পতিতা মেয়ে
পর্ব- ৭+৮
ভালোবাসি রে তোকে,খুব ভালবাসি?কেন বুঝিস না তুই?তোকে যে অনেক বেশিই ভালবাসি,সব সময় এই বুকে আগলে রাখব তোকে,খুব ভালো বাসি,খুব বেশিই ভালোবাসি,"
আনিকাকে জড়িয়ে ধরেই আকাশের দিকে তাকিয়ে চোখের নোনা জল ফেলছিলাম৷আর কথাগুলো বলছিলাম
.
ঠিক তখনই আনিকা বলে উঠল
,
--তুমি আমাকে যতই ভালোবাসো না কেন?আমি তোমাকে ভালোবাসতে পারব না,তোমার জীবনে আমি নিজেকে চিরদিনের জন্য জড়াতে পারব না
.
কথাটা বলেই আনিকা নিজেকে ছাড়িয়ে নিল৷
তখন ঝাপসা চোখে ওর দিকে তাকালাম৷
খুব বেশিই আবাক হয়ে গেলাম ওর কথা শুনে,কিন্তু কিছুই বলতে পারছিনা৷আনিকাও আমার দিকে কেমন করে তাকিয়ে আছে৷
চাঁদের আলোতে শুধু ওর চোখ দুটি চকচক করছে৷
আনিকাকে ঠিক তখনই বললাম
,
--কেন আনিকা?আমি কি তোমার যোগ্য না?
নাকি আমি খারাপ বলে,সেই যোগ্যতা হারিয়ে ফেলছি?বিশ্বাস করো আনিকা আমি একদম ভালো হয়ে যাবো,কখনই অন্যায় কাজ করব না,
.
--দেখো আবিদ,তুমি অনেক ভালো ছেলে,সেটা আমি জানি,কিন্তু আমি তোমাকে আমার জীবনে মেনে নিতে পারব না.....
.
ঠিক তখনই বুকটা কষ্টে ফেটে যাচ্ছিল৷কেন আনিকা এই কথা বলছে?আমি কি তার যোগ্য না?নাকি অন্য কোনো কারন আছে?
.
--আচ্ছা আনিকা,আমাকে কি তোমার মেনে নিতে কোনো কারন আছে?নাকি তোমার লাইফে কেউ আছে?
.
--হুম আছে
.
কথাটা শুনেই বুকটা ফেটে গেল৷বুকের গহীনে ঝড়,শুরু হয়ে গেল৷
ভাবতেই অবাক লাগে!এই পৃথিবীতে আমি কত অসহায়.
.
--আনিকা ঠিক আছে,তাহলে আমি আর তোমাকে এই বিষয় নিয়ে কখনই আর জোড় করব না,
আসলে আমি বূঝতেই পারিনি,আমার কপালটা এত পোড়া,দেখই না,একটা মেয়েকে ভালোবেসে যখন সব মেয়েকেই ঘৃনা করতাম,ঠিক তখনই আবার তোমাকে ভালোবেসে ফেলি কিন্তু বুঝতেই পারিনি,আমার ভালোবাসা স্বার্থক না
.
--(অবাক চোখেই তাকিয়ে আছে)
.
--জানো আনিকা?ছোটবেলায় খুব দুষ্টু ছিলাম আমি,বাবা মা থাকতে ,তাদের কাছে যা চাইতাম তারা যেভাবেই হোক,সেটাই আমাকে এনে দিত,আর না দেয়া পর্যন্ত,অনেক জেদ ধরতাম৷বয়স যখন মাত্র ১২বছর ঠিক তখনই একদিন একটা এক্সিডেন্টে বাবা মা মারা যায়,
আর হারিয়ে যায় বাবা মা নামক ছায়াটা৷ সেদিন অনেক কান্না করেছিলাম৷এর পর থেকে কেউ কখনই আমার চাওয়া কোনো জিনিস আমাকে এনে দেয়নি৷
এরপর আমার চাচাও আমার সকল সম্পত্তি আত্মসাৎ করে ফেলে,রাস্তায় বের করে দিল আমাকে,হয়ে গেলাম রাস্তার ছেলে,আস্তে আস্তে বড় হতে লাগলাম৷কাজ করে পড়াশোনা করতাম৷সারারাত কাজ করে দিনে স্কুলে যেতাম৷
আস্তে আস্তে যখন ভার্সিটি লাইফে চলে গেলাম,তখন ইভা নামের একটা মেয়েকে অনেক পছন্দ হয়,আর মেয়েটা অনেক বেশিই সুন্দর ছিল৷
আস্তে আস্তে ফ্রেন্ডশীপ আর তারপর রিলেশন৷
হঠাৎই একদিন দেখলাম ও আরেকটা ছেলের সাথে ঘুরছে৷আর আমি জিজ্ঞেস করার করনে ও বলেছিল আমার মত গরীব,অযোগ্য ছেলের সাথে নাকি ওর মানায় না,টাকাই ওর কাছে সব৷সেদিন ও আমাকে অনেক অপমান করে,নিজে অনেক সূন্দর বলে অনেক অহংকার করেছিল৷
সেদিন নিজেকে কোনোভাবেই ঠিক রাখতে পারিনি৷
টাকা কিভাবে আয় করতে পারি,সেটাই ভাবা শুরু করলাম,এরপরই ঘটনাক্রমে আমার চাচার কাছ থেকে আমি আমার সম্পত্তি আদায় করে নিলাম৷বাবার সম্পদ পেয়ে হয়ে গেলাম কোটিপতি৷
.
কোটিপতি হবার পরই সূন্দরি মেয়েদেরকে অনেক ঘৃনা করি,কারন ইভার সেই চরিত্রটা আমার সামনে ভেসে আছে৷
আর সব চাইতে মজার ঘটনা হলো,আমার লাইফে টাকার বিনিময়ে রাত কাটানো প্রথম মেয়েও ওই ইভাই৷পরে টাকার জন্য আমার সাথে রাত কাটায় সে৷
দিনে ভদ্রবেশধারী হলেও রাতে ওর মত খারাপ আর কেউ ছিল না৷
সেদিন থেকেই সুন্দরী মেয়েদেরকে হেট করতাম৷কারন তাদের সৌন্দয্যের ভিতর যে কতটা কালো থাকে,সেটা ইভাকে না দেখলে বুঝতেই পারতাম না,
যাই হোক এর পর আর কোনো মেয়েকে কখনই ভালোবাসিনি,কারন তখন আমি নিজেই খারাপ জগতের বাসিন্দা,
.
এরপর তোমার সাথে পরিচয়৷আর তোমার সব কিছু জেনেও আবারও নিজেকে পরিবর্তন করে ফেলি৷এরপরই তোমাকে খূব ভালোবেসেছি!বিশ্বাস করো আনিকা,তোমাকে খূব ভালোবাসি৷প্লীজ আমাকে একা করে দিও না,আর তুমি তো আমার বিয়ে করা বউ ও,তাই না?
.
বলেই চোখ দিয়ে পানি বের করতে লাগলাম৷কিন্তু সেটা হয়ত আনিকার কাছে কিছুই না৷ওর মনে আমার জন্য একটুও দয়া হলো না৷
ও তখনই বলে উঠল
,
--আবিদ!আমি তোমার সব কিছু বুঝতে পারছি,
কিন্তু তারপরও আমি তোমাকে মেনে নিতে পরব না,তবে দোয়া করি,তুমি যেন ভালো একটা মেয়েকে বউ করতে পারো,আর তুমি এখন অনেক ভালো একটা ছেলে,তোমাকে যেকেউ পছন্দ করবে৷আর আমার মত খারাপ একটা মেয়েকে নিয়ে বেশি কিছু ভেবো না
আর ভাবলে ভুল করবে,আর একটা কথা মনে রেখো,আমি তোমার দুমাসের জন্য বউ হয়েছি,সারাজীবনের জন্য না৷আর সেই দুমাস পার হতে আর মাত্র ৭টা দিন বাকি,এর পরই আমি চলে যাবো,
.
একটানা কথাগুলো বলেই আনিকা ছাদ থেকে চলে গেল৷আর রেখে গেল আমাকে৷
নিজেকে তখন অনেক বড় অসহায় লাগছিল৷
মনে হচ্ছে এই পৃথিবীতে আমার চেয়ে বড় অসহায় আর কেউ নেই৷
.
চোখদুটো বার বারই ঝাপসা হয়ে যাচ্ছিল৷
ভাবতেই অবাক লাগে,আমার জীবনে ভালোবাসা বলতে কোনো জিনিস নেই৷যাকে যাকে ভালোবাসলাম৷তারাই দূরে ঠেলে দিল আমায়৷
.
অনেকক্ষন ছাদে একা একা দাড়িয়ে চোখের জল ফেলেছিলাম৷
চোখ দূটো অনেক ফুলে গেছে মনে হচ্ছে৷অনেক ঘূম পাচ্ছে৷তাই রুমে চলে গেলাম৷
গিয়ে দেখলাম আনিকা নিজের মত করে ঘুমিয়ে আছে৷আনিকাকে আর জাগালাম না৷
চুপ করে খাটে শুতে গেলাম কিন্তু শুয়ে থাকতে পারলাম না৷আজ কেন জানি ওর সাথে শুয়ে থাকতে খূব বেশিই কষ্ট হচ্ছে৷বার বার মনে হচ্ছে আর তো মাত্র কয়েকটা দিন৷এর পর তো আমাকে একাই থাকতে হবে৷
খাট থেকে নেমে পড়লাম৷তারপর সোফায় গিয়ে শুয়ে পড়লাম৷কখন ঘুমিয়ে পড়ছি সেটা হয়ত মনে নেই৷
তবে যখন ঘুমটা ভেঙে গেছে তখন ঠিক ঘড়িতে রাত ৩টা বেজে ৩৯মিনিট
.
একদমই ঘূম আসছে না৷ঘুমহীনভাবেই রাতটা কেটে গেল৷
সকাল বেলা আনিকাকে হসপিটালে রেখে অফিসে চলে গেলাম৷
অফিস থেকে ফিরে আবার হসপিটালে গেলাম কারন আজকে আনিকার আম্মুকে বাসায় নেওয়ার কথা৷
হসপিটালে গিয়ে ওদেরকে পেলাম না৷এর আগেই ওরা ওখান থেকে বের হয়ে গেছে৷
.
আনিকাকে ফোন দিলাম
.
--আনিকা কোথায় আছো?
.
--বাসায়,কেন?(ওপাশ)
.
--না,তেমন কিছুই না,তোমার আম্মুকে বাসায় নিয়ৈ গেছো?
.
--হুম
.
--হুম খুব ভালো,তবে আমাকে কি সাথে নিয়ে গেলে বা আমাকে বললে কি আমি সাথে থাকতাম না?
,
--আসলে বুঝতে পারিনি সরি
.
--হুম৷আচ্ছা আমি বাসায় আসতেছি
.
বলেই ফোনটা কেটে দিলাম৷
.
বাসায় চলে গেলাম৷ওদের সাথে অনেক মজা করলাম৷
এখন ওর থেকে দুরত্ব বজায় রেখেই চলতে হয়৷কারন ওর আম্মু জানেনা আমরা বিয়ে করেছি৷ওনি জানে ও আর আমি বন্ধু৷
ওর আম্মু,আমি আর আনিকা তিনজনে মিলে খুব আনন্দেই দিন কাটাচ্ছিলাম৷সবার মূখেই হাসি ছিল৷আনিকার আম্মু মন থেকে আমাকে অনেক পছন্দ করত৷আর ওনি আমাকে কয়েকবার বলেছিল,আনিকা আমি বিয়ে করে সবসময়ের জন্য রেখে দিতে৷
কিন্তু বারবারই তখন আনিকা অমত করে৷
.
হঠাৎই আনিকা আমাকে বলল
.
--আবিদ কিছু কথা বলার ছিল
.
--হুম বলো আনিকা
.
--একটু ছাদে আসো
.
--হুম
.
আনিকা তখন ছাদে চলে গেল৷
আমিও তার পিছু পিছু গুটিগুটি পা বাড়াচ্ছিলাম আর ভাবছিলাম,আনিকা কি বলতে চাচ্ছে আমায়?সে চলে যাবে না তো?
ভাবতেই কেমন কষ্ট লাগে৷কিন্তূ কিছু কষ্ট দৃষ্টির আড়ালেই থাকে৷
ছাদে গেলাম৷গিয়েই বললাম
.
--বলো আনিকা কি বলতে চাও?
,
--আবিদ,তুমি আমার অনেক উপকার করেছো,আমার মায়ের জীবন বাঁচাতেও অনেক সাহায্য করেছো৷আসলে তোমার উপকারের ঋন হয়ত কখনই শেষ করতে পারব না
.
--হঠাৎ এগুলো বলছো যে
,
--আসলে আজকের দিন গড়িয়ে রাত পার হলেই তো ,তোমার দুমাস শেষ৷আর তারপরই তো আমি চলে যাবো,আর কাল সকালেই আমি মাকে নিয়ে চলে যাবো(অন্যদিকে তাকিয়ে)
.
--(অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছি)
,
--কি হলো কীছু বলছো না যে?
.
--আসলে আমার কিছুই বলার নেই আনিকা,তবে দিনগুলি যে এত তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেছে,সেটা খেয়ালই করিনি৷তবে তোমাকে আমি আর আটকাবো না৷যদি কখনও মনে হয় আমার কাছে তূমি ভালো থাকবে,তাহলে চলে এসো,আমার মনের দরজা তোমার জন্য সব সময় খোলা থাকবে৷
.
--ধন্যবাদ
.
--তবে আমার এক অনুরোধ রাখবে আনিকা?
.
--কি অনুরোধ?
.
--কাল যখন চলে যাবে,তোমাদেরকে আমি ড্রাইব করে,তোমার বাসায় পৌছে দিব৷
তবে সমস্যা নাই,যদি প্রবলেম থাকে,তাহলে যাবো না
,
তখন আনিকা আমার দিকে কেমন অবাক চোখে তাকিয়ে রইল৷আর মাথা নাড়ালো৷
.
সেদিন রাতে আনিকা সহ সবার সাথে অনেক বেশিই মজা করেছিলাম৷তারপর আনিকা ওর আম্মুর সাথেই ঘুমাতে চলে গেল৷আমিও চলে গেলাম ছাদে৷
সারারাত না ঘূমিয়ে একটার পর একটা সিগারেট টানতে লাগলাম৷মনের কষ্টগুলোকে সিগারেটের ধোয়ার সাথে মিশিয়ে দিচ্ছিলাম৷খুব কষ্ট লাগছিল,কারন আনিকাকে যে এতটা ভালোবেসে ফেলব বুঝতেই পারিনি৷আর ওর কি দোষ?ও নিজেও তো অন্য আরেকজনকে ভালোবাসে৷আমি যেমন আনিকাকে কাছে পেতে চাই ঠিক তেমন ও নিজেও তো ওর ভালোবাসার মানুষকে কাছে পেতে চায়৷
এই কথাগুলো বলেই নিজেকে বার বার শান্তনা দিচ্ছিলাম৷
হঠাৎই ফজরের আযান দিচ্ছে৷আযান শুনে ছাদ থেকে নেমে রুমে চলে গেলাম৷
সকালে খাওয়া দাওয়া করে ওদের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম৷খুব দ্রুত গাড়িটা চলছে৷
আর খূব দ্রুতই হারিয়ে যাচ্ছে আমার আনিকা৷
বিকেলের দিকে ওদের বাসায় পৌছে গেলাম৷ওদেরকে নামিয়ে দিয়েই
.
--আনিকা,আমি তাহলে চলে যাচ্ছি,ভালো থেকো,আর মায়ের প্রতি যত্ন নিও
.
-- সে কি বাবা,তুমি মাত্র আমাদেরকে বাসায় পৌছে দিছো৷এখন তূমি নিজেই অনেক ক্লান্ত,একটু রেস্ট নিয়ে,খেয়ে দেয়ে তারপর যাও(আনিকার মা)
.
--না গো মা,সব জায়গায় থাকার আর খাওয়ার অধিকার হয়ত আল্লাহ সবার কপালে লিখেনি৷তবে আপনি বলেছেন এতেই আমি খুশি৷আনিকা আমি চলে যাচ্ছি,ভালো থেকো
.
--একটু থেকে গেলে কি হয়না?(নরম সুরেই আনিকা)
.
--না আনিকা,তুমি তো জানই আজকে আমার কাজ শেষ,আজ আমি অপ্রয়োজনীয়৷যাই হোক,ভালো থেকো আনিকা,অনেক সুখে থেকো
.
--হুম,তুমিও সুখে থেকো,আর ভালো একটা মেয়ে দেখে বিয়ে করে,সুখের সংসার করো
.
--হা হা হা,হুম,করতে চেয়েছিলাম তো,কিন্তু সেটা হলো না৷আর এখন নতুন করে আমার কোনো ইচ্ছা নেই৷
ভালো থেকো গো পাগলি৷খুভ ভালো থেকো
.
বলেই ওখান থেকে চলে আসলাম৷আনিকার মা কয়েকবার আমার দিকে কেমন রহস্যজনকভাবে তাকিয়েছিল৷হয়ত কিছু বুঝবে হয়তবা না
,
বুকের কষ্টগুলোকে চাপা দিয়ে ওদের কাছ থেকে হাসিমুখে বিদায় নিয়ে গাড়ি চালানো শুরু করলাম৷গ্রামের আকাবাকা রাস্তা,তার ওপর চোখ দুটি ঝাপসা হয়ে আসছিল বারবার,গতকাল রাতে না ঘুমানোর কারনে মাথাটাও কেমন ভনভন করে ঘুরাচ্ছিল৷
.
গাড়ির স্পীডটা আরও বাড়িয়ে দিলাম৷যেভাবেই হোক আমাকে এই মায়া ত্যাগ করে অনেক দূরে চলে যেতে হবে৷
গাড়ি আকাবাকা রাস্তা দিয়েই চালতে লাগল হঠাৎই মাথাটা কেমন ভন ভন করে ঘুরে গেল,আর চোখ দুটি বন্ধ হয়ে গেল৷সবকিছুই অন্ধকার মনে হচ্ছে৷
এরপর আর কিছু মনে নেই
.
.
.
পতিতা_মেয়ে__
পার্ট_৮ম__
চোখ খুলতেই কেমন ঝাপসা ঝাপসা দেখতে লাগলাম৷কিছুই ভালো করে দেখতে পারছিনা৷
চোখটা আস্তে আস্তে ঘুরাতে ঘুরাতে দেখলাম ,আমি কোনো হসপিটালে আছি৷কিন্তু আমি এখানে কেন?আর কেনই বা ভালো করে স্পষ্ঠভাবে কিছুই দেখতে পারছিনা?
ঠিক তখনই আপন কোনো মানুষের কান্নার আওয়াজ৷আর তার সাথে শুনতে পেলাম
,
--আবিদ,তোমার জ্ঞান ফিরছে?আবিদ তোমার কেমন লাগছে?আর সেদিন কি হইছে?(কান্না করতে করতে)
.
মাণুষটার দিকে তাকালাম কিন্তু চোখে ঝাপসা দেখার কারনে চেহারা বুঝতে পারছিনা৷তবে কন্ঠ শুনে বুঝা যায়,এটা আনিকা৷কিন্তু আমি ভালোভাবে দেখতে পারছিনা কেন?
ঠিক তখনই চিৎকার দিয়ে উঠলাম৷আর আমার মুখ থেকে আপনা আপনিই বের হয়ে গেল,
.
--আমি ভালো করে দেখতে পারছিনা কেন?সব কিছু এমন ঝাপসা লাগছে কেন?(আমি)
.
--কি বলছো আবিদ?তুমি ভালো করে দেখতে পারছো না?(কান্না করতে করতে)
.
--না,আমি কাউকেই ভালোভাবে দেখতে পারছিনা৷আমার চোখের কি হলো(কান্না করে দিলাম)
.
--না,তোমার কিছুই হতে পারেনা৷ডাক্তার,ডাক্তার(চিৎকার করে)
.
ঠিক তখনই ডাক্তার এসে হাজির
,
--কি হইছে?আর রোগীর জ্ঞান কখন ফিরছে?(ডাক্তার)
.
--একটু আগেই ফিরছে৷ডাক্তার আবিদ ভালো করে কিছু দেখতে পারছে না কেন৷ওর চোখের কি হইছে?(কান্না করতে করতে)
.
--আসলে..........আচ্ছা আপনি আমার সাথে আমার চেম্বারে আসুন৷(ডাক্তার)
.
--ডাক্তার সাহেব,সমস্যা নাই৷আপনি এখানেই বলুন৷আমিও শুনতে চাই(আমি)
.
--আসলে আবিদ সাহেব,এক্সিডেন্টের সময়,আপনার মাথায় অনেকটাই আঘাত পরে৷কিন্তু তার চাইতে বেশি আঘাত পরে আপনার দুই চোখে৷চোখ দিয়ে রক্ত বের হয়ে গিয়েছিল৷আর আপনার চোখে প্রচন্ড আঘাত পরার কারনে চোখের রেটিনা,কর্নিয়ার মারাত্মক ক্ষতি হয়ে গেছে৷যার কারনে আপনি ঠিকমত,ভালভাবে দেখতে পারছেন না৷
.
--না,এ হতে পারেনা৷ডাক্তার আপনি বলে দেন,ওর চোখ আবার আগের মত ঠিক হয়ে যাবে(আনিকা)
.
--দেখুন,আমি তো ভেবেছিলাম,ও আর চোখেই দেখতে পাবেনা৷কারন চোখের যেই ক্ষতি হইছে,তাতে যে উনি এখনও দেখতে পাবে,সেটা আমি নিজেও ভাবিনি৷তবে হ্যা ,যদি চোখ পাল্টানো যায়,তখন হয়ত ওনি চোখে পূরোপুরি দেখতে পারবেন৷তাও সিউর না
.
--(আনিকা উচ্চস্বরে কান্না করতে লাগল)
.
--আর একটা কথা,ওনাকে কিছু চোখের ড্রপস আর ঔষধ লিখে দিচ্ছি,এগূলো রেগুলার ঠিকঠিক মত,ব্যবহার করলে,হয়তবা চোখের আলো ফিরে আসতে পারে৷আর চোখের ট্রিটমেন্ট ঠিকঠাক মত চালাবেন৷
.
--হুম
.
--আর ওনার সাথে সবসময় একজন মানূষ থাকতে হবে৷এতে ওনার জীবন নাশের ঝুকি কমে যাবে
.
বলেই ডাক্তার চলে গেল৷ঠিক তখন আনিকা অনেক জোড়ে জোড়ে কান্না করতে লাগল৷আর বলতে লাগল
.
--সব দোষ আমার,আমারাজন্যই তোমার এই অবস্থা হইছে৷সেদিন আমার কারনেই তুমি রাতে উল্টা পাল্টা জিনিস খেয়ে টেনশন নিয়ে গাড়ি ড্রাইব করে নিজের এত বড় ক্ষতি করলে৷
কেন এমনটা করলে?(কান্না করতেই লাগল)
.
--দেখো আনিকা,যা হবার হয়ে গেছে,আসলে তোমার কোনো দোষ নেই৷সব দোষ আমার কপালের৷এটা নিয়ে মন খারাপ করো না৷বাসায় যাও৷গিয়ে রেষ্ট নাও
.
--বাসায় যাবো?
.
--হূম৷বাসায় গিয়ে তোমার আম্মুর সাথে সময় কাটাও৷এতে ওনার অনেক ভাল লাগবে৷
.
--না,আমি তোমাকে ছেড়ে যাবোনা৷আর মা অনেক ভালো আছে,
.
--হুম৷খুব ভালো৷তবে আমার কাছে তোমার থাকার দরকার নেই৷আমি একাই ভালো থাকব৷
.
--একা ভালো থাকবে মানে?ডাক্তার কি বলছে শুনছো?
.
--হুম৷তবে আমার পাশে তোমার থাকার দরকার নেই৷বেঁচে তো আছি,মরে তো আর যাই নি?
.
--প্লীজ আবিদ,এভাবে বলো না,কষ্ট লাগে,,
.
--কষ্ট?কষ্ট লাগবে কেন?আমি তোমার কে?যে তোমার কষ্ট লাগবে?
.
--আবিদ,তুমি আমার স্বামি৷আর তোমার সব কষ্টের জন্য আমার কষ্ট তো লাগবেই.,..
.
--এই আনিকা কি বললে এটা?স্বামি?????আমি কারও স্বামি টামি না৷আর হ্যা,আমার কাছে না এসে,তোমার ভালোবাসার মানুষের সাথে সুখে সংসার করো(খুব কষ্ট লাগছিল,কথাগুলো বলতে)
.
--প্লিজ আবিদ,এভাবে বলো না,আসলে তুমি যেন,আমার মত একটা খারাপ মেয়ের সাথে লাইফে না জড়াও,সেজন্য সেদিন মিথ্যা কথা বলেছিলাম৷
.
--খূব ভালো করছো৷এখন তুমি আসতে পারো(মনের ভিতর চাপা কষ্ট রেখে)
.
--প্লীজ,আবিদ এমন করো না৷আর আমার কিই বা করার ছিল?একটা মেয়ের অনেক কষ্টের সঞ্চিত সম্পদ হলো,তার ইজ্জত,যেটা প্রত্যেকটা মেয়ে অনেক কষ্টে আগলে রাখে,আর তার স্বামির হাতে সেটা তূলে দেয়,আর আমার কাছে কিই বা ছিল?যেটা তোমাকে দিবো?আমি তো তোমার হক অক্ষত অবস্থায় রাখতে পারিনি৷আমি চাইনি তোমাকে ঠকাতে৷আমিতো একটা পতিতা৷আর পতিতাদের তো সংসার করা মানায় না৷যার কারনেই এগূলো বলেছিলাম৷
আবিদ আমাকে তুমি মাফ না ই করো,মেনে নাই নাও,তবুও তোমার এই সময়টাতে তোমার পায়ের নিচে আমাকে একটু ঠাই দাও,
.
বলেই মেয়েটা অনেক কান্না করতে করতে পায়ে পড়ে গেল৷আর অনেক ফুপাতে ফুপাতে কান্না করতে লাগল৷
পূরো শরিরটা প্রচন্ড ব্যাথা করছে৷শোয়া থেকে তখনও উঠতে পারিনি৷আর আনিকার এমন কীর্তি দেখে ,আমার ঝাপসা চোখ গুলো আরও বেশিই ঝাপসা হয়ে গেল৷
.
চাইলেই আনিকাকে আজ অনেক কিছু বলতে পারতাম৷কারন তার একটা মিথ্যা কথার জন্যই আমার আজ এই অবস্থা৷সেদিন রাতে এত ড্রিংক না করলে ,হয়ত আজ এমন হতো না৷
কিন্তু আনিকাকে কিছুই বলতে পারলাম না৷কারন ভালোবাসার টান যে এতটা ভয়াবহ,যেটা সত্যিকারের প্রেমিক ছাড়া আর কেউ অনুভব করতে পারেনা৷
.
--আনিকা পা ছেড়ে দাও,আসলে কি বলব বুঝতেই পারছিনা৷সেদিন তুমি তোমার অবস্থানের কথা চিন্তা করে,আমার কাছ থেকে দুরে সরে গিয়েছিলে৷আজ যদি আমি আমার এই করুন অবস্থার কথা চিন্তা করে,তোমাকে আমার জীবনে আর নাই জড়াই?
.
কথাটা বলতেই আনিকা চিৎকার দিয়ে কেদে উঠল৷
.
--প্লিজ আবিদ,এমনটা করো না৷দরকার পড়লে তোমার যত প্রকার শাস্তি আছে,সব আমাকে দাও!তারপরও এমন করো না৷আর তুমি হয়ত জানোনা,তোমার বুকে মাথা না রাখলে,এখন আর ঘূমই আসেনা৷খূব কষ্ট হয়,বুক ফেটে কান্না আসে,অসহ্য মরন যন্ত্রনা লাগে,এই গূলোর একটাই কারন আমিও যে তোমায় ভালোবাসি.কিন্তু নিজে একটা পতিতা বলে,সেগূলো প্রকাশ করতে কখনই সাহস পাইনি৷প্লিজ আমাকে ফিরিয়ে দিও না৷আমাকে না হয় তোমার এই দিনগূলোতে তোমার পাশে থাকার সুযোগ দাও,তুমি সুস্থ হলে,না হয়,আমাকে তাড়িয়ে দিও,কিন্তু প্লিজ আমাকে এখন তোমার পাশে থাকতে দাও.
.
বলেই আনিকা গলাকাটা মুরগীর মত ছটফট করতে লাগল৷আর কান্নার পরিমান আরও বাড়িয়ে দিল৷
.
কি করব বুঝতে পারছিনা৷আমার এই অবস্থা দেখে,যে মেয়ে আমার পাশে থাকতে চাচ্ছে,সে মেয়ে নিঃসন্দেহে আমাকে ভালোবাসে৷
.
--আচ্ছা আনিকা,আমার শরীর ভালো হলে,তুমি চলে যাবে তো?
.
একটু নিরবতা পালন করে,বলে উঠল
.
--তুমি যদি,চাও,তুমি সুস্থ হলে,আমি চলে যাই,তাহলে তাই হবে
.
--এক্কেবারে থাপ্পর দিয়ে দাত ফেলে দিব,তাহলে আসারই দরকার নেই৷যদি সারাজীবনের জন্য আমার কাছে আসতে পারো,তাহলে এসো,আর যদি না পারো,ক্ষনিক সময়ের জন্য আসার দরকার নেই৷
.
--আমি রাজি,কখনই তোমাকে ছেড়ে যাবোনা৷জীবন থাকতে তোমাকে একা করব না
.
--হুম৷আর আমাকে অনেক ভালোবাসতে হবে কিন্তু
,
--নিজের চাইতেও বেশি ভালোবাসব তোমায়৷
.
--হুম
.
--একটা কথা বলব?
,
--হূম৷
.
--তোমার শরীরে খুব ব্যাথা করছে,তাই না?
.
--হুম
.
--যদি অনুমতি দাও,তাহলে তার অর্ধেক ভাগ আমি নিবো
.
--কিভাবে?
.
--আগে অনুমতি দাও
,
--হুম দিলাম
.
এরপর কি হলো বুঝতেই পারলাম না৷কারন কিছু বুঝে উঠার আগেই আনিকা আমার মাথার পাশে এসে বসল৷আর আমার মাথার পাশে বসেই,ওর ঠোট আর আমার ঠোট এক করে নিল৷
.
এই প্রথম আনিকা নিজ ইচ্ছায়,আমার সাথে এমন করায় খুব অবাক হয়ে গেলাম৷একটু পর ও নিজেকে ছাড়িয়ে বলল
.
--এখন কি কিছুটা কমছে
.
--কমেনি,উল্টো বেড়ে গেছে
,
--কিহহহহ
.
--মনের ভিতর খা খা শুরু হয়ে গেছে৷
,
--কেন
.
--যদি,আরও কয়েকটা পাওয়া যেত,তাহলে খুব ভালো হতো
.
--যাও দুষ্টু কোথাকার
.
--দাও না,
.
--
--প্লীজ,
.
তারপর আর কি?আনিকাকে নিয়ে চলে গেলাম ভালোবাসার রাজ্যে৷শরীরে ব্যাথা,অসুস্থতা যে কোথায় হারিয়ে গেল,সেটা অজানাই রয়ে গেল৷
,
,
.
চলবে.....
.
.
..
৷
#ধন্যবাদ_সবাইকে___

0 মন্তব্যসমূহ
গল্প গুলো কেমন লাগলো, আপনার মতামত জানাতে কমেন্ট করুন।