পিচ্চি বউ।
পর্ব- ১২
লেখকঃ Golpobook.tk
আমি দরজাটা লাগিয়ে বিছানায় শুয়ে, বালিশে মুখটা লাগিয়ে কাঁদতে লাগলাম। হঠাৎ মনে পড়ল, বাদশার ডাইরিটার কথা কি লিখেছেন বাদশাহ্ । টেবিলের উপর থেকে ডাইরিটা তুলে বুকে জড়িয়ে নিলাম।
.
ডাইরিটা খুলতেই চমকে গেলাম,
.
"আমার এই হৃদয়ে লিখিলাম তোমারি নাম"
ডাইরির পরের পাতা উল্টাতেই,
.
ওগো হৃদয়রাঙিনী,
জানিনা কিভাবে শুরু করবো, আমি যে অনেক বড় অপরাধী! তোমার অবুঝ ভালবাসাকে অবহেলা করেছি। জানো যেদিন তোমাকে হারিয়ে ফেলেছি, সেদিন বুঝেছি তুমি কতটা জুড়ে আমার জীবনে ছিল।
জানো, প্রতিদিন তোমার জন্য কেঁদেছি। মাঝরাতে উঠে আল্লাহর কাছে চাইতাম যেন, তোমাকে আমার করে দেয় ।
প্রতিরাতে তোমার ছবিটা বুকে নিয়ে ঘুমাতাম।
তোমার ছবি বুকে নিয়ে কাঁদতাম। জানো, মানুষ মারা গেলে নাকি তারা হয়ে যায়। তাই প্রতি সন্ধায় আকাশের তারাদের সাথে কথা বলতাম। বলতাম, যেন আমার হৃদয়রাঙিনীকে তারা যেন কষ্ট না দেয়। রাতের আকাশের সব চেয়ে উজ্জল তারাকে তুমি মনে করে, কাঁদতাম আর বলতাম, অভিমান ভেঙে এসো , জড়িয়ে নাও না আমাকে আমি যে আর পারছি না তোমার বিরহে। এসব বলে কাঁদতাম। কিন্তু তুমি এতটাই আমার প্রতি অভিমান করেছিলে, যার জন্য আমার সাথে কথা বলো না, শুধু করুণ দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে থাকতে। সত্যি কি তুমি আমাকে ক্ষমা করবে না? জানো খুব ইচ্ছা করে তোমাকে এই মরুরবুকে জড়িয়ে নিয়ে, শান্ত করতে আমারি প্রাণ।
.
জানো আজ একটা বাচ্চা মেয়েকে দেখে তোমার কথা বড্ড বেশি মনে পড়ছে। বাচ্চাটা দেখতে ঠিক তোমার মতই। আমি এতটাই হতভাগী নিজের বাচ্চাকে নিজের হাতে নষ্ট করেছি। জানো এখনো সেই রাতের কথাগুলো ভুলতে পারি না। তোমাকে দেওয়া প্রতিটা চড়ের আঘাত আমার কলিজাতে লেগেছে!
.
জানো পরের দিন যখন বাচ্চাটাকে রক্ত দিলাম, সেদিন মনে হয়েছে, আমার খুব কাছের কাউকে রক্ত দিচ্ছি।
.
বাচ্চাটার জন্মদিনে বাচ্চাটাকে বুকে জড়িয়ে নিতেই, তোমার শরীরের গন্ধ পেলাম। কিন্তু যখনি সিড়িতে তোমার মতোই কাউকে দেখলাম, তখন সত্যি ভেবে নিয়েছিলাম, আল্লাহ্ আমার ডাক শুনেছে। আমি আনন্দে আত্মহারা হয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু যখন শুনেছিলাম, তুমি মালা নও, আমাকে চিনো না, তখন আমার কলিজাটা ফেঁটে যাচ্ছিলো। যখন রফিক সাহেব এসে তোমার হাত ধরল, আমার কাছে তখন মনে হয়েছিল, কেউ যেন আমার কলিজাটা ধুমড়ে মুচড়ে ছিঁড়ে নিয়ে যাচ্ছে!
.
জানো তুমি নেই যেনেও নিজের অজান্তে পাগলামী করেছি। আর বাসায় এসে কেঁদে বুক ভাসিয়েছি! পরের দিন ঠিক করলাম, তোমার জন্য লেখা ডাইরিটা মরিয়ম আপুকে দিয়ে তোমার কাছেই চলে আসবো,।
.
আমি যে আর পারছিনা, মৃত্যুর পথ বেছে নেওয়া ছাড়া আমার আর কোন উপায় নেই! তোমাকে ছাড়া যে এখন আমার নিঃশ্বাস নিতেও কষ্ট হয়, কষ্টটা আরো বেশি হয় যখন তোমারি মতো মরিয়ম মেয়েটা অন্য একটা ছেলের হাত ধরে আমারি সামনে দিয়ে হেঁটে যায়। জানো তখন বড্ড বেশি তোমার কথা মনে পড়ে। কি করবো, আমি তোমাকে ছাড়া আর যে বাঁচতে পারছি না। তোমাকে নিয়ে লেখা শেষ অবলম্বনটা তোমাকে মনে করে মরিয়ম আপুকেই দিয়ে গেলাম। জানো খুব কষ্ট হচ্ছে লেখাগুলো লিখতে।
.
ডাইরিটা পড়তেই চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পরলো। আজকে একটা মিথ্যার জন্যই বাদশাহ্ মৃত্যুর কিনারায়। খুব কষ্ট হচ্ছে মালার, বাদশার মুখটা বার বার মালার সামনে ভেসে ওঠছে। মালার কানে বার বার বাজছে, বাদশার শেষ কথাগুলো।
.
হঠাৎ, বাহিরে কিছু ভাঙার শব্দ পেল!
.
মালা রুমের বাহিরে এসে দেখে,
ফাতেমা কাঁদছে, খাবারের প্লেট ফেলে দিয়েছে।
.
মা রাগ করে না, খেয়ে নাও!
.
আমাকে মা বলবে না, আমাকে বাবার কাছে নিয়ে যাও! আর তুমি আমার বাবাকে কষ্ট দিয়েছো, আমার সাথে কথা বলবে না।
.
প্লিজ ফাতেমা মা আমার, তোমার বাবার কিছুই হবে না, প্লিজ কান্না করো না! খেয়ে নাও। ( কান্না চেপে (মালা)
.
আমাকে বাবার কাছে নিয়ে যাও!
বাবাকে না দেখে খাবো না।
.
হঠাৎ, সবুজ কে আসতে দেখেই মালা ভাইয়া বলে কেদে দিয়ে বলল" ভাইয়া বাদশাহ্ বাঁচবেনা, বাদশাকে ছাড়া আমিও যে বাঁচবো না।
.
সবুজ মালাকে বুকে নিয়ে বলল, কান্না করিস না বোন, আল্লাহ তায়ালায় সব ঠিক করে দিবেন।
.
তোর কান্না যে দেখতে পারি না। মা - বাবাকে তো ছোটবেলায় হারিয়েছি। মরিয়মকেও হারিয়ে ফেলেছি। তুকে খুন করার জন্য, সাথী নামের মেয়েটা কন্টাক্ট করেছিল। তোকে খুন করতে এসে তোর গলার লকেট দেখেই চিনে ফেলি তুই আমার ছোটবেলায় হারিয়ে যাওয়া বোন মালা । কিন্তু সেসময়, মরিয়ম গাড়ির নিচে পিস্ট হতে দেখি। তোর চেহেরা মরিয়মের মতোই ছিল, তাই যখন দেখলাম, মরিয়ম রাস্তায় পাশে পড়ে আছে, দৌঁড়ে বুকে টেনে নেই! সন্ত্রাসী ছিলাম , মানুষের রক্ত দেখলে হাসি পাইতো, কিন্তু যখন নিজের বোনটার রক্ত আমার শার্ট ভেজে যাচ্ছিল, তখন বুঝেছি, আপন মানুষদের রক্ত শুধু তাঁদের শরীর থেকে ঝড়ে না, অাপন মানুষটির কলিজা থেকেও ঝড়ে। ছোট বোন মরিয়মকে হারিয়ে আর তোকে পেয়ে, অন্ধকার রাস্তা থেকে সরে আসি।
.
তারপর বাদশার বাবার প্ল্যান অনুযায়ী, মরিয়মকে মালা বানিয়ে বাদশার বাড়িতে পাঠাই,
.
আয়েশার বাবা রফিক ভাইয়ার সাথে সব প্ল্যান করি। কিন্তু এ জন্য যে বাদশাহ্ আজকে মৃত্যুর মুখামুখি হবে, তা জানলে কখনো, এতটা মিথ্যার আশ্রয় নিতাম না!
.
হঠাৎ ফাতেমা দৌড়ে এসে, মালাকে জড়িয়ে ধরে বলল" মম চলো না বাবার এর কাছে, আমার সাথে বাবা কথা বলবে, তোমাদের সবার সাথে রাগ করে থাকলেও আমার সাথে বাবা রাগ করে থাকতে পারবে না। বাবা জানে আমার সাথে, অভিমান করলে, তাকে কান ধরে উঠবস করতে হবে!
.
মালাকে কিছু বলতে দেওয়ার আগেই ফাতেমা মালাকে জোর করে গাড়িতে তুলে নিয়ে গাড়ি চালাতে বলল! মালা ফাতেমাকে নিয়ে হসপিটালে আসতেই, বাদশার বাবার সাথে দেখা হয়।
.
মা'রে কেমন আছিস!
.
বাবা আমি সত্যি অনেক বড় অপরাধী হয়ে গেলাম। নিজের স্বামীকে কোন স্ত্রী এতটা কষ্ট দিতো না। বাবা সত্যি বাদশাকে ছাড়া বাঁচবো না।
অন্যদিকে ফাতেমা তার বাবার রুমে গিয়েই বলতে লাগল" ও বাবা, বাবা কেমন আছো তুমি?
কথা বলবে না আমার সাথে বাবা? জানো বাবা তোমাকে মম কষ্ট দিয়েছে বলে, মমের সাথে আড়ি দিয়েছি! ঠিক করেছি না বাবা। বাবা তুমি আমাকে বুকে নিবে না, আমাকে জড়িয়ে ধরে আম্মু ডাকবে না!
.
হঠাৎ একটা নার্স এসে বললো" মামনী এখানে কথা বলা যাবে না!
.
আপনি চুপ করেন তো, দেখছেন না? আমি আমার বাবার সাথে কথা বলছি! কথা বলবেন না, বাবা রাগ করবে ।
ও বাবা তুমি জানো? মা তোমার জন্য কতো কান্না করে। তুমাকে আমি ছোটবেলা থেকে দেখেছি, মায়ের সাথে একটি ছবিতে। বাবা স্কুলের সব মেয়েরা তাঁর বাবার সাথে ঘুরে বেড়ায়। তাঁদের বাবা, চকলেট আইসক্রিম কিনে দেয়, আমি এসব কিচ্ছু চাই না। তুমি কথা বলো বাবা তাহলেই হবে। কথা বলছো না কেন? দেখছো না, তোমার ফাকেমা কাঁদছে। প্লিজ বাবা কথা বলো, আর চুপ করে থেকো না। আমাকে বুকে নাও, তোমার বুকে যেতে খুব খুব ইচ্ছে করছে। ও বাবা এত্তো অভিমান কিসের তোমার। মা কাঁদছে বাবা, বাবা মা তোমার জন্য রাতে কান্না করে। আমাকে বুকে নিয়ে তোমার নাম বলে ঘুমের ঘরেও কান্না করে। তুমি দেখো, দাদুভাই কাঁদছে। কতো কষ্ট হচ্ছে বাবা,আমার বুকের মাঝে ব্যাথা করছে বাবা। কথা গুলো বলছে আর কাঁদছে ফাতেমা
.
এদিকে ফাতেমার কান্না দেখে, সবাই কাঁদছে। মালার কাছে মনে হচ্ছে, তাঁর কলিজাটা ফেঁটে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ পর বাদশাহ্ কেমন জানি করতে লাগলো। ডাক্তার এসে দেখে বাদশাহ্ কেমন যেন নড়াচাড়া বন্ধ করে দিল।
.
রুম থেকে বের হয়ে ডাক্তার চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে বলল, সরি!
" একথা শুনেই মালা হসপিটালে ফ্লরে পড়ে গেল।
চলবে"""""""""""
বিঃদ্রঃ আগামী পর্বে শেষ হবে ইনশা- আল্লাহ্!
0 মন্তব্যসমূহ
গল্প গুলো কেমন লাগলো, আপনার মতামত জানাতে কমেন্ট করুন।