি তুই গিয়ে বাইরে থেকে নিয়ে আয়৷
.
অনু- বলছিলাম কি প্রতিদিন এভাবে বাহিরে খেলে তো অহেতুক বাড়তি খরচ বেশি হয়ে যাচ্ছে। এর চাইতে না হয় আমি বাসায় গিয়ে রান্না করে নিয়ে আসতাম।
.
রেনু- তুই প্রতিদিন একা যাবি আসবি৷ এর চাইতে থাক এভাবেই চলুক।
.
অনু- ঠিক আছে তাহলে টাকা দাও।
.
ব্যাগ থেকে অনুকে ১ হাজার টাকার একটা নোট বের করে দিলাম। আমার কাছে আর মাত্র ১ হাজার টাকা আছে।
.
অনু- কি হলো কি ভাবছো দাও।
.
রেনু- হ্যাঁ নে যা।
.
অনু- কোন সমস্যা???
.
রেনু- না কিছু না তুই যা। যলদি গিয়ে আয়।
.
অনুকে পাঠিয়ে দিয়ে আবার ব্যাগ খুলে দেখলাম। আর মাত্র ১ হাজার টাকাই আমার শেষ সম্বল। এর পর কি হবে জানি না। বাবাকে আর কয় দিন হাসপাতালে রাখা লাগে কে জানে। কিভাবে সামলাবো। আগে জানা দরকার তাই গেলাম আঙ্কেলের সাথে কথা বলে আসি।
.
নক নক
.
রেনু- আসবো আঙ্কেল????
.
ডাঃ রহমান- রেনু আসো।
.
রেনু- আঙ্কেল বলছিলাম কি বাবাকে আর কয় দিন হাসপাতালে রাখা লাগতে পারে।
.
ডাঃ রহমান- কেনো নিয়ে যেতে চাচ্ছো?
.
রেনু- না তা নয়৷ প্রয়োজন হলে তো অবশ্যই রাখবো।
.
ডাঃ রহমান- হুম.. আরো একদিন রাখতে চাচ্ছি আসলে এটা দ্বিতীয় বার তো তাই। কাল দেখি সব ঠিক থাকলে পরশু না হয় নিয়ে যেয়ো।
.
রেনু- সমস্যা নেই আঙ্কেল যতো সময় লাগে লাগুক আগে বাবার সুস্থতা। বাবার ট্রিটমেন্ট আগে আমার জন্য।
.
আঙ্কেলের সাথে কথা বলে বেরিয়ে গেলাম। টাকার ব্যবস্থা করতে হবে। বাবার ট্রিটমেন্টে আমি কোন কমতি রাখতে চাই না। কিন্তু কি করবো মাথায় কিছুই আছে না। কার কাছে চাইবো??? কে দিবে আমাকে এতো টাকা??? এমন কেউ নেই এই মূহুর্তে আমাকে অনেক গুলো টাকা ধার দিবে। আত্মীয় স্বজন যারা আছে তারা আমাদের অবস্থা সম্পর্কে খুব ভালো ভাবেই অবগত তারা হয়ত হাজার দুই এক টাকা এমনি দিয়ে দিবে তবে সেই টাকা দিয়ে তো আর এতো খরচ চলবে না। ধারের কথা বললে হয়ত তারা কেউ দ্বিতীয় বার ফোনটাও ধরবে না। তাই তাদের অহেতুক বিরক্ত করতে চাই না।
.
কেবিনে গিয়ে ব্যাগটা নিয়ে বেরতে নিলেই মা বাধা দেয়।
.
মা- কিরে এসময় কোথায় যাচ্ছিস??
.
রেনু- একটু কাজ আছে মা আসছি। বেশি দেরি করবো না চলে আসবো।
.
মা- আচ্ছা যলদি চলে আসিস।
.
আর কথা না বলে বেরিয়ে গেলাম। কিন্তু কোথায় যাবো?? কি করবো??? কিছুই মাথায় আসছে না। বাসায় চলে গেলাম। আলমারিতে খুজতে লাগলাম কোথাও কোন টাকা রাখা আছে নাকি। সব কাপড় চোপড় বের করে ফেললাম নাহ কোথাও একটা টাকাও রাখা নেই। তনুর মাটির ব্যাংকটা তে চোখ গেলো। এটা তনুর অনেক বছরের ব্যাংক। তনু শখ করে কয়েন জমায় এটাতে। শখের বসেই জমায়৷ কখনো প্রয়োজন হবে ভেবে জমায় নি৷ যখন যেটা চেয়েছে তখন তো সেটাই পেয়েছে তাই এমনটা প্রয়োজন কখনই হয় নি। ব্যাংকটা কোলের মাঝে নিয়ে বসে পরলাম। অনেক কান্না পাচ্ছে। তনু জানতোও না যখনই আমার কাছে কয়েন থাকতো আমি প্রায় সময়ই ওর ব্যাংকে কয়েন রেখে দিতাম। আজ আমাকেই সেই ব্যাংকটা ভাংগতে হবে। ভাবতেই পারি নি কখনো এমন দিনও আমার জীবনে আসবে। আল্লাহ এমন দিন দেখানোর আগে মৃত্যুও অনেক ভালো ছিলো। আমি যে তাও কামনা করতে পারি না। চিৎকার করে কাঁদছি। আজ শুনার কেউ নেই। নাহ এই কাজ আমার দ্বারা হবে না। ব্যাংকটা ভাংগলে আমার তনুর মনটাই ভেংগে যাবে। আমার বাচ্চাটাকে আমি এই কষ্ট দিতে পারবো না। ওরাই তো আমার সুখ। পারলাম না ব্যাংকটা ভাংগতে। ব্যাংকটা জায়গা মতো রেখে দিলাম।
.
কাকে ফোন দিবো। কার কাছে যাবো। মাথা কোন ভাবেই কাজ করছে না।
.
রেনু- অয়ন.... অয়ন চৌধুরী।
.
হ্যাঁ ঐ মানুষটাকে ফোন দিলেই তো পারি। ফোন টা বের করলাম। নাম্বার বের করে কল দিতে নিয়ে আবার থেমে গেলাম। তাকে বলাটা কি ঠিক হবে??? সে তো কম করে নি৷ আবার তাকে বলা কি ঠিক হবে??? বলে দেখিই না একবার। পরের টা পরে দেখা যাবে।
.
- Sir before you enter please put your mobile phone on silent mood.
.
অয়ন- Oh, yes sure.
.
অয়ন মিটিং শুরু করার আগে নিজের ফোনটা সাইলেন্ট করে দিলো।
.
আমি কল দিয়েই যাচ্ছি। এতো বার কল দিলাম। বার বার রিং হয়ে কল কেটে যাচ্ছে বাট রিসিভ হচ্ছে না৷ এতো বার ফোন দিলাম তাও পেলাম না৷
.
শেষে আর কোন উপায় না পেয়ে হসপিটালের দিকে আগালাম। অনেক্ষণ হয়েছে বেরিয়েছি। মা আবার চিন্তায় পরে যাবে। তাই হাসপাতালে চলে এলাম। আর বল তো যায় না কখন কি প্রয়োজন হয়।

#পতিতাপর্ব-১৪


.
আর বলা তো যায় না কখন কি প্রয়োজন হয়।
.
আমি কোথাও কোন পথ খোলা পাচ্ছি না। মানুষটাকে এতোবার কল দিলাম কিন্তু পেলাম না৷ কোন ভাবেই যোগাযোগ করতে পারলাম না তার সাথে।
.
মা- তুই কি কিছু নিয়ে ভাবছিস???
.
মার কথার দিকে আমার কোন খেয়ার নেই।
.
মা- রেনুউ
.
রেনু- হ্যাঁ মা
.
মা- কি ভাবছিস এতো??
.
রেনু- না তো মা।
.
মা- মনে তো তাই হচ্ছে।
.
মাকে কিছু বলতে যাবো আর তখনি নার্স এসে ডুকলো।
.
নার্স- আপনার বাবার সব রিপোর্ট চলে এসেছে শুধু একটা রিপোর্ট বাকি। তাই পরশু আপনার বাবাকে রিলিস দেয়া হবে। আপনি সব বিল গুলো ক্লিয়ার করে দিয়েন।
.
রেনু- জ্বি।
.
আরো একদিন বেড়ে গেলো। মানে খরচ টাও বেড়ে গেলো। কোন ভাবেই কোন দিসা পাচ্ছি না।
.
মা- কিরে তোর মুখ টা এতো শুকনো লাগছে কেনো??
.
অনু- লাগবেই তো এমনিতেই কিছু খায় না আর গতকাল থেকে তো একদমই কিছু খায় নি।
.
মা- সে কিরে কেনো??
.
রেনু- আরে মা কিছু না৷ খেয়ে ছিলাম তো।
.
মা- চিন্তা করছিস কিভাবে.....
.
রেনু- মা তুমি এসব নিয়ে ভেবো না তো। বাবার দিকে খেয়াল রাখো।
.
বলেই মাকে আর কিছু বলতে দিলাম না। কেবিন থেকে বেরিয়ে এলাম। সময়ও কম কিছু একটা করতেই হবে। ফোনটার দিকে সেই কখন থেকে তাকিয়ে আছি। আমার কাছে অন্য কোন পথ খোলা নেই। তাই সেই নাম্বারটায় কল দিলাম। মাঝে এতো গুলো দিন এই নাম্বারটায় আমার কল দেয়ার প্রয়োজন হয় নি। ২/৩ বার রিং হতেই ঐ পাশে কল রিসিভ হলো।
.
রেনু- আমার টাকার প্রয়োজন। অনেক টাকা লাগবে।
.
ঐ পাশে যা বলল শুধু শুনলাম। শুনে ফোন রেখে দিলাম।
.
কল কাটতেই নিচে অয়ন চৌধুরীর নাম্বার টায় চোখ পরল। চোখটা ঝাপসা হয়ে আসলো। সাথে সাথেই ফোনটা লক করে উঠে গেলাম। নিজেকে শক্ত রাখতে হবে। ভেংগে পরলে হবে না। মায়া, মোহ, ভালোলাগা এসব আমার জন্য নয়।
.
আগে বাবা যাও একটু কথা বলতে পারত। এখন তাও ঠিক মতো বলতে পারে না। বাবার দিকে তাকালে চিৎকার করে কান্না করতে ইচ্ছে করে আমার। আল্লাহ কেনো আমার বাবাটাকে এতো কষ্ট দিচ্ছেন। এর চাইতে আমাকে দিলেও তো পারতেন।
.
.
অয়ন অস্থির হয়ে আছে। না পারছে সইতে আর না পারছে কিছু করতে। কিই বা করবে। আকাশ পথের মাঝে তো চাইলে কলও দিতে পারবে না। মিটিং এ্যাটেন্ট করার সময় ফোন সাইলেন্ট করেছিলো। বের হয়ে যে একবার চেক করবে তাও খেয়াল ছিলো না। কিভাবেই বা খেয়াল থাকবে অয়ন তো পারে না উড়ে দেশে ফিরে যায়। কেনো যেনো বার বার মনে হচ্ছে কেউ অপেক্ষা করছে তার জন্য। এতো দিন তো কেউ ছিলো না অপেক্ষা করার৷ এখনো নেই তবু মনে হয় কাউকে বলে এসেছে হয়ত সে অপেক্ষা করছে তার। তাই মিিটং শেষ করেই সেখান থেকে অয়ন সোজা এয়ারপোর্ট চলে যায়। দেশে ফিরে যাবে বলে। এই মিটিং টাই বাকি ছিলো। তাই এক মিনিটও দেরি করবে না৷ প্লেনে উঠে বসার অনেক্ষণ পর মনে হলো ফোনটা তো একবার চেক করা দরকার। আর টুনিকে একবার কল দিয়ে দেখি কি হয়েছে। এ কয়টা দিন তো কাজের জন্য অয়ন একবারো খবর নিতে পারে নি। না হলে প্রতিদিনই একবার কল দিয়েছে। শুধু এই কয়দিনই দিতে পারে নি। ফোনটা হাতে নিতেই অয়নের চোখ গুলো যেনো বেরিয়ে আসবে এমন অবস্থা। রেনুর নাম্বার থেকে ৩০ টার উপরে মিসডকল। রেনু অয়ন কে কল দিয়ে ছিলো তাও ৩০ বারের বেশি৷ অয়নের যেনো মাথা ঘুড়াতে শুরু করে। যে মেয়ে কথাই বলে না। সে আমায় কল দিয়েছে তাও এতোবার। পরক্ষণে ভয়ে অয়নের বুক কেঁপে উঠে। রেনুর কোন বিপদ হয় নি তো??? অয়নের মনে পরে যায় সেদিনই তো রেনুকে নিয়ে বাজে একটা স্বপ্ন দেখেছিলো। তাহলে কি ঐ স্বপ্নটা সত্যি ছিলো??? রেনুর কি সত্যি কোন বিপদ হয়েছে। অয়ন কল দিতেই নিবে সাথে সাথে এ্যানাউন্সম্যান্ট হলো সবার ফোন অফ করার জন্য ফ্লাইট টেক অফ করবে। অয়ন আর পারলো না রেনুকে কল দিতে। ভয়ে অয়নের আত্মা পর্যন্ত শুকিয়ে যাচ্ছে৷ সেই থেকে এই পর্যন্ত অয়ন ফ্লাইটে বসে বসে অস্থির হয়ে যাচ্ছে রেনুর জন্য। নিজের উপর প্রচন্ড রাগ হচ্ছে অয়নের। কেনো সে আগে খেয়াল করল না। এতো গুলো ঘন্টা অয়ন শুধু ছটফট করেই কাটাচ্ছে আর অল্প সময় পরেই ফ্লাইট ল্যান্ড করবে কিন্তু অয়নের একদমই তর সইছে না।
.
.
সারাদিন মার সাথে বসেই কাটিয়ে দিলাম। প্রায় ৪ টায় বাজে। উঠে পরলাম বের হতে হবে তাই।
.
মা- তুই কি কোথাও যাবি???
.
রেনু- ও মা তোমাকে বলা হয় নি। আজকে থেকে অফিসে জয়েন করা লাগবে। অনেকদিন ধরে যাই না৷ সকালে ফোন এসেছিলো আজকে থেকে জয়েন করতে বলল।
.
মা- আজ থেকেই??
.
রেনু- কি করবো মা বলো। এই চাকরীটাই তো এখন সব। তোমরা তো আছোই। বেশি কোন প্রয়োজন হলে আমাকে কল দিও।
.
মা- তাও ঠিক। আচ্ছা তুই চিন্তা করিস না। এখনি বের হবি অনেক সময় বাকি তো।
.
রেনু- একটু বাসায় যাবো মা। বাসায় গিয়ে ফ্রেস হয়ে বের হবো। অফিস থেকে এখানেই চলে আসবো। আর তো মাত্র দুটো দিন তারপর তো বাবাকেই বাসায় নিয়ে যাবো।
.
.
ঐ দিকে অয়নও দেশে ফিরে। ফ্লাইট ল্যান্ড করার সাথে সাথেই অয়ন আর অপেক্ষা করে না। ট্যাক্সি নিয়ে বাসায় চলে যায়। ড্রাইভারকে কল দিলে আসতে সময় লাগবে। এর চাইতে নিজেই চলে যাওয়া ভালো হবে।
.
মাকে বলে বেরিয়ে গেলাম। বাসায় এসে গোসল করে একটু শুয়ে পরলাম। চোখ বন্ধ করতেই চোখের সামনে যেনো সব ভেসে আসছে। সুখের দিন গুলো। হুট করে সব এলো মেলো হয়ে যাওয়া। অয়নের আগমন। সব যেনো পরিষ্কার দেখতে পাই।
.
অয়ন বাড়ির ভেতরে ডুকেই কোন কথা না বলেই টুনিকে ডাকতে থাকে।
.
অয়ন- টুনি টুনিইইই টুনি
.
টুনি- আসছিইইইইইই
.
আসছি বলে চিৎকার দিয়ে দৌড়ে আসে টুনি। অয়নকে এসময় দেখে টুনি যেনো বিস্ময় খায়। কারণ না বকে হুট হাট অয়ন আসে না। আজ কি মনে করে না বলেই চলে এলো।
.
টুনি- আপ...
.
টুনিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই অয়ন প্রশ্ন ছুড়ে দেয় টুনির দিকে।
.
অয়ন- রেনু কোথায়??? কেমন আছে???
.
টুনি- উনি তো
.
অয়ন- বল রেনু কোথায়?? গতকাল কি হয়ে ছিলো যে রেনু নিজে আমাকে কল দিলো তাও এতো বার। কি হয়েছে??
.
আতংকে অয়ন নিজেই একের পর এক প্রশ্ন করেই যাচ্ছে। টুনিকে বলার কোন সুযোগ দিচ্ছে না। টুনি বুঝতে পারে তাই আর দাড়িয়ে না থেকে কিচেনের দিকে যায়। এটা দেখে অয়ন আরে ক্ষেপে যায়। কথার জবাব না দিয়ে টুনি চলে যাচ্ছে।
.
অয়ন- আমি প্রশ্ন করছি টুনি তুই জবাব দিচ্ছিস না কেনো??
.
বলতে বলতে অয়নও টুনির পিছনে পিছনে যায়। টুনি এক গ্লাস পানি অয়নের হাতে দিয়ে বলে।
.
টুনি- পানি টা খান।
.
অয়ন- তুই আগে বল। রেনু কেমন আছে। আমাকে কল কেনো দিয়ে ছিলো।
.
টুনি- বলছি৷ আমি কিছুই জানি না সে তো কিছু দিন ধরেই আসছে না।
.
অয়নের আর পানিটা মুখে দেয়া হলো না।
.
অয়ন- আসছে না মানে???
.
টুনি- জানি না৷ তার কি হয়েছে বা কেনো আসছে না তাও জানি না। রতন ভাই প্রতিদিনই যায় কিন্তু তাকে পায় না। অপেক্ষা করে ফিরে আসে। সুস্থ না অসুস্থ কিছুই জানি না৷
.
অয়ন- আমাকে কল দেস নি কেনো???
.
টুনি- দিয়ে ছিলাম পাই নি। আর আপনি এ কয়দিন কল দেন নি তাই জানাতে পারি নি।
.
অয়ন আর কোন কথা না বলেই সাথে সাথেই বেরিয়ে যায় রেনুর উদ্দেশ্যে।
.
.
রাত হয়ে আসছে। আর দেরি করলাম না। তৈরি হয়ে বেরিয়ে গেলাম। আবার সেই অন্ধকারেই যেতে হবে আমাকে। এই অন্ধকার থেকে বের হওয়ার কোন পথ নেই। এটাই এখন আমার জীবনের বাস্তবতা। ঘর থেকে বেরতে নিয়েই থমকে গেলাম " তুমি অন্য কারো কাছে যাবে না" কথাটা শুনে পিছনে ফিরে তাকালাম। কিন্তু না কেউ নেই। কথাটা আমার মন বলছে তাই কাউকে দেখতে পেলাম না৷ ঐ মানুষটার সামনে হয়ত আর কখনো গিয়ে দাড়াতে পারবো না। আর ভাবতে পারছি না। বেরিয়ে গেলাম। বের হতেই একটা নাম্বার থেকে ফোন এলো।
.
রেনু- হ্যালো।
.
- আমি আপনাকে ঠিকানা দিয়ে দিচ্ছি সেখানে চলে আসেন।
.
বলেই লোকটা ফোন রেখে দেয় আর সাথে সাথে একটা ম্যাসেজ আসে। ঠিকানাটা একবার দেখে ফোন টা ব্যাগে রাখলাম।
.
.
অয়ন কোথায় খুজবে রেনুকে। সেই প্রথম দিন যেখান থেকে রেনুকে নিয়ে এসেছিলো সেই জায়গায় গেলো কিন্তু না রেনু নেই সেখানে। রেনুকে কল দিলেই তো হয়৷ অয়ন নিজেকে মনে মনে পাগল বলতে থাকে। কল দিতেই কয়েকবার রিং হয়ে কেটে যায়।
.
ফোনটা আবার বেজে উঠল৷ ব্যাগ থেকে বের করতে করতেই থেমে গেলো। কে কল দিয়েছে দেখার জন্য বের করতেই দেখি ফোন টা বন্ধ হয়ে গেছে। একদম চার্জ নেই। মাঝ রাস্তায় কিছু করারও নেই। তাই আবার ব্যাগে রেখে দিলাম। তবে বার বার মনে হচ্ছে কে কল দিয়েছে দেখতেও পারলাম না।
.
অয়ন আবার কল দেয় কিন্তু ফোন টা বন্ধ।
.
.
.
চলবে....


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ