![]() |
আমার পিচ্চি বউ |
আমার পিচ্চি বউ পর্ব-৩ । রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প।
পর্ব-৩
আমি আর আমার বউ এই রাতের বেলা ফুটবল
খেলতেছি।
মাঠে নয় আমার রুমে।
হুম, রুমটা যথেষ্ট ছোট। খেলারমতো কোনো
স্পেস নেই।
তবুও বউ বায়না ধরেছে তাই খেলছি। শুধু বউ
বায়না ধরেছে বলেই যে খেলতেছি তা
কিন্তু নয়।
ওর সাথে না খেল্লে যে ও আমার আব্বুকে
গিয়ে ইনিয়েবিনিয়ে কিছু বলবে। আর
শাস্তি হিসাবে আবার সকালের নাশতা
অফ হয়ে যাবে। আমি আবার একটু পেটুক।
আমাদের খেলা শেষ হলো রাত ২টায়। বউ
আর খেলবেনা। এখন ওর ঘুম আসছে। বউ ঘুম ঘুম
চোখে আমায় বলল, মশারীটা একটু টানিয়ে
দিনতো।
- আমি মশারীরর নিচে শুইবোও না
টাঙাতেও পাড়ব না। কয়েল জ্বালাও।
:আমি কয়েলের ধোঁয়া সহ্য করতে পারিনা।
-তাহলে বারান্দায় যেয়ে ঘুমাও।
বউ সত্যিসত্যি একটা কাঁথা আর বালিশ
নিয়ে বারান্দায় চলে গেল।
আমি ভেবেছিলাম হয়ত বউ আমার সাথে
আবার ঝগড়া করবে। মশাড়ি টানানো
নিয়ে। কিন্তু সেটা করল না। এ দুদিনে ওর
পাগলামি গুলোর প্রেমে পড়েগেছি। মানুষ
বলেনা। যখন কেউ সত্যিকারের প্রেমে
পড়ে, তখন সে শুধু তার নয় তার করা সব কিছুর
প্রেমে পড়ে। যেমন পাগলামি, ঝগড়া,
দুষ্টামি ইত্যাদি
আমিও তেমন প্রেমে পড়েছি ওর দুষ্টামির,
ওর হাসির, ওর অভিমানের। ও যদি কখনো
আমায় ছেড়ে চলে যায়। আমি সত্যিই
বাঁচবো না। বেঁচে থাকলেও হয়ত পাগল হয়ে
যাবো।
আমি যে তুমুল প্রেমে পড়েছি।
এমন প্রেমে কেউ আগে পড়েছে কিনা?
জানিনা।
আমি ওকে বারান্দায় যেতে দিলামনা।
ওকে মশারী টাঙিয়ে দিয়ে আমি নিজেই
বারান্দায় চলে এলাম। খুব সুন্দর চাঁদ উঠেছে
আকাশে। চারিদিক জ্যোৎস্নায় মো! মো!
করছে। এমন জ্যোৎস্নাতে বসেই হয়ত কবিরা
কবিতা লিখেছে। কিন্তু আজ আমার এই
চাঁদটাকে ভালোলাগছেনা। জ্যোৎস্না ও
ভালোলাগছেনা। তাই আমি ঘরে এসে
আমার বউয়ের চাঁদ মুখটার দিকে চেয়ে
চেয়ে দু-লাইন কবিতা লেখার চেষ্টা করছি।
যদিও আমি কবি নয়। তাই ছন্দহীন কবিতা
লিখলাম।
ভোর হয়েগেছে আমি আমার বউয়ের জন্য চা
বানাতে গেলাম কিচেনে। আমি চা
বানাতে পারিনা, তাই ইউটিউব থেকে
দেখে দেখে বানাচ্ছি। ইউটিউব থাকাতে
এই এক সুবিধে যা ইচ্ছা সার্চ দিয়ে দেখা
যায়। আমিও সার্চ দিলাম আর প্রস্তুত
প্রণালী দেখে, বানিয়েও ফেললাম। খুব
সুন্দর গন্ধ বেড়িয়েছে। নিশ্চয় অবনীর খুব
পছন্দ হবে।
অবনী ঘুম থেকে উঠে উয়াশ রুমে যেয়ে
ফ্রেশ হয়ে এলো। আমি চা বানিয়ে নিয়ে
এলাম সেদিকে ওর কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।
আজ ওকে ভিষন শান্ত দেখাচ্ছে। কি হলো
মেয়েটার? আজ একটুও দুষ্টামি করছেনা।
ওকে রাগানোর জন্য বললাম। বউ দেখো
তোমার জন্য চা বানিয়ে এনেছি। তুমিতো
তোমার এই জামাইয়ের হাতে গরম গরম চা
খাইতে চাও।
ওকে বউ বলে ডাকলেই ও রেগেযায় কিন্তু ও
আজ কিছুই বলছেনা। দুষ্টু মেয়েদের শান্ত
থাকলে ভালোলাগেনা। তাই আমারো
ভালোলাগছেনা। ওকে বললাম আমার
পিচ্চি বউটার মন খারাপ কেন?আজ যে
একটুও দুষ্টুমি করছেনা। দেখলাম ও কেঁদে
ফেলল। ওর কান্নাতে আমার বুকের
ভেতরটাতে ধুক করে উঠল। ওকে জিজ্ঞেস
করলাম। অবনী কি হয়েছে তোমার? তোমার
টাক শশুর আব্বা কিছু বলছে?
-না।
তাহলে মন খারাপ কেন? আমি কাল জল্লাদ
বলেছি বলে অভিমান করেছো? এই দেখো
আমি কান ধরে মাফ চাইছি। তুমি বললে
কান ধরে ওঠা বসা করব?
- না, আপনার কথায় কিছু মনে করিনি।
:তাহলে?
অবনী চোখের জল মুছতে মুছতে বলল, বাবার
কথা খুব মনে পড়ছে।
- ও এই কথা? আমি আজ অফিস থেকে এসে
নিয়ে যাবোনি। কালতো শুক্রবার। অফিস
বন্ধ থাকবে। দুজনে একসাথে বেড়িয়ে
আসবো।
ও একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,আপনার
সাথে বেড়াতে আমার বয়েই গেছে।
-কেন, আমি অনেক খারাপ?
:খুব।
-তাহলে তুমি একাই যেয়ো।
: না আপনি না গেলে আমার বাবা আবার
নানান প্রশ্ন করবে।
-আচ্ছা তুমি যা ভালো মনে করো। তার
আগে 'চা' টা খেয়ে বলত কেমন হয়েছে?
:একদম জঘন্য, ঠান্ডা হয়ে গেছে।
-আচ্ছা তুমি একটু বসো আমি গরম করে এনে
দিচ্ছি।
:আপনাকে আর গরম করতে হবেনা। আপনার
অফিসে লেইট হয়ে যাচ্ছে। আপনি গোসল
করে রেডি হোন।
বউ'য়ের এই কথায় কেন জানি এক
ভালোলাগা অনুভব করলাম। হাজার
হলেওতো সে আমার জন্য একটু ভাবে।
আমিওতো খুব করে চাইতাম। কেউ আমার
জন্য ভাবুক। কেউ আমায় একটু শাসন করুক।
কেউ কর্কশ স্বরে বলুক। লেইট করে বাসায়
ফিরলে ঘরে ঢুকতে দিবোনা। আমার কি
একা একা ভয় লাগেনা?
আমি চাই কেউ বলুক একদম বৃষ্টিতে ভিজবে
না। ঠান্ডা লেগে যাবে তখন স্মি রাত
জেগে পানি পট্টি দিতে পারবো না।।।।।
আমি গোসল করে এসে দেখলাম পিচ্চিটা
আমার সাদা শার্ট এ চা ঢেলে রেখে
দিয়েছে। আমি অফিসে কি পড়ে যাবো
এখন।
আমি একটু রাগ রাগ ভাব নিয়ে বললাম, এটা
কি করলে?
কানা চোখে দেখেন, না। কি করেছি।
বলেই একগাল হাশির বর্ষণ নামিয়ে দিলো।
আমি বললাম, আকাম করে আবার
হাসতেছো?
ও বলল, হাসবো ছাড়া কি কাঁদবো? তাছাড়া
আপনি যেটা পাড়েন না সেটা শুধু শুধু কেন
করেন?
:কি করি?
- এই যে রাগ করার অভিনয় করছেন, আপনি
অভিনয়ে একদম কাঁচা। আমার মতো পাকা
খেলোয়াড় হতে এখনো ১২ বছর তপস্যা করা
লাগবে।
:তাই নাকি?
-দেখতে চান? দেখাবো?
:কি দেখাবে?
-১মিনিট দাঁড়ান, দেখাচ্ছি। বলেই আব্বুকে
ডাকতে লাগলো। আব্বুও চলে এলো। আব্বু
আসতেই বলল, আপনার ছেলে আমাকে
থাপ্পড় মেরেছে?
আব্বু রেগে গিয়ে আমায় বলল, কিরে
জিসান তুই অবনী মাকে মেরেছিস কেন?
- আব্বু আমি মারিনি। ও অভিনয় করছে।
:ওর চোখে আমি জল দেখতে পাচ্ছি। আর তুই
বলছিস মারোস নাই। অভিনয় করতেছে।ছিঃ
তোর লজ্জা হওয়া উচিৎ।
আমি তোকে এই শিক্ষা দিয়েছি?
আব্বু আমাকে বকে চলে যাওয়ার পরই
পিচ্চিটা আমাকে বলল, দেখছেন; অভিনয়
কাকে বলে কত প্রকার কি কি?
-হুম, আমিতো আগেই বলেছি ধানি লংকা।
বড়বড় চোখ করে চোখদুটো কপালে তুলে
ওড়না টা মাজায় বেধে, আমার দিকে
এগিয়ে এসে বলল, কি বললেন? সাহস থাকলে
আরেকবার বলুন।
আমিও ওর কানের কাছে যেয়ে বললাম, আজ
তোমায় তোমার বাপের বাড়ি নিয়ে যাবো
না।
মন খারাপ করে কাঁদোকাঁদো গলায় বলল,
sorry!
পিচ্চিটা আবার sorry! ও বলতে পারে! এতটা
সুন্দর করে সরি! বলে যে ওকে না মাফ করে
থাকায় জায়না।
চলবে......
আমার পিচ্চি বউ পর্ব- ৪
0 মন্তব্যসমূহ
গল্প গুলো কেমন লাগলো, আপনার মতামত জানাতে কমেন্ট করুন।