আমার পিচ্চি বউ পর্ব - ৬ । হৃদয় ছোঁয়া ভালবাসার গল্প।


আমার পিচ্চি বউ
পর্ব- ৬ শেষ


আমার আব্বুর মুখের দিকে চেয়ে আব্বুর
কথায়, আবার বিয়ে করতে রাজি হলাম।
এবার বেশ ঘটা করেই আমার বিয়ের
আয়োজন করা হয়েছে। প্রথমবার তো তেমন
কোনো আয়োজনি হয়নি। হবে কিভাবে?
আমিতো বিয়েতে রাজিই ছিলামনা। আমি
আগের মতো এবারো মেয়ে দেখিনি, আমি
দেখতে চায়নি।
আমি আমার পিচ্চি বউ কে যে এখনো খুব
মিস করি। কে যানে ও কেমন আছে? আমার
বিশ্বাসছিল ও ফিরে আসবে কিন্ত এ
দুবছরেও ও ফিরে আসেনি।
তাই অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও আমি এই
বিয়েটা করার জন্য রাজি হলাম। খুব
ধুমধামের সাথেই আমার বিয়েটা হলো। শুধু
নিয়ম মানার জন্যই আমি 'বাসর' ঘরে
গেলাম। এবারো আমার পছন্দের ফুল দিয়ে
বাসরঘর সাজানো হয়েছে। কিন্তু এবার
ভুলের গন্ধে মন সুবাসিত হয়নি। আমার
খাটের উপর দেখলাম মেয়েটি বিরাট এক
ঘোমটা টেনে বসে আছে। ঘোমটা তুলে
মেয়েটিকে দেখার বিন্দুমাত্র আগ্রহ
আমার ছিলনা। মেয়েটিকে উদ্দেশ্য করে
বললাম, শুধু মাত্র নিয়ম মানার জন্য আমি এ
ঘরে ঢুকেছি। তাছাড়া আরেকটা কারণ ও
আছে। সেটা হচ্ছে, আমার বাবা যদি জানে
আমি বউ রেখে ঘরের বাহিরে আছি তাহলে
খুব কষ্ট পাবে। আমি চাইনা বাবা আমার
জন্য কষ্টপাক। আর আমি কখনো আপনাকে
স্পর্শ করতে পারব না। তাছাড়া স্বামী
হিসাবে সব নিয়োমই পালন করব। যেমন ধরুন,
শাড়ি থেকে শুরু করে যা, যা লাগে সবিই
আমি আপনাকে দিবো সুধু আমার
ভালোবাসাটা ছাড়া। এক নিশ্বাসে কথা
গুলো বলেই থেমে গেলাম। ঘোমটার আড়াল
থেকেই মেয়েটি বলল, আমি আর কতক্ষণ
ঘোমটা টেনে বসে থাকবো? আপনি কি
ঘোমটাটা উঠিয়ে, আমায় উদ্ধার করবেন?
বিয়ের প্রথম রাতে বউয়ের মুখে এমন কথা
শুনে যে কেউ ই ঘাবড়ে যাবে। কিন্তু আমি
ঘাবড়ালামনা। কন্ঠটা খুব পরিচিত
লাগলো। মনে হলো কতদিনের চেনা এই
কণ্ঠস্বর। আবার মন কে স্থির করে বললাম।
আমি যার কথা ভাবছি। যাকে মনে করছি।
সেতো রাফির সাথে সংসার নিয়ে
ব্যাস্ত। হয়ত এটা আমার শোনার ভুল,
তাছাড়া এক জনের কন্ঠ আরেক জনের মতো
হতেই পাড়ে। এইতো আমি যখন অনার্স ২য়
বর্ষে পড়ি তখন আমার এক ক্লাস মেইট ছিল
যে শাহ্রুখ খানের মতো কন্ঠ করতে
পারতো। তাই বলে কি সে আসলেই শাহ্রুখ
খান?
তখন আবার মেয়েটি বলল, কি আগের বউ কে
কি আজও ভুলতে পারেননি? তবে আমায়
বিয়ে করিছিলেন কেন? এবার আমার
ধৈর্যের বাধ ভেঙে গেল। আমি মেয়েটিকে
দেখার জন্য ব্যাকুল হয়েগেলাম। কেননা,
আমার যে আগে বিয়ে হয়েছিল সেটা এই
মেয়ের জানার কথা না। তাছাড়া আব্বুও
আমাকে বলেছে যে এই মেয়ে তোমার
অতিতের বিয়ে সম্পর্কে জানেনা। আসলে
সেবার আমার বিয়েটা ধুমধাম করে অনুষ্ঠিত
হয়নি। হাতে গোনা গুটি কয়েকজন ছাড়া
কেউ জানেওনা। তাহলে মেয়েটিরো
জানার কথা নয়। সবকিছু কেমন জেনো
গোলোক ধাঁধাঁর মতো মনে হচ্ছে। আমি
মেয়েটির ঘোমটা ওঠাতেই একটা
২৪০ভোল্টের শক খেলাম। আরেহ! এটাতো
অবনী সেই আমার পিচ্চি বউটা। কিন্তু এটা
কিভাবে সম্ভব?
কি মিঃ জিসান অবাক লাগছে?
ভাবছেনতো এটা কিভাবে সম্ভব?
-হুম।
:তাহলে শুনুন।
আমি যখন আপনাকে ছেড়ে রাফির কাছে
যাচ্ছিলাম তখন খুব খারাপ লাগছিল। হয়ত
আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছিলাম মনের
অজান্তে। তারপরেও মন কে শক্ত করে
নিজের ভালোবাসাকে ফিরেপেতে সব
পিছুটান পেড়িয়ে রাফির কাছেই গেলাম।
যেয়ে রাফিকে বললাম, আমি সব ছেড়েছুড়ে
তোমার কাছে চলে এসেছি। আমার আর
কোনো পিছুটান নেই চলনা। আবার দুজনে
সব কিছু নতুন করে শুরু করি।
- চাইলেই কি সব নতুন করে শুরু করা যায়?
: তুমি আমি চাইলেই সেটা সম্ভব রাফি।
- হুম, সম্ভব। তবে একটা কথা জিজ্ঞেস
করবো? রাগ করবে নাতো?
:না বল,
-বিয়ের পর কেমন এঞ্জয় করলা স্বামির
সাথে?
-মানে?
:এতো সতী সাবিত্রী সাজার চেষ্টা
করোনা। এই বর্তমান যুগে বিয়ের পর
স্বামির সাথে কিছু করবানা। আর স্বামী
সেটা মানবে? আমাকে কি খুব বোকা মনে
হয় তোমার?
-নাহ্, একদম না। তবে আমার আফসোস হচ্ছে
তোমার মতো নিচু মনের মানুষের জন্য,
আমার অতো ভালো স্বামী কে ছেড়ে
আসলাম। ছিঃ রাফি ছিঃ।
এরপর আর আমি একমুহুর্তও দেড়ি না করে
সোজা বাবার কাছে চলে আসি।
বাবাকে সব খুলে বলি, বাবা আপনার কাছে
ফিরে আসতে বলে। কিন্তু আমি পারিনি।
নিজেকে যে খুব ছোট করে ফেলেছি। কোন
মুখ নিয়ে আপনার কাছে ফিরে আসতাম।
এরপর বাবার মুখে শুনি আপনার আব্বুর সাথে
আর আমার বাবার সাথে দেখা হয় বাজারে,
তারপর আমার বাবা আমার সব কথা আপনার
আব্বুকে বললে আপনার আব্বু আর এক মুহুর্ত
দেরী না করে আমার কাছে ছুটে চলে
আসে। আর আমাকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে বলে,
পাগলী বাবাকে এতো কষ্ট দিতে পারলি?
আমি তখন কোনো উত্তর দিতে পারিনি।
শুধু চোখের জল গড়িয়ে গালে এসে পড়েছিল।
হয়ত আনন্দে। এরপর দুজন মিলে এই প্লান
করে আপনার সাথে আমার আবারো বিয়ে
ঠিক করে। গতবার ধুমধাম হয়নি তাই এবার
বিয়ের আয়োজনের কোনো কমতি রাখেনি।
তারমানে তুমি সব জানতে?
-হুম।
দুই 'টাক' মিলে আবার প্লান করে আমাদের
বিয়ে দিয়েছে এটা তুমি জানতে?
-কি বললেন!
তুমি আমাকে গতবার বাসর ঘরে যা
বলেছিলে। এবার আমিও তাই বললাম। কান
ধরো।
-মানে।
মানে কান ধরে উঠাবসা করবে?
-শোধ নিচ্ছেন।
হুম।
-কিন্তু কেন? আমিতো দোষ করিনি।
আপ্নিতো করে ছিলেন।
দোষ করোনি? আমায় যে এতোদিন কষ্ট
দিচ্ছ সেটা দোষ না? এর শাস্তি এখন ভোগ
করো।
-আমি কিন্তু টাক শশুর আব্বাকে ডাকবো।
যখন অবনী ডাকতে গেল, আর আমি ওর
মুখচেপে ধরলাম। এবার ও আর কামড় দেয়নি।
একটু বড় হয়েছে তো তাই বুঝেছে হয়ত। ওর মুখ
চেপে ধরে ওকে বুকের সাথে লেপ্টে জড়িয়ে
নিলাম। তারপর যা হওয়ার হলো আপনাদের
জেনে কাজ নেই।

নতুন গল্প পড়ার জন্য তৈরি থাকুন।
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন।

(সমাপ্ত)

সিনিয়র বউ পর্ব-১


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ