নতুন বিয়ে পর্ব ৩
ঘর ছেড়ে ডাইনিং এ এলো নিতু। চারিদিক শুনশান নিরব। এমন কি বাসায় যে একটা বাচ্চা আছে তারও কোনো আওয়াজ নেই। যেনো সে ও বুঝে গেছে এ বাড়ীতে সে কাংখিত না। এ বাসার কোথাও বাচ্চার কোনো জিনিস চোখে পড়েনি নিতুর। মানুষটা না হয় বাচ্চাটাকে সহ্য করতে পারছে না, তাই বলে এতো। না দেখেই বাচ্চাটার জন্য কস্ট লাগতে শুরু করলো নিতুর। ছোট ছোট পায়ে রান্নাঘরে এসে দাড়ালো, বুয়া কি যেনো তৈরি করছে তার পাসে বসে দশ বারো বছর বয়েসি একটি মেয়ে গল্প করছে আর হাসছে। কি বানাও ময়নার মা? নিতুর ডাকে খানিকটা চমকে উঠে দূ জন। নিতুর এই একটাই গুন। যেকোনো খানে খুব সহজেই মিশে যেতে পারে। পনিরের সমুসা বানাই, ভাবী। ভাইজানের পছন্দ। চেম্বারে যাওয়ার আগে চায়ের সাথে খেয়ে যায়। এক চুলায় চায়ের পানি ফুটছে অন্য চুলায় তেল বসানো। নিতু বল্ল আমায় দাও, ভেজে দেই। না না বলে উঠলো ময়নার মা। আপনি পত্থম আসছেন আইজ। তাতে কি। দাও তো কিছু হবে না। বলে নিজেই নিলো।চায়ের জলে খানিকটা কাটা আদা ছেড়ে দিল। এক দিকে সমুসা ভেজে অন্য দিকে চা ঢাললো টি পটে। চিনি আলাদা পাত্রে নিল। টিকুজি দিয়ে টিপট ঢেকে দিল যাতে গরম থাকে। সস খোজার জন্য ফ্রিজ খুলে দেখলো পুডিং আছে। সেটাও বের করলো। সস, মেয়োনিজ একসাথে মিশিয়ে একটা বাটিতে নিল। সব কিছু ট্রলিতে সাজিয়ে মেয়েটাকে বল্ল, এগুলো ডাইনিং রুমে নিয়ে যাও।আর তোমার ভাইজানকে ডেকে নিয়ে এসো।
নিজের স্টাডিতে বসে ছিল রোহান। মায়ের কথায় এ ই বিয়েটা করা কতটুকু যুক্তি যুক্ত হলো বুঝতে পারছে না। মেয়েটা নিতান্তই বাচ্চা। উনিশ কুড়ির বেশি বয়স হবে না। তার বয়স স্টেটাস সামাজিক পরিস্হিতির সাথে কতটুকু খাপখাওয়াতে পারবে। আসলে মাকে দুঃখ দিতে চায়নি বলেই এ বিয়েতে রাজি হওয়া। তিন্নির সাথে বিয়ের পরই মায়ের সাথে একটা দূরত্ব তৈরি হয়ে গিয়েছিল রোহানের। অসম্ভব মা ঘেসা ছেলে ছিল সে। আসলে বাবা মারা যাওয়ার পর তাদের তিন ভাই বোনকে বুকে আগলে বড় করেছিলেন মা। অথচ ভাইয়া বা আপু কেউই মায়ের এই কস্টের দাম দিলনা। দূ জনে যে যার মতো সেটেল হলো দুই দেশে। রোহানও নিজের পছন্দে বিয়ে করলো তিন্নিকে। সমস্যা ছিল না তাতেও। কিন্তু তিন্নি কেনো জানি রোহানের এই মা নেওটা সভাবটা মেনে নিলোনা। ব্যাপারটা বুঝতে পেরে রোহানের প্রখর ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন মা নিজেকে গুটিয়ে নিলেন রোহানের কাছ থেকে। মৃত্যুর আগে অবশ্য তিন্নি নিজের ভুল বুঝতে পেরেছিল। রোহানকে বলেছিল, মা কে বলো পারলে আমায় ক্ষমা করে দিতে। আর মা তোমায় যেখানে বিয়ে করাতে চান, না করো না। দরজায় বকুলকে দেখা গেলো, ভাইজান আপনারে চা খাইতে ডাকে, নতুন ভাবী। বলেই মুখ লুকিয়ে হাসলো বকুল।
চা খেয়ে উঠে মা কে বল্ল রোহান, আজ আমার তিনটে সার্জারি আছে, ফিরতে রাত হতে পারে, অপেক্ষা করো না খেয়ে নিও। আজ না গেলে হয়না খুব হালকা ভাবে কথাটা বললেন মা। কিচ্ছু করার নেই মা, অনেক আগে থেকে ডেট দেয়া। এখন হুট করে বদলানো যাবেনা। বলে বের হয়ে গেলো রোহান।
অসম্ভব মমতা নিয়ে বাবুটার দিকে তাকিয়ে আছে নিতু। বাবুটাও চোখ পিট পিট করে ওকেই দেখছে। হাত বাড়িয়ে কোলে তুলে নিল বাবুটাকে।কি নরম তুলতুলে একটি শরীর। আজ বহুদিন পর কাদলো নিতু। আমি কি ওকে আমার রুমে নিতে পারি? উনি আশার আগেই দিয়ে যাবো। ঠিক আছে নিয়ে যাও।
রোহান ফিরে এলো ঘন্টা খানেক বাদে, জরুরী একটা ফাইল ফেলে গিয়েছে বাসায়। সেটা নিতে রুমে ঢুকে অবাক হয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর একটি দৃশ্যে তার চোখ আটকে গেলো। দূ’জন দু’জনকে জড়িয়ে ধরে ঘুমুচ্ছে। বিকেলের সোনারোদ এসে পড়েছে দূ জনের গায়ে। কি মায়াময় দুটি মুখ। তার নিজের সন্তান অথচ আজই সে প্রথম ভালো করে দেখলো। এটা সে কিভাবে পারলো, একটা নিস্পাপ শিশুকে তার বাবার ভালোবাসা থেকে বন্চিত করতে। নিজের সাথে নিজেই প্রমিজ করলো আর যাই হোক এ দুটো মানুষকে সে কখনও কস্ট দিবেনা। হালকা হাতে দরজা ভেজিয়ে দিয়ে বাইরে বের হতেই মায়ের মুখোমুখি। মা খানিকটা অপ্রস্তুত মুখে দাড়িয়ে ছিলেন। রোহান মাকে আজ বহুদিন পর জড়িয়ে ধরলো, বল্ল মা আজ থেকে বাবুটা আমার রুমে আমাদের সাথে থাকবে।
—————–
সমাপ্ত

0 মন্তব্যসমূহ
গল্প গুলো কেমন লাগলো, আপনার মতামত জানাতে কমেন্ট করুন।