পতিতা
পর্ব-৯+১০
টুনি- মা গো আমি আইছি মাআআআ..... মাআআআআ......
.
টুনি মা মা করে চিৎকার করে ঘরের সামনে গিয়েই থমকে যায়। ঘরের দরজা টা লাগানো। তালাটার দিকে তাকিয়ে থেকে টুনি পিছনে ঘুরে আমার দিকে তাকায়। আমার কাছে এসে বলল।
.
টুনি- আমার মা কই???
.
বলেই টুনি এদিক সেদিক দেখতে লাগল।
.
টুনি- মা গো তুমি কই মা। আমি আইছি মা। তোমার টুনি আইছে। ও মা তুমি কই মা। মাআআআ
.
বাড়ির ভেতরের কোথাও টুনির মাকে পাওয়া গেলো না। হতাশ হয়ে মেয়েটা আমার কাছে এসে দাড়ালো।
.
রেনু- মনে হয় বাহিরে কোথাও গেছে।
.
টুনি- ছমিরন দাদী।
.
বলেই টুনির মুখে হাসি ফুটে উঠল।
.
রেনু- সেটা আবার কে???
.
টুনি- আসেন আমার সাথে।
.
টুনি আমার হাত ধরে আমাকে টেনে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পাশের বাড়ির ভেতর ডুকলো।
.
টুনি- ছমিরন দাদী ও দাদী। দাদী তুমি কই???
.
বাড়ীর ভেতর থেকে একজন মহিলা বেরিয়ে এলো।
.
-কেডা আপনে???
.
টুনি- এই বাড়িটা ছমিরন দাদীর না???
.
- হো তয় আপনে হেরে কেমনে চিনেন??? কে আপনে???
.
টুনি- আমি টুনি।
.
- আপনে টুনি??? পাশের বাড়ির হেই ছোট্ট টুনি??? কত শুনছি আপনের কথা।
.
টুনি- ছমিরন দাদী কই???
.
- আছে আহেন আমার লগে আহেন। বয়স হইছে তো বিছনা থেইকা উঠতে পারে না৷ আমার লগে আহেন।
.
বলতে বলতেই মহিলা টুনির হাত ধরে ভিতরের ঘরে নিয়ে যায় সাথে আমি আর রতন ভাইও যাই৷
.
- ও মা মা উডেন। দেহেন কে আইছে।
.
ছমিরন দাদী- এ্যা কেডা কে আইছে।
.
- ঐ যে আপনের টুনি। টুনি আইছে মা।
.
ছমিরন দাদী- এ্যা কি কইলা। টুনি আইছে আমগো টুনি।
.
বলতে বলতেই ছমিরন দাদী পাশ ফিরে চোখ মেলে তাকালেন। অনেক বয়স্ক মানুষ তাই বিছানায় পরে গেছে। ব্যবহারে বুঝা গেলো ঐ মহিলা ছমিরন দাদীর পুত্রবধু হবেন। টুনির কথা শুনে হাজার কষ্ট হলেও ছমিরন দাদী উঠে বসলেন।
.
ছমিরন দাদী- কই টুনি আয় আমার কাছে আয় কত বছর তোরে দেহি না। কত বড় হইয়া গেছে আমগো টুনি।
.
টুনিকে পেয়ে উনি অনেক আবেগ প্রবন হয়ে গেলেন। কেঁদেই দিলেন।
.
ছমিরন দাদী- কত বড় হইয়া গেছে আমগো টুনি৷ হেই যে দেখছিলাম ফরগ পইরা কুতকুত খেলতি, গাছে উঠতি, মাডে খেলতি।
.
টুনি- দাদী আমার মায় কো??? ঘরে তালা কেন??? মায় কই গেছে???
.
ছমিরন দাদী- টুনিরেএএএ.....
.
টুনি মায়ের কথা জিজ্ঞেস করতেই ছমিরন দাদী টুনিকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলেন। টুনির ভেতরের উত্তেজনাটা বেড়ে গেলো মায়ের জন্য। আমার ভেতরে হুট করেই একটা ভয় জেগে উঠল।
.
টুনি- কও না দাদী মায় কই??? আমার মায় কো???
.
ছমিরন দাদী- গেরামের হগ্গোলে মিল্লা তোরে কত খুজলাম কোনো হানে পাইলাম না রে টুনি তুই কই হারায় গেলি৷
.
টুনি- দাদী সব কমু তুমি আগে কও আমার মায় কই??? আমি মার কাছে যামু।
.
ছমিরন দাদী- টুনিরে তোর মায় মইরা গেছে রে টুনি তোর মায় মইরা গেছে.....
.
টুনিটা যেনো নিমিষেই স্তদ্ধ হয়ে গেলো। আমিও তো এমনটা আশা করি নি৷ কত আশা নিয়ে এসেছিলাম মা মেয়ের পূর্নমিলন দেখবো বলে। কল্পনায়েও ভাবি নি এসে এমন কিছু শুনতে হবে। ছমিরন দাদী কান্না করতে করতেই বললেন।
.
ছমিরন দাদী- যেদিন তুই হারায় গেলি ঐ দিন তোর বাপে এক ব্যাডার কাছে তোর মায়েরে বেইচ্চা দিছিলো। তোর মায় কতো হাত পাউ ধরলো তোর বাপের কিন্তু জানোয়ারডায় হুনলো না তোর মার কথা। কষ্টে, দুঃখে, অপমানে ঐ দিন রাইত্তে আমি তোর মায়রে ডাকতে গেছি। সারাদিন কিছু খায় নাই। ও টুনির মা ঘরে আছো নি মা। কিছু তো খাও নাই। আমার লগে আহো মা।
.
(কইতে কইতেই ঘরের ডুকছিলাম। ঘরের দরজা ডা খোলাই আছিলো। ডুইক্কা দেহি তোর মায় গলায় দড়ি দিছে।) আল্লাহ গো কে কই আছোছ শিগগিরি আয় টুনির মা কি করলি এডা।
.
বলতে বলতে ছমিরন দাদীর কান্না যেনো বেড়েই চলেছে।
.
ছমিরন দাদী- ঐ হাতে তোর মার লাশ টা ধরছিরে আমি। তোর জানোয়ার বাপটার লেইগা গলায় দড়ি দিয়া মইরা গেলো তোর মায়। আল্লাহ আমারে মনে হয় তোর লেইগাই বাঁচায় রাখছিলো রে টুনি৷
.
টুনি- আমি মার কাছে যামু দাদী।
.
ছমিরন দাদী- ও বউ টুনিরে ওর মার কবর ডা দেহায় দেও।
.
ছমিরন দাদীর ছেলের বউ আমাদেরকে টুনির মার কবরের কাছে নিয়ে গেলো। টুনিদের বাড়ির পিছনে কবর দেয়া হয়েছে। সেখানে দুইটা করব। মনে পরল টুনি বলেছিলো ওর দাদীর কথা আরেকটা কবর হয়ত টুনির দাদীর। টুনি ওর মায়ের কবরের সামনে গিয়ে বসে পরল। আমি ধরলাম না বাঁধাও দিলাম না। টুনির এখন হালকা হওয়া প্রয়োজন।
.
টুনি- মাগোওওও.... আমি আইছি মা। মা তোমার টুনি আইছে।
.
বলেই টুনি কবরের উপর মাথা টা রাখলো। টুনির চোখের পানিরা তো বাধ মানছেই না সাথে আমার চোখের পানি গুলোও কথা শুনছে না। তবে আমার মাকে বলা মিথ্যা স্বার্থক হলো। আমি স্পষ্টভাবে মা আর মেয়ের পূর্ণমিলন দেখছি। বাস্তব না হলেও আত্মার মিলন দেখতে পারছি আমি।
.
অনেকক্ষণ মায়ের কবরের পাশে থাকার পর টুনি উঠলো। টুনি মায়ের ঘর ঘুড়ে দেখালো আমাকে। যে ঘরে ওর মায়ের কোলে শুয়ে কত সময় পার করেছে। দাদীর সাথে ঘুমিয়েছে। টুনি ওর মায়ের পুরনো কিছু সৃত্মি নিয়ে নিলো।
.
রেনু- টুনি
.
টুনি- জ্বি
.
রেনু- আজকের দিনটা না হয় থেকে যাই।
.
টুনি- না মাই যখন নেই আর থেকে লাভ কি??? আমার বাড়িটা খালি। এই ৮ বছরে তো ঐ বাড়িটার বাহিরে থাকি নি কখনো। আর স্যারও তো আমার ভরসায় রেখে গেছেন সব।
.
রেনু- ঠিক আছে।
.
আমি রতন ভাইকে বলে দিলাম রাতের টিকিট কাটার জন্য। ঐ বেলা আমরা ছমিরন দাদীর বাড়িতেই খাওয়া দাওয়া করলাম। আমাদের অনেক আদর আপপায়ন করলেন। ছমিরন দাদী টুনির ছোট বেলার কত গল্প বললেন। টুনির মায়ের গল্প বললেন। ছমিরন দাদী অনেক বললেন থেকে যেতে কিন্তু টিকিট করে ফেলায় আর টুনি থাকতে চাইছে না সেজন্য আর থাকা হলো না।
.
ছমিরন দাদীর ছেলের বউয়ের সাথে কথা বলে জানতে পারলাম সেদিন টুনির বাবা টুনির মাকে বিক্রি করে দিয়ে চলে যায় আর ফিরে আসে নি। সে বেঁচে আছে না মরে গেছে তা কেউ বলতে পারে না।
.
রাতেই আমরা আবার রওনা দিলাম। টুনি সারাদিন অনেক কান্না করেছে। তাই কেবিনে গিয়ে শোয়ার সাথে সাথেই ঘুমিয়ে পরল। টুনি ওর মায়ের একটা অনেক পুরোন কাপড় বুকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে। যেনো মাকে বুকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে।
.
আজো একটি নির্ঘম রাত কাটবে আমার। আজ খুব মন চাইছে ঐ মানুষটা যদি এখন সামনে থাকতো। তার সাথে মনের কষ্ট টা শেয়ার করতাম। কি সব ভাবছি আমি। যার সাথে কথাই বলি না তার সাথে আবার মনের কথা শেয়ার করবো। ইদানিং ঘুড়ে ফিরে ঐ মানুষটার কথাই মাথায় ঘুড়ে৷
.
রতন- ম্যাডাম
.
রেনু- জ্বি রতন ভাই বলেন।
.
রতন- স্যার ফোন দিয়ে ছিলেন টুনির কথা জানতে চাইলে বললাম টুনির মা মারা গেছেন।
.
রেনু- হুম। আর কিছু জিজ্ঞেস করেছেন??
.
রতন- হ্যাঁ।
.
রতন ভাই হ্যাঁ বলে আমার দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে রইলেন যেনো আমার জিজ্ঞেস করার অপেক্ষায় আছেন। আমি জিজ্ঞেস করলেই বলবেন। তাই আমিও জিজ্ঞেস করলাম। রতন ভাইয়ের চাহনি দেখে আমারও জানতে ইচ্ছে করছে মানুষটা কি বলেছে আর।
.
রেনু- কি বলেছে???
.
রতন- জিজ্ঞেস করল আপনি কি খুব কেঁদেছেন কি না? আর বলল সে জানে আপনি অনেক কষ্ট পেয়েছেন। আপনার কি খুব মন খারাপ কি না তাই জিজ্ঞেস করলেন।
.
রতন ভাইয়ের কথা শুনে আমার যেনো চারিপাশটা ঘুড়তে লাগল। যে মানুষটার সাথে মনের তো দূরের কথা নামের কোন সম্পর্ক আমার নেই সে কি না এতো দূর থেকে বসে আমাকে না দেখে এই কথা গুলো বলে দিলো৷ আমি সত্যি কেঁদেছি। অনেক কষ্ট পেয়েছি টুনির জন্য। আর এই মূহুর্তে আমার অনেক বেশি মন খারাপও। রতন ভাই আমাকে চুপ দেখে চলে গেলেন আর কিছু বললেন না।
.
বাসায় ৩/৪ দিন এর কথা বলেছি তাই আর বাসায় গেলাম না এই বাসায়ই রয়ে গেলাম। টুনি অনেকটাই স্বাভানিক। মাকে না পেলেও মায়ের সম্পর্কে জানতে তো পেরেছে। এখন তো জানে ওর মা আর নেই৷ এটাও একটা তৃপ্তি। এতো দিন তো কিছুই জানতো না।
.
মানুষটা আমার কাছে একটা রহস্য ছাড়া কিছুই নয়। কেনো যেতে দেয় না সে আমাকে অন্য কারো কাছে?? কেনো এভাবে আগলে রাখতে চায় আমাকে?? কি চায় মানুষটা??
.
.
সেই বিকেল থেকে ফোনটার দিকে তাকিয়ে আছে অয়ন চৌধুরী। ফোন দেখছে না। রেনুকে দেখছে। রেনুকে না বলে তোলা রেনুর ঘুমন্ত মুখের ছবিটা দেখছে। এতো মায়া মেয়েটার মুখে যে অয়ন চাইলেও চোখ ফেরাতে পারছে না। অজানা এক মায়া জড়িয়ে ফেলেছে অয়নকে রেনুর সাথে। তাই তো সেদিন যখন রেনুকে ঘুমের মাঝে দেখলো অদ্ভুত সুন্দর লাগছিলো অয়নের কাছে। রেনু পরের দিন যখন আসছিলো না। রেনুর দেড়ি দেখে অয়নের ভিতরে তোলপাড় চলছিলো কেনো রেনুর দেরি হচ্ছে আসতে। পরে ফোন করে জানতে পারে রেনুর অন্য কারো কাছে যাওয়ার কথা। পাগলের মতো ড্রাইভ করে যায় রেনুকে আটকাতে৷ রেনুর অন্ধকার জগৎ এ নিজেকে ঠেলে দেয়াটা অয়ন কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না। তাই তো কারো কাছে যেতে দিবে না অয়ন রেনুকে। কখনো যেতে দিবে না। অয়ন চায় না রেনুর মায়া ছাড়তে। অয়ন প্রবল ভাবে নিজেকে রেনুর মায়ায় বাঁধতে চায়। রেনু কি বাধঁবে অয়নকে নিজের মায়ায়। রেনু কি কখনো বুঝবে অয়নের ভেতরটা???
.
.
.
চলবে......
#পতিতা
#পর্ব-১০
.
.
.
অয়ন প্রবল ভাবে নিজেকে রেনুর মায়ায় বাঁধতে চায়। রেনু কি বাধঁবে অয়নকে নিজের মায়ায়। রেনু কি কখনো বুঝবে অয়নের ভেতরটা???
.
অয়ন চৌধুরী মানুষটা অনেক শক্ত ও কঠিন একজন মানুষ। দাম্ভিক্যতা তাকে দেখলেই বুঝা যায়। ড্রইং রুমে অয়ন চৌধুরীর টাঙ্গানো বিশাল ছবিটা খুটে খুটে দেখছি আর বিশাল কোন ভাবনায় ভেসে রয়েছি। মানুষটার মাঝে কিছু তো আছে। কোন এক অজানা রহস্য বিরাজ করছে মানুষটার মাঝে যা আমি জানি না।
.
টুনিটাও সকাল থেকে কিছু কাজে ব্যস্ত তাই আমাকে সময় দিতে পারছে না। আরো একদিন থাকা লাগবে এ বাড়িতে তারপর বাড়ি যাবো। আজ তিন দিন আছি এ বাড়িতে। তবে সময়টা খারাপ যাচ্ছে না। টুনির সাথে হেসে কথা বলে ভালোই যাচ্ছে দিন। আর ফোন দিয়ে খবরও নিয়েছি বাসায় সবাইও ভালো আছে। আগের দিন তো টুনি আর রতন ভাইকে নিয়ে নিজের সব চাইতে প্রিয় জায়গায় চা খেতেও গিয়েছিলাম। টুনি তো প্রথমে ভয়ে রাজিই হতে চায় নি। অনেক বলে শেষমেষ রতন ভাইকে সাথে নেয়ায় রাজি হয় টুনি।
.
রবীন্দ্রসরব আমার সব চাইতে প্রিয় জায়গা চায়ের জন্য। আমি সেই রকমের চা খোর। রবীন্দ্রসরব সব চা খোর দেরই প্রিয় জায়গা৷ চায়ের সাথে আড্ডা প্রেম তো চলেই। তবে গাড়ি থেকে নামিনি যদি কেউ দেখে ফেলে এই ভয়ে৷
.
সেই থেকে একা একা এটা সেটা দেখে সময় পার করছি। ঘুড়ে ঘুড়েই আবার অয়ন চৌধুরীর বেড রুমে চলে আসলাম। কি করা যায় ভাবতে ভাবতেই এটা সেটা নাড়ানাড়ি করতে করতে মনে পরে গেলো টুনি বলেছিলো বেডের পাশের কেবিনেটে বই রাখা আছে আমার বোর লাগলে যেনো আমি নিয়ে বই পড়ে সময় কাটাই। আমি তাই করল। কেবিনট খুলতেই সেখানে কোন বই পেলাম না তবে বইয়ের বদলে একটা ডায়েরি পেলাম। টুনি যে বলল বই আছে। ডায়েরি টা হাতে নিয়ে এপিঠ ওপিঠ করে দেখলাম কিছুক্ষণ। হালকা ধূষর রংয়ের একটা ডায়েরি। আবার রেখে দিলাম জায়গা মতো। উঠে যেতে নিয়েই খেয়াল করলাম এখানে রাখা ডায়েরি তার মানে ঐ মানুষটার ছাড়া অন্য কারো নয়। অর্থাৎ এই ডায়েরিটা হয়ত বলতে পারবে অয়ন চৌধুরী আসলে কি বা কে???
.
আমি আবার ডায়েরিটা বের করে নিলাম। ডায়েরিটা নিয়ে বিছানার এক কোণায় গাপটি মেরে বসে পরলাম।
.
ডায়েরির প্রথম পাতা উল্টাতেই কিছু সুন্দর কথা লেখা দেখতে পেলাম। এমন মানুষ এই কথাও লিখতে পারে। সেখানে লেখা ছিলো।
.
"তোমার ভালোবাসায় নিজেকে আবদ্ধ করে দিলাম।"
.
অয়ন চৌধুরীর মতো মানুষের লেখা ভালোবাসার কথা। আমি পাতা উল্টাতে থাকলাম। প্রতিটা পাতা যেনো নতুন করে বিস্ময়ে ফেলে দিচ্ছে আমাকে। আমি বিস্ময়ের সাথে পাতা উল্টাতেই থাকি। অনেকগুলো পাতা উল্টাতেই এবার থমকে গেলাম। এতোক্ষণ যার ডায়রি জুরে ভালোবাসার কথা লিখা সেই মানুষটার ডায়রির একটা পাতা এমনও হবে তা আশা করিনি। লেখাটা এমন ছিলো।
.
" এর চাইতে আমাকে মেরো ফেললেও আমি বেঁচে যেতাম। এতো কষ্ট নিয়ে জ্যান্তলাশ হয়ে তো বেঁচে থাকা লাগতো না। কেনো করলে এমন???"
.
তারপরের পাতা গুলো খালি। মনে হয় অনেক দিন ডায়রিটা ধরেও দেখেনি৷ আমি ডায়রিটা বন্ধ করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলাম ডায়রিটার দিকে। অনেক না বলা কথা আর গল্প জমে আছে এই ডায়রিটাতে। যার জীবনে এতে ভালোবাসা তাহলে সেই মানুষটার শেষ লাইন এমন কেনো??? সেই মানুষটাই বা এমন কেনো??? অনেক না বলা কথা। আমি ভাবতে থাকি তাকে দেয়া রহস্য নামটা স্বার্থ হয়েছে। মানুষটা আসলেই নিজে একটা রহস্য। আমি উঠে ডায়রিটা আবার জায়গা মতো রাখতে গেলেই ডায়রিটা আমার হাত থেকে পরে যায়। ডায়রিটা পরতেই ভেতর থেকে কিছু ছেড়া ছবির টুকরো বেরিয়ে আসে৷ আমি নিচেই বসে পরলাম। টুকরো গুলো তুলে হাতে নিলাম। ভাবলো ভাবে দেখে নিলাম আর কোন টুকরো ডায়রিতে অবশিষ্ট আছে নাকি। ডায়রিটা পাশে রেখেই। টুকরো গুলো মেলাতে শুরু করলাম। কিছু টুকরো মিলাতেই বুঝা যায় দুজন মানুষের ছবি৷ বুঝা যাচ্ছে না কারা তাও রেনু ঠিক আন্দজ করতে পারছে হয়ত অয়ন চৌধুরী ও তার ভালোবাসার মানুষে ছবি এটা। এটা ভাবতেই যেনো ছবিটা দেখার আগ্রহ কয়েক গুণ বেড়ে গেলো আমার। আমি তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে যেনে গুলিয়ে ফেলছিলাম। তখনি টুনি এসে টুকরো গুলো নিয়ে নেয় সাথে ডায়রিটাও।
.
টুনি- এটা জায়গায় মতোই থাক। আপনাকে আমি বই বের করে দিচ্ছি। এটা থাক।
.
বলেই টুনি টুকরো গুলো আবার জায়গা মতো রেখে ডায়রিটা ঐ ডয়ারে রেখে দেয়। খাটের অন্য পাশের কেবিনেট থেকে অনেক গুলো বই বের করে দিয়ে বলল।
.
টুনি- এগুলো স্যারের সব চাইতে প্রিয় বই। কত বার যে পরেছে তার হিসেব নেই। তাই এগুলো এখানে রাখা আর বাকি সব বই লাইব্রেরিতে। স্যারের বই পড়ার অনেক শখ ছিলো তাই ছোট একটা লাইব্রেরিও বানিয়ে ছিলেন। তবে এখন আর যায় না।
.
আমি আর নিজের জানার ইচ্ছাটাকে দমিয়ে রাখতে পারলাম না তাই জিজ্ঞেস করেই ফেললাম।
.
রেনু- কেনো যায় না এখন???
.
টুনি- ভালেবাসার সাথে তার সম্পর্ক নেই আর তাই যায় না।
.
কথাটা বলেই টুনি বেরিয়ে গেলো। আমি যেনো কোন এক গোলক ধাঁধাঁয় পরে গেলাম। কি এমন হয়েছে মানুষটার সাথে যে ভালোবাসার সাথে তার আর কোন সম্পর্ক নেই। এসব কথা ভাবতে ভাবতেই দিন পার করে দিলাম। কোন ভাবেই ভিতরের জানতে চাওয়াটাকে দমাতে পারছিলাম না। এই এক সমস্যা আমার কিছু একটা জানতে পারলেই সেটা সম্পূর্ণ না জানা অবদি আমার শান্তি হয় না। আর এখন তো একদমই সহ্য হচ্ছে না। ঐ মানুষটার কষ্টের কথা ভাবতেই কেমন যেনো লাগছে আমার। বুকের ভিতর হাহাকার করছে শুধু।
.
রাতে ঠিক মতো খাওয়াও হলো না আমার। ঐ কথা গুলো মাথায় ঘুড়ছে তাই খেতেও পারছি না। যতক্ষণ না সব জানতে পারবো আমার শান্তি হবে না। তাই কোন রকম ডিনার করেই বেডরুমে চলে এলাম। রুমের মাঝে পায়চারি করতে লাগলাম। কোন অজানা সংঙ্কা কাজ করছে আমার ভিতরে।
.
টুনি- এতো অস্থির না হয়ে দুধ টুকু খেয়ে নিন।
.
পিছনে ফিরতেই দেখি টুনি এক গ্লাস দুধ নিয়ে রুমে আসে। আমি যে ঠিম মতো খাইনি। কিছু একটা ভেবে অস্থির হচ্ছি তা টুনি ভালো ভাবেই খেয়াল করেছে। দুধের গ্লাসটা রাখতে রাখতেই টুনি আবার বলে উঠল।
.
টুনি- টুনি তার ভালোবাসার মানুষগুলোর যত্ন করতে জানে। মায়ের পরে তো বাবার মতো এই ভাইটাকেই পেয়েছি আর এখন সাথে আপনি যুক্ত হলেন।
.
আমি অবাক হয়ে টুনির দিকে তাকিয়ে রইলাম। মেয়ে কি সুন্দর অবলীলায় বলে দিলো আমি ওর ভালোবাসার মানুষ। টুনি চলে যেতে নিলেই। আমি ওর হাত ধরে বসলাম।
.
রেনু- টুনি
.
টুনি- জানতে চান তো কি হয়েছিলো ঐ মানুষটার সাথে।
.
রেনু- হুমম
.
টুনি- দুধটা শেষ করেন আমি আসছি।
.
আসছি বলে টুনি চলে গেলো। অনেকটা সময় পর দুকাপ চা নিয়ে আসলো৷ আমার সামনে চা দিয়ে টুনি গিয়ে আমলিরার একসাইড খুলে কিছু একটা বের করছে। আমার সামনে এসে আমার হাতে একটা এনভেলপ দিলো। আমি এনভেলপটা খুলতেই ভেতর থেকে একটা ছবি বেরিয়ে এলো। অয়ন চৌধুরীর ছবি তার সাথে হাসিমুখে একজন তাকে দেখছে অপলক।
.
টুনি- এই ছবিটার একটা ছেড়া টুকরো কপিই তখন আপনি মেলাতে বসে ছিলেন।
.
আমার বুঝতে বাকি রইল না। এটাই সেই ছবিটা। এই মানুষটাই অয়ন চৌধুরীর ভালোবাসার মানুষ। আমি টুনির দিকে তাকলাম। টুনি আমার জিজ্ঞাসু চাহনি দেখে বলল।
.
টুনি- অয়ন চৌধুরীর ভালোবাসা সোহা।
.
.
.
চলবে......

 
 
 
 
 
0 মন্তব্যসমূহ
গল্প গুলো কেমন লাগলো, আপনার মতামত জানাতে কমেন্ট করুন।