চাঁপা কান্না। পর্ব-৩


চাঁপা কান্না

পর্ব-৩
লেখকঃ সাজু
“বউ মা ইদানীং তোমাকে কেমন কেমন জানি লাগছে! বেশ কয়েকবার ডেকেও তোমাকে কাছে পাওয়া যাচ্ছে না। সারাদিন দেখি ঝিম মেরে বসে থাকো। কোনো কিছুর প্রতি কোনো খেয়াল দেখতে পাচ্ছি না। আমি মাত্র তোমাকে কতবার ডাকলাম, অথচ তোমার কোনো সারা পেলাম না। সমস্যা টা কী তোমার? ”
শ্বশুর একদমে কথা গুলো বললেন ইশিতাকে। আর ইশিতা শুধু মাথা নিচু করে কথা গুলো শুনে নিলো। মাথা নিচু থাকা অবস্থায় জবাব দিলো,
.
— আসলে আমার শড়ীর’টা তেমন ভালো না।
শ্বশুর বিছানা থেকে নিচে নেমে ইশিতার দিকে এগিয়ে আসলো। মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললো,
— তুমি তো জানো আমাদের কোনো মেয়ে নেই। তোমারও মা-বাবা নেই। তোমার সুবিধা অসুবিধা দেখার দায়িত্ব তো আমাদের ই। আগেও বলেছি এখনও বলছি, তোমার কখনও কোনো সমস্যা হলে সরাসরি আমাকে বলবে। আর যদি আমাকে বলার মতো না হয়, তাহলে তোমার শ্বশুড়ি’কে বলবে। কখনও কোনোকিছু মনের ভিতর চেপে রাখবা না। এখন তো আমরাই তোমার বাবা-মা।

ইশিতা কথা গুলো শুনে নিমিষেই ক্ষণিকের জন্য সমস্ত দুঃখ কষ্ট গুলো ভুলে গেলো। তার কপাল ভালো যে এমন ভালো মনের শ্বশুর শ্বাশুড়ি পেয়েছে। কয়জন মেয়ের কপালেই বা এমন শ্বশুর শ্বাশুড়ি জুটে। কিছু মুহূর্তের জন্য নিজেকে সকল সুখি মানুষের ভিতর একজন মনে হলো। কিন্তু বেশিক্ষণ নিজেকে সেই সুখি মানুষ ভাবতে পারলো না। কারণ পরক্ষণে মনে পড়লো তাকে ভীষণ ভাবে ঠকানো হয়েছে। ইশিতা খুব চাপা স্বভাবের মেয়ে। শত দুঃখ কষ্টের ভিতর থাকলেও নিজে কখনও সেই দুঃখ কষ্টের ভাগ অন্যকে দিতে পারে না। আর এমন স্বভাবের মেয়েরা ই বোধহয় দুনিয়াতে বেশি দুঃখ কষ্ট পেয়ে থাকে। ইশিতা কোনো কথা না বলে মাথা দিয়ে হ্যা সূচক নেড়ে তাদের রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
.
জাহিদ ভীষণ দুশ্চিন্তা করছে। নতুন কোনো খবর এখনও তার কানে এসে পৌঁছায়নি। হায়দারকে বিশ হাজার টাকা দিয়েছে কাজটা করার জন্য। কাজটা সঠিক ভাবে করতে পারলো কিনা কে জানে। কোনো ভাবেই হায়দারের সাথে যোগাযোগ করতে পারছে না। কাজটা তেমন কঠিন কিছু না। শুধু তার ট্রাক টা দিয়ে আয়শাকে একটা ধাক্কা মারবে। আয়শার ছবি দিয়ে দিছে যেন চিনতে কষ্ট না হয়। প্রথমে হায়দার এই কাজটা করতে রাজি ছিল না। অনেক অনুরোধ করে রাজি করানো হয়। কাজ করার আগে নগত বিশ হাজার টাকা দিয়েছে এবং কাজ শেষ হবার পর আরও দশ হাজার টাকা দেবার কথা বলেছে। জাহিদ দেশে থাকলে হয়তো এত ঝামেলা হতো না, খুব সহজেই কাজটা সম্পূর্ণ করে ফেলতো। হঠাৎ জাহিদের ফোনটা বেজে ওঠে। রিসিভ করে কানে ধরতে ই অপর পাশ থেকে হাসি খুশি ভাবে বলে উঠলো,
.
— বস কাজ শেষ!
জাহিদ একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললো,
— যাক ভালো করেছিস। কোনো সমস্যা হয়নি তো?
— আরে বস কী যে কন আপনে! দশ বছরের ড্রাইভিং এর অভিজ্ঞা। একদম পাকা হাত। বস আর দেরি কইরেন না, বাকি টাকার ব্যবস্থা টা করেন।
— আচ্ছা ঠিক আছে তুই কোনো চিন্তা করিস না। ঘন্টা খানেক এর ভিতর বাকি টাকা পেয়ে যাবি।
জাহিদ একটু চিন্তা মুক্ত হলো। বেশ ফুরফুরে লাগছে তার মন। তবুও আয়শার জন্য একটু কষ্ট অনুভব করছে। ভালোবেসে বিয়ে করেছিল দুজনে। দুই বছর তাদের ভিতর স্বামী স্ত্রী’র সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও বাসায় কেউ জানতে পারেনি। প্রতিমাসে বিদেশ থেকে আয়শার কাছে টাকা পাঠাতো। তার সবরকম ভরণপোষণ জাহিদ পূরণ করতো। জাহিদের ইচ্ছে ছিল পাঁচ বছর পর যখন একেবারে দেশে চলে আসবে তখন দুজনের বাসায় জানাবে। এর মাঝে দুই বার এসে কিছুদিন থেকেও চলে গিয়েছে। তাদের ভিতর কারোর প্রতি কোনো অভিযোগ ছিল না। বিপত্তি ঘটে যখন জাহিদ শেষ বার দেশে আসে তখন। কোনো এক ভাবে জানতে পারে যে, আয়শা কোনোদিন মা হতে পারবে না! শুরু হতে থাকে দুজনের ভিতর খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে মনমালিন্য। যদিও কারণ গুলো খুবই ছোট তুচ্ছ, তবুও সেটা বিশাল আকার ধারণ করতো। আয়শা কখনও মুখ ফুঁটে প্রতিবাদ করতে পারতো না। কারণ তার অনেক বড় একটা দুর্বলতা রয়েছে। আর জাহিদ সেই দুর্বলতার সুযোগ নিতো। সবচেয়ে বড় কথা হলো জাহিদ আয়শাকে নিয়ে সমাজে কখনও মুখ দেখাতে পারবে না। কারোর কাছে মাথা উঁচু করে দাড়াতে পারবে না। পারবে না কোনোদিন বাবা ডাক শুনতে। তাই দিনদিন আয়শার প্রতি অবহেলা বাড়তে থাকে। একটা সময় আয়শা এগুলো সহ্য করে নিতে পারলো না। মেনে নিতে পারছিল না তার প্রতি অবহেলা। তার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেলে জাহিদকে ডিভোর্স দিতে বাধ্য হয়। সেও চায় না তার কারণে কারোর সাজানো স্বপ্ন ধূলয় মিশে যাক।
ডিভোর্স পাবার পর জাহিদ যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলো। সিদ্ধান্ত নেয় বাকি জীবন টা প্রবাসেই কাটিয়ে দিবে। কিন্তু নিয়তি যে কাউকে দেখেশুনে চলে না! তাই তো হঠাৎ করে জাহিদের বৃদ্ধ বাবা-মা অসুস্থ হয়ে পড়ে। আর জাহিদ তার বাবা-মা’র কথা চিন্তা করে ইশিতাকে বিয়ে করতে বাধ্য হয়। জাহিদ এবং আয়শার সম্পর্ক তৃতীয় কোনো ব্যক্তি জানে না। তাই ইশিতার কাছে এত বড় সত্য টা গোপন রাখতে হয়।
কিন্তু এত বছর পর আয়শা তার সাজানো সংসার ভেঙে দিতে চাইবে, এটা কল্পনার বাহিরে ছিল। কোনো কূলকিনারা না পেয়ে আয়শাকে মারতে বাধ্য হয়।
.
আয়শার অবস্থা তেমন একটা ভালো না। খুবই গুরুতর অবস্তা। মাথার পিছনে মারাক্তক ভাবে আঘাত লেগেছে। আই সি ইউ তে রাখা হয়েছে। ডাক্তাররা জানিয়েছে উন্নত মানের চিকিৎসা প্রয়োজন। তার জন্য দেশের বাহিরে নিয়ে যাওয়া লাগতে পারে যখন তখন। আফনান প্রচণ্ড রকম ভাবে ভেঙে পড়েছে। প্রিয় মানুষটার যন্ত্রণা সে সহ্য করতে পারছে না। ভীষণ ভয় করছে হারিয়ে ফেলবার। হাজারো আশা স্বপ্ন যাকে ঘিরে, সে যদি স্বার্থপর এর মতো চলে যায় তাহলে নিজে বেঁচে থাকাটা মুশকিল হয়ে যায়। সারাটা জীবন জিন্দা লাশ হয়ে কাটিয়ে দিতে হবে। নাওয়া খাওয়া ঘুম কিছু নেই। সারাদিন শুধু সৃষ্টি কর্তার কাছে একটাই প্রার্থনা করে, আয়শা কে যেন সে আগের মতো ফিরে পায়। তার ভালোবাসার মানুষটাকে নিয়ে যেন বাকি জীবনটা পাড় করে দিতে পারে।
আয়শার বাবা-মা ও খুব করে সারাদিন সৃষ্টি কর্তার কাছে প্রার্থনা করতে থাকে। তাদের সন্তানকে যেন তারা আগের মতো ফিরে পায়। আয়শার খরচেই তাদের সংসার চলে। ছোট ভাই আসিফ পড়ালেখা করছে। বাবা বৃদ্ধ হয়ে গেছে। আয়শার ছোট্ট জবটা থেকে যা আসে তা দিয়েই টেনেটুনে তার সংসার চালাতে হয়। তার চিকিৎসার খরচ বলতে গেলে সম্পূর্ণ আফনান বহন করছে। যদিও এত টাকা তার পক্ষে ম্যানেজ করা খুবই কঠিন হয়ে গিয়েছে, তবুও সাধ্য অনুযায়ী চেষ্টা করছে ভালোবাসার মানুষটার জন্য। আয়শার বাবা-মা ও অনেক ধার দেনা করে করে বসে আছে। সবার আশা শুধু একটাই আয়শা যেন বেঁচে ফিরে।
.
কিছুক্ষণ আগে পুলিশ একজন ট্রাক ড্রাইভার কে আটক করেছে। তাদের ধারণা এই ট্রাক ড্রাইভার ই আয়শাকে চাপা দিতে চেয়েছিল। এই দুর্ঘটনা ঘটার পরে যখন আফননা প্রত্যক্ষদর্শী দের কাছ থেকে জানতে পারে যে, ট্রাকটা যেই ভাবে আয়শাকে ধাক্কা মেরেছে তাতে মনে হয় এটা ইচ্ছাকৃত ভাবে মারা হয়েছে। এটা জানার পরেই আফনান তার এক বন্ধু পুলিশ অফিসারকে বিষয়টা জানায়। যদিও এটার কোনো মজবুত প্রমাণ নেই। থানা থেকে ফোন পেয়ে আফনান দ্রুতগতিতে হসপিটাল থেকে বেরিয়ে যায়।
.
(চলবে)
লেখাঃ MD Imran Hossen Emon#চাপাকান্না
#পর্বঃ ৩
“বউ মা ইদানীং তোমাকে কেমন কেমন জানি লাগছে! বেশ কয়েকবার ডেকেও তোমাকে কাছে পাওয়া যাচ্ছে না। সারাদিন দেখি ঝিম মেরে বসে থাকো। কোনো কিছুর প্রতি কোনো খেয়াল দেখতে পাচ্ছি না। আমি মাত্র তোমাকে কতবার ডাকলাম, অথচ তোমার কোনো সারা পেলাম না। সমস্যা টা কী তোমার? ”
শ্বশুর একদমে কথা গুলো বললেন ইশিতাকে। আর ইশিতা শুধু মাথা নিচু করে কথা গুলো শুনে নিলো। মাথা নিচু থাকা অবস্থায় জবাব দিলো,
.
— আসলে আমার শড়ীর’টা তেমন ভালো না।
শ্বশুর বিছানা থেকে নিচে নেমে ইশিতার দিকে এগিয়ে আসলো। মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললো,
— তুমি তো জানো আমাদের কোনো মেয়ে নেই। তোমারও মা-বাবা নেই। তোমার সুবিধা অসুবিধা দেখার দায়িত্ব তো আমাদের ই। আগেও বলেছি এখনও বলছি, তোমার কখনও কোনো সমস্যা হলে সরাসরি আমাকে বলবে। আর যদি আমাকে বলার মতো না হয়, তাহলে তোমার শ্বশুড়ি’কে বলবে। কখনও কোনোকিছু মনের ভিতর চেপে রাখবা না। এখন তো আমরাই তোমার বাবা-মা।

ইশিতা কথা গুলো শুনে নিমিষেই ক্ষণিকের জন্য সমস্ত দুঃখ কষ্ট গুলো ভুলে গেলো। তার কপাল ভালো যে এমন ভালো মনের শ্বশুর শ্বাশুড়ি পেয়েছে। কয়জন মেয়ের কপালেই বা এমন শ্বশুর শ্বাশুড়ি জুটে। কিছু মুহূর্তের জন্য নিজেকে সকল সুখি মানুষের ভিতর একজন মনে হলো। কিন্তু বেশিক্ষণ নিজেকে সেই সুখি মানুষ ভাবতে পারলো না। কারণ পরক্ষণে মনে পড়লো তাকে ভীষণ ভাবে ঠকানো হয়েছে। ইশিতা খুব চাপা স্বভাবের মেয়ে। শত দুঃখ কষ্টের ভিতর থাকলেও নিজে কখনও সেই দুঃখ কষ্টের ভাগ অন্যকে দিতে পারে না। আর এমন স্বভাবের মেয়েরা ই বোধহয় দুনিয়াতে বেশি দুঃখ কষ্ট পেয়ে থাকে। ইশিতা কোনো কথা না বলে মাথা দিয়ে হ্যা সূচক নেড়ে তাদের রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
.
জাহিদ ভীষণ দুশ্চিন্তা করছে। নতুন কোনো খবর এখনও তার কানে এসে পৌঁছায়নি। হায়দারকে বিশ হাজার টাকা দিয়েছে কাজটা করার জন্য। কাজটা সঠিক ভাবে করতে পারলো কিনা কে জানে। কোনো ভাবেই হায়দারের সাথে যোগাযোগ করতে পারছে না। কাজটা তেমন কঠিন কিছু না। শুধু তার ট্রাক টা দিয়ে আয়শাকে একটা ধাক্কা মারবে। আয়শার ছবি দিয়ে দিছে যেন চিনতে কষ্ট না হয়। প্রথমে হায়দার এই কাজটা করতে রাজি ছিল না। অনেক অনুরোধ করে রাজি করানো হয়। কাজ করার আগে নগত বিশ হাজার টাকা দিয়েছে এবং কাজ শেষ হবার পর আরও দশ হাজার টাকা দেবার কথা বলেছে। জাহিদ দেশে থাকলে হয়তো এত ঝামেলা হতো না, খুব সহজেই কাজটা সম্পূর্ণ করে ফেলতো। হঠাৎ জাহিদের ফোনটা বেজে ওঠে। রিসিভ করে কানে ধরতে ই অপর পাশ থেকে হাসি খুশি ভাবে বলে উঠলো,
.
— বস কাজ শেষ!
জাহিদ একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললো,
— যাক ভালো করেছিস। কোনো সমস্যা হয়নি তো?
— আরে বস কী যে কন আপনে! দশ বছরের ড্রাইভিং এর অভিজ্ঞা। একদম পাকা হাত। বস আর দেরি কইরেন না, বাকি টাকার ব্যবস্থা টা করেন।
— আচ্ছা ঠিক আছে তুই কোনো চিন্তা করিস না। ঘন্টা খানেক এর ভিতর বাকি টাকা পেয়ে যাবি।
জাহিদ একটু চিন্তা মুক্ত হলো। বেশ ফুরফুরে লাগছে তার মন। তবুও আয়শার জন্য একটু কষ্ট অনুভব করছে। ভালোবেসে বিয়ে করেছিল দুজনে। দুই বছর তাদের ভিতর স্বামী স্ত্রী’র সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও বাসায় কেউ জানতে পারেনি। প্রতিমাসে বিদেশ থেকে আয়শার কাছে টাকা পাঠাতো। তার সবরকম ভরণপোষণ জাহিদ পূরণ করতো। জাহিদের ইচ্ছে ছিল পাঁচ বছর পর যখন একেবারে দেশে চলে আসবে তখন দুজনের বাসায় জানাবে। এর মাঝে দুই বার এসে কিছুদিন থেকেও চলে গিয়েছে। তাদের ভিতর কারোর প্রতি কোনো অভিযোগ ছিল না। বিপত্তি ঘটে যখন জাহিদ শেষ বার দেশে আসে তখন। কোনো এক ভাবে জানতে পারে যে, আয়শা কোনোদিন মা হতে পারবে না! শুরু হতে থাকে দুজনের ভিতর খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে মনমালিন্য। যদিও কারণ গুলো খুবই ছোট তুচ্ছ, তবুও সেটা বিশাল আকার ধারণ করতো। আয়শা কখনও মুখ ফুঁটে প্রতিবাদ করতে পারতো না। কারণ তার অনেক বড় একটা দুর্বলতা রয়েছে। আর জাহিদ সেই দুর্বলতার সুযোগ নিতো। সবচেয়ে বড় কথা হলো জাহিদ আয়শাকে নিয়ে সমাজে কখনও মুখ দেখাতে পারবে না। কারোর কাছে মাথা উঁচু করে দাড়াতে পারবে না। পারবে না কোনোদিন বাবা ডাক শুনতে। তাই দিনদিন আয়শার প্রতি অবহেলা বাড়তে থাকে। একটা সময় আয়শা এগুলো সহ্য করে নিতে পারলো না। মেনে নিতে পারছিল না তার প্রতি অবহেলা। তার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেলে জাহিদকে ডিভোর্স দিতে বাধ্য হয়। সেও চায় না তার কারণে কারোর সাজানো স্বপ্ন ধূলয় মিশে যাক।
ডিভোর্স পাবার পর জাহিদ যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলো। সিদ্ধান্ত নেয় বাকি জীবন টা প্রবাসেই কাটিয়ে দিবে। কিন্তু নিয়তি যে কাউকে দেখেশুনে চলে না! তাই তো হঠাৎ করে জাহিদের বৃদ্ধ বাবা-মা অসুস্থ হয়ে পড়ে। আর জাহিদ তার বাবা-মা’র কথা চিন্তা করে ইশিতাকে বিয়ে করতে বাধ্য হয়। জাহিদ এবং আয়শার সম্পর্ক তৃতীয় কোনো ব্যক্তি জানে না। তাই ইশিতার কাছে এত বড় সত্য টা গোপন রাখতে হয়।
কিন্তু এত বছর পর আয়শা তার সাজানো সংসার ভেঙে দিতে চাইবে, এটা কল্পনার বাহিরে ছিল। কোনো কূলকিনারা না পেয়ে আয়শাকে মারতে বাধ্য হয়।
.
আয়শার অবস্থা তেমন একটা ভালো না। খুবই গুরুতর অবস্তা। মাথার পিছনে মারাক্তক ভাবে আঘাত লেগেছে। আই সি ইউ তে রাখা হয়েছে। ডাক্তাররা জানিয়েছে উন্নত মানের চিকিৎসা প্রয়োজন। তার জন্য দেশের বাহিরে নিয়ে যাওয়া লাগতে পারে যখন তখন। আফনান প্রচণ্ড রকম ভাবে ভেঙে পড়েছে। প্রিয় মানুষটার যন্ত্রণা সে সহ্য করতে পারছে না। ভীষণ ভয় করছে হারিয়ে ফেলবার। হাজারো আশা স্বপ্ন যাকে ঘিরে, সে যদি স্বার্থপর এর মতো চলে যায় তাহলে নিজে বেঁচে থাকাটা মুশকিল হয়ে যায়। সারাটা জীবন জিন্দা লাশ হয়ে কাটিয়ে দিতে হবে। নাওয়া খাওয়া ঘুম কিছু নেই। সারাদিন শুধু সৃষ্টি কর্তার কাছে একটাই প্রার্থনা করে, আয়শা কে যেন সে আগের মতো ফিরে পায়। তার ভালোবাসার মানুষটাকে নিয়ে যেন বাকি জীবনটা পাড় করে দিতে পারে।
আয়শার বাবা-মা ও খুব করে সারাদিন সৃষ্টি কর্তার কাছে প্রার্থনা করতে থাকে। তাদের সন্তানকে যেন তারা আগের মতো ফিরে পায়। আয়শার খরচেই তাদের সংসার চলে। ছোট ভাই আসিফ পড়ালেখা করছে। বাবা বৃদ্ধ হয়ে গেছে। আয়শার ছোট্ট জবটা থেকে যা আসে তা দিয়েই টেনেটুনে তার সংসার চালাতে হয়। তার চিকিৎসার খরচ বলতে গেলে সম্পূর্ণ আফনান বহন করছে। যদিও এত টাকা তার পক্ষে ম্যানেজ করা খুবই কঠিন হয়ে গিয়েছে, তবুও সাধ্য অনুযায়ী চেষ্টা করছে ভালোবাসার মানুষটার জন্য। আয়শার বাবা-মা ও অনেক ধার দেনা করে করে বসে আছে। সবার আশা শুধু একটাই আয়শা যেন বেঁচে ফিরে।
.
কিছুক্ষণ আগে পুলিশ একজন ট্রাক ড্রাইভার কে আটক করেছে। তাদের ধারণা এই ট্রাক ড্রাইভার ই আয়শাকে চাপা দিতে চেয়েছিল। এই দুর্ঘটনা ঘটার পরে যখন আফননা প্রত্যক্ষদর্শী দের কাছ থেকে জানতে পারে যে, ট্রাকটা যেই ভাবে আয়শাকে ধাক্কা মেরেছে তাতে মনে হয় এটা ইচ্ছাকৃত ভাবে মারা হয়েছে। এটা জানার পরেই আফনান তার এক বন্ধু পুলিশ অফিসারকে বিষয়টা জানায়। যদিও এটার কোনো মজবুত প্রমাণ নেই। থানা থেকে ফোন পেয়ে আফনান দ্রুতগতিতে হসপিটাল থেকে বেরিয়ে যায়।
.
(চলবে)

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ