পতিতা মেয়ে
পার্ট- ১১+১২
--এই আবিদ,আমাকে কাল বাহিরে একটু ঘুরতে নিয়ে যাবে?জানো তোমার সাথে ঘূরতে আমার খুব ইচ্ছা করে
--হুম নিয়ে যাবো,তবে আমি নিজেই তো এখনও ভালো করে চলতে পারিনা,ভালো করে দেখতে পারিনা,হাটতে পারিনা,তো তোমাকে নিয়ে ঘুরতে গেলে,লোকে দেখলে তোমাকে কি বলবে?
--কি বলবে?
--বলবে একটা অচলের পিছনে কত সুন্দরী একটা মেয়ে,অযথাই জীবনটা শেষ করছে
--তোমারে কিন্তু......(ধমকের সুরে)
--আমারে কি?
--আমার সাথে তুমি ঘূরতে যাবে,এটাই ফাইনাল
--ঠিক আছে
বিকেলবেলা আনিকাকে নিয়ে বাহিরে বের হয়ে গেলাম৷আফসোস কতগুলো মাস কেটে গেল,এখনও আমার পা আর চোখের তেমন কোনো উন্নতি হয়নি৷উচু নিচু জায়গায় চলতে গেলে অনেক প্রবলেম হয়৷হয়ত আনিকা আমার পাশে না থাকলে এতদিনে কবরেই চলে যেতাম৷আমি অচল জেনেও ও আমার পাশে আছে৷হয়ত এটাই ভালোবাসা৷আর বর্তমানে এমন কোথাও দেখা যায়না,আর দেখলেও খুব কম৷খুব কম সংখ্যক ছেলে মেয়েই তাদের সঙ্গী এমন অচল থাকলে মেনে নিবে৷
আনিকাকে নিয়ে শিশু পার্কে গেলাম৷সমানন্তরাল রাস্তা দিয়ে আনিকার হাতে হাত রেখে হাটতেছি৷হাটতে হাটতে দুজনেই একটা বেঞ্চের উপর বসলাম৷আর বসার পরই আনিকা আমার সাথে গল্প করতে লাগল৷
আর হঠাৎ করেই ওর মাথাটা আমার ডানপাশের কাধের ওপর রাখল৷আর ডান হাতটা আমার হাতের সাথে শক্ত করে আকড়ে ধরল৷আর হঠাৎই বলে উঠল
.
--আচ্ছা আবিদ,তূমি আমাকে অনেক ভালোবাসো তাই না?
--হুম খূব ভালোবাসি,তবে সেটা তোমার থেকেও অনেক কম
--আমার থেকে কম ভুলেও না,কারন তোমার ভালোবাসা পেয়েই আজ তোমাকে ভালোবাসতে শিখেছি
--কিভাবে ভালোবাসতে শিখেছো,সেটা আমি জানিনা তবে তুমি আমার থেকেও আমাকে অনেক বেশি ভালোবাসো
--আরে না,
--হুম,সেটাই
--আচ্ছা সব সময় তোমার বুকে,তোমার কাধে মাথা রাখার অধিকার দিবে তো?আর আমাকে অনেক ভালবাসবে তো
--কতটা ভালবাসতে পারব সেটা জানিনা,তবে আমি আমার এই পাগলি বউটাকে নিজের জীবনের শেষ নিঃশ্বাস অব্দি ভালোবেসে যাবো
--জানো আবিদ,তুমি হয়ত বিশ্বাস করবে না,তোমার ওই বুকে আমি স্বর্গসুখ খুজে পাই৷তোমার বুকে মাথা রাখতে পারলে,আমার মনের সব দূঃখ ভুলে গিয়ে নতুন একটা সুখ খুজে পাই,সেটা আর কোথাও খুজে পাই না৷আর আল্লাহর কাছে দোয়া করি,আমার শেষ নিঃশ্বাসটাও যেন ওখানেই ত্যাগ করতে পারি
--তোমারে কিন্তু এখন মারব!কি সব উল্টা পাল্টা কথা বলছো?আমাকে ছেড়ে যাবার কথা বলছো কেন?ছেড়ে গেলে এখনই চলে যাও,আমি একাই থাকব(ওর প্রতি কিছুটা রাগ করে)
--ওপপপস আমার পাগলটা দেখি রাগও করতে পারে?যাও আর বলব না
--(চূপ করেই আছি)
-কি হলো,বললাম তো আর বলবনা
--হুম
--এবার তাহলে হাসো
--হুম
--কি হলো?হাসো বলছী
--হি হি হি,এবার তুমিও হাসো
--হি হিহি
আস্তে আস্তে সন্ধ্যা হয়ে আসছিল৷তাই আনিকাকে নিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে হাটতে লাগলাম৷হঠাৎই একটু উচূ জায়গায় হাটতে গিয়ে পড়ে গেলাম৷আর আনিকা আমাকে সাথে সাথেই তোলার চেষ্টা করছিল৷আশেপাশে সন্ধ্যার সময়ও অনেক মানুষ আমার দিকে তখন কেমন করে যেন তাকিয়ে রইল৷আর অনেকেই হো হো হো করে হেসে উঠল,আর বলতে থাকল,কি কানা কোনা মানুষ রে!সন্ধ্যা না হতেই কেমন শুকনোর ভিতর আছাড় খাওয়া শুরু করছে
এগুলো বলছে আর হাসাহাসি করছিল৷আনিকা তখন অনেক রেগে যায়,আর ওদেরকে কিছু বলার জন্য যেতে চাইলে আমি তার হাতটা ধরে ফেলি,আর তখন আনিকা বলে উঠল
--আবিদ,ছাড়ো বলছি,ওই অসভ্য লোকটার দাতগুলো ভেঙে ফেলব
--আনিকা,বাদ দাও,আর ওরা তো কিছু মিথ্যে বলেনি৷চলো আমরা চলে যাই
--না ওদেরকে উচিৎ শিক্ষা দেওয়া দরকার
--না আনিকা,কিছুই বলার দরকার নেই৷
তোমাকে এখান থেকে যেথে বলছি,তো চলো এখান থেকে,আর একটা কথাও বলোনা৷আর যদি আমার কথা না শুনো,তাহলে আমি খুব কষ্ট পাবো৷এখন তুমি যদি আমাকে কষ্ট দিতে চাও,তাহলে যাও
--না আবিদ,আমি তোমাকে কখনই কষ্ট দিবো না৷কিন্তু ওদের....
--কোনো কিন্তু নেই,চলো বলছি
--হুম
তারপরই আনিকা নিয়ে হাটতে লাগলাম৷আনিকা রাস্তা দিয়ে আমাকে নিয়ে আসছে৷কোনো রিক্সা পাচ্ছিলাম না৷দুজনেই রিক্সার জন্য রাস্তা দিয়ে হাটছিলাম৷কেননা তখন রাত হয়ে যাচ্ছিল,আর আমার এই অবস্থায় আনিকা কে নিয়ে বাইরে থাকা একদমই ঠিক না৷
আনিকা হাটছে আর আমাকে বলছে
--সামনে ইট আছে আবিদ!ওখানে একটূ উচু,সাবধানে হাটো,
আরেকটু যেতেই
--সামনে গর্ত বামে হাটো,নয়ত কাদায় পড়ে যাবে
আরেকটু যেতেই
-ডানে হাটো ,বামে গর্ত,
এভাবেই আনিকা আমাকে পথ চলাতো৷কখনও ডানে হাটতে বলতো,কখনও বা বামে হাটতে বলতো৷
সত্যি বলতে যদিও আমার অবস্থা খারাপ ছিল,তবুও আমি অনেক সুখিই ছিলাম৷ওর মত একটা মেয়ে যে আমার পাশে আছে,ভাবতেই আমি অবাক হয়ে যাই৷
অনেকক্ষন পর রিক্সা পাওয়া গেল৷আর দুজনেই রিক্সা দিয়ে বাসায় চলে আসলাম৷বাসায় আসার কিছুক্ষন পরই বুঝতে পারলাম আনিকা কেমন পাগলের মত করছে৷আর বার বার মাথায় হাত দিচ্ছে ৷মনে হচ্ছে ওর মাথায় অনেক প্রবলেম হচ্ছে৷তাই আনিকাকে জিজ্ঞাসা করলাম কিন্তু সে কোনো কথাই বলল না৷শুধু বলল কিছু না৷পরে রাগ নিয়ে,একটু ধমক দিয়ে যখন জিজ্ঞাসা করলাম৷তখনই আনিকা বলে উঠল
--আসলে আবিদ,আমার মাথাটা একটু ব্যাথা করছে৷আমি এখন একটু শুয়ে থাকব,তাই তুমি যদি এখনি খেয়ে নিতে,তাহলে খুব হতো ভালো
--কখন থেকে ব্যাথা করছে
--এইত
--এইত কি?
--একটু আগে থেকেই
--তোমার মাথা ব্যাথা করছে,আমাকে একবার বলছো?
--না
--কেন বলোনি?বলার প্রয়োজন বোধ করো না,তাই বুঝি(ওর প্রতি রাগ হচ্ছিল,ওর মাথা ব্যাথা করছে কিন্তু আমাকে একবারও বলল না)
--এই আবিদ কি বলছো তুমি হ্যা?তোমাকে বলার প্রয়োজন বোধ করি না মানে?তুমি আমার সব,বুঝেছো
--হুম সেটা তো বুঝতেই পারছি
--কি বুঝতে পারছো ?
--কীছুনা৷এখন চূপ চাপ খাটোর ওপর আসো
--কেন?
--যেটা বলছি সেটা করো
তারপর আমি খাটে গিয়ে বসলাম৷আর আনিকাও বসল৷আর তখন ওকে আমার কোলে শুয়ে থাকতে বললাম৷আর ও আমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে রইল৷
আমি তখন মাথা ব্যাথার মলম ওর মাথায় লাগিয়ে দিচ্ছি৷আর ওর মাথায় মালিশ করে দিচ্ছিলাম৷আর আরেক হাতে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলাম৷
ও তখন এক দৃষ্টিতে আমার দিকে কেমন করে তাকিয়ে আছে৷আর ওর চোখ দিয়ে পানি বের হচ্ছিল৷
--আনিকা,খুব বেশি কষ্ট হচ্ছে তোমার?দেখবে মাথা ব্যাথা কমে যাবে,তুমিএকদমই কান্না করো না
--মাথা ব্যাথার কারনে আমি কান্না করছি না,তুমি হাত বুলাতেই মাথা ব্যাথা সব শেষ
--তাহলে কেন কান্না করছো?
--জানো আবিদ,আমি না খুবই ভাগ্যবতী একটা মেয়ে,যার কারনে তোমার মত একজনকে আমার জীবনে পেয়েছি৷যার কাছে আমার সমস্ত সুখ খুজে পাই৷আর কোথাও এত সুখ আমি পাই না৷যতটা তোমার বুকে মাথা রেখে পাই৷আমাকে না সব সময় তোমার ওই বুকে রাখবা
বলেই আরও জোড়ে কান্না করে দিল৷আর আমাকে খূব শক্ত করে জড়িয়ে ধরল৷অনেক শক্ত করেই জড়িয়ে আছে,যেন আর একটূ হলে আমার সাথে ও নিজেকে মিশিয়ে ফেলবে৷
পাগলিটার আচরন গূলো খুবই অদ্ভুদ৷আর ওর চাওয়া গূলোও খুব সামান্য তবে খুব অদ্ভুদ লাগে৷কারন ও কিছু হলেই বলে,আমার বুকে যেন তাকে সব সময় জড়িয়ে রাখি,কখনই যেন এ বুক থেকে ওকে আলাদা না করি৷পাগলিটা যখনই ঘুমাবে আমার এই বুকের মধ্যে ঘুমাবে৷বালিশের কথা বললে তো হেব্বি কান্না করে দেয়৷কারন ওর একটাই কথা ,আমার বুকেই নাকি তার সব সুখ৷আর ওকে যখন আমার বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরে রাখি৷তখন ও খরগোশের মত একদম কাচুমাচু করতে থাকে৷মনে হয় একটা খরগোশের বাচ্ছা,আমার বুকে কেমন কাচুমাচূ করছে৷
ইদানীং প্রায়ই আনিকার মাথা ব্যাথা করে৷জ্বর আসে৷
বমি করে৷যেগূলো আমাকে খূব ভাবনার ভিতর রাখছে৷
খূব ভয়ে পেয়ে যেতাম৷ওকে ডক্টরের কথা বললে ডক্টরের কাছে যেতে চাইত না৷
কিছু বললেই বলত ওর কিছুই হয়নি৷
কিন্তু ওর এমন অবস্থা আমাকে সত্যিই খুব বেশিই ভাবায়৷
কারন পাগলিটার কষ্ট একদমই যে সহ্য করতে পারিনা৷নিজের হাজারও কষ্ট হলে কোনো সমস্যা হয়না৷কিন্তু ওর কিছু হলেই বুক ফেটে যায়,অসহ্য যন্ত্রনায়৷হয়ত একটু বেশিই ভালোবাসি তাই৷
সেদিন রাতেও হঠাৎ ওর মাথা ব্যাথা হচ্ছিল৷আর ব্যাথাটা হয়ত অনেক বেশিই হচ্ছিল৷
যার কারনে ও কান্না পর্যন্ত করছিল৷যদিও কান্নাটা আমার অগোচরে৷
আনিকাকে হঠাৎ খুজতে লাগলাম কিন্তু কোথাও পাচ্ছিলাম না৷আর আনিকাকে একটা ডাকও দিচ্ছিলাম না৷কারন সকাল থেকেই ওর আচরন একদমই ভিন্ন ছিল৷আস্তে আস্তে খূজতে খূজতে যখন ছাদে গেলাম৷দেখলাম ছাদের একটা কর্নারে বসে বসে মাথায় হাত দিচ্ছে আর কান্না করছে৷আর আমাকে দেখেই চোখ মুছে ফেলল৷
--আনিকা,তোমার কি হইছে বলো
--কই কিছুনা তো
--সত্যি করে বলো বলছি
--কই কীছু না তো৷আর তুমি এই অবস্থায় একা একা ছাদে আসছো কেন?
--তোমাকে যেটা বলছি বলো,কি হইছে তোমার?
--আসলে মাথা ব্যাথা করছে
--আমাকে বলোনি কেন?
--আসলে তুমি নিজেই তো অসূস্থ,তাই....
--তাই বলে আমাকে বলবেনা?চলো এখনি ডাক্তারের কাছে যাবো
--না,এখন যাবো না,পরে যাই
--না এখনি যাবো
--না আবিদ,এখন মাথা ব্যাথা করছে,এখন গেলে,রাস্থায় আমারই যদি কীছু হয়ে যায়,তখন তোমাকে কে দেখবে?
--তাই বলে এখন কষ্ট ভোগ করবে?
--না,কষ্ট ভোগ করব কেন?
--ওই চূপ৷এখনি নিচে চলো৷তোমার মাথায় আমি মলম মালিশ করে দিচ্ছি
তারপর আনিকাকে নিয়ে গিয়ে মাথায় মলম মালিশ করতে লাগলাম৷আর আস্তে আস্তে সময়টা কাটিয়ে দিলাম৷বিকেল বেলা ওর মাথা ব্যাথা ঠিক হলে ওকে নিয়ে আমার চেনা জানা,বাংলাদেশের সব চাইতে বড় ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলাম৷
আর ওখানে ওর অনেকগলো টেষ্ট করাচ্ছিল৷আর ডাক্তার আমার চেনা৷আমি ওনাকে চাচা বলে ডাকি৷কিন্তু যতই আনিকার মাথা ব্যাথাসহ সবকিছুরাজন্য টেষ্ট করছিল৷ডাক্তার চাচা ততই ঘাবরে যাচাছিল৷ওনাকে এমন ঘাবরে যেতে দেখে আমি খূব ভয় পেয়ে গেলাম৷চেষ্ট শেষে ডাক্তার চাচার সাথে আমি একা একটূ কথা বললাম
--চাচা,ওর টেষ্ট গূলো করতে গিয়ে এমন ঘাবরে যাচ্ছিলেন কেন?(আমি)
--আরে তেমন কীছুই না,চিন্তা করো না,আল্লাহকে ডাকো,যেন কাল রিপোর্টগূলো ভালো আসে(ডাক্তার চাচা)
--হুম,তবে ওকে কেমন দেখলেন?
--দেখো বাবা,রিপোর্ট ছাড়া কিছুই বলতে পারছিনা৷তোমরা কষ্ট করে একটূ কালকে আসো
--হুম
তারপর টেষ্ট গুলো করে আমরা বাসায় চলে আসলাম৷বাসায় এসে বার বার আল্লাহর কাছে পার্থনা করছিলাম৷যেন রিপোর্টগুলো ভালো আসে৷
চিন্তায় একদমই খেতে পারছিলাম না৷তবে আনিকাকে তেমন কিছুই বুঝতে দিলাম না৷
রাতে একদমই ঘূম হচ্ছিল না৷খূব টেনশন হচ্ছিলো৷
আর কেন জানি বুকের ভিতর অসহ্য যন্ত্রনা অনূভূত হতে লাগল৷আনিকা তখন আমার বুকের উপর ঘূমিয়ে আছে৷ঘূমের ভিতরই আনিকাকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম৷আর মনে মনে বলতে লাগলাম
.
"""""""খূব ভালোবাসি রে পাগলি,তোকে খুব ভালোবাসি,তোকে কোথাও, কখনও এই বুক থেকে হারাতে দিব না""""""
পতিতা_মেয়ে
পার্ট_১২
.
সকালবেলা ঘুম থেকে উঠার পর কেন জানি মনটা অনেক বেশি উতাল পাতাল করছিলো৷
ছাদের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে বারবারই পায়চারি করছিলাম৷বার বার ই ডাক্তার চাচার ঘাবরে যাওয়ার বিষয়টা মনে পড়ছিল৷ওনি কেন এত ঘাবরে যাচ্ছিলো?ভাবতেই কেমন গায়ের লোম দাড়িয়ে যাচ্ছিলো৷হঠাৎই কারও হাতের স্পর্শ আমার কাধের ওপর অনুভুত হলো৷পিছনে তাকাতেই দেখলাম আনিকা৷
--আবিদ,তোমাকে খুব চিন্তিত লাগছে কেন?
--কই না তো
--সত্যি কথা বলো বলছী
--আরে একটূ কেমন জানি লাগছে তাই একটূ হাটাহাটি করছি
--কেমন লাগছে?
--আসলে আমাকে তো হাটতে হবে তাই না?আর তুমি তো জানো আমি এখনও ভালো করে হাটতে পারিনা,তাই হাটা শিখছি(মিথ্যা বলছি)
--ওয়াও,তুমি তো দেখছি ,খূব সুন্দর মিথ্যা কথা বলতে পারো
--আরে না গো
--সত্যি কথা বলো তো,তোমার কি হইছে?কাল থেকে তোমাকে কেমন চিন্তিত লাগছে
--আরে কিছু না গো,চলো ভিতরে যাবো,খুব খিদে লাগছে
--হুম
তারপর আনিকাকে নিয়ে ভিতরে চলে গেলাম৷আর ও আমাকে নিজ হাতে খাইয়ে দিচ্ছিলো৷
খাওয়া শেষ করে৷একটূ শুয়ে থাকতেই ঘূম চলে আসল৷কারন গতকাল রাতে একদমই ঘূম হয়নি৷
ঘুম থেকে উঠতে না উঠতেই ফোনটা ক্রিং ক্রিং ভেজে উঠল৷
ফোনটা ধরতেই ওপাশ থেকে ভেসে আসল
--হ্যালো ,বাবা আবিদ?(ওপাশ)
--জ্বি আবিদ বলছি,কে?
--আমি তোমার ডাক্তার আংকেল
--জ্বি আংকেল,কেমন আছেন?আর রিপোর্ট কি বের হইছে?
--হুম ভালো আছি,আর বিকেল বেলা একটূ আমার চেম্বারে আসো
--আংকেল রিপোর্ট কেমন আসছে
--হুম ভালো,আগে আসো,তারপর সব বলব
--হুম
তারপরই ফোনটা কেটো দিলাম৷
বিকেলবেলা আনিকাকে নিয়ে হসপিটালে যাবার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম৷একাই যেতে চেয়েছিলাম কিন্তু একা আমার মত অচলের পক্ষে যাওয়া সম্ভব না৷
হসপিটালে যাবার পরই ডাক্তার কাকার চেম্বারে গেলাম৷যাওয়ার পর
--চাচা,কেমন আছেন(আমি)
--ভালো,তুমি?
--হুম ভালো৷আবিদ আমি তোমার সাথে একটু একা কথা বলতে চাই,
--হুম
তারপরই আনিকাকে বললাম
--আনিকা,তুমি একটু বাইরে গিয়ে বসো,প্লীজ রাগ করো না
--হূম,যাচ্ছি,আর আমি একদমই রাগ করব না
বলেই মুখে একটা শুকনো হাসি দিয়ে বাইরে বের হয়ে গেল৷ও যাবার পরই চাচাকে বললাম
--চাচা কি রিপোর্ট আসছে?
ওনি কিছুক্ষন চুপ করে রইলেন৷একটু পর নিরবতা ভেঙে বললেন
--বাবা আবিদ,মেয়েটা তোমার কে হয়?
--চাচা ও আমার সব
--হুম৷কীন্তু ওর বাবা মা কোথায়
--ওর বাবা নেই,মা আছে,কিন্তু ওদের কথা কেন জিজ্ঞাসা করছেন?
--ওর মাকেই ডাকো,
--চাচা ,যা রিপোর্ট আসছে,আমাকে বলেন,ওর মাকে ডাকার দরকার নেই
--আসলে বাবা কিভাবে যে বলি(মুখটা একেবারে শুকনো করে)
--চাচা,আপনার মূখ এত শুকনো হলো কেন?কি হলো বলেন কি রিপোর্ট আসছে
চাচা চোখের পানি গূলো ছেড়ে দিলেন৷ওনার ঠোঠ দুটি থরথর করে কাপতে লাগল৷আর কেমন বোবার মত আমার দিকে হা করে তাকিয়ে রইল৷ওনার এমন কীর্তি দেখে মনে অনেক ভয় হতে লাগল৷বুকের ভিতর কেমন ঘূর্নিঝড় শুরু হতে লাগল৷অজানা কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছে৷ওনি রিপোর্ট বলতে গিয়ে এমন কান্না করে দিল কেন?এমন কাপছে কেন?
আমার আনিকার কিছু হয়নি তো?ওর রিপোর্ট খারাপ আসে নি তো?
----চাচা কি হইছে বলেন৷চূপ কেন আপনি(কান্না করেই দিলাম)
--বাবা রে,কিভাবে বলি,যে মেয়েটার রিপোর্ট আজ তোকে দিতে যাচ্ছি,তার রিপোর্টের কথা আমি কিভাবে বলব?
--চাচা,সত্যি করে বলেন তো,আমার আনিকার কি হইছে?(ফুপিয়ে কান্না করতে লাগলাম৷মুখ দিয়ে কথাই বের হচ্ছেনা)
--বাবা,তুমি একটু শান্ত হও,
--হুম,আআআআ, আপনি রি রি পো র্ট ব বলেন(তোতলাচ্ছি)
--বাবা,তুমি যে মেয়েটারে নিয়ে আসছো,ওর রিপোর্টগূলো দ্বারা এটাই বলা যাচ্ছে,ওর ব্লাড ক্যান্সার...
কথাটা শুনেই মাথাটা কেমন ঘূরে গেল৷মনের ভিতর যেন ভুমিকম্প শুরু হয়ে গেল৷আর যেন মৃত্যু যন্ত্রনা তখন অনূভূত হতে লাগল৷দৌড়ে গিয়ে চাচার পায়ে পড়ে গেলাম,
--চাচা,আপনি হয়ত ভূ ভুল বলতাছেন,আপনি মিথ্যা কথা বলতাছেন৷আমার আনিকার কিচ্ছু হয় নাই৷আপনি আবার টেষ্ট করেন,আবার ভালো করে দেখেন(চাচার পায়ে ধরে কান্না করতে করতে)
--বাবা রে,রিপোর্টগূলো মিথ্যা হলেও আমিও খুব খুশি হতাম৷এই রিপোর্টগুলো গতকালই আমি বের করে ফেলি,তারপর আমি নিজেই ঘাবরে যাই,তারপর থেকে কয়েকবার নতূন করে টেষ্ট করি,সেই একই ফলাফল৷এরপর আরও কয়েকজন স্বনামধন্য হাসপাতালের ডাক্তারের কাছে রিপোর্টগুলো পাঠালাম,তারাও সেম রিপোর্টই আমাকে দিছে,শুধু মাত্র তুমি আমার পরিচিত বলেই বারবার টেষ্ট করছিলাম শুধু মাত্র রিপোর্টটা ঘুরানো যায় কি না,সেটার জন্য কিন্তূ আল্লাহর দেওয়া বিধান কি আমার মত একজন ডাক্তার খন্ডাতে পারবে নাকি?পারবে না রে বাবা৷আমিও পারি নাই,,
---চাচা,এখন ওর চি চ(কথা আসছে না)
--শান্ত হও,নিজেকে শান্ত করো
--চাচা কেন ওর এমন হলো?কেন ওর জীবনটা এভাবে শেষ হয়ে গেল?
--বাবা রে,আসলে কথাটা মুখ দিয়ে আসছে,মেয়েটা তো আমার মেয়েরও মত,কিন্তু কথাটা যদিও খারাপ,তারপর তুমী জানতে চাচ্ছ বিধায়,আমি তোমাকে বলছি,আসলে মেয়েটা হয়ত,অনেক পুরুষের সাথে মেলামেশা করেছে,আর ওইগুলোর একটাও নিরাপদ ছিলোনা৷যার কারনে ওর শরীরের ভিতর অনেক রোগের জীবানুর সংক্রমন ঘটে৷আর আস্তে আস্তে ওর শরীরে ক্যান্সারের মত ভয়াবহ রোগের সৃষ্টি হয়৷আর ওর ক্যান্সারটা এতইটাই ভয়াবহ যে,রোগ হবার পর সেটা অনেক দ্রুত ওর শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শেষ করে দিছে৷
--আল্লাহ,তুমি এটা কি করলে?তুমি তো জানতে ,গ্রামের সহজ সরল মেয়েটা শহরে আসার পরই নিজের মামার হিংস্রতার শিকার হয়!আর তারপর শিকার হয় শত শত মানুষের খাবার হিসাবে,এখানে তো মেয়েটার কোনো দোষ ছিলো না ৷কেন মেয়েটাকে এত বড় শাস্তি দিলে?কেনই বা আমার জীবনটা এভাবে তচনছ করে দিলে?(মনে মনে কথাগুলো বলছিলাম৷আর ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করছিলাম)
--শান্ত হও বাবা
--শান্ত হয়ে আর কি করব,চাচা ওকে বিদেশ নিয়ে চিকিৎসা করালে কেমন হবে?ও ঠিক হবে তো
--বাবারে,ওর ক্যান্সারটা মোটামুটি লাষ্ট স্টেপে এসে গেছে,হয়ত বেঁচে থাকলে আর ৫-৬মাস বেঁচে আছে,তারপরই মানুষটা হয়ত আমাদের ছেড়ে চলে যাবে,কিন্তু বাবা,যতদিন মেয়েটা আছে,ওকে একদমই বুঝতে দিও না,আর কথাগুলো যেন কোনোভাবেই জানতে না পারে,তাহলে হয়ত এর আগেই চলে যাবে,,
কথা গুলো বলেই ডাক্তার চাচা কান্না করে দিল৷আমার তখন মনে হতে লাগল,চোখে পাশাপাশি আমার কানটাও নষ্ট হয়ে গেছে৷কি বলছে এগুলো?আমার আনিকার কীছু হবে না৷আমি হতে দিবো না৷ এই দিকে আমার অবস্থাও তখন একদমই করুন হয়ে গেল৷কোনোভাবেই নিজেকে ঠিক করতে পারছিলাম না৷কয়েকবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলি,আর তখন চাচাই আমার জ্ঞান ফিরালো৷ওনি বার বারই আমাকে শান্ত হতে বলছে,আমি কিভাবে শান্ত হবো?আমি নিজেকে কিভাবে ঠিক করবো?যে মেয়েটা আমার জীবনের সব,যাকে ছাড়া আমি একদমই অচল৷মোবাইলের চার্জ ছাড়া যেমন মোবাইল অচল,ঠিক আনিকা ছাড়াও আমি একদমই অচল,সে আমাকে ছেড়ে চলে যাবে!এই কথা শুনে আমি কিভাবে ঠিক থাকবো আল্লাহ?আমি কিভাবে বাচঁব?নিজেকে কোনোভাবে একটু ঠিক করে বললাম
--চাচা,কি কি লক্ষন দিতে পারে?
ওনি বলা শুরু করল
--বাবারে,মেয়েটার মধ্যে অনেকগুলো লক্ষন দেখা দিবে,প্রচন্ড কাশি আসবে,কাশির সাথে মুখ দিয়ে মাঝে মাঝে ব্লাড আসব,নাক দিয়ে রক্ত পড়ব,মানুষটা শুকিয়ে যাবে,মাথার চুল গুলো আস্তে আস্তে পড়ে যাবে৷আস্তে আস্তে শরীরটা একদমই দুর্বল হয়ে যাইব
মনে মনে তখন চিন্তা করতে লাগলাম,আল্লাহ?কি হইলো আমার লাইফে?আমার জীবনটাই তুমি নিয়ে নিতে!তুমি কেন আমার আনিকাকে এত বড় শাস্তি দিলে?
ওপরের দিকে তাকিয়ে আল্লাহ কে ডাক দিয়ে বললাম,
"আল্লাহ,ও আল্লাহ,আমার জীবনে যদি এতই কষ্ট রেখেছিলে,তাহলে কেন আমাকে এইপৃথিবীতে পাঠালে?ওই আল্লাহ?আমার কথা উত্তর দাও৷জন্মের পর বুঝ না হতেই আমার বাবা মাকে তুমি কেড়ে নিছো,
এরপর কেড়ে নিছো,আমার জীবনের সমস্থ সুখ শান্তি,
রাস্থার টোকাই হিসাবে আমাকে মানুষের লাথি খেয়ে বড় হতে হইছে,যেই নিজের সবকীছু ফিরিয়ে দিলে,আনিকাকে আমার জীবনে পাঠালে,ভালো হয়ে গেলাম,আর তখন ভাল হবার বদলে কি দিলে আমায়?আমার পা আর চোখের ক্ষমতা প্রায় বিকল করে দিলে,আর তারপর যার মাধ্যমে আমার নতুন পৃথিবীটাকে সাজাবো,যে আমার চলার সবকিছু,এখন তাকেই নিয়ে যেতে চাচ্ছো,কেন এমন করলে আল্লাহ?কেন আমার জীবনটাকে এভাবে শেষ করে দিলে৷
নিজেকে কোনোভাবেই ঠিক করতে পারছিলাম না৷চাচা বারবার ই বলছে অনেক টাইম হয়ে গেছে,আনিকা বাইরে,আরও বেশি টাইম হলে,আনিকা সন্দেহ করতে পারে৷আর আনিকা বুঝে গেলেই ওর জন্য আরও অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে
তখন নিজেকে কোনোভাবে ঠিক রাখলাম,না আমি আমার আনিকা কিছুই বুঝতে দিবো না৷৷তবে মনটাকে কোনোভাবেই ঠিক রাখতে পারছিলাম না৷ইচ্ছা না থাকা সত্বেও চোখ দিয়ে পানি বের হতে থাকল৷আটকাতেই পারছিনা৷
আবারও আল্লাহকে ডাক দিয়ে বললাম,আল্লাহ,এই মুহুর্তে আমাকে আপাতত একটূ ছাড় দাও,আমার চোখের পানি যেন কোনোভাবেই না আসে৷আল্লাহ?ও আল্লাহ জীবনে যদি আমি একটা ভালো কাজ করে থাকি,তাহলে তার বিনিময়ে আজকে আমার আনিকার সামনে আমার চোখে পানি দিও না৷আমার আনিকা মইরা যাইবো আল্লাহ,তুমি আমার এই আবদারটা রাখো আল্লাহ,রাখো
জানিনা আমার আল্লাহ তখন কিভাবে আমার এই দোয়াটা কবুল করল৷
আমি তখন হাসতে হাসতে বাইরে বের হলাম৷আর তখন আনিকা অনেকটা দূর থেকে আমাকে দেখে আমার কাছে আসল৷আর বলল
--আবিদ,রিপোর্ট কি আসছে
--রিপোর্ট?হ্যা রিপোর্ট তো অনেক ভালো আসছে(কথাই বের হচ্ছিলো না)
--তাহলে এমন করে কথা বলছো কেন?আর তোমার চোখ এমন ফোলা কেন?তুমি কান্না করছো কেন
--কই না তো?
--একদমই মিথ্যা বলবা না ৷বলো কি হইছে
আকাশের দিকে তাকিয়ে মনে মনে আল্লাহকে বলছিলাম
ওই আল্লাহ,তুমি বলে দাও,আমি কি উত্তর দিমু?আমারে শিখাইয়া দাও,আমার কাছে তো কোনো উত্তর নেই৷প্লীজ আল্লাহ,আমারে উত্তরটা একটু শিখাইয়া দাও৷৷৷একটু পরই বললাম
--আসলে আনিকা,আমার তো চোখে প্রবলেম!তাই চাচার কাছে আমার চোখেরও কিছু টেষ্ট করাইছি,আর ওনি চোখে কিছু ঔষধ দিছে,যার কারনে চোখটা একটু জ্বালাপোড়া করছিল৷
--হুম চলো,বাসায় যাই,এখানে আর ভালো লাগছে না
--হুম
আনিকাকে নিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে হসপিটালের বাইরে বের হলাম৷রাস্তায় বের হতেই হঠাৎই ইটের ওপর লাথি খেয়ে পরে যেতে লাগলাম ঠিক তখনই আনিকা আমার হাতটা ধরে ফেলল৷আর ধরেই বলে উঠল
--এই বোকা,ভয় পেয়ো না,তোমার এই পাগলিটা থাকতে!তোমার কিছুই হতে দিবেনা
বোবার মত ওর কথাটা শুনলাম৷ও থাকতে আমার কিছু হতে দিবেনা৷অথচ আমি থাকতে ওর কত কিছুই হয়ে যাবে৷ভাবতেই বুক ফেঠে কান্না আসছিলো৷তবে কান্নাটা আটকিয়ে রাখলাম৷নয়ত আনিকা বুঝে যাবে৷
একটু পর আনিকা আমাকে রাস্তা দিয়ে হাতে হাত ধরে আমাকে নিয়ে যাচ্ছে,একবার বলছে ডানে হাটো,বামে উচু,আরেকবার ডানে গর্ত,বা উচু, এগুলো বলে বলে আমাকে হাত ধরে রাস্তা দিয়ে হাটিয়ে নিয়ে যাচ্ছে৷
তখন বুকের ভিতরটা আরও বেশি খা খা করে উঠল৷কান্না করে চিৎকার করে আল্লাহর কাছে বলতে ইচ্ছে করছিল,""আল্লাহ?মাত্র ছয়টা মাস পর আর তো আর এই মানুষটা থাকবে না৷তখন কেউ আর বলবে না!আবিদ ডানে হাটো,বামে গর্ত ,আবার বামে হাটো,ডানে গর্ত উচূ৷কে আমাকে এভাবে পথচলা শিখাবে ? আল্লাহ,ও আল্লাহ ?চুপ করে থেকো না৷উত্তর দাও৷তুমি উত্তর দাও
.
.
চলবে......
বিঃদ্রঃভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন৷
#ধন্যবাদ__

0 মন্তব্যসমূহ
গল্প গুলো কেমন লাগলো, আপনার মতামত জানাতে কমেন্ট করুন।