![]() |
আমার পিচ্চি বউ |
আমার পিচ্চি বউ
পর্ব--৪
আজ অফিস থেকে সব কাজ শেষ করে দ্রুত
চলে আসলাম। কারন এই প্রথম আমি আমার
বউয়ের সাথে শশুর বাড়ি যাবো।
ভাবতেই ভালোলাগছে।
বাসায় এসে দেখি বউটা আজ সুন্দর করে
সেজেছে। ওকে সত্যি আজ দারুণ লাগছে।
পিচ্চিটাকে আর পিচ্চি,পিচ্চি লাগছেনা।
মনে হচ্ছে একদিনেই ওকে কে জেনো
টেনেটুনে লম্বা বানাই ফেলছে।
ও আয়নায় বসে বসে সাজতেছে।
আমি যেতেই ও আড়চোখে তাকিয়ে বলল,
কারো ঘরে আসলে নক করে আসতে হয়।
-স্বামীদের ও কি নক করে আসা লাগে?
কেন, স্বামীদের জন্য কি নিয়ম আলাদা?
-তা নয়, তবে স্বামীরা আসতেই পারে।
তিনবার কবুল বললেই কি স্বামী হয়ে যায়।
-কেন হয়না?
নাহ্!
-তাহলে?
দেখুন আমাদের বিয়েটা লোক দেখানো
বিয়ে। আর বিয়ে হয় তখনি যখন দুটি মনের
সম্মতি থাকে। কিন্তু এ বিয়েতে আমার
সম্মতি ছিলো না। সুতরাং কি বলতে
চাচ্ছি বুঝতেই পারছে।
আজ পিচ্চিটা এতো ভারী, ভারী কথা কেন
বলছে? কেন আমার মনটাকে ভেঙে চুরে
তছনছ করে দিচ্ছে? আমার বুকটা যে ব্যাথায়
কুকিয়ে উঠছে। চোখ দিয়ে টুপটাপ পানি
ঝরতে লাগল। আমি দ্রুত মুছে ফেললাম।
যেনো পিচ্চিটা না দেখে। আমি মন শক্ত
করে স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করলাম।
ওকে বললাম, খোলা চুলে তোমায়
ভালোলাগছেনা। আমি কি তোমায় একটা
মালা এনে দেবো? ও আমার মুখের উপর না
বলে দিল। কিচ্ছুক্ষণ ভাবনা চিন্তা করার
পর ও বলল নিয়ে আসুন। আমি এক দৌড়ে
ফুলের দোকান থেকে একটা মালা কিনে
নিজের হাতে ক্ষোপায় পড়িয়ে দিলাম। ও
বলল, আমার টিপটা একটু ঠিক করে পড়িয়ে
দিবেন?
হুম, আমি ওর টিপটা ঠিক করে দিলাম।
মুহুর্তেই আমার বুকে থাকা কষ্টগুলো দূর হয়ে
গেল।
মুভ দিলে যেমন ব্যাথা দূর হয়ে যায়। ঠিক
সেভাবেই আমার বুকের ব্যাথা দূর হয়ে
গেল। আমার মুভ হলো আমার পিচ্চি বউটা।
ওর সাথে এক রিক্সায় চড়ে যাচ্ছি। জীবনে
প্রথম কোনো মেয়ের পাশে বসে যাচ্ছি।
আমার হয়ত লজ্জা লাগার কথা। কিন্তু
আমার লজ্জা লাগছেনা। আমার দাদুর মুখে
একবার শুনেছিলাম। প্রিয় মানুষদের পাশে
বসে গেলে লজ্জা লাগেনা। সব লজ্জা
ভালোবাসায় মিলিয়ে যায়। আমারো তাই
হলো। সব ভালোবাসায় মিলিয়ে গেল।
আমরা বাসায় পৌছালাম মানে আমার
শশুর বাড়ি আসলাম। রিক্সা থেকে নেমেই
ও আমার হাত ধরল নিজে থেকে। এই প্রথম
ওর হাতের ছোঁয়া পেলাম। এই দিনটা লিখে
রাখতে হবে। প্রতিদিন এই দিনে আমি
প্রথম হাতধরা দিবস সেলিব্রেট করব।
লোকেতো কত ডে সেলিব্রেট করে। হাগ,
ডে কিস, ডে আতা ডে, ছাতা ডে। আমি এই
ডে'টা সেলিব্রেট করলে ক্ষতি কি?
ও আমার হাত ধরেই ওর বাবার রুমে গেল।
বাবাতো খুব খুশি। আমি জীবনেও কখনো
কারো পায়ে হাত দিয়ে ছালাম করিনি।
কিন্তু আজ করলাম। পিচ্চি বউটা আসতে
আসতে আমায় শিখিয়ে দিয়েছিল। বউটা
পিচ্চি হলে কি হবে সব জানে। আমাদের
দেখে বাবা খুব খুশি হলেন আর আশীর্বাদ
করলেন যেন সারাজীবন আমরা এভাবেই
দুজন একসাথে থাকি।
বউ আমার বায়না ধরেছে তাকে নিয়ে
আইসক্রিম খেতে যেতে হবে। তাও এক্ষুনি।
কিন্তু বাহিরে প্রচণ্ড রোদ, তবুও ও আমার
কোনো কথায় শুনলো না। আমাকে নিয়ে
গেল রাজু মামার দোকানে। রাজুর
দোকানের আইসক্রিম নাকি খুব ভালো
খেতে। আমি কখনো আইসক্রিম খেয়ে
দেখিনি রাজু মামার দোকানের। আর
তাছাড়া আইসক্রিম আমি খুব কমই খায়।
আইসক্রিম খেলেই আমার জ্বর এসে যায়।
ছোটবেলা থেকেই এই জন্য আইসক্রিম এর
সাথে আমার ঘোর শত্রুতা। আইসক্রিম
দেখলেই চোখ বুযে থাকতাম। তবুও আজ
খেলাম। জ্বর আসলে কি হবে আমি
জানিনা। কিন্তু বউয়ের সাথে আইসক্রিম
খাওয়ার সুযোগ হাতছারা করা যাবে না।
যাদের বউ আছে তারাই একমাত্র জানে
বউয়ের সাথে খেতে কত মজা। বউয়ের
আবদার গুলা পুরুন, করতে কি মজা। যাদের
বউ নেই তারা বলবে এসব ন্যাকামো।
আসলে সত্যি বলতে কি তাদের হিংসে হয়।
ওর সাথে এখন টঙ এর দোকানে বেঞ্চের উপর
বসে চা খাচ্ছি। ওকে আমি বলেছিলাম, চল
একটা ভালো কফি সপে যেয়ে খায়। না উনি
শুনলেন না। টঙ এর দোকানে বসেই চা
খাবে। আমিও ওর সাথে সাথে খাচ্ছি। ও
একটা বিস্কিট নিয়ে চায়ে ডোবাচ্ছে আর
চুমুক দিচ্ছে। আমি ওর মুখের দিকে তাকিয়ে
আছি। আর অবাক হচ্ছি ওর চা খাওয়া
দেখে। হটাৎ ও আমার দিকে তাকাতেই
আমি চোখ সরিয়ে নিলাম ও আমাকে বলল, ঐ
মিয়া চা'য়ে চুমুক দেন ঠান্ডা হয়ে
যাচ্ছেতো। শুধু কি আমাকে দেখলেই হবে?
এমন ভাব করছেন মনে হচ্ছে জীবনে কখনো
আমাকে দেখেন নি।
-না, মানে আসলে।
এইসব না, মানে, আসলে বাদ দিয়ে চা'টা
পান করুন আমাদের কে আবার লালবাগে
যেতে হবে।
-কেন?
কাচ্চি খাইতে। কাচ্চি আমার সেই লাগে।
-আচ্ছা চল।
চা' না খেয়েই?
- হুম ঠান্ডা হয়ে গেছে স্বাদ লাগছেনা।
আচ্ছা চলুন।
দুজনে হেটেই কাচ্চিবিরিয়ানি খেতে
আসলাম। কি সুগন্ধ ভিতরে ঢুকতেই ও দু প্লেট
অর্ডার করল। তারপর দুজনে খেলাম। তারপর
দুপুর ২টা নাগাত বাসায় ফিরে এলাম। আজ
পিচ্চিটা আমার সাথে একটুও দুষ্টামি
করেনি। একদম লক্ষি বউয়ের মতো ছিল।
হয়ত ওকে ওর বাবার বাসায় নিয়ে
এসেছিলাম সেই খুশিতে।
সন্ধ্যায় শশুরের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে
আমরা আমাদের বাসায় চলে আসলাম। ও
বলল, আপনার ফোনটা একটু দিবেন?
-কেন?
দিবেন কিনা সেটা বলুন? আমি অতো
কৈফিয়ত দিতে পারব না।
-আচ্ছা নাও।
ও আমার ফোন থেকে কাকে জেনো ফোন
দিলো। আমি রাফির নাম শুনলাম। তখন আর
বুঝতে বাঁকি রয়লনা ও রাফির সাথে কথা
বলছে। আমার বুকের কষ্টটা আবারো ফিরে
এলো। এবার একটু বেশি ব্যাথা নিয়েই
এলো।
তাহলে কি ও ওর বাবাকে দেখানোর জন্য
আমার সাথে লক্ষি বউ হওয়ার অভিনয় করল,
আর আমি বোকার মতো সব সত্যি ভেবে
নিলাম?
শালা! আমি সারাজীবন বোকাই
রয়েগেলাম।
আমি ওর আর রাফির কথা শোনার চেষ্টা
করলাম। যদিও অন্যের কথা কান পেতে
শোনা ঠিক নয়, তবুও আমি শুনতেছি। কারন
আমার বুকের ব্যাথাটাযে ক্রমাগত বেড়েই
চলেছে। বুকের ব্যাথাটা কমানোর জন্য
হলেও শোনা দরকার।
-হ্যালো রাফি?
-আমি আর তোমায় ছাড়া থাকতে
পারছিনা।
-প্লিজ আমাকে নিয়ে যাও।
-কি? আর দুটো দিন পর আসবে?
-আচ্ছা তবে আমি তোমার পথ চেয়ে রয়লাম।
আমি শুধু অবনীর কথা শুনলাম। রাফির
কোনো কথায় আমার কানে এলোনা।
অবনীর কথা শুনে বুঝতে পারলাম আর দুইদিন
পর অবনী একদম আমায় একা করে দিয়ে চলে
যাবে।
অবনী আমার ফোনটা আমার হাতে দিয়ে
বলল আর মাত্র দুইটাদিন আমাকে সহ্য
করেন। আমি আর জ্বালাবোনা।
আমি যে অবনীর জ্বালায় জ্বলতে চাই
জ্বলে পুড়ে অঙ্গার হয়েযেতে চাই। অবনী
কে কি করে বলব? ওকে আমি.....
আমার পিচ্চি বউ পর্ব ৫
0 মন্তব্যসমূহ
গল্প গুলো কেমন লাগলো, আপনার মতামত জানাতে কমেন্ট করুন।